![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বেশুমার লানত
১ম অংশের পর
মুআবিয়ার মৃত্যু ও ইয়াজিদের চিঠি
মুআবিয়া হিজরী ৬০ সালের রজব মাসে মারা যায় । ইয়াজিদ মদীনার তৎকালীন গভর্ণর ওলিদ ইবনে ওতবার কাছে এক পত্র লিখল । ঐ পত্রে নির্দেশ ছিল যে আমার আনুগত্যের পক্ষে মদীনার সব লোক বিশেষ করে হোসাইনের কাছ থেকে বাইআত গ্রহণ কর । হোসাইন যদি বাইআত করতে অস্বীকার করে তাহলে তার গর্দান উড়িয়ে দাও এবং আমার কাছে পাঠিয়ে দাও । ওলিদ মারওয়ানকে দরবারে ডেকে পাঠায় এবং এ ব্যাপারে তার পরামর্শ জানতে চায় । মারওয়ান বলল যে, হোসাইন (আ.) শির নত করবে না এবং কিছুতেই ইয়াজিদের হাতে বাইআত করবে না । তবে আমি যদি তোমার স্থানে থাকতাম এবং তোমার মত ক্ষমতার অধিকারী হতাম তাহলে কালবিলম্ব না করে হোসাইনকে হত্যা করতাম । যদি এমন হয় তাহলে আমার কামনা হল, এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার চাইতে দুনিয়াতে আমার না আসাই ভাল ছিল। কেননা, এত বড় বদনামীর বোঝা মাথায় নেয়ার চাইতে সেটাই উত্তম হত ।
এরপর সরকারী দূতকে প্রেরণ করল এবং হযরত হোসাইনকে (আ.) নিজের ঘরে ডেকে পাঠাল । হোসাইন (আ.) তার পরিবার ও বন্ধুদের মধ্য থেকে ৩০ জন সঙ্গী সাথে নিয়ে ওয়ালিদের কাছে আসে । ওয়ালিদ মুয়াবিয়ার মৃত্যুর খবর তাকে জানাল আর ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত করার অনুরোধ জানাল । হোসাইন (আ.) বলল আমার বাইয়াত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা গোপনে ও লোকচক্ষুর অন্তরালে সম্পন্ন হতে পারেনা । তবে কাল সকালে জনসাধারণকে যখন বাইয়াতের জন্য আহবান করবে তখন আমাকেও অবহিত করবে । মারওয়ান বলল –হোসাইনের কথায় কর্ণপাত করো না এবং তার অজুহাত গ্রহণ করতে যেওনা । যদি বাইয়াত করতে অস্বিকার করে তবে প্রাণে বাচিয়ে রেখো না । হোসাইন (আ.) অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন এবং বললেন – তুমি ধ্বংস হও । হে নষ্টা মেয়ের ছেলে । তুমি কি আমাকে হত্যার আদেশ দিচ্ছ ? আল্লাহর কসম, তুমি মিথ্যা বলেছ । এ কথা বলে তুমি নিজেকে হেয় ও অপমানিত করেছ । এরপর তিনি ওয়ালিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন – হে আমির! আমরা নবুওতের ঘরের আহলে বাইত, আমরাই রেসালতের খনি । ফেরেশতারা আমাদের ঘরেই আনাগোনা করেন । আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্যই মানুষের দিকে তার রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন । এই রহমতের সমাপ্তি হবে আমাদের নামেই । আর ইয়াজিদ হল একটা মদখোর ফাসেক, খুনী এবং প্রকাশ্যে শরীয়ত লংঘনকারী লোক । আমার মত কোন লোক ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত করবে না । তবে কাল ভোর হোক । এ সময়ের মধ্যে আপনিও ভেবে চিন্তে দেখেন । আমিও চিন্তা ভাবনা করে দেখব যে, আমাদের মধ্যে কে খেলাফতের জন্য অধিকতর যোগ্য । এ কথা বলার সাথে সাথে তিনি ওয়ালিদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন । মারওয়ান ওয়ালিদকে লক্ষ্য করে বলল, তুমি আমার উপদেশের প্রতি কর্ণপাত করনি । আমার অবাধ্যতা করেছ । ওয়ালিদ বললেন ধ্বংস তোমার জন্য । তুমি কি আমার দ্বীন ও দুনিয়া ধ্বংস করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছ । খোদার কসম আমি চাই না যে, দুনিয়ার রাজত্ব আমার হাতে থাকার জন্য আমি হোসাইনকে (আ.) হত্যা করব । আল্লাহর কসম, আমি বিশ্বাস করি না যে, কেউ হোসাইন (আ.) এর রক্তের বোঝা মাথায় নিয়ে কেউ আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে । এ ধরনের লোকের অবশ্যই নেক আমলের পাল্লা হালকা হবে এবং তার ক্ষমা পাওয়ার আশাও সুদূর পরাহত । মহান আল্লাহ তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না । গোনাহ থেকে তাকে পবিত্র করবেন না । তার জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে ।
সে রাত কেটে গেল । খুব ভোরে হোসাইন (আ.) ঘর থেকে বেরিয়ে নতুন কোন খবরের অপেক্ষা করছিলেন । মারওয়ান তাকে দেখতে পেল এবং বলল – হে আবু আব্দুল্লাহ, আমি তোমার হিতাকাংখী; তুমি আমার উপদেশ শ্রবণ কর, তাহলে কল্যাণ লাভ করতে পারবে। হোসাইন (আ.) জিজ্ঞেস করলেন তোমার উপদেশ কি ? সে বলল- আমি তোমাকে আদেশ করছি যে, তুমি অবশ্যই ইয়াজিদ ইবনে মুআবিয়ার হাতে বাইয়াত কর । কেননা তোমার দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য এ কাজ মঙ্গলজনক হবে । হোসাইন (আ.) বললেন-
انّا لله و انّ الیه راجعون (ইন্নানিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন) যদি তাই হয় আমাকে দ্বীন ইসলাম থেকে বিদায় নিতে হবে । কেননা নবী (সা.) এর উম্মত ইয়াজিদের খেলাফত রাজত্বের হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে । আমি আমার নানা আল্লাহর রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, আবু সুফিয়ানের বংশধরদের জন্য খেলাফত হারাম । ইত্যবসরে হোসাইন (আ.) ও মারওয়ানের মধ্যে এ মর্মে বহু কথা কাটাকাটি হয় । শেষ পর্যন্ত ক্রুদ্ধাবস্থায় মারওয়ান চলে গেল ।
মদীনা হতে ইমাম হোসাইনের (আ.) হিজরত
ওয়ালিদ ও মারওয়ানের সাথে সাক্ষাতের পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ লিখেছেন- ঐদিন ভোরে অর্থাৎ ৬০ হিজরীর ৩রা শাবান ইমাম হোসাইন (আ.) মক্কার দিকে রওয়ানা হন । আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর তার খেদমতে উপস্থিত হন । তারা বলেন যে, আপনি মক্কাতেই অবস্থান করুন । তিনি বলেন – আমার প্রতি রাসূল (সা.) এর যে নির্দেশ আছে তা আমাকে পালন করতেই হবে । ইবনে আব্বাস ইমামের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন । পথে তিনি বলছিলেন- হায় হোসাইন ! এরপর আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আসেন এবং বললেন- এখানকার পথহারা লোকদের সংশোধন করাই উত্তম হবে । যুদ্ধের পদক্ষেপ নিবেন না । তিনি বললেন- “আপনি কি জানেন না, দুনিয়া এতখানি নিকৃষ্ট যে, ইয়হিয়া ইবনে যাকারিয়া (আ.) এর মাথা বানি ইসরাইলের এক অবাধ্যের কাছে হাদিয়া হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । আপনার কি জানা নেই যে বনি ইসরাইল সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ৭০ জন নবীকে হত্যা করে । এরপর বাজারে এসে তারা কেনা কাটায় মশগুল হয় । অর্থাৎ যেন কোন ঘটনাই ঘটেনি । তবুও মহান আল্লাহ তাআলা তাদের আযাব ত্বরান্বিত করেননি । তাদেরকে অবকাশ দেন । আর অবকাশ দানের পরই চরম প্রতিশোধ গ্রহণ করেন । হে আব্দুল্লাহ ! মহান আল্লাহর ক্রোধ ও আযাবকে ভয় করুন এবং আমার সাহায্য থেকে পিছপা হবেন না ।”
