নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম

MD ZAHID HOSSAIN

বেশুমার লানত

MD ZAHID HOSSAIN › বিস্তারিত পোস্টঃ

হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম

২৭ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮

হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম
((((((((৮))))))))
আলী আকবর (আ.)-এর বীরত্ব

ইমাম হোসাইন (আ.)এর সঙ্গীরা ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত অবস্থায় একে একে ভূমিতে লুটিয়ে পড়েন। আহলে বাইত ছাড়া আর কেউ বেচে নেই।

এ সময় সবচেয়ে সুন্দর অবয়ব, সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী আলী বিন হোসাইন (আ.) তার পিতার কাছে এসে যুদ্ধের অনুমতি প্রার্থনা করেন। ইমাম হোসাইন (আ.) তৎক্ষণাৎ অনুমতি দেন। এরপর তার দিকে উদ্বেগের দৃষ্টি ফেলেন আর ইমামের দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। অশ্রুসিক্ত অবস্থায় বললেনঃ

أللّهُمّ اشْهدْ، فقدْ برز إليْهمْ غُلامٌ أشْبهُ النّاس خلْقا وخُلُقا ومنْطقا برسُولك صلّى اللّه عليه و آله ، وكُنّا إذا اشْتقْنا إلى نبيّك نظرْنا إليْه

হে খোদা,তুমি সাক্ষী থাক! তাদের দিকে এমন এক যুবক অগ্রসর হয়েছে যে শরীরের গঠন, সৌন্দর্য চরিত্র ও বাক্যালাপে তোমার রাসূল (সা.) এর সাদৃশ্যপূর্ণ। আমরা যখন তোমার নবী (সা.) এর দিকে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতাম এ যুবকের দিকেই তাকাতাম। এরপর ওমর বিন সা’দের প্রতি লক্ষ্য করে সুউচ্চকন্ঠে বললেনঃ

يابْن سعْدٍ قطع اللّهُ رحمك كما قطعْت رحمى

হে সা’দের ছেলে দুশমনের মোকাবিলায় প্রচণ্ড লড়াই শুরু করেন। বহুসংখ্যক শত্রুসৈন্য হত্যা করে ক্লান্ত-শ্রান্ত-তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পিতা ইমাম হোসাইনের (আ.) কাছে এসে বললেনঃ

يا أبت، ألْعطشُ قدْ قتلنى ، وثقْلُ الْحديد قدْ أجْهدنى ، فهلْ إلى شرْبةٍ منْ الْم أ سبيلٌ؟

হে মহান পিতা, পিপাসায় আমার জীবন ওষ্ঠাগত, যুদ্ধের প্রচণ্ডতায় আমি ক্লান্ত, আমাকে একটু পানি দিয়ে জীবন বাচাতে দাও। ইমাম হোসাইন (আ.) কান্নাবিজড়িত কন্ঠে বললেন- اغوْثاهُ হায় কে সাহায্য করবে। প্রিয় ছেলে ফিরে যাও, যুদ্ধ চালাও সময় ঘনিয়ে এসেছে। একটু পরেই আমার নানা মুহাম্মদ (সা.)-এর সাক্ষাৎ করবে। তার হাতের পেয়ালা এমনভাবে পান করবে-এরপর আর কখনও পিপাসা হবে না। আলী ময়দানে ফিরে যান, জীবনের মায়া ত্যাগ করে শাহাদতের জন্য প্রস্তুতি নেন।

প্রচণ্ড হামলা শুরু করেন। হটাৎ মুনকিজ বিন মুররা আবদী (আল্লাহর লানত তার উপর বর্ষিত হোক) আলী বিন হোসাইন (আ.) এর দিকে তীর নিক্ষেপ করেন। এ তীরের আঘাতে তিনি ধরাশায়ী হয়ে পড়েন। চিৎকার দিয়ে বলেনঃ

يا أبتاهُ عليْك منّى السّلامُ، هذا جدّى يقْرؤُك السّلامُ ويقُولُ لك: عجّل الْقُدُوم عليْنا

