নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১.
যা আপনি অর্জন করার জন্য বা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছেন তা পাওয়ার পর আপনার বিরাট সুখানুভূতি হয়। এ সুখানুভূতি আস্তে আস্তে ম্লান হতে শুরু করে। একটা পর্যায়ে অর্জন করার সময়ের সেই তীব্র সুখানুভূতি হারিয়ে যায় এবং আপনি আপনার সুখের স্বাভাবিক মাত্রায় অবস্থান করেন।
এই স্বাভাবিক অবস্থা সেই মানসিক অবস্থার সমান যখন আপনি আপনার কাংক্ষিত বস্তু বা প্রাপ্তি অর্জন করেন নি।
যে লটারি জেতে আর যে জেতে না তাদের সুখানুভূতি আঠারো মাস পরে একইরকম হয়ে যায়।
এমন হওয়ার কারন কী? এই ঘটনাকে বলে হেডোনিক ট্রেডমিল।
মানুষের সুখানুভূতির মাত্রা (লেভেল অফ হ্যাপিনেস) সর্বদা কনস্ট্যান্ট থাকতে চাওয়ার প্রবণতাই হেডোনিক ট্রেডমিল।
মানুষের জীবনে যখন ভালো কিছু ঘটে বা সে কোন কিছু অর্জন করে তখন তার সুখের মাত্রা বেড়ে যায়। কিছুদিন পর এই মাত্রা তার সাবেক অবস্থায় ফিরে আসে।
একইভাবে মানুষের জীবনে খারাপ কিছু ঘটলে বা কিছু বা কাউকে হারালে তার সুখের মাত্রা নিচের দিকে চলে আসে। কিছুদিন পর আবার সেটা সাবেক অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করে।
২.
স্থায়ীভাবে সুখের অনুভূতি ধরে রাখার উপায় কী?
স্থায়ীভাবে সুখের অনুভূতি ধরে রাখার উপায় হলো যা অর্জিত হয়েছে তার জন্য কৃতজ্ঞ হতে শেখা এবং সর্বদা কৃতজ্ঞতার চর্চা করা।
যে অর্জন অনেক কষ্ট আর সাধনার ফসল তা প্রাপ্তির পর আপনি যে পরমানন্দ পান সেটা আপনার দেহ মনে ছড়িয়ে থাকবে বারংবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে।
আমাদের জীবনের অর্জনগুলো এবং আমাদের জাতীয় জীবনের সামগ্রিক প্রাপ্তিগুলো আমরা একটা পর্যায়ে স্বাভাবিক (টেক ফর গ্রান্টেড) ধরে নিই। কিন্তু আমাদের অর্জন বা প্রাপ্তি কোন স্বভাবিক ঘটনা না। প্রত্যেকটা অর্জন এবং প্রাপ্তিই স্রষ্টার বিশেষ নেয়ামতের অংশ।
কোন কিছু অর্জনের পর স্রষ্টার প্রতি আপনার মন আর্দ্র হওয়ার যে অনুভূতি তা পরবর্তীতে আপনি তুচ্ছ করে যদি দেখেন বা সে অনুভূতির মূল্যায়ন না করেন তাহলে আপনার এই সুখ শেষ হয়ে যাবে।
কৃতজ্ঞ থাকার মাধ্যমে আপনি মানসিকভাবে শান্তিতে থাকেন। কৃতজ্ঞতার অনুভূতি লালন করলে জৈবিকভাবে আপনার দেহ মন প্রশান্ত থাকে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হচ্ছে কৃতজ্ঞ থাকলে আপনার জীবনে কৃতজ্ঞ হওয়ার মত ঘটনাগুলোই বার বার ঘটতে থাকে।
এখানে কোরানের একটি আয়াত স্মরণযোগ্য-
‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের (নেয়ামত) বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন।’
(সুরা ইবরাহিম : আয়াত ০৭)
৩.
আপনার আশেপাশে এমন অনেককেই দেখবেন যাদের জীবনে বিভিন্ন বড় বড় প্রাপ্তি আছে কিন্তু তারা সুখী না। তাদের কুশলাদি জিজ্ঞেস করলে বলে তারা ভালো নেই। অথচ হয়ত তারা ভালো চাকরি করে বা যথেষ্ট আয় উৎপাদনকারী ব্যবসা আছে। বাড়ি গাড়ি করেছে। বাচ্চারা ভালো স্কুলে পড়ে। তারপরও তারা ভালো নেই। তাদের এই অর্জনগুলোকে তারা টেক পর গ্রান্টেড ধরে নিয়েছে।
এমন না যে তারা এসব অর্জন প্রাপ্তির সময় খুশী হয়নি। যখন সে তার কাংক্ষিত চাকরীটা পেয়েছে হয়ত তখন সে আনন্দের কান্নায় বুক ভাসিয়েছে। তখনকার সেই সুখানুভূতি ও সেই মুহূর্তের কৃতজ্ঞতাবোধ সে আর পরবর্তীতে লালন করেনি। ফলে এই কাংক্ষিত চাকরিটাই একসময় তার কাছে বিরক্তিকর হয়ে দাড়িয়েছে। তাকে পেয়ে বসেছে “ভালো লাগে না” রোগে।
আবার এমন অনেককেই আপনার আশেপাশে দেখবেন যাদের জীবনে খুব বড় কোন প্রাপ্তি নেই কিন্তু তারা মানসিকভাবে প্রচন্ড সুখী। কুশলাদি জিজ্ঞেস করলে হাসিতে মুখ ভরে যায়। এমন ব্যক্তিগুলোর সাথে আড্ডা দিতে মনে চায়। তাদের সান্নিধ্য মনকে প্রফুল্ল করে।
এই ব্যক্তিগুলো তাদের ছোট প্রাপ্তি নিয়েই অনেক খুশি ও কৃতজ্ঞ। তাদের যতটুকু প্রাপ্তি সেটাকে তারা উপভোগ করে। প্রাপ্তিটা স্বীকার করে, মনে রাখে ও কৃতজ্ঞতাবোধ লালন করে।
৪.