হোসাইন (আ.) এর প্রতি কুফাবাসীর দাওয়াত
কুফাবাসীরা হযরত হোসাইন (আ.) এর মক্কা আগমন এবং ইয়াজিদের হাতে বাইআত গ্রহণে তার অস্বীকৃতির খবর জানত । এ খবর পেয়েই তারা সুলাইমান ইবনে সা’দ খাজায়ীর ঘরে সমবেত হয় । সমাবেশে সুলাইমান ইবনে সা’দ দাড়িয়ে সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন । বক্তব্য শেষে তিনি বলেন ওহে আলীর অনুসারীরা! তোমরা সবাই শুনেছ যে, মুআবিয়া মরে গেছে এবং নিজের হিসাব কিতাবের জন্য আল্লাহর দরবারে পৌছে গেছে । তার কৃতকর্মের ফল সে পাবে । তার ছেলে ইয়াজিদ ক্ষমতায় বসেছে । আপনারা আরো জানেন যে, হোসাইন ইবনে আলী (আ.) তার সাথে বিরোধিতা করেছেন এবং তিনি উমাইয়ার জালিম ও খোদাদ্রোহীদের দূরাচার থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন । তোমরা তার পিতার অনুসারী । হোসাইন (আ.) আজ তোমাদের সমর্থন ও সহযোগিতার মুখাপেক্ষী । যদি এ ব্যপারে নিশ্চিত হও যে, তাকে সাহায্য করবে এবং তার দুশমনদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, তাহলে লিখিত আকারে নিজের প্রস্তুতির কথা তাকে জানিয়ে দাও । যদি ভয় পাও এবং আশংকা কর যে, তোমাদের মধ্যে গাফলতি ও দুর্বলতা প্রকাশ পাবে, তাহলেও তাকে জানিয়ে দাও, তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দাও । তাকে ধোকা দিও না । এরপর তিনি নিম্নোক্ত বিষয়বস্তুর উপর একটি পত্র লেখেন-
بسم الله الرحمن الرحیم
এ পত্র হোসাইন ইবনে আলী (আ.) সমীপে সুলাইমান ইবনে সা’দ খাজায়ী, মুসাইয়্যেব ইবনে নাজরা, রেফাআ ইবনে শাদ্দাদ, হাবিব ইবনে মাজাহের আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়ায়েলসহ একদল মুমিন ও অনুসারীর পক্ষ হতে প্রেরিত হল ।
সালামের পর আল্লাহর তা’রিফ ও প্রশংসা যে, তিনি আপনার ও আপনার পিতার দুশমনদের ধ্বংস করেছেন । সেই জালিম ও রক্তপিপাসু, যে উম্মতের শাসন ক্ষমতা তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে অন্যায়ভাবে চেপে বসেছে এবং মুসলমানদের বাইতুল মাল আত্মসাৎ করেছে, মন্দ লোকদের বাচিয়ে রেখেছে, আল্লাহর সম্পদকে অবাধ্য দুরাচারীদের হাতে তুলে দিয়েছে, সামুদ সম্প্রদায় যেভাবে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হয়েছে তারাও সেভাবে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হোক । আপনি ছাড়া আমাদের আজ কোন নেতা নেই । কজেই আপনি যদি আমাদের শহরে তাশরীফ আনেন তাহলে বড়ই অনুগ্রহ হবে । আশা করি আপনার মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদেরকে সঠিক পথে হেদায়েত করবেন ।
কুফার গভর্ণর নোমান ইবনে বশির ‘দারুল এমারাত’ প্রাসাদে রয়েছে । কিন্তু আমরা তার পেছেনে জামাত ও জুমার নামাজে শরীক হইনি । ঈদের দিন তার সাথে ঈদগাহে যাইনি । যদি শুনতে পাই যে, আপনি কুফায় আসছেন তাহলে তাকে কুফা থেকে বিতাড়িত করে সিরিয়া পাঠিয়ে দেব । হে পয়গাম্বরের সন্তান আপনার প্রতি সালাম, আপনার পিতার পবিত্র রুহের প্রতি সালাম ।
চলবে।,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহু
©somewhere in net ltd.