মহান মে দিবস মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের দিন আজ

০১ লা মে, ২০১৫ রাত ১১:০৭

কলকারখানা থেকে অফিস। মাঠ থেকে ঘাট। বন্দর থেকে ব্যাংক। বাড়ি থেকে হোটেল-রেস্টুরেন্ট। চারদিকে শুধু শ্রমিক আর শ্রমিক। তাদের কেউ শাবল, কেউ হাতুড়ি পেটানো মানুষ, ভাঙছেন-গড়ছেন, বানাচ্ছেন আকাশ ছোঁয়া ভবন। আবার কেউ সুঁই-সুতায় ফোঁড় তুলে গড়েন মানুষের পরিচ্ছদ। ভোরে তাদের কারও হাঁকডাক কিংবা চায়ের কাপ ধোয়ার শব্দে ঘুম ভাঙে নগর সভ্যতার ধারক-বাহকদের। তাদের শ্রমে আর ঘামে গড়ে উঠেছে সভ্যতা-শহর-নগর।

বছর ঘুরে এসেছে মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের দিন পহেলা মে, মহান মে দিবস। কুলি, মুটে মজুর শ্রমিকদের গান গাওয়ার দিন। কৃষক-শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের সংহতি প্রকাশের দিন আজ। খেটে খাওয়া শ্রমিকদের উৎসবের দিন। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন আজ।

দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এদিন বুকের রক্ত ঝরিয়েছিলেন শ্রমিকরা। মহান এ দিনটির পেছনে রয়েছে এক রক্তভেজা ইতিহাস। ‍১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে ৪ মে পর্যন্ত আমেরিকার শিকাগো শহরে দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে শ্রমিক শ্রেণী রচনা করেছে মে দিবসের সংগ্রামী ইতিহাস। বিশ্বের সকল দেশে শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে মে মাসের প্রথম দিনটি ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১৮৯০ সালে। সেই থেকে এ দিনটি শ্রমিক কৃষক মেহনতি মজদুরের দিন।

এ দিনটিতে বিশ্বের প্রতিটি দেশের মেহনতি মানুষ ভৌগোলিক দূরত্ব অতিক্রম করে ধর্মীয়, ভাষাগত, আচার আচরণগত ভেদাভেদ ভুলে এক পতাকাতলে এসে জড়ো হয়। মে দিবসের সংগ্রাম শ্রমিক শ্রেণীকে উপহার দিয়েছে সংগ্রামী লাল পতাকা ও মুষ্টিবদ্ধ হাত। শ্রমিকের আন্দোলনের কারণে আজ ৮ ঘণ্টা কাজ করার স্বীকৃতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও প্রতিষ্ঠাকালীন থেকেই শ্রমিকের এ দাবিকে আইনে পরিণত করেছে। বিশ্বব্যাপী সরকারি ছুটি থাকে এ দিন। আমাদের দেশেও আজ সরকারি ছুটির দিন।

এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি’। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও শ্রমিক সংগঠন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মহান মে দিবস উদযাপন করছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রম দপ্তর, শিল্প সম্পর্ক শিক্ষায়তন এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উদ্যোগে সকাল নয়টায় মুসলিম ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শ্রমিক সমাবেশে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি ও জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে সকাল ১০টায় সিআরবির শিরীষতলায় শ্রমিক সমাবেশ ও পরে লাল পতাকা মিছিলের আয়োজন করেছে। জাতীয় শ্রমিক লীগের উদ্যোগে বিকেল তিনটায় নগরীর পুরাতন রেল স্টেশন চত্ত্বরে শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে সকাল সাড়ে নয়টায় পুরাতন রেল স্টেশন চত্ত্বরে শ্রমিক জমায়েত, গণসঙ্গীত, আলোচনা সভা ও লাল পতাকার মিছিলের আয়োজন রয়েছে।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) সকাল সাতটায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্ত্বরে সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করেছে। মে দিবস উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে বিকেল পাঁচটায় ডিসি হিলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজক সংগঠন উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ, চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্র, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, চট্টগ্রাম থিয়েটার ও বোধন আবৃত্তি পরিষদের পরিবেশনায় থাকবে একক ও বৃন্দ আবৃত্তি, গণসঙ্গীত, নৃত্য ও নাটক।

‘জয়ধ্বনি জীবনের মুক্তির শপথের, জনতার শ্রমিকের বিশ্ব পতাকা’ শিরোনামে বিকেল সাড়ে চারটায় জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মুক্তমঞ্চে যৌথভাবে মে দিবস উদযাপন করবে সমাজ সমীক্ষা সংঘ, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায় এবং দৃষ্টি চট্টগ্রাম। এছাড়াও চট্টগ্রাম হালকা মোটরযান চালক শ্রমিক ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন পৃথক পৃথকভাবে মে দিবস পালন করবে।

শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন পাহাড়তলী শাখার উদ্যেগে কাজ, ন্যায্য মজুরিসহ গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে সকাল সাড়ে নয়টায় নগরীর অলংকার মোড়ে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল জেলা শাখার উদ্যোগে কাজ, ন্যায্য মজুরি সহ গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে বিকাল চারটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৫

০ টি +০/-০