নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম

MD ZAHID HOSSAIN

বেশুমার লানত

MD ZAHID HOSSAIN › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালাম

০৯ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ৮:১২

ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালাম
((((৪))))

মুসলিম ও হানির শাহাদত

ইবনে যিয়াদ বকর ইবনে হামারানকে দারুল ইমারার ছাদের উপর মুসলিমকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করার নির্দেশ দিল । মুসলিম যাওয়ার সময় তাছবীহ পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্র্রার্থনা করছিলেন । ছাদের উপর পৌছা পর্যন্ত তিনি রাসূল (সা.) এর উপর দরুদ পাঠ করতে থাকলেন ।
তার মাথা দেহ থেকে আলাদ হয়ে গেল । তার হত্যাকারী অত্যন্ত ভীত বিহ্বলভাবে ছাদ থেকে নেমে আসল । ইবনে যিয়াদ জিজ্ঞেস করল তোমার কি হল । বলল হে আমীর যখন তাকে হত্যা করছিলাম তখন কুৎসিত কাল চেহারা এক লোক দেখলাম যে আমার মুখোমুখি দাড়িয়ে দাতে নিজের আঙ্গুল কামড়াচ্ছে । তাকে দেখে এত ভয় পেয়েছি যে জীবনে কোন কিছুতেই এত ভয় পাইনি । যিয়াদ বলল মণে হয় মুসলিমকে হত্যা করাতে তোমার মণে ভয় ধরে গেছে । এরপর হানিকে নিয়ে আসার হুকুম দিল । হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে যিয়াদের কাছে নিয়ে যাওয়া হল ।তখন হানি বারবার বলছিলেন- “কোথায় আমার গোত্রের লোকেরা ? কোথায় আমার আত্মীয় স্বজন?”
জল্লাদ বলল মাথা নোয়াও । হানি বললেন খোদার কসম! আমার প্রাণ ও গর্দান দান করার জন্য আমি বদান্যতা দেখাব না । আমাকে হত্যা করার কাজে তোমাকে সহায়তা করব না । রশীদ নামক ইবনে যিয়াদের এক গোলাম তরবারীর আঘাত হেনে তাকে শহীদ করল ।
ইবনে য়িয়াদ মুসলিম ইবনে আকিল ও হানির মৃত্যূর খবর জানিয়ে ইয়াজিদকে চিঠি লিখল । কয়েক দিন পর জবাব আসল । ইয়াজিদ তার কাজের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখল- শুনেছি যে, হোসাইন কুফার দিকে আসছে । এ সময় তাকে ধরপাকর করতে হবে । প্রতিশোধ নিতে হবে । কারো বিরোধিতার আশংকা ও আলামত দেখা দিলে সাথে সাথে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ কর ।

হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) হিজরী ৬০ সালের জিলহজ্বের ৩ তারিখ মঙ্গলবার বর্ণনান্তরে ৮ই জিলহজ্ব বুধবার মুসলিমের মৃত্যূর খবর পাওয়ার আগেই মক্কা থেকে বের হন। কারণ, তিনি যেদিন মক্কাত্যাগ করেন সেদিনই মুসলিম ইবনে আকিলকে কুফায় শহীদ করা হয় । বর্ণিত আছে, হোসাইন (আ.) ইরাকের উদ্দেশ্য যাত্রা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর জন সমাবেশে দাড়িয়ে বলেন-

“মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসূলে খোদার প্রতি দরুদ । এরপর তিনি ফরমান, মহান আল্লাহ আদম (আ.) এর সন্তানদের উপর মৃত্যূর দাগ একে দিয়েছেন, যা তাদের জন্য সৌন্দর্য, যেমন যুবতীদের গলায় হারের দাগ (সৌন্দর্য) একে দেয় । আমি আমার পূর্ব পূরুষদের দেখার জন্য অত্যন্ত উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছি । যেমনি ভাবে হযরত ইউসুফকে দেখার জন্য হযরত উয়াকুব উদগ্রীব ছিলেন । আমার নিহত হওয়ার জন্য একটি ভূখণ্ড নির্ধারিত রয়েছে যেখানে আমি গিয়ে পৌছব। আমি বোধ হয় দেখতে পাচ্ছি যে, মরুভূমির নেকড়েরা নাওয়ামীস ও কারবালার মধ্যবর্তী স্থানে আমার দেহকে টুকরা টুকরা করছে, যাতে তাদের ক্ষুধার্ত পেটগুলোকে সান্তনা দেয় । সত্যিই ভাগ্যের লিখন থেকে পালানো যায়না । মহান আল্লাহ যাতে খুশী আমাদের পরিবারও তাতে খুশী । আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বালা মুসিবত আসে তাতে আমরা ধৈর্য ধারণ করব। তিনি ধৈর্যশীলদের প্রতিদান দান করবেন আমরা যে পয়গম্বরে খোদার (সা.)দেহেরই অংশ । আমরা রাসূলে পাক (সা.) থেকে কোন আবস্থাতেই পৃথক হব না । বেহেশতে তার সাথেই থাকব । এভাবেই তার সন্তুষ্টির ভাগী হওয়া যাবে আর আল্লাহ তার রাসূল (সা.) কে যে ওয়াদা দিয়েছেন তা পূর্ণ হবে । যারা আমাদের সাথে জানকে বাজী রেখে লড়তে প্রস্তুত এবং শাহাদত বরণ ও আল্লাহর সাথে মুলাকাতের জন্য উদগ্রীব তারা আমাদের সাথে আসুন, আল্লাহর সাহায্যে আগমীকাল আমরা মক্কা থেকে বের হয়ে যাব ।”