“কনফারমেশান বায়াস” সম্পর্কে হয়ত জেনে থাকবেন।
মানুষের মধ্যে এগজিস্টিং যে বিশ্বাস আছে, যে মত সে ধারণ করে জীবন চলার পথে সেই বিশ্বাস বা মত সমর্থিত হয় এমন ঘটনাগুলোই তার দৃষ্টিগোচর হওয়ার যে প্রবণতা তাই হলো কনফারমেশান বায়াস। বায়াসনেস আমাদের সহজাত। এগুলো সবার মধ্যে থাকে। বায়সনেস সম্পর্কে জানলে তা থেকে বাঁচার সুযোগ তৈরী হয়।
তবে বায়সনেসগুলো আমাদের মধ্যে এত গভীরভাবে প্রোথিত থাকে যে তা আমাদের অবচেতনে গ্রাস করে। বায়াসনেস থেকে বাঁচতে হলে সর্বদা সতর্কতার সাথে ফাইট দিতে হয়।
এই বায়াসনেসকে কৃতজ্ঞ থাকার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়।
আপনি যদি মনে করেন আপনার জীবনটা অফুরন্ত নেয়ামতে ভরপুর এবং প্রতিক্ষণে আপনার জীবনে প্রচুর ইতিবাচক ব্যাপার ঘটছে; এই বিশ্বাসটা যদি আপনি ধারণ করেন তাহলে জীবন চলার পথে প্রচুর নেয়ামত আপনার চোখে পড়বে। দিনে দিনে এই বিশ্বাসটা পোক্ত হবে এবং আপনার আরো বেশি নেয়ামত দৃষ্টিগোচর হবে; তদুপরি এগুলো উপভোগের স্বাদ ও বাড়তে থাকবে।
এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করেই “গ্রাটিচিউড জার্নাল” লিখতে বলা হয়।
গ্রাটিচিউড জার্নাল হচ্ছে দিন শেষে আপনার সাথে সারাদিন ভালো যা কিছু ঘটেছে সেগুলো লিখে রাখা।
যেমন ধরেন-
* আপনি আজ সকালে সুস্থভাবে ঘুম থেকে উঠতে পেরেছেন।
* সকালে নাস্তা করার সুযোগ পেয়েছেন।
* জীবিকার জন্য বাসা থেকে বেরোতে পেরেছেন।
* একটা মোবাইল ফোন এফোর্ড করতে পারছেন।
সাদাচোখে মনে হচ্ছে এগুলো খুব ছোট নেয়ামত। এগুলোকে আপনি টেক ফর গ্রান্টেড বা স্বাভাবিক ধরে নিয়েছেন। কিন্তু এগুলো যে প্রত্যেকটা অমূল্য নেয়ামত তা আমাদের বোধগম্য তখন হয় যখন এ নেয়ামতগুলো আমাদের থাকে না।
গ্রাটিচিউড জার্নাল রাখলে নেয়ামতগুলো চোখে পড়ার অভ্যস্ততা আসে। ফলে কৃতজ্ঞ হওয়া সহজ হয়। অবশ্য অনেকেই জার্নাল না রেখেও কৃতজ্ঞতাবোধ সর্বদা নিজের ভিতরে ধারণ করতে পারেন।
এটা মনে রাখতে পারেন; যে জীবন আপনি যাপন করছেন বা যে জীবন যাপনে আপনি অসন্তুষ্ট, বিরক্ত, হতাশ সেই জীবনটাই আরেকজনের স্বপ্নের জীবন।
আরো সুখ আরো সফলতা চাইলে যতটুকু সুখ ও যতটুকু সফলতা এখন আছে সেটা স্বীকার করেন, স্মরণ করেন, কৃতজ্ঞ হন। এই অনুশীলনকারীরা সুখ উপভোগ করতে পারে। সফলতাকে টেক ফর গ্রান্টেড ধরে নিলে আরো সফলতা হয়ত পাবেন কিন্তু সফলতার সুখ উপভোগের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে যাবে।
২| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৯:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: বঙ্গদেশে আপনি কিচঝুতে সুখী হতে পারবেন না।
৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১১:২৩
শাওন আহমাদ বলেছেন: আমাদের উচ্চাকাঙ্খা আর কিছু পেয়েও তাকে প্রপ্তির খাতায় ধরে না রাখার প্রবণতা আমাদের ভাল থাকতে দেয় না।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:৫৭
শামীম আশরাফ বলেছেন: ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সুখানুভুতি গুলোর জন্য আলহামদুলিল্লাহ বলে স্বীকার করে নিলেই সুখের মাত্রা অনেক অনেক বেড়ে যায়। কৃতজ্ঞতা স্বীকারেও অন্তরে অনাবিল শান্তি অনুভব করা যায়।।