বাবা! খোদা হাফেজ, আপনার প্রতি সালাম। আামর সামনেই নানা মুহাম্মদ (সা.) আপনাকে সালাম জানাচ্ছেন আর বলছেন-“হে হোসাইন তাড়াতাড়ি আমাদের সাথে মিলিত হও।” এরপরই একটি চিৎকার দিয়ে শাহাদাতের শরবত পান করেন।

হোসাইন (আ.) নিহত সন্তানের মাথার কাছে দাড়ালেন।

তার গালে গাল লাগিয়ে চুমু খেলেন আর বললেনঃ

হে বৎস! আল্লাহ সে সম্প্রদায়কে হত্যা করবে যে তোমাকে হত্যা করেছে। এরা আল্লাহর কাছে কতই না অপরাধ করেছে, আল্লাহর রাসূলের সম্মানে কতই না আঘাত হেনেছে।

বর্ণিত হয়েছে যয়নব (আ.) তাবু থেকে বের হয়ে ময়দানের দিকে ছুটে চললেন এবং ভয়ানক চিৎকার দিয়ে বললেন-

يا حبيباهُ يابْن أخاهُ হে আদরের ধন, হে ভাতিজা, আপন ভাতিজার লাশের কাছে এসে গড়িয়ে গড়িয়ে কেদেছিলেন। ইমাম হোসাইন (আ.) এসে তাকে নারীদের তাবুতে ফিরিয়ে নেন। এরপরই আহলে বাইতের যুবকরা একে একে ময়দানে অবতীর্ণ হলেন এবং ফরিয়াদ করে বললেন-হে আমার চাচাতো ভাইয়েরা, হে আমার বংশধরগণ ধৈর্য ধারণ করো। আল্লাহর শপথ, আজকের দিনের পর কোনদিন অপমানিত লাঞ্ছিত হবে না।

কবি বলেনঃ

এসেছে নিশি, পূর্ণশশী তুমি তো আসনি

জীবন ওষ্ঠাগত, আমার জীবন হে আলী আসনি

খাচার পাখী মরুর দিকে উড়ে গেল

কিন্তু হে হোমা পাখী তার কাছেও আসনি

আমার সম শরৎ অন্তর তোমার দিদারে হতো বসন্ত

হে গোলাপ পুষ্প কেন তুমি আসনি

ছাড়লাম অশ্রু, গেলাম সবার আগে তোমার গমন পথে

তোমার প্রতীক্ষায় হলাম পেরেশান-তুমি তো আসনি

অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষায় ছিলাম তুমি যদি আস

তোমার পায়ে জান করব কোরবান, তুমি তো আসনি।

কাসেম বিন হাসান (আ.) ময়দানে আসলেন

রাবী বলেছেনঃ এমন একজন যুবক ময়দানে এসে যুদ্ধ শুরু করলেন যার চেহারা ছিল পূর্ণ চাঁদের মতো। ইবনে ফুজাইল আযদী তার মাথায় এমন জোরে তরবারী চালিয়ে দেয় এতে তার মাথা দু’ভাগ হয়ে যায়। তিনি ধূলায় লুটিয়ে পড়ে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠেনঃ ‘হে চাচা! হোসাইন (আ.) শিকারী বাজপাখির মতো ময়দানে ঝাপিয়ে পড়লেন । ক্রোধান্বিত বাঘের মত ইবনে ফুজাইলের উপর হামলা চালান। এতে তার হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার চীৎকার শুনে কুফাবাসী সৈন্যরা তাকে রক্ষার জন্য হামলা চালায় কিন্তু সে ঘোড়ার পায়ের নীচে ছিন্নভিন্ন ও ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়।

ময়দান ধূলায় ছেয়ে যায়। দেখলাম হোসাইন (আ.) কাসেমের শিয়রে উপস্থিত হলেন। সে তখনও হাত-পা নাড়ছিল। হোসাইন (আ.) বললেন-

بُعْدا لقوْمٍ قتلُوك، ومنْ خصمهُمْ يوْم الْقيامة فيك جدُّك

“সে সম্প্রদায়ের প্রতি অভিশাপ-যারা তোমাকে হত্যা করেছে। কিয়ামত দিবসে তোমার হত্যার বিচার যারা চাইবেন তারা হলেন তোমার নানা ও বাবা।”

