নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের কথাগুলো বলে ফেলার জন্যে এসেছি

লিসানুল হাঁসান

নিতান্তই সাধারণ মানুষ

লিসানুল হাঁসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ন্যাক্কারজনক সাম্রাজ্য

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৬

শশী থারুরের ' দি ইনগ্লোরিয়াস এম্পায়ার ' পড়ে শেষ করলাম ক'দিন আগেই। বইটা লেখার পটভূমি হল তার অক্সফোর্ড ইউনিয়নের সেই বিখ্যাত বক্তৃতা যেখানে উনি বেশ শক্তভাবে এবং চমতকারভাবে তত্থ্য-উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছিলেন যে কেন ব্রিটিশদের ইন্ডীয়াকে ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত। বইটায় উনি যখন ইন্ডীয়া বলেন তখন আসলে তিনি এখনকার তিনটা দেশকেই একসাথে বোঝান- বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারত।

দাঁতভাঙা কঠিন কিছু শব্দ বাদ দিলে বইটাকে সুখপাঠ্য বলা যেতে পারে এই অর্থে যে উনি গতানুতিক ইতিহাস বইয়ের মত এইখানে ইতিহাস শুধু ক্রমানুক্রমে বর্ণনা করে যান নি। বরং তিনি ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন এর প্রেক্ষাপটসহ। সাম্রাজ্যবাদীদের বেশ কিছু যুক্তি যেমন তারা আমাদের সভ্য করেছে, ইংরেজি ভাষা দিয়েছে এবং তারাই আমাদের মাঝে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করেছে এমন অনেক যুক্তিই উনি খন্ডন করেছেন সাবলীলভাবে।

ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে উনি বেশ কিছু চমৎকার প্রস্তাব করেছেন। যদিও সাম্রাজ্যবাদ ভারতবর্ষএর কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি করেছে তার একটা আনুমানিক ধারণা পাওয়া যায় বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল থেকে তবে ক্ষতির একদম সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করা অসম্ভব এবং কোনভাবে সেটা নির্ণীত হলেও তা এ যুগের ব্রিটিশিদের থেকে আদায় করা বাস্তবসম্মত নয়। একটা রূপক ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব তিনি দেন যেখানে বলেন যে ব্রিটিশরা পরবর্তী দুইশ বছর প্রতি বছর এক পাউণ্ড করে ক্ষতিপূরণ দেবে ভারতকে।

আর্থিক ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি তিনি নৈতিক ক্ষতিপূরণের একটা প্রস্তাব দেন। ব্রিটিশরা প্রায় দুশ বছরের সাম্রাজ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ মেরেছে প্রতক্ষ এবং পরোক্ষভাবে । শুধুমাত্র জালিয়ানওয়ালা বাগেই মেরেছে কমপক্ষে সাড়ে তিনশো। শুধুমাত্র সংখ্যা বিবেচনায় নয়, মাত্র দশ মিনিটের মাথায় একটা বদ্ধ জায়গায় এতগুলো নিরস্ত্র মানুষ মেরে ফেলা এবং পরবর্তীতে এই হত্যার নেপথ্য নায়ক কর্নেল ডায়ারের প্রতি ব্রিটিশ সুশীল সমাজের আকুন্ঠ সমর্থন এই ঘটনাকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্যতম ন্যাক্কারজনক ঘটনায় পরিণত করেছে। তাই ড থারুর প্রস্তাব করেন এই ঘটনার শতবার্ষিকীতে সেই জালিয়ান ওয়ালাবাগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত । খোদ অক্সফোর্ড ইউনিয়নে দাঁড়িয়ে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে এমন দাবি উত্থাপন করার জন্য তিনি প্রায় রাতারাতিই ' ভাইরাল ' হয়ে যান।

বেশ কিছুদিন ধরেই ড থারুরের বিভিন্ন লেখা পড়া এবং বক্তৃতা শোনার প্রেক্ষিতে আমি রীতিমত ওনার ভক্ত হয়ে যাই। জাতিসংঘের সাবেক ' আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ' , এবং পরবর্তীতে ভারতীয় কংগ্রেসের মন্ত্রী ও তিন দফায় লোকসভা সদস্য মেধাবী এই ব্যক্তি হতে পারেন একজন সভ্য রাজনীতিবিদের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। শুধুমাত্র সমালোচনার জন্য সমালোচনা না করে প্রতিপক্ষের ভাল দিকগুলো কে স্বীকার করার রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সৎসাহস এই উপমহাদেশের রাজনীতিকদের মধ্যে খুব কমই দেখা যায়।