বর্ণিত আছে, আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জাবীর তাবারী ইমামী তার ‘দালায়েলুল ইমামাহ’ গ্রন্থে নিজস্ব বর্ণনা সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আবু মুহাম্মদ ওয়াকেদী ও যারারা ইবনে খালাজ বলেছেন যে, হোসাইন (আ.) ইরাকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার পূর্বে আমরা তার সাথে সাক্ষাত করে কুফাবাসীর অবহেলা সম্পর্কে তাকে অবহিত করি । তাকে আমরা বলেছি যে, কুফাবাসীর অন্তরসমূহ আপনার সাথে কিন্তু তাদের তরবারীগুলো আপনাকে হত্যার জন্য প্রস্তুত । এ কথা শুনে হোসাইন (আ.) হাত তুলে আকাশের দিকে ইশারা করেন । আসমানের দরজাগুলো খুলে গেল এবং অগনিত ফেরেশতা নাজিল হল-যাদের সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না । অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর যদি এমন না হত যে, আমার দেহ কারবালা প্রান্তরের নিকটবর্তী হবে, যদি সওয়াব হাতছাড়া হওয়ার ভয় না করতাম তাহলে এই শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে তাদের সাথে লড়াই করতাম । কিন্ত আমি নিশ্চিত যে, আমার ছেলে আলী ছাড়া আমি এবং আমার সকল সঙ্গীদের নিহত হওয়ার স্থান ওখানেই নির্ধারিত ।

মুতায়াম্মার ইবনে মুসান্না মাকতালুল হোসাইন নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন যে, তালবিয়ার দিনগুলো আসার সাথে সাথে আমর ইবনে সাআদ ইবনে আস বিরাট বাহিনী নিয়ে মক্কায় উপনীত হয় । ইয়াজিদের পক্ষ থেকে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় যে, সম্ভব হলে হোসাইনকে যেন হত্যা করে, যদি যুদ্ধ করতে হয় তার সাথে যুদ্ধ করবে । কিন্ত ঐ দিনই ইমাম হোসাইন মক্কা থেকে বেরিয়ে হয়ে যান ।

হযরত ইমাম জাফর সাদেক (আ.) হতে বর্ণিত মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া সেই এক রাতে হযরত হোসাইনের খেদমতে উপস্থিত হন, যার পরের দিনই সেখানেই তার যাত্রা করার কথা ছিল । তিনি বললেন- ভাইজান, আপনি জানেন যে, কুফাবাসী আপনার পিতা ও ভাইয়ের সাথে প্রতারণা করেছে । আমি আশংকা করছি তারা আপনার সাথেও প্রতারণা করবে । যদি ভাল মনে করেন মক্কায় থাকুন, কেননা আপনি আতি প্রিয় ও সম্মানিত ব্যাক্তি । তিনি বললেন– আমার ভয় হচ্ছে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া অতর্কিতে আল্লাহর ঘর হেরেমে এসে আমাকে হত্যা করবে এবং এর ফলে আমার দ্বারা আল্লাহর ঘরের মানহানি হবে । মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া বললেন–আপনার যদি এই আশংকা হয়, তাহলে ইয়ামেনের দিকে গমন করুন । কেননা সেখানে আপনি সম্মানিত হবেন । ইয়াজিদও আপনার নাগাল পাবে না । অথবা মরুভূমির কোথাও গিয়ে বসবাস করুন । বললেন-তোমার এই প্রস্তাব আমি চিন্তা করে দেখব ।

