![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছা করে কিন্তু পারিনা। কিন্তু এখানে সব বলবো বলেই এসেছি.... www.facebook.com/ amarmonami
এই কথোপকখনের ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। কারো সাথে মিলে গেলে তা কাক-কোকিলতালীয়। লেখক কিন্তু একদম দায়ী না।
আমি: আসসালামুআলাইকুম। কেমন আছেন জনাব?
- হ ভাল আছি। কেডা তুমি?
আমি: আমি এই এলাকায় নতুন এসেছি। শুনলাম আপনি এই এলাকার নেতা। দেখলাম আপনি এলাকার সব কিছু দেখে রাখেন। সবাই আপনাকে মান্য করেন। তাই ভাবলাম আপনার সাথে পরিচিত হয়ে যায়।
- তোমারে তো নতুন দেখতাছি। তা করো কি?
আমি: জি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল সাইন্সে পড়াশোনা করছি।
-পলিটিকস নিয়ে পড়া ! বাহ। রাজনীতি তাইলে ভালই বুঝ?
আমি: জি না। আমি রাজনীতির সাথে যুক্ত নই। আপনি কি করেন?
-আমি !
(কানে কানে সাগরেদকে জিগায়, আচ্ছা রাজনীতি কি ধরনের পেশারে?
-স্যার ব্যবসা, ব্যবসা বলে দেন)
-ইয়ে মানে, আমি তো ব্যবসায়ী। এলাকাতেই ব্যবসা চালাই।
আমি: তা কিসের ব্যবসা আপনার জানতে পারি?
-ওই মিয়া তুমি কি সাংবাদিক নাকি?
আমি: না মানে আমার আগ্রহ। আপনার মত লোকের সাথে পরিচিত হওয়ার। আর কিছু না আংকেল।(মুখে একটা চমক হাসি নিয়ে)
-(খুব ভাব নিয়ে) আমি রাজনীতি ব্যবসার সাথে জড়িত।
আমি: এটা আবার কেমন ব্যবসা! আপনি মনে হয় দুষ্টুমি করছেন আংকেল। রাজনীতি আবার ব্যবসা হয় নাকি। রাজনীতি তো মানুষ করে অন্যের মঙ্গলের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। এটা কি ব্যবসা নাকি? হে হে হে।
-তোমার সাথে কি আমার দুষ্টুমির বয়স? তুমি তো বেশ টেটনা পোলা দেখি। কেন, রাজনীতি ব্যবসা হইবো না কেন? এখানে কি টাকা পয়সা নাই? আমাদের কি আয় রোজগার নাই?
আমি: ও আচ্ছা। তাহলে আয় রোজগার আছে দেখে এটা ব্যবসা। সরি আংকেল আমি বুঝতে পারি নাই।
-শুনো আমরা না থাকলে দেশ থাকবো না। মানুষের কথা বলার ক্ষমতা থাকবো না। আমার এলাকার যত গুন্ডা বদমাশ আছে সব আমাকে দেখে ভয় পায়। কেন জানো?
আমি: কেন?
-কারণ আমি একটা দলের প্রতিনিধি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাদের খবর আছে। আর এলাকার লোকেরাও ভয় পায়।
আমি: তাইলে মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য আপনি রাজনীতি করেন?
-আরে না। তা হবে কেন! সবাই আমারে মান্য করে এই যা।
আমি: আংকেল আপনার এই ব্যবসা থেকে আয় কত বাৎসরিক?
-তা জেনে তোমার কি দরকার। এলাকায় আসছো। থাকো শান্তিতে। কোন সমস্যা হলে জানাবা।
আমি: না মানে। আপনি তো এখন রেস্টে আছেন তাই ভাবলাম আপনার সাথে গল্প করি। আপনার বলতে অসুবিধা থাকলে বলার দরকার নাই।থাক।
-খ্যাক খ্যাক, না অসুবিধা থাকবে কেন! ব্যবসা তো ব্যবসায়। এই তো যখন সরকারি দলে থাকি তখন বছরে আয় হয় প্রায় ২-৩কোটি টাকা। আর বিরোধীদলে থাকলে আয় টা কমে যায়। এই আর কি।
আমি: ৩ কোটি টাকা প্রায়! এতো বিশাল লাভ জনক ব্যবসা দেখি!
-বড় বড় কাজ পেলে আয় আরো বেশি হয়। বর্ষাকালে এলাকার রাস্তাঘাট নষ্ট থাকলে যত কাজ হয় সব আমার প্রতিষ্ঠান পায়। মানুষ তাদের কাজ কর্ম করে দেয়ার জন্য আমারে টেকা দেয়। চাকরি দরকার হলে তাদের চাকরি দেই, কাওরে ধমক দিতে হইলে ধমক দেই। বিশাল কাজ করতে হয়। আরো ছোট কাজ তো আছেই। দল আমার কাজে খুশি হয়ে আরো কত কিছু দেয়! আসলে এইটা আমার সিজনাল বিজনেস। যতক্ষণ ক্ষমতায় আছি ততক্ষণ ভাল মতই চলে। সব তোমাদের দোয়া।
আমি: জি জি অবশ্যই আমাদের দোয়ায়। আমরা মানে জনগণ না থাকলে তো আর সরকার ক্ষমতায় আসতো না! আমরা ট্যাক্স,ভ্যাট দিলে দেশ চলে। সেই টাকা আপনারাও পান। তাইলো তো আংকেল আমরাই আপনাদের টাকা দিচ্ছি। আমার বাপে, আমি, আপনার সাগরেদ। নাকি বলেন?
