নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিবর্তন চাই

আমাদের একটা মানুষের সমাজ লাগবে

হোরাস

যেকোন সমালোচনা, আলোচনা, যেকোন কিছু জানাতে পারেন [email protected] ঐক্যবদ্ধ লড়াই ই মুক্তির একমাত্র পথ।

হোরাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীঃআমরা কি তাকে ভুলে যাব?

১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৫

আগামী ১৭ই নভেম্বর আজীবন বিদ্রোহী মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী। দৈনিক ইত্তেফাক ছেপেছিল "একটি শতাব্দীর মৃত্যু" কিন্তু আমরা বলবো তার মৃত্যু নয় জীবনটাই সত্য ও বাস্তব। তার সংগ্রাম আর ভালবাসা আজীবন বেচে থাকবে মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে।৯১ বছর বয়সী এই মানুষটা তার মৃত্যুর বছরেও(১৯৭৬) সালে ফারাক্কা বাধ নির্মাণের প্রতিবাদে লাখো মানুষের লংমার্চে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজশাহী শহর থেকে শুরু হওয়া এই লংমার্চ প্রায় ৬৪ কি.মি এলাকা পায়ে হেটে শিবগঞ্জে গিয়ে শেষ হয়। কলকাতা বন্দর রক্ষার কুযুক্তিতে নির্মিত এই বাধ সেই থেকে আজোবধি উত্তরাঞ্চলকে ক্রমাগত মরু অঞ্চলে পরিনত করবার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দুঃখের বিষয় নাম-পদবী ক্ষমতাহীন মাওলানা ভাসানীর ওই লংমার্চই ফারাক্কা বাধের বিরুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশে সংগঠিত সবচে বড় বিক্ষোভ....



অথচ আমাদের দেশের অচিন্তনীয় ক্ষমতাধর এযাবত মন্ত্রী,প্রধানমন্ত্রী আর প্রেসিডেন্টগণ প্রান প্রকৃতি মানুষের অপরিসীম ক্ষমতার কারণ "ফারাক্কা বাধের" র বিরুদ্ধে টু শব্দটি উচ্চারণ করার মুরদ দেখাতে পারলেন না।



ভাসানীকে ভুলিয়ে দেবার জন্য সবধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন আমাদের মহামান্য শাসকগণ।ক্লাস ফোরের বাংলা বই থেকে "মজলুম জননেতা" শিরোনামের রচনা সরিয়ে ফেলা হযেছে গত কয়েক বছর আগে।নবীন শিশুকিশোরদের পাঠ্য-পুস্তকের কোথাও ভাসানীর নামের ছিটে ফোটাও পাওয়া যাবেনা।এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত হল,প্রস্তাবিত "মওলানা ভাসানী" হলের নামও বদলে "বিজয় একাত্তর" রাখা হলো।ক্লাস এইটের কোন বাচ্চাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় ৫ টা সিরিয়াল এর নাম বলতো.. উত্তরটা সে সহজেই দিতে পারবে কিন্তু যদি ভাসানীর নাম জিজ্ঞেস করা হয়? উত্তরটা হবে নামটা শুনেছি কিন্তু কে জানিনা....

ফেসবুকের ভাষায় ফিলিং সরি..



সর্বান্তকরণে উপমহাদেশের নিগৃহীত কৃষকদের নেতা, আসামের ধুবড়ি জেলার ভাসানচরের কৃষক সম্মেলনের সংগঠক(১৯২২), টাঙ্গাইলের কৃষক সমাবেশের সংগঠক (১৯৩২), আজকের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পূর্বতন দল(১৯৫৬ সালে মুসলিম নাম বাদ যায়) আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা(১৯৪৯), দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন জয়ী নেতা(১৯৫৪), কাগমারী সম্মেলনের আয়োজক (এ সম্মেলনেই মাওলানা ভাসানী সদর্পে উচ্চারণ করেছিলেন"আসসালামু আলাইকুম পাকিস্তান")ও ন্যাপের( ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির) প্রতিষ্ঠাতা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানের অন্যতম প্রধান নায়ক ও লাল টুপি সম্মেলনের আয়োজক, মুক্তিযুদ্ধকালে আওয়ামীলীগ সহ ৫দলের সমন্বয়ে গঠিত "মুক্তিযুদ্ধ উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি(যদিও দুর্ভাগ্যক্রমে ভারত সরকারের কঠোর নজরদারিতে যুদ্ধকালীন সময়ে কাটাতে হয়),প্রগতিশীল ৫ দলের সমন্বয়ে গঠিত "জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা, আর ফারাক্কা বাধ বিরোধী লংমার্চের প্রধান এরকম আরো অসংখ্য আন্দোলনের নেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে আমরা কোনভাবেই ভুলে যেতে পারিনা।শাসকেরা সর্বকালেই ভুলিয়ে দেবার রীতি গ্রহণ করে, আমাদের তরুনদের তাই ভুলে না যাবার নীতি গ্রহণ করতে হবে। ক্ষমতার প্রতি মোহহীন এই মানবতাবাদী মানুষটা পুরোটা জীবন ভুখা-নাঙ্গার পক্ষে দাড়িয়েছেন এমনকি তার দল আওয়ামীলীগ কেন্দ্রে এবং পূর্বে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ও তিনি খাদ্যের দাবিতে অনশন করেছেন(১৯৫৬)মাওলানা ভাসানী জাতীয়তাবাদী চেতনা এখানকার সমাজতন্ত্রীদের সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক এবং তার গনচরিত্র আমাদের সামনের দিনের লড়াইয়ের শিক্ষা।



