![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বেশুমার লানত
ফাতেমা বিনতে হোসাইনের ভাষণ
যায়দ বিন মুসা বিন জাফর থেকে বর্ণিতঃ ইমাম হোসাইন তনয়া ফাতেমা সুগরা কারবালা থেকে কুফায় আগমন করার পর এ ভাষণটি দিয়েছিলেনঃ-
বালুকণা ও পাথরের সংখ্যা যেমন অগণিত ও অননুমেয় তদ্রুপ মর্ত্যলোকে যা কিছু আছে সেগুলো সহ আরশ পর্যন্ত যা কিছু আছে সে গুলোর ওজনের পরিমাণ মহান আল্লাহর প্রশংসা করছি। তার উপর বিশ্বাস স্থাপন ও ভরসা করছি। আর সাক্ষ দিচ্ছি যে মহান আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় । তার কোন শরীক বা অংশীদার নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও প্রেরিত পুরুষ। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদের (সা.) বংশধরদেরকে শরীয়তসিদ্ধ বৈধ কোন কারণ ছাড়াই অসহায় অবস্থায় ফোরাত নদীর তীরে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের মস্তক দেহচ্যুত করা হয়েছে। হে মহা প্রভু আল্লাহ তোমার সম্পর্কে মিথ্যারোপ করা ও মিথ্যা বলা থেকে আমি আশ্রয় প্রর্থনা করছি । হে খোদা, নবীর অসি হিসেবে জনগণকে হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের হাতে বায়াত করার প্রদত্ত আদেশ সংক্রান্ত তোমার মহান নবীর (সা.) বাণী সমূহের বিরোধী কোন উক্তিই আমি করব না । হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের ন্যায্য অধিকার জবর দখল করা হয়েছিল। আর তারই সন্তানকে (হোসাইন) কারবালায় একদল লোকের হাতে বিনা দোষে নিহত হতে হয়েছে। আর এসব লোকেরা ছিল বাহ্যতঃ মুসলমান কিন্তু অন্তরে ঠিকই তারা কুফরী পোষণ করত। ঐ সব লোক ধ্বংস হোক যারা হোসাইনের জীবদ্দশায় এবং তার শাহাদতের সময় তাকে জুলুম ও উৎপীড়নের হাত থেকে হেফাযত করেনি। হে খোদা, তুমিতো হোসাইন (আ.) কে মহৎ গুনাবলী ও জ্ঞানের অধিকারী করে অত্যন্ত প্রশংসিত ও পবিত্র অন্তঃকরণ সহকারে তোমার সান্নিধ্যে নিয়ে গেছো । হে খোদা কোন কুৎসা রটনাকারীরই কুৎসা তাকে কস্মিনকালেও তাকে তোমার ইবাদত ও বন্দেগী করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি । তুমি শৈশবে তাকে ইসলামের দিকে পথ প্রদর্শন করেছ এবং যখন তিনি বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছেন তখন তাকে উত্তম গুণাবলী দিয়ে প্রশংসিত করেছ। তিনি আজীবন তোমার পথে এবং তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মুসলিম উম্মাহকে সদুপদেশ দিয়েছেন। তিনি ইহকালের প্রতি নিরাসক্ত এবং পরকালের জন্য উদগ্রীব ছিলেন। আর তিনি তোমার পথে তোমার শত্রুদের বিরুদ্ধে সর্বদা সংগ্রাম ও জিহাদ করেছেন। হে খোদা! তুমি তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছ, তাকে তুমি মনোনীত করেছ এবং সঠিক পথে তাকে পরিচালিত করেছ।
