![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বেশুমার লানত
ইয়াজিদ যদি উম্মতের শাসক হয় তাহলে এখানেই ইসলামের সমাপ্তি
শোকাবহ মহররম উপলক্ষে ইমাম হুসাইন (আ) তৃতীয় পর্ব সবাইকে জানাচ্ছি সংগ্রামী সালাম ও গভীর শোক আর সমবেদনা।
কুফাবাসীরা ইমাম হুসাইন (আ.) ও উনার পিতা ও বড় ভাইয়ের প্রতি তেমন একটা বিশ্বস্ততা ও অনুরাগ দেখাতে না পারা সত্ত্বেও ইমাম হুসাইন (আ) কেন জুলুম ও স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্ত করার আকুল আবেদন সম্বলিত তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে। আত্মীয়-অনাত্মীয়,চেনা-অচেনা নির্বিশেষে সবাই কুফার লোকদের বিশ্বাসঘাতকতার ইস্যু টেনে ইমাম হুসাইন (আ.) কে বিরত রাখতে চেষ্টা করছিল। তারা যে ইমাম হুসাইনের র (আ.) জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এ চেষ্টা চালিয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ইমাম হুসাইনও (আ.) তাদের চিন্তাধারাকে সরাসরি নাকচ করেননি। অথচ মক্কা,কারবালা এবং কুফার পথে তাঁর বিভিন্ন ভাষ্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, ইমাম হুসাইনের(আ.)ও একটা স্বতন্ত্র চিন্তাধারা ছিল যা অনেক ব্যাপক ও দূরদর্শী। তাঁর হিতাকাঙ্খীদের ভাবনা ছিল কেবল নিজের ও
পরিবার-পরিজনদের নিরাপত্তা-কেন্দ্রীক। অথচ ইমাম হুসাইনের (আ.) চিন্তা ছিল দীন,ঈমান ও আকীদার নিরাপত্তাকে নিয়ে। তাই, মারওয়ানের এক নসিহতের জবাবে ইমাম হুসাইন আঃ বলেনঃ ইয়াজিদের মতো কেউ যদি উম্মতের শাসক হয় তাহলে এখানেই ইসলামের সমাপ্তি
মুয়াবিয়া ও ইয়াজিদের ইসলামী শাসন ক্ষমতা লাভ এবং ধর্মে বিশ্বাসী মুসলমানদের নিয়ে যথাক্রমে হযরত আলী (আ.) ও ইমাম হুসাইনের র (আ.) বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী গঠন ছিল ইসলামের জন্য এক সর্বনাশা পরিস্থিতি। ইসলামের সাথে উমাইয়াদের তীব্র শত্রুতাসুলভ আচরণের অন্যতম কারণ ছিল তিন বংশ ধরে চলে-আসা বনি হাশিম ও বনি উমাইয়ার গোষ্ঠীগত কোন্দল। বনি হাশিম ইসলাম ও কুরআনের ধারক ও বাহক হবার গৌরব লাভ করায় বনি উমাইয়ারা ঈর্ষায় পুড়ে মরতে থাকে। ফলে তারা বনি হাশিমকে তো দূরের কথা ইসলাম ও কুরআনকেও সহ্য করতে পারেনি। ইসলামের সঙ্গে উমাইয়াদের শত্রুতার আরেকটি কারণ হলঃ তৎকালীন কুরাইশ গোত্রের নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে উমাইয়াদের পার্থিব জীবনধারার সাথে ইসলামী বিধানের অসামঞ্জস্য ও বৈপরীত্য। ইসলামী নীতিমালায় তাদের প্রভুত্বমূলক প্রভাব ক্ষুণ্ণ হত। তাদের ভাব ও মন-মানস ছিল সুবিধাবাদী ও বস্তুবাদী।
কিন্তু উমাইয়া দল চিরকাল ইসলামের শত্রুতা করেও তাদের গায়ে ইসলামী লেবেল লাগিয়ে ইসলামের শাসন ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সক্ষম হয়েছিল! এর কারণ ছিল জনগণের অসচেতনতা ও মুসলমানদের হাতে ব্যাপক দেশজয়ের ফলে আরবের ইসলামী সংস্কৃতিতে অনারব ও অনৈসলামী সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ! আরবে নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত মজবুত হতে না হতেই দ্বিতীয় খলীফার আমলে ব্যাপক দেশজয়ের ফলে ইসলামের অতি দ্রুত প্রচার ও প্রসার ঘটে। তাই ইসলাম তার স্বাভাবিক গতিতে সীমান্ত অতিক্রম করে দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়েনি। ফলে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে দেখা দেয় নানা দ্বন্দ্ব-বিভেদ এবং গড়ে ওঠে অসংহত মুসলিম সাম্রাজ্য। ফলে সবার ইমানি অবস্থান সমান ছিল না, এমনকি অনেকের মধ্যে কুফুরি প্রবণতার প্রভাব প্রবল হয়েছে বা প্রবল রয়ে গিয়েছিল!