এরপর বললেনঃ

আল্লাহর শপথ! তোমার চাচাকে কেউ আহ্বান করলে তিনি সাড়া দেবেন না এটা হতেই পারে না, যদিও তোমার কোন উপকারে নাও আসে।

“খোদার শপথ! আজ এমন একটি দিন যেদিন তোমার চাচার দুশমনের সংখ্যা অধিক আর বন্ধুর সংখ্যা অনেক কম।”

একথা বলেই ইমাম কাসেমকে বুকে তুলে আহলে বাইতের শহীদগণের সারিতে রেখে দেন।

হেসাইন (আ.) যখন দেখলেন যুবকদের দু’হাত কর্তিত অবস্থায় ধূলায় লুটিয়ে আছে, শাহাদাতের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। উচ্চকন্ঠে ফরিয়াদ করলেনঃ

هلْ منْ ذابٍّ يذُبُّ عنْ حرم رسُول اللّه؟ هلْ منْ مُوحّدٍ يخافُ اللّه فينا؟ هلْ منْ مُغيثٍ يرْجُو اللّه بإغاثتنا؟

কেউ আছ কি যে দুশমনদেরকে রাসূলে খোদা (সা.) এর পবিত্র হেরেম থেকে তাড়িয়ে দেবে? এক আল্লাহর পূজারী কেউ আছ যে আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে। কেউ আছ যে আল্লাহর জন্যই আামাদের সাহায্য করবে?

ইমাম (আ.) এর এ কথাগুলো তাবুতে অবস্থানকারী নারীদের কানে পৌছলে তাবুর ভেতর কান্নার রোল পড়ে যায়।

কবি বলেন-

বিশ্বাসের পথে দুঃখ-যাতনা কতই না সুখের

নিজের জীবন দিয়ে সকলের জীবন ক্রয় কতই না আনন্দের।

তোমার মত বন্ধুর কদমে জান দেয়া কতই না সৌভাগ্যের।

কারবালার ধুলাকালিতে রক্তে গড়াগগি কতই না আনন্দের।

তোমার মত বাদশাহর সামনে থেকে কিসের চিন্তা, শংকা

তোমার পথে হাতযুগল কর্তিত হওয়া কতই না খুশীর বিষয়।

দুধের শিশুর শাহাদাত

হোসাইন (আ.) তাবুর দরজায় এসে যয়নবকে বললেন-

ناولينى ولدى الصّغير حتّى أُودّعهُ

“আমার ছোট ছেলেকে দাও-তার কাছে থেকে বিদায় নেই।”

দুধের শিশুকে হাতে তুলে নিয়ে ইমাম (আ.) তাকে চুমু দেয়ার জন্য উপরের দিকে উঠাচ্ছেন এমন সময় হারমালা বিন কাহেল আসাদীর (আল্লাহর লানত তার উপর আপতিত হোক) একটি তীর এসে শিশুর গলায় বিদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে আলী আসগর শাহাদাত বরণ করেন। হোসাইন (আ.) বললেনঃ এ শিশুকে নাও, নিজের হাত মোবারক শিশুর গলার রক্তস্রোতে রাখলেন। যখন তার হাত তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়ে পড়ে, আকাশের দিকে রক্ত ছুড়ে বললেন-

“এসব মুছিবত আমার জন খুবই সহজ। কেননা, এসবই আল্লাহর রাস্তায় হচ্ছে আর আল্লাহ দেখছেন।”

হযরত ইমাম বাকের (আ.) বলেন-ঐ সব রক্তকণা যা ইমাম হোসাইন আকাশের দিকে নিক্ষেপ করেন একটুও যমীনে ফিরে আসেনি।