হে কুফাবাসীরা! হে ষড়যন্ত্রকারী ও ধোকাবাজরা, সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদেরকে দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা করেছেন। আর তিনি আমাদেরকে এ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশংসিত করেছেন। তিনি তার জ্ঞান ও বিদ্যাকে আমানতস্বরূপ আমাদেরকে প্রদান করেছেন। তাই আমরাই তার জ্ঞান, বিদ্যা ও প্রজ্ঞার আধার। আমরাই সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য মহান আল্লাহর সঠিক প্রমাণ বা হুজ্জাত। মহান আল্লাহ আমাদের মাঝেই মহানবী (সা.) কে প্রেরণ করে আমাদেরকে সবার উপর প্রাধান্য দিয়েছেন এবং উচ্চ মর্য়াদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর তোমরা আমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছ ও কুফরীর অপবাদ দিয়েছ তোমরা আমাদের রক্ত ঝরানো এবং আমাদের সম্পদ লুন্ঠন করা বৈধ করেছ। আমরা যেন বিধর্মী অমুসলিম তুর্কী ও কাবুলী যুদ্ধবন্দী। যেমনিভাবে গতকাল তোমরা আমাদের পিতামহের রক্ত ঝরিয়েছ ঠিক তেমনি তোমাদের অন্তরে আমাদের প্রতি তোমাদের পুরানো শত্রুতা থাকার কারণে আজও তোমাদের তলোয়ার থেকে আমাদের (আহলে বাইতের) রক্ত ঝরছে।
তোমরা খোদার সম্পর্কে যে মিথ্যারোপ করেছ এবং যে ষড়যন্ত্রে তোমরা লিপ্ত হয়েছ সে জন্য তেমার খুব স্ফুর্তি ও আনন্দ উল্লাস করছ। তবে জেনে রেখো যে, মহান আল্লাহ সবচেয়ে বড় ষড়যন্ত্রকারী। তাই তোমরা আমাদের রক্ত ঝরাবে এবং আমাদের সম্পদ লুন্ঠন করতে পেরে আর অধিক আনন্দিত হয়ো না। কারণ এসব বিপদাপদ পূর্ব থেকেই আল্লাহর কাছে লিপিবদ্ধ ছিল। আর এটা তার জন্য অত্যন্ত সহজ। যাতে করে তোমরা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে হতাশ ও মনঃক্ষুন্ন না হও এবং লাভ ও মুনাফা অর্জন করতে পেরে অযথা উল্লাসিত না হও। কারণ মহান আল্লাহ চক্রান্তকারী ও উদ্ধতদেরকে পছন্দ করেন না।
হে কুফাবাসীরা, তোমাদের ধ্বংস হোক। তোমরা খোদার অভিশাপ ও শাস্তির অপেক্ষা করতে থাক যা অতি শীঘ্রই একের পর এক তোমাদের উপর অবতীর্ণ হবে এবং নিজেদের কু-কর্মের জন্য তোমরা সাজা প্রাপ্ত হবে। মহান আল্লাহ তোমাদেরকে পারস্পরিক কলহ, বিবাদ, দ্বন্দ-সংঘাতে লিপ্ত করে তোমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন। আর এরপর আমাদের প্রতি যে অন্যায় ও জুলুম করেছ সে জন্য তোমরা কিয়ামত দিবসে চিরস্থায়ী নরকের মহাযন্ত্রনাদায়ক আগুনে দগ্ধ হওয়ার শাস্তি অবশ্যই পাবে। মনে রেখো, অত্যাচারী গোষ্ঠির উপর মহান আল্লাহর অভিশাপ।
হে কুফাবাসীগণ, তোমাদের জন্য আক্ষেপ, তোমরা কি জান, কোন হাতে আমাদেরকে তীর ধনুক ও তরবারী আক্রমণের শিকার করেছ, তোমরা কোন সাহসে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছ? খোদার শপথ তোমাদের অন্তর পাষাণ এবং বিবেক বুদ্ধি বিবর্জিত, তোমাদের দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি লোপ পেয়েছে। হে কুফাবাসীরা, শয়তান তোমাদেরকে ধোকা দিয়েছে, তোমাদেরকে সৎ পথ থেকে বিচ্যুত করেছে এবং তোমাদের চোখের উপর অজ্ঞতার আচ্ছাদন টেনে দিয়েছে যার ফলে তোমরা কখনো সুপথ প্রাপ্ত হবে না। হে কুফাবাসীগণ, তোমাদের ধ্বংস হোক। তোমরা জান কি যে তোমাদের কাধে মুহাম্মদ (সা.) এর বংশধদের রক্ত ঝরানোর পাপ রয়েছে এবং তোমাদের থেকে সে রক্তের প্রতিশোধ অবশ্যই গ্রহণ করা হবে ?