পবিত্র কুরআন বহুবার মুনাফিকদের কথা উল্লেখ করেছে। মুনাফিকদের ব্যাপারে সতর্ক করার ধরন দেখে বোঝা যায় যে, এরা মারাত্মক। কুরআন মুসলমানদেরকে এই গুরুতর বিপদ থেকে রক্ষা করতে চায়। মুনাফিকদের ও তাদের বংশধারাকে সুপথে আনতে অর্থ সাহায্য দেয়ার প্রথা চালু হলেও গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে তাদের নিয়োগ করা হত না রাসুলের যুগে। প্রথম দুই খলিফার যুগেও এ ধারা মোটামুটি মেনে চলা হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় খলিফার সময় মারাত্মক ভুল পদক্ষেপ নিয়ে এ ধারা বদলে দেয়া হয়। ফলে মারওয়ান ও তার বাবা হাকাম নির্বাসন থেকে ফিরে আসে। এ সময় কুচক্রী উমাইয়ারা বড় বড় পদে আসীন হয়ে বায়তুল মালে হস্তক্ষেপ করে। যেটুকু তাদের ঘাটতি ছিল তা হল ধার্মিকতা। কিন্তু তৃতীয় খলিফার হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে অদ্ভুত এক প্রতারণা ও ধোঁকাবাজির মাধ্যমে‘ ধার্মিক’ হবার গৌরবটাও তারা হাতে পায় । ফলে মুয়াবিয়া ধর্মের নামেই হযরত আলীর (আ.) মতো ব্যক্তির বিরুদ্ধেও বিশাল সেনাবাহিনী গড়তে সক্ষম হয়। এরপর মুয়াবিয়া আলেমদেরকে ভাড়া করে জাল হাদিসও বানাতে থাকে।
আসলে মুয়াবিয়া কূটবুদ্ধি, পূর্ববর্তী খলীফাদের সরলতার সুযোগে ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় এ ধরনের ব্যক্তিদের উত্থান আর জনগণের অজ্ঞতা ও মূর্খতাই কারবালার প্রেক্ষাপট রচনা করেছে। মুয়াবিয়া উমাইয়া কুচক্রীরা জাতিগত ব্যবধান সৃষ্টির চেষ্টা করতো যার ভিত্তিতে আরব,অনারবের চেয়ে অগ্রগণ্য হতো। তাদের বিভেদ নীতির কারণে এক শ্রেণীর লোকেরা লাখপতি হত অথচ ফকীররা ফকীরই থেকে যেত। আলী (আ.) শহীদ হলে মুয়াবিয়া খলীফা হয়। কিন্তু মৃত্যুর পরেও হযরত আলী (আ.) আদর্শিক শক্তি হয়েই বহাল থাকায় বড়ই উদ্বিগ্ন ছিল উমাইয়ারা। ফলে মুয়াবিয়া আদেশে মিম্বারে ও জুমার খোতবায় হযরত আলী (আ.) কে অভিশাপ দেয়ার প্রথা চালু হয়। এ ছাড়াও আলীর (আ.) সমর্থকদেরকে বেপরোয়াভাবে হত্যা করা হতে থাকে এবং মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করে হলেও তাদেরকে বন্দী করা হত যাতে আলীর (আ.) গুণ-মর্যাদা প্রচার না হয়। পয়সা খরচ করে আলীর (আ.) শানে বর্ণিত হাদিসগুলো জাল করে উমাইয়াদের পক্ষে বর্ণনা করা হয়। তবুও উমাইয়া শাসনের জন্যে আলীর সমর্থকরা হুমকি হিসাবেই আত্মপ্রকাশ করে।
মুয়াবিয়া ছলে বলে কৌশলে প্রকৃত ইসলামের অনুসারীদের ও প্রকৃত ইসলামের গোঁড়া কাটার চেষ্টা করলেও তার ছেলে ইয়াযিদ কোনো রাখঢাক না রেখেই প্রকাশ্যে ব্যভিচার ও মদপান এবং বানরকে মাওলানা সাজিয়ে দরবারে রাখার মত কাণ্ড করতে থাকায় ইসলামের ইজ্জত বলে আর কিছুই রইল না। এ অবস্থায় সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের রোধ সংক্রান্ত কুরআনের নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য ইয়াযিদি শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবের ডাক দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ই ছিল না ইমাম হুসাইনের সামনে। আর এ নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য তিনি নিজের জীবন, শিশু সন্তানসহ কয়েকজন সন্তান, নবী-পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের জীবন বিসর্জন ও এমনকি এই মহান পরিবারের নারীদের অসম্মানিত হওয়ার ঝুঁকি মেনে নিতেও কুণ্ঠিত হননি যা ইতিহাসে নজিরবিহীন!# আল্লাহ পাক অভিশাপ বর্ষন করুন উমাইয়া আব্বাসিয়া বংশধরের উপর
©somewhere in net ltd.