প্রখ্যাত লেখক জুরজী যায়েদান লিখেছেন-এ দুধের শিশুর শাহাদাত হোসাইন বিন আলীর নিষ্পাপ ও মজলুম হওয়াকে দুনিয়ায় প্রমাণ করে দিয়েছে। কেননা যদি সে শহীদ না হতো সম্ভাবনা ছিল বনি উমাইয়ার প্রচারযন্ত্র জনগণকে এই বলে বিভ্রান্ত করতো যে, হোসাইন (আ.) তার একদল সঙ্গী-সাথী নিয়ে রাজত্ব লাভের জন্য যুদ্ধের ময়দানে এসেছেন। আমরা প্রতিরক্ষার জন্যই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি, আর এর ফলে তার সঙ্গী-সাথীসহ নিহত হয়েছে, এতে আমাদের কোন দোষ নেই।”

কিন্তু জনতার প্রশ্ন যদি ধরে নেয়া হয় হোসাইন (আ.) ও তার সাথীরা অপরাধী এবং যুদ্ধাংদেহী, দুধের শিশু তো যুদ্ধ করতে আসেনি, কাউকে হত্যা করেনি-তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হল কেন? এ নিষ্পাপ দুধের শিশুর রক্তে কারবালা রঞ্জিত হল কেন?

কবি বলেনঃ

হোসাইন এসেছে ময়দানে

আর আলী আসগর তার কোলে।

নীরব ঠোঁটে সে বলেছে তার মনের জ্বালা

শংকাহীন পানিবিহীন অবস্থায়

তার কোলে মাথা ঝুকিয়েছে

রংবিহীন ঠোঁট খুনরাঙা অন্তরের দৃষ্টি

চিন্তিত শংকিত, কারবালার

পরিস্থিতি রহিত করেছে

সব ধৈর্য ও হুশ।

দুধ নেই তাতেও নেই কান্না, পানি নেই

তবুও নেই আহাজারি

কখনও বের করেছেন জিহ্বা অতি আরামে

তার নিরব ঠোঁটে লালাও নেই আজ

আকবরের মতো আসগরও আল্লাহর

পথে যাত্রী মাছের মতো

লাফাচ্ছে ডাঙায়, কিন্তু তার

ঠোঁটে রয়েছে মুচকি হাসি।

বাদশাহর আগমনে প্রতীক্ষায় বাঁশির সুর

বেজে উঠলো আপাদমস্তক তার

রক্তে রঞ্জিত আর আলী আসগর

তার কোলে, এ তৃষ্ণার্ত মেহমানের

গলে বিষাক্ত তীর মারাত্মকভাবে

হল বিদ্ধ।

হযরত আবুল ফজল (আ.) এর ত্যাগ ও শাহাদত

রাবী বলেনঃ হোসাইন (আ.) পিপাসায় কাতর হয়ে ফোরাতের তীরে উপস্থিত হলেন। সাথে রয়েছে তার ভাই আব্বাস। ইবনে সা’দের বাহিনী ঝাপিয়ে পড়ল দু’জনার উপর। তাদের পথ বন্ধ করল। বনি দারম গোত্রের এক দুরাচার আবুল ফজল আব্বাস (আ.) এর দিকে তীর নিক্ষেপ করলে তার পবিত্র মুখে বিদ্ধ হয়। ইমাম হোসাইনই (আ.) তা টেনে বের করে নেন তার হাত রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। রক্তগুলো ছুড়ে ফেলে বললেন-হে খোদা! এ জনগোষ্ঠী তোমার নবী নন্দিনীর সন্তানের উপর এ জুলুম চালাচ্ছে এদের বিরুদ্ধে তোমার দরবারে বিচার দিচ্ছি ।ইবনে সা’দের বাহিনী মুহূর্তের মধে ইমাম হোসাইন (আ.) থেকে হযরত আব্বাস (আ.) কে ছিনিয়ে নেয়। চতুর্মুখী আক্রমণ, তরবারীর সম্মিলিত আঘাতে হযরত আব্বাস (আ.) তার শাহাদাতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কবি তাই বলেছেন-

কতই না উত্তম ব্যক্তি যার জন্য ইমাম হোসাইন (আ.) কারবালার এ কঠিন মুছিবতের সময়ও কেদেছেন। তিনি ছিলেন হোসাইনের ভাই তার বাবা ছিলেন আলী, তিনি তো আর কেও নন রক্তাক্ত বদন আবুল ফজল আব্বাস। তিনি ছিলেন ইমাম হোসাইনের সহমর্মী, কোন কিছুই তাকে এ পথ থেকে সরাতে পারেনি। প্রচণ্ড পিপাসা নিয়ে ফোরাতের তীরে পৌছেন কিন্তু হোসাইন যেহেতু পান করেন নি তিনিও তাই পানি মুখে নেননি।