ড থারুরের যুক্তিগুলো শোনার ফলে এককথা অনেকেরই মনে হতে পারে যে একথাগুলোর অনেকগুলোই ব্রিটিশসাম্রাজ্যবাদের অবসানের পরেও ২৪ বছর অন্যরকম সাম্রাজ্যবাদের শিকার বাংলাদেশ ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমাদের পাঠ্যবইয়ের ইতিহাস যেমনটা সরলরৈখিক এবং প্রেক্ষাপটবিহীন সেটা আসলে আমাদের কে কিভাবে উপকৃত করছে বা করেছে এটা নিয়ে ভাবার সময় বোধহয় এসে গেছেই। শুধুমাত্র আবেগ এবং অনেকক্ষেত্রে ঘৃণাকে মূলউপজীব্য না ধরে আমরা যদি ইতিহাসের একটা নৈর্ব্যক্তিক পাঠ তরুণদের সামনে তুলে ধরতে পারতাম তাহলে বোধহয় যুক্তিশীলতা আর সহনশীলতার চর্চা আরো সহজেই হতে পারত ।

সালটা এখন দুহাজার বিশ। ইতিহাস থেকে আমরা কি চাই , কেন ইতিহাস কে মনে রাখা ও চর্চা করা প্রয়োজন , এই শিক্ষা আমাদের কিভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন এসব নিয়েই ভাবা দরকার। রামায়ণের একপাঠে রাবণ কিন্তু নায়ক। আর বেশির ভাগ পাঠে যে খলনায়ক। তাই বলে কি রামায়ণে সীতার অপহরণ ঘটে নি ? যদিও রামের পক্ষে ছিল তবুও বিভীষণ কি আসলেই ভাল ছিল? এমন চমৎকার সব প্রশ্ন করার মত সাহসী এবং সৎ নতুন প্রজন্ম আসবে আমাদের পরে এই হল আজকের বিজয় দিবসে কামনা ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১৪

কলাবাগান১ বলেছেন: পাকিস্হানী সৈন্য আর রাজাকার দোসর রা মিলে সৈয়দপুর এর চিলাহাটি তে ভারত নিয়ে যাবার নাম করে ৪৮০ জন হিন্দু মারওয়াড়ি কে ট্রেনে তুলে দেয় কিন্তু কিছু দু র যাওয়ার পরে বাহির হবার সব দরজা/জানালা বন্ধ করে ..একে একে বেয়নেট দিয়ে (কোন গুলি খরচ হওয়া নাকি অপ্রোয়জনীয় ছিল) ৪৮০ জনকে হত্যা করে ....এটা তো জালিওয়ানাবাগ থেকেও নৃসংস কাজ ছিল...।শুধু এটার জন্যও হলেও পাকিস্হানএর ক্ষমা চাওয়া উচিত।
বিস্তারিত জানলাম ডেইলি স্টার থেকে
A train to nowhere

২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৪৯

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




কলাবাগান১ ভাই ঘটনা সত্য। পাকিস্তানী, বাঙালী রাজাকার ও প্রভাবশালী মিলে এ ধরনের কাজ প্রচুর করেছে। বাংলাদেশে ছোট বড় হিন্দু বাড়িগুলো যেসব স্বাধীন বাংলায় রাজনৈতিক সান্ডাপান্ডা সহ এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বার গংদের দখলে ছিলো তার অধিকাংশ যুদ্ধকালীন অবস্থায় লুটের সম্পদ।

৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:১০

রাজীব নুর বলেছেন: শশী থারুর কোনো বই আমি পড়ি নি।
তবে তার সম্পর্কে পত্রিকাতে প্রায়ই পড়ি। ভারতের একজন কূটনীতিক বিদ।

৪| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:২২

উলডুমা কেরামত বলেছেন: শশী থারুর এই সময়ের একজন সাহসী লেখক।

৫| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৮

অক্পটে বলেছেন: চমৎকার লেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.