অনেক দল করেছেন,নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ভেঙে তৈরী করেছেন নতুন দল। এজন্য অনেকে তাকে দোষারোপ করেন কিন্তু এর কারণ তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও এর জন্য অনেকটাই দায়ী। আওয়ামীলীগে সাম্রাজ্যবাদী সেন্টো, সিয়াটোর(পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি) বিরোধিতা সেই ১৯৫৪ সালথেকেই করে এসেছেন ভাসানী।

সোহরাওয়ার্দীপন্থীরা অবশ্য গোড়া থেকেই এ চুক্তির পক্ষে ছিলেন। ১৯৫৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় যাওয়ার আগে কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হয় পরিপূর্ন স্বায়ত্বশাসন না হলে তার দল গনপরিষদ থেকে পদত্যাগ করবে। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে নেতারা সব ভুলে যান এমনকি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ঘোষনা দেন ৯৮ ভাগ স্বায়ত্বশাসন ইতোমধ্যেই অর্জিত হয়েছে।এর ফলশ্রুতিতে কাগমারী সম্মেলনের অব্যবহিত পড়ে মাওলানা ভাসানী পদত্যাগ করেন এবং ন্যাপ গঠন করেন।



ধর্মপ্রান হলেও মাওলানা ভাসানী ছিলেন সর্ব অর্থেই অসাম্প্রদায়িক ও কৃষক অন্তপ্রান মানুষ।৫৪'র নির্বাচনের পরই তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগকে একটি অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালান,৫৬ সালে তারই নেতৃত্বে মুসলিম নাম বাদ দেয়ার প্রস্তাব ওঠে কিন্তু দলের একাংশ জনমতের দোহাই দিয়ে এর বিরুদ্ধে দাড়ায়।তবু শেষাবধি মুসলিম শব্দ বাদ যায়। গনপরিষদে হিন্দু মুসলমানের পৃথক নির্বাচনী ব্যাবস্থার পক্ষে দাড়ান সোহরাওয়াদীপন্থীরা কিন্তু ভাসানী এর কঠোর বিরোধিতা করেন। এর মধ্যে দিয়েই ভাসানী সোহরাওয়ার্দী বিরোধ চরমে ওঠে।



৪৬এ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ আসামে আসেন, মাওলানা তখন প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি। কথোপকথনের এক পর্যায়ে মাওলানা কৃষকদের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে হুহু কেদে ফেলেন উপস্থিত সকলের সামনে।পরবর্তীতে জিন্নাহ এ ঘটনার ব্যাপারে বলেন,"মাওলানার মতো লোকেরা নেতা হওয়ার যোগ্য নন মোটেই, রাজনীতিতে বাজে ভাবালুতা ও আবেগের কোন স্থান নেই, বুঝলে হে রাজনীতি হলো দাবার খেলা।তার জন্য প্রয়োজন কঠিন পরিশ্রম সাহস দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।"

মাওলানা ভাসানী এদেশে আবেগের প্রতিনিধি, আর বড়ো রাজনীতিকেরা মানুষের আবেগটাকেই উপেক্ষা করেছেন বেশী। চীন থেকে ফিরে ভাসানী লিখেছেন অমন হাসি তো দেখিনা এদেশের মানুষের মুখে, হাসিতে দুঃখই ঝড়ে পড়ে।



সামনের দিনে এদেশের মানুষের অধিকার আন্দোলনে ভাসানীর জাতীয়তার চেতনা, শোষিতের প্রতি আবেগ ভালোবাসা খুব বেশী প্রয়োজন। লাল সালাম তোমায় মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।আমরা তোমাকে ভুলিয়ে দিতে দিবনা।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: নাম-পদবী ক্ষমতাহীন মাওলানা ভাসানীর ওই লংমার্চই ফারাক্কা বাধের বিরুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশে সংগঠিত সবচে বড় বিক্ষোভ....

অথচ আমাদের দেশের অচিন্তনীয় ক্ষমতাধর এযাবত মন্ত্রী,প্রধানমন্ত্রী আর প্রেসিডেন্টগণ প্রান প্রকৃতি মানুষের অপরিসীম ক্ষমতার কারণ "ফারাক্কা বাধের" র বিরুদ্ধে টু শব্দটি উচ্চারণ করার মুরদ দেখাতে পারলেন না


ম আমরা কর্পোরেট বিপ্লবী চেতনা!য় চে' কে খুজি, ক্যাস্ট্রোর নামে বিগলিত হই, নেলসন ম্যান্ডেলাকে সমীহ করি....কিন্তু নিজেদের ভাসানীকে ভুলে যাই..!!!!!

ঐ গানটি রিমেক করে বলতে ইচ্ছা করে..

মাওলানা ভাসানী তুমি
অমর কবিতার অন্তমিল।।

ধন্যবাদ। গোণ্ডফিস মেমোরিতো স্মরণের কাজটুকু করেচেন বলে।


১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪২

হোরাস বলেছেন: ধন্যবাদ। অনেকেই অনেক কথা বলবেন কিন্তু বাংলাদেশের সত্যিকার অর্থেই জাতীয় নেতা ছিলেন মাওলানা।

২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৫৬

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: উনি আমার মনে আছে সারাক্ষণ একটা অর্থনৈতিক তত্বের জন্য; আপনি কেন সামান্য ফারাক্কার ইত্যাদি কথা বলছেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.