অন্য কবি বলেন-

মুষ্ঠির মাঝে পানি লইলেন-মন ভরে পান করে নিবারিবেন তৃষ্ণা কিন্তু যখনই হোসাইনের পিপাসার কথা মনে পড়লো-হাতের মুটোয় পানিতে অশ্রু ফেলে ফিরে আসলেন।

হযরত আবুল ফজল আব্বাস (আ.) এর মহান আত্মত্যাগ সকল লেখক, চিন্তাশীলদের দৃষ্টিতেই গুরুত্বপূর্ণ।

আল্লামা মাজলিশী তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বিহারের’ মধ্যে লিখেন-হযরত আব্বাস ফোরাতের তীরে গেলেন। যখনই অঞ্জলী ভরে পানি পান করতে চাইলেন হটাৎ হোসাইন (আ.) ও তার আহলে বাইতের পানির পিপাসার যন্ত্রণার কথা মনে পড়ল। পানি ফোরাতেই ফেলে দিলেন পান করলেন না।

একজন আরবী কবি বলেন-

আবুল ফজল আব্বাস তার সবচেয়ে মূল্যবান প্রাণ হোসাইন (আ.) এর জন্যই উৎসর্গ করেছেন। হোসাইন (আ.) পান করার পূর্বে তিনি নিজে পান করলেন না মানুষের কর্মের সর্বোত্তম কর্ম ও মূল কাজই তিনি করলেন, আপনি তো গৌরবের দিবসে রাসূলের দুই নাতির ভাই আর আপনিই তো পানি পানের দিবসে করেছেন আত্মত্যাগ হে আবুল ফজল।

পানি টলটলায়মান-বাদশাহ তৃষ্ণায় ওষ্ঠাগত,

উদ্দম তার অন্তরে হাতে রয়েছে পানির মশক,

মুরতাজার সিংহ শাবকেরে হামলা করল এমনভাবে

এ যেন অগণিত নেকড়ের মাঝে এক বাঘ।

এমন একটি বদন কেউ দেখেনি

যাতে কয়েক হাজার তীর

এমন একটি ফুল কেউ দেখেনি

যাতে রয়েছে কয়েক হাজার কাটা।

যুদ্ধের ময়দানে শহীদগণের নেতা ইমাম হোসাইন (আ.)

ইমাম হোসাইন (আ.) ময়দানে এসে শত্রুপক্ষকে মল্লযুদ্ধের আহ্বান জানালেন। দুশমনের খ্যাতনামা বীর একে একে ইমাম (আ.) এর আঘাতে ধরাশায়ী হচ্ছে। তাদের বহুসংখ্যক নিহত হওয়ার পর ইমাম (আ.) হটাৎ বলে উঠলেন-

লজ্জার বাধনে থাকার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়

জাহান্নামে যাওয়ার চেয়ে লজ্জাই শ্রেয়

একজন বর্ণনাকারী লিখেছেনঃ আল্লাহর শপথ! দুশমন বেষ্টিত সন্তান, পরিবার ও সাথীদের লাশ চোখের সামনে। এ অবস্থায় হোসাইন (আ.) এর চেয়ে অধিক দৃঢ়চিত্ত বীর আর কেউ হতে পারে না। যখনই শত্রুবাহিনী সম্মিলিত হামলা চালাতো তিনি তাদের দিকে তরবারী হানতেন পুরো বাহিনী চতুর্দিকে নেকড়ের মত ছিটকে পড়তো। এক হাজারের অধিক সৈন্য এক সাথে তার উপর হামলা চালায়। ইমাম (আ.) এর সামনে এসে পঙ্গপালের মতো পালাতে থাকে। একটু দূরে গিয়েই বলতে থাকে-

লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে-দুশমন প্রায় তাবুর কাছে পৌছে গেছে । এমন সময় হোসাইন (আ.) ফরিয়াদ করে বললেন-

