নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দলছুট শালিক

দলছুট শালিক

ভাল মানুষ হওয়ার নিরন্তর চেষ্টা।

দলছুট শালিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেলে আসা গোধূলী বেলার এক চিলতে আলো

০২ রা মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৪

আমাদের বিদ্যালয়। আমার ভালবাসার আলহাজ্ব স্কুল। স্কুল জীবন শেষ করেছি প্রায় দেড় যুগ আগে। লেখাপড়া শেষে প্রবেশ করেছি কর্মজীবনে। কিন্তু ভুলতে পারিনি আমার সেই প্রিয় স্কুল প্রিয় শিক্ষকদের। আজ শত ব্যস্ত কর্মজীবনের ফাঁকে ফাঁকে স্কুল জীবনটিই বোধ করি জীবনের সবচেয়ে ভাল সময়। জীবন জীবনের গতিতে চলবে আর তাই সেই দিনগুলোতে ফিরে যাবার ইচ্ছা ব্যর্থ স্তুতির মতোই শোনাবে। স্কুলটা আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন হেঁটে স্কুলে আসতে ও ফিরতে হতো। আমার প্রিয় স্কুলের প্রবেশ পথের সবুজ ঘাসগুলো যখন মনের রূপকে পবিত্র করে দিত, তখনি আনন্দ অনুভব হতো। বিদ্যালয়ের সম্মুখের মাঠটি মসজিদের কোল ঘেষে রাস্তাটি আর বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমের সামনে কড়ই গাছটি এখনও স্মৃতির সৌরভ বিলায়। বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সেই আলহাজ্ব স্কুলের পুকুরটি এখনও স্বচ্ছ নীলিমা ছড়ায়। স্কুলের তিন দিকে সুবজাভ পরিবেশ এক অনবদ্য রুপ লাবণ্য দান করতো। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে কীর্তিমান হয়েছেন। সুন্দর ও মনোরম স্কুলের পরিবেশটি সৃমদ্ধ ছিল খেলার মাঠ আর সুবজ গাছের ছায়াবৃত। সাদা টিন সেডের ভবনসহ শিক্ষকদের কক্ষ, অফিস কক্ষ। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের কোলাহলে মুখর থাকত স্কুল প্রাঙ্গন। আমি সৌভাগ্যবান যে আমার শিক্ষাজীবনে বেশ কিছু ভালো শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করতে পেরেছি। সকল শিক্ষকের প্রতিই আমি শ্রদ্ধাশীল। তবে আমার জীবনে যে সকল শিক্ষকের আদর্শ ও শিক্ষা খুব গভীরভাবে ছাপ ফেলেছে তারা প্রায় সকলেই আমার প্রিয় আলহাজ্ব স্কুলেরই শিক্ষক। আজ নিজের কর্ম জীবনের বেশ খানিকটা পেরিয়ে এসে কেন জানি মনে হয় আমার স্কুলের সেই সকল রাগী ও বেত হাতে দাঁড়ানো শিক্ষকগুলোই ছিল জীবনের আসল শিক্ষাগুরু। যারা ছিলেন ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধি ও মননে অতুলনীয় এবং ছাত্রদের প্রতি সর্বদা কঠোর। একই সঙ্গে তাঁরা ছিলেন সৎ চরিত্রের সহজ সরল জীবনে বিশ্বাসী মানুষ। যাদেরকে দেখে ছাত্ররা নীতিবান হতে উৎসাহী হতো।