তোমরা মহানবী মুহাম্মদ (সা.) এর ভ্রাতা হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (আ.) ও তার বংশধরদের সাথে যে শত্রুতা করেছ সে জন্য তোমাদের মধ্য থেকে কেউ দম্ভোক্তি করে বলেছঃ
“আমারা ভারতে নির্মিত তরবারী ও বর্শা দিয়ে আলী ও তার বংশধরদেরকে হত্যা করেছি। আমরা তার বংশীয়া মহিলাদেরকে বিধর্মী তুর্কী যুদ্ধবন্দীদের মত বন্দী করেছি।” ঐ সব পুণ্যাত্মা যাদেরকে মহান আল্লাহ সব ধরনের পাপ-পংকিলতা থেকে পবিত্র করে দিয়েছেন তাদেরকে হত্যা করে যে ব্যক্তি গর্ব ও আনন্দ উল্লাস করছে তার মুখে (কলংকের) প্রস্তর ও ধুলো নিক্ষিপ্ত-প্রক্ষিপ্ত হোক। হে অপবিত্র ব্যক্তি তুই তোর ক্রোধাগ্নি গলাধঃকরণ কর আর তোর পিতা যেমনিভাবে বসেছিল তদ্রুপ কুকুরের মত তোর আপন জায়গায় বসে পড়। যে ব্যক্তি যেমন কর্ম করবে তেমন প্রতিফলও সে প্রাপ্ত হবে। তোমাদের জন্য আক্ষেপ. মহান আল্লাহ আমাদেরকে যে জন্য সকলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন সে জন্য তোমরা আমাদের সাথে হিংসা করছ বলে।
আমাদের বংশের মহৎ গুণাবলী যদি কালজয়ী হয় তাহলে কি এতে আমাদের অপরাধ হবে অথচ তোমাদের পাপ ও কুকীর্তিসমূহ ইচ্ছে করলেও তোমরা কখনো গোপন রাখতে পারবে না।
এটা হচ্ছে মহান আল্লাহর অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে এ অনুগ্রহ দান করেন। কারণ তিনিইতো বিশাল অনুগ্রহের মালিক আর মহান আল্লাহ যাকে (হেদায়তের) আলো দেন না সে কখনোই (হেদায়তের) আলোর সন্ধান পায় না ।
হযরত ফাতেমা সুগরার ভাষণ সমাপ্ত হলে উপস্থিত জনতা উচ্চস্বরে কাদতে কাদতে বললঃ হে পুণ্যাত্মাদের বংশধর। আপনি আমাদের অন্তরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। আমাদের কলিজাকে আপনি শোক দুঃখ আর বেদনা অনলে ভস্মীভূত করেছেন। আপনি থামুন আর বলবেন না। অতঃপর হযরত ফাতেমা সুগরা কথা বলা বন্ধ করলেন ।
হযরত উম্মে কুলসুমের ভাষণ
বর্ণনাকারী বলেনঃ হযরত আলী (আ.) এর কন্যা উম্মে কুলসুম (আ.) উচ্চস্বরে ক্রন্দনরত ও হাওদার উপর উপবিষ্টাবস্থায় ঐ দিন এ ভাষণটি দেনঃ
হে কুফাবাসীগণ, তোমাদের অবস্থা কতই খারাপ। তোমারা কেন হোসাইন (আ.) কে অপদস্ত ও হত্যা করেছ ? কেন তার সম্পদ লুন্ঠন করেছ ? কেন তার স্ত্রী-কন্যাদেরকে বন্দী করেছ ? এতসব করে এখন তার জন্য কাদছো ? তোমাদের জন্য আক্ষেপ, তোমাদের ধ্বংস ও অমঙ্গল হোক। তোমরা কি জান যে তোমরা কত বড় পাপ করেছ ? তেমরা কি জান তোমরা অন্যায় ভাবে কি ধরণের রক্ত ঝরিয়েছ ? তোমরা জান কি কোন ধরনের অন্তঃপুর বাসিনীদেরকে তোমরা পর্দার অন্তরাল থেকে জনসমক্ষে বের করে এনেছ ? তোমরা জান কি তোমরা কোন পরিবারের অলংকারসমূহ বলপূর্বক ছিনিয়ে নিয়েছ এবং কাদের সম্পদ লুন্ঠন করেছ ? আর তোমরা এমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ মহানবীর (সা.) পর যার মান মর্যাদার অধিকারী কেউ নেই ? তোমাদের অন্তর থেকে দয়া মায়া তুলে নেয়া হয়েছে । জেনে রেখো যে আল্লাহর দলই সফলকাম এবং শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্থ। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত কবিতাটি আবৃত্তি করলেন –
তোমরা আমার ভ্রাতাকে হত্যা করেছ, তোমাদের কাজের জন্য আক্ষেপ,
তোমরা শীঘ্রই এমন নরকে প্রবেশ করবে যার তাপ দগ্ধ করে দেয়,
মহান আল্লাহ, পবিত্র কোরআন এবং মহানবী (সা.) যে রক্ত ঝরানো
হারাম করে দিয়েছেন সে রক্তই তোমরা ঝরিয়েছ।
তোমরা একে অপরকে নরকাগ্নির সুসংবাদ দাও
নিশ্চয় তোমরা নরকাগ্নিতে চিরকাল দগ্ধ হবে
মহানবীর (সা.) পরে আমার যে ভ্রাতা মঙ্গলের উপর ছিলেন তার জন্য আমি আমার সারাটা জীবন ক্রন্দন করব।
আমার গন্ডদেশ দিয়ে সর্বদা প্রবাহিত থাকবে অশ্রু যা কখনো শুকাবে না ।
এ সময় জনগণ উচ্চস্বরে কাদছিল। মহিলারা শোকে তাদের কেশমালা এলোমেলো করেছিল এবং মাথায় ধুলো মাটি মেখেছিল। তারা নিজেদের মুখমণ্ডলে আচড় দিচ্ছিল এবং মুখে থাপ্পর মারছিল। তারা উচ্চস্বরে ফরিয়াদ ও ‘ওয়াওয়াইলা’ বলছিল। পুরুষরা কাদছিল এবং চুল দাড়ি উপড়ে ফেলছিল। ঐদিনের চেয়ে অন্য কোন সময় লোকদের এত অধিক কাদতে দেখা যায়নি।
©somewhere in net ltd.