হে আবু সুফিয়ানের বংশের দল, যদি তোমাদের দীন না থেকে, পরকালেকে ভয় না-ও করো অন্ততপক্ষে দুনিয়ায় স্বাধীন থাকো। তোমাদের বংশ, বুনিয়াদের দিকে তাকাও যদি আরব হয়ে থাক, তোমরা তাই দাবী করছ।

শিমার বলল-হে ফাতেমার সন্তান কি বলছ? ইমাম (আ.) বললেনঃ

আমি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করব আর তোমরা আমার সাথে যুদ্ধ করবে। নারীরা তো কোন অপরাধ করেনি। আমি যতক্ষণ জীবিত আছি এসব অকৃতজ্ঞ, মূর্খ ও জালেমদেরকে আমার তাবুতে ঢুকতে দেব না। শিমার বলল তোমার এ প্রস্তাব গ্রহণ করলাম। এরপরই শিমারের নেতৃত্বে ইমাম হোসাইন (আ.) কে হত্যার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। তারা ইমাম হোসাইন (আ.) এর উপর হামলা করে। ইমাম (আ.) ও পাল্টা হামলা চালান। এ সময় ইমাম পিপাসায় কাতর হয়ে পড়েন। শত্রুদের কাছে একটু পানি চান কিন্তু তারা এক ফোটা পানিও দেয়নি। এ সময়ের মেধ্যে ইমামের পবিত্র বদন ৭২টি আঘাতে জর্জরিত হয়ে যায়।

তিনি থমকে দাড়িয়ে গেলেন। দুর্বলতার কারণে কিছু সময় যুদ্ধ করতে সক্ষম হননি। দাড়িয়ে আছেন এমন সময় একটি পাথর এসে তার পেশানীতে আঘাত হানল। রক্তধারা গড়িয়ে পড়ে জামা ভিজতে শুরু করে। তিনি নিজের জামা দিয়ে রক্তস্রোত বন্ধ করতে চেষ্টা করেন এমন সময় একটি বিষাক্ত ত্রিশূল এসে ইমামের বুকে বিদ্ধ হয়-ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মুখ দিয়ে বের হযে আসে-

بسْم اللّه و باللّه و على ملّة رسُول اللّه

এরপর আকাশের পানে মুখ করে ইমাম বলতে লাগলেন-

“হে খোদা, তুমি জানো এ বাহিনী যাকে হত্যা করছে নবী নন্দিনীর ছেলেদের মধ্যে সে ছাড়া আর কেউ নেই।” এরপর নিজেই ত্রিশূলটি টেনে বের করেন আর রক্ত বন্যার মতো গড়িয়ে পড়তে থাকে। এর ফলে তিনি যুদ্ধ করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি নীরব নিথর অবস্থায় দাড়িয়ে আছেন কিন্তু যেই তাকে হত্যার জন্য এগিয়ে আসে সেই আল্লাহর নিকট হোসাইনের হন্তা হিসেবে চিহ্নিত হবার ভয়ে আবার পিছু হটে। এরপর কান্দা গোত্রের মালেক বিন ইয়াসার ইমাম হোসাইনের (আ.) সামনে দাড়িয়ে তাকে অত্যন্ত খারাপ গালি দিয়ে ইমামের মাথায় তরবারী চালিয়ে দেয় । তাতে তার পাগড়ী ভেদ করে মাথায় ঢুকে পড়ে। ইমামের গোটা পাগড়ী রক্তে রঞ্জিত হয়। ইমাম একখানা রুমাল দিয়ে মাথা বাধলেন ও মাথায় দেয়ার জন্য একটি টুপি চাইলেন। এরপর পাগড়ী দিয়ে মাথা ভালভাবে বাধলেন। ইবনে যিয়াদের বাহিনী একটু বিরতি দিয়েই চতুর্দিক থেকে তাকে ঘিরে ফেলে।

লানাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন
লাইনাতুল্লাহি আলা কাউমে জালেমিন
দুশমানে মুনকারে আহলে বাইত আঃ পার বেশুমার লানত

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.