হযরত হোসাইনের কাফেলার মক্কা ত্যাগ

রাতের শেষ ভাগে হোসাইন (আ.) মক্কা থেকে যাত্রা করেন । এ সংবাদ মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়ার কাছে পৌছল । তিনি তাড়াতাড়ি এসে হযরত হোসাইন (আ.)যে উটনীতে সওয়ার ছিলেন, তার লাগাম ধরে বললেন- ভাইজান ! আপনি কি আমাকে ওয়াদা দেননি যে, আমার প্রস্তাব চিন্তা করে দেখবেন । বললেন-হ্যাঁ । জিজ্ঞেস করলেন- তাহলে যাওয়ার জন্য এত তাড়াহুরা করছেন কেন ? ইমাম বললেন- তুমি যাওয়ার পর রাসূল (সা.) আমার কাছে আসেন এবং বলেন-

یا حسین اخرج الی العراق فانّ الله قد ش أ ان یراک قتیلا –

“হে হোসাইন! তুমি ইরাকের দিকে যাও । কেননা, আল্লাহ তোমাকে নিহত হিসাবে দেখতে চান ।” মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া বললেন- انّ لله و انّ الیه راجعون

এখন যে নিহত হওয়ার জন্য যাচ্ছেন, এই মহিলাদের কেন সাথে নিয়ে যাচ্ছেন । হোসাইন (আ.) বললেন- রাসূলে খোদা (সা.)আমাকে বলেছেন যে-

انّ الله قد ش أ ان یراهن سبایا

“মহান আল্লাহ এসব মহিলাকে বন্দিনী হিসেবে দেখতে চান ।” এ অবস্থাতেই মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া তাকে বিদায় দেন এবং চলে যান । মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকুব কুলাইনি ‘কিতাবে রাসায়েল’ নামক গ্রন্থে হামজা ইবনে হামরান থেকে বর্ণনা করেন যে, আমরা হোসাইন (আ.) এর প্রস্থান এবং মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার ঘটনা বর্ণনা করছিলাম । ঐ মজলিসে ইমাম জাফর সাদেক (আ.) উপস্থিত ছিলেন । আমাকে বললেন- হে হামজা; তোমাকে একটা হাদীস বলব । যার ফলে এ মজলিস শেষ হওয়ার পর তুমি মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া সম্পর্কে আমার কাছে কোন কিছু জানতে চাইবে না । সে হাদীস হল- হোসাইন (আ.) মক্কা থেকে যখন রওয়ানা হন তখন একটি কাগজে লিখে দেন-

بسم الله الرحمن الرحیم

হোসাইন ইবনে আলীর পক্ষ হতে বনি হাশিম গোত্রের উদ্দেশ্যে লেখা। অতঃপর যে কেউ আমার সাথে আসবে শাহাদত বরণ করবে, যে ব্যক্তি আসবে না, জয়ী হবে না। ওয়াসসালাম।

হযরত হোসাইন (আ.)তানঈম হয়ে “যাতে আরক” নামক স্থানে উপনীত হন। সেখানে ইরাক হতে আগত বশর ইবনে গালিবের সাথে তার সাক্ষাত হয়। তার কাছে জিজ্ঞেস করলেন-ইরাকের লোকেরা কেমন ? বলল-অন্তরে আপনাকে ভালবাসেন, কিন্তু তাদের তরবারী বনি উমাইয়াদের পক্ষে। তিনি বললেন-ঠিকই বলেছেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, তার ইচ্ছাই চুড়ান্ত।

কাফেলা পুনরায় চলে যেতে লাগল । দ্বি-প্রহরের দিকে ছা’লাবার’ বাড়ীতে গিয়ে পৌছল। সেখানে হযরত হোসাইন (আ.) সামান্য ঘুমিয়ে পড়েন। একটু পরেই তিনি সজাগ হয়ে বলেন-এক গায়েবী কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম, বলছিল যে, আপনারা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন আর মৃত্যু খুব দ্রুত আপনাদেরকে বেহেশতের মাঝে নিয়ে যাচ্ছে। তার ছেলে আলী শুনে বলে উঠল-

یا ابه افلسنا علی الحق ؟ হে পিতা । আমরা কি সত্যের উপর নই? বললেন-খোদোর কসম। নিশ্চয়ই আমরা সত্যের উপর রয়েছি। আলী বলল-

اذن لا نبالی بالموت

“তাহলে আমরা মৃত্যুর মোটেও তোয়াক্কা করি না।” হযরত হোসাইন (আ.)বললেন-প্রিয় আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন। ঐ রাতে তিনি সা’লাবার বাড়ীতেই অবস্থান করেন
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম
মোঃ জাহিদ হোসেন
@হাইলাইট করুন
@ফলোয়ার
@হাইলাইট করুন
মাজলুমে কারবালা আলে মোহাম্মাদ আঃ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.