-এত প্যাচাও কেন কথা। তুমি যাও। বহুত আলাপ পারছো।
ওই ওরে আগায়ে দিয়ে আয়।
আমি: ঠিক আছে আংকেল। আসি। (সাগরেদ ঠেলতে থাকে)
আমি: আরে ভাই ঠেলতে হবে না। আমি যাচ্ছি তো। আপনি ভাল আছেন? আপনি কি নেতার সাথে ব্যবসা করেন? নেন ভাই বেনসন।
-ম্যাচ দেন।
আমি: ভাই, আমার কাছে তো ম্যাচ নাই। সিগেরেট খাই না আমি।
-তাইলে বেনসন নিয়ে ঘুরেন ক্যান!
আমি: না এমনি। ভাবলাম আপনাকে দিই, আপনি হইতো পছন্দ করবেন। চলেন ওই চায়ের দোকানে। চা খাই আর আপনার বেনসন আপনি খান।
(চলতে চলতে জানতে চাই
আমি: সামনের রাস্তায় দেখলাম নেতার পাশে ছোট করে আপনার ছবিসহ বড় ব্যানার। ছবিটা ভাই সুন্দর হইছে। নেতা নেতা লাগে আপনারেও হে হে হে।
- হ সামনে পার্টির সাধারণ সম্পাদক হইতাছি।
আমি: আপনি নেতার চ্যালা হইলেও আপনি কিন্তু দেখতে নেতা মতই।
-চ্যালা কই দেখলা? ফাজলামু করো নাকি। ডান হাত আমি নেতার। আমারে ছাড়া কিছু হয় না। নেতা তো খালি মুর্তি।
আমি: হ হ, তা ঠিক। নেতার থেকে আপনারেই বেশি নেতা নেতা লাগে ।
আমি: ভাই আপনাদের এলাকাতে ছিনতাইকারী কেমন?
-কেউ কিছু কইছে নাকি আপনারে? আমার কথা বলবেন। সমস্যা নাই। বলবেন জুয়েল আপনার বড় ভাই।
আমি: জি জি অবশ্যই বলবো। আপনারা আছেন দেখেই তো আমরা রাস্তায় হাটতে পারতাছি। হে হে হে, তা জুয়েল ভাই কি এই ব্যবসায় করেন নেতার সাথে?
-তোমারে পছন্দ হয়ছে। খুব দিল-খোলা পোলা। আমি আবার এত ঝামেলা ওয়ালা, নেতা টাইপের পোলাপান দেখবার পারি না। ইচ্ছে করে দেই হান্দায়া ডেগার। আজকালকার পোলাপান বেশি বুঝে। নেতারে নিয়াও কথা কয় কেউ কেউ।
ব্যবসা আর কি। ক্ষমতায় না থাকলে দৌড়ের উপর থাকতে হয়। তাই যত দিন আছি কামায়ে নেওয়া কথা। পাবলিক বড় বেশি বুঝে আজকাল।
আমি: কিন্তু ভাই, নেতারা তো মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করবে। আপনারা তো নিজেরটা দেখতাছেন শুধু।!
-ওই মিয়া, নেতারা কি মানুষ না! তাদের কি খাইতে পরতে হয় না। পলিটিকসে পড়েও যদি পলিটিকস না বুঝ কেমনে চলবো।
আমি: না মানে, তাদের দেশপ্রেম তো আমাদের থেকে বেশি থাকবে। তারা স্বপ্ন দেখবে দেশ নিয়ে, মানুষ নিয়ে। তাতেই দেশ তাদের খাওয়াবে। তাদের চাহিদা কম থাকবে।
-তুমি তো দেখি জ্ঞানের কথা বলতাছো ? মাথা গরম হওয়ার আগে যাও। ভাবছিলাম কিছু বুঝোনা। এখন তো দেখি সব বুঝো। যাও ভাগ নইলে সমস্যা হইবো।
আমি: ইয়ে, জুয়েল ভাই..
-কইলাম না যাও। আর এলাকাতে সাবধানে থাকবা। এইসব কথা আর কাওকে বলবা না কইলাম। দেশ দেখাইতে আইছে !
তেল মর্দন করে যতক্ষণ এতক্ষণ কথা চালাইতে পারলাম তাই মন্দ না। বেশি বাড়াবাড়ি হওয়ার আগে প্রস্থান করিলাম। উনি আমার দেয়া বেনসনটা টানতে টানতে নেতার বাড়ির দিকে পথ ধরলেন। কিন্তু চায়ের দোকানে এসেও তো চা খাইলাম না!
---------------------------------------------------------------------------------
** গতকাল দিনের বেলা রাস্তায় ঘুরছিলাম অনেকটা হিমুর মত। হঠাৎ নেতার বাড়ির দিকে চোখ গেল। ভাবলাম একটু গল্প করে আসি। উনি তো সবার নেতা। আমাদের একটা অধিকার আছে না ! কিন্তু জুয়েল সাহেবের ধমকে সেহেরির কিছুক্ষণ আগে ঘুম ভেঙে গেল, সাথে স্বপ্ন।
©somewhere in net ltd.