১৯৯৭ সালে স্কুলের গ-ি ছেড়ে চলে এসেছি কিন্তু ভুলতে পারিনি সে স্মৃতির কথা। ভুলতে পারিনি প্রিয় শিক্ষকদের। যাদের আমরা হারিয়েছি তার মধ্যে মরহুম আকতারুজ্জামান স্যার (হেড স্যার), মরহুম লুৎফর স্যার, মরহুম মাহ্বুব স্যার, মরহুম ফজলুল হক স্যার (হক স্যার), মরহুম মেহের স্যারসহ আমার জ্ঞানের জগতে আলোকিত দীক্ষক ও তারাই মহান শিক্ষক। অ্যাসেম্বলীর সময় সারি সারি দাঁড়ানোর জন্য মজিবর স্যারের বেত হাতে দাঁড়ানোর প্রয়াস ভুলবার নয়। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলীর মধ্যে মোর্তজা মোজহার উদ্দীন স্যার (বায়লোজী স্যার), ইয়াসিন স্যার, লুকমান স্যার, মহিউদ্দীন স্যার (হুজুর স্যার), জাহাঙ্গীর কবির স্যার (ছোট হুজুর স্যার) মাহমুদা ম্যাডাম (বড় ম্যাডাম), অনীল স্যার, সানাউল্লাহ স্যার, বকুল ভাই, শফিকুল ভাই। প্রিয় শিক্ষকরা আমার স্মৃতির দরজায় জলজলে উজ্জল সেই মুখগুলো আজও ভাসে, ভেসে উঠে শিশির ভেজা সকালের সূর্যের ন্যায়। এখন কেউ কেউ স্কুলে নেই, কেউ অবসর জীবনে আছেন, কেউ ¯্রষ্টার কাছে। আর সেই সময়ের মজিবর স্যার, অনীল স্যার এখনও স্কুলটির হাল ধরে আছেন। স্কুলের সহপাঠীদের প্রিয় বন্ধু নাছির, কালু ভাই, বেলাল, আলী, মামুন, সোহেল রানা (সুজন), রাসেল, ইসমাইল, শুভ, সেলিম ব্যাপারী, ওহাব, আফসার, তানভীর, আজিজুল, আতিকুল, রবি, জোহা, কাওসার, জাইদুল, ইসটিকুল মনজীল (ভোলা), পলাশ, বুলবুল, মিলন, শাহিন আলম, সাইফুল ইসলাম, শাহিন শাহ গাওসেল আজম, মইনুল হোসেন, বকুল, জামিল হোসেন (জুয়েল), মাহাবুব, আপেল মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম (রাজা), রিতা, আন্নী, সাবিনা, চাম্পা (প্রয়াত), ফারহানা, মলি, কাকলী, লালিম, হারুন, প্রবাসী বন্ধু জহুরুল, সাইদুল, ইমরান হোসেনসহ আরো অনেক বন্ধুদের মুখ এখনো তরতাজা। স্কুলের ধূসর দালান আর চুন খসে যাওয়া দেয়াল সবকিছুরই যেন স্মৃতির পাতায় জীবন্ত, প্রাণবন্ত হয়ে আছে এখনও। মনে পড়ে স্কুলের সেই দুরন্তপনা, বন্ধুদের সাথে হৈ হুল্লোড়। ছুটিতে আড্ডা দেয়া, একসাথে টিফিন খাওয়া, কখনো কখনো স্কুল ফাঁকি দেয়া, মেয়েদের দিকে উঁকি দেয়া, কখনো পড়া না হলে শেষ বেঞ্চে মাথা নিচু করে বসে থাকা যেন স্যার দেখতে না পারে। এখনো মনে পড়ে লুকমান স্যারের দেয়া অংক যেদিন রেডি না করে ক্লাসে আসতাম ক্লাসে স্যারের কাছ থেকে লুকানোর কথা। এই স্মৃতিগুলো ভুলবার নয়, ভোলা যায় না, ভুলতে চাই না।

স্কুলটি দাঁড়িয়ে থাকুক, আলো ছড়াক যুগ থেকে যুগান্তরে হাজার বছর ধরে। কৈশরের ফেলে আসা স্কুল জীবন যদি আবার ফিরে পেতাম! যদি আবার মিশে যেতে পারতাম একে অপরের সাথে আনন্দে ও নিষ্পাপ ভালবাসায়। যদি বন্ধুদের সাথে স্কুল মাঠে চুটিয়ে আড্ডা দিতে পারতাম, যদি পারতাম স্কুল মাঠে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলতে। জানি যা চলে গেছে তা আর ফিরে আসবে না। আসবে না সে স্কুল জীবন। তবু প্রিয় স্কুলের স্মৃতি এখনও ধরা দেয় এক নিঃস্বার্থ আনন্দের প্রতিচ্ছবি হয়ে। তাইতো খুঁজে ফিরি স্কুল বন্ধুদের চেনা মুখ।

আজ কর্মজীবনে অনুভূতিগুলো শুকনো হয়ে গেলেও সময় পেলে যখন স্কুলের মাঠ, আশেপাশের প্রকৃতি, জ্যোৎ¯œা আমাকে এখনো হাতছানি দেয়। অনেক বছর পর মেহের স্যারের জানাযায় স্কুল মাঠে গেলে স্কুলটিকে ঘুরে ঘুরে দেখেছি। আর খুঁজে ফিরেছি পুরনো সব স্মৃতি। বারে বারে শ্বাস নিই আর অনুভব করার চেষ্টা করি লুকিয়ে থাকা স্মৃতিগুলোর। শেষে বলি ভাল থাকুক আমার স্কুল, ভাল থাকুক ও সুস্থ থাকুক আমার প্রাণপ্রিয় স্যারেরা। এই প্রত্যাশায়..................................।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১০

চাঁদগাজী বলেছেন:


লিখা হয়েছে, পোষ্ট হয়েছে, আকর্ষণীয় হয়নি

০২ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:৪২

দলছুট শালিক বলেছেন: স্মৃতি আর আবেগ ধূসর হয়। স্বপ্ন হয় সাদাকালো। ধন্যবাদ

২| ০২ রা মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: পুরোনো কিছুই ভুলে যান নি। এটা ভালো।

০২ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:২৪

দলছুট শালিক বলেছেন: মনটা মাঝে মাঝে বড্ড আবেগী হয়, জানি না কেন? নুর ধন্যবাদ

৩| ০২ রা মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫২

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: মন ছুঁয়ে গেল।

০২ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:২৪

দলছুট শালিক বলেছেন: আপনার মন্তব্যগুলো আমাকে লেখার অনুপ্রেরনা দেয়। ভাল থাকবেন। অশেষ ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.