নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'এম এল গনি\' cut & paste করে Google-এ search করলে আমার সম্পর্কে জানা যাবে। https://www.facebook.com/moh.l.gani

এমএলজি

এমএলজি › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালুরঘাট রেলওয়ে ব্রিজের সংস্কার নিয়ে কিছু ভাবনা

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:০৫

কালুরঘাট রেলওয়ে ব্রিজের সংস্কার নিয়ে কিছু ভাবনা

প্রায় ৩০ বছর আগের কথা। আমি তখন বুয়েটে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। রেজাউল করিম বেগ নামে এক তরুণ প্রভাষক আমাদের বিদ্যুৎ বিষয়ক একটি কোর্স পড়াতেন। তিনি তার ব্যাচে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স (ট্রিপল ই) বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেই প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন বুয়েটে। সচরাচর বুয়েট বা বাংলাদেশের অন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর ডিগ্রি করেই শিক্ষকতা শুরু করা যায়। কানাডাসহ উন্নতদেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে কমপক্ষে পিএইচডি ডিগ্রি থাকতে হয়। যাক, এ লেখার প্রসঙ্গ ভিন্ন। লেখাটির লক্ষ্য চট্টগ্রামের কালুরঘাট ব্রিজের মেরামত কাজ নিয়ে সহজ ভাষায় একটি কারিগরি আলোচনা।

তরুণ শিক্ষক বেগ সাহেব মাঝেমাঝে তার কিছু অভিজ্ঞতা ক্লাসে শেয়ার করতেন। এমনই এক ঘটনা এটি। তিনি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ প্রথম স্থান অধিকার করে পাশ করলেন। রেজাল্ট বেরোনোর পর গ্রামের বাড়িতে গেলেন মা-বাবাসহ অন্যান্য মুরুব্বিদের দোয়া নিতে। তার ভাষায়, তাদের বাড়ি ছিল এক অজপাড়া গাঁ-য়ে। তিনি বাড়িতে পৌঁছার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার যাওয়ার খবর রটে গেল চারিদিকে। ধীরে ধীরে গ্রামের স্কুলের সহপাঠীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী এসে জমায়েত হলেন তাদের বাড়িতে। উঠোনের মধ্যখানে তাকে ভালো একটি চেয়ারে বসিয়ে অন্যরা আশেপাশে পাটি বিছিয়ে বসে পড়লেন। সবারই মুখে এক কথা, “আমাদের রেজাউল বাংলাদেশে এক নম্বর ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে।” ধন্য ধন্য চারিদিকে।

এরই মাঝে রেজাউল করিম বেগ সাহেবের চাচা সম্পর্কের এক মুরুব্বি প্রস্তাব দিলেন তাদের বাড়ির কাছেই খালের উপর যে নড়বড়ে কংক্রিটের ব্রিজটা আছে তা কিভাবে মেরামত করা যায় তা নিয়ে ‘বিখ্যাত প্রকৌশলী বেগ’ সাহেবের পরামর্শ নিতে। কী করা দরকার তার নির্দেশনা পেলে গ্রামের লোকেরা চাঁদা দিয়েও ব্রিজটি মেরামতে রাজি আছেন বলে বেগ সাহেবকে জানানো হলো।

ব্রিজ মেরামতের পরামর্শ দিতে পারেন সিভিল বা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, ট্রিপল-ই না। বেগ সাহেব তো সিভিল ইঞ্জিনিয়ার না। তাই, তিনি ব্রিজের খুব কিছু বোঝেন না। তাই, চাচার প্রস্তাব শুনে তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত হলেও তা তাৎক্ষণিক প্রকাশ করলেন না। গ্রামের এই মুরুব্বিরা কি ইঞ্জিনিয়ারিং- এর এতো বিভাজন বুঝবেন? এছাড়া, ব্রিজ বিষয়ে তার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার বয়ান দিয়ে উপস্থিত শুভানুধ্যায়ীদের হতাশ করতেও তার মন চাইছিল না। তাই, তিনি তাদের সাথে সেই ব্রিজ পরিদর্শনে গেলেন। ব্রিজের দৈর্ঘ্য, প্রস্থের কিছু পরিমাপও কাগজে টুকে নিলেন। কয়েকদিনের মাথায় ঢাকায় ফিরে তিনি ব্রিজ ডিজাইনে অভিজ্ঞ এক সিনিয়র প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে গ্রামের মুরুব্বিদের কাছে প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাঠিয়ে দিলেন। সেদিন ক্লাসের সবাই তার সে গল্প এতটাই উপভোগ করেছিল যে আজ প্রায় তিন দশক পরও গল্পটি আমার পরিষ্কার মনে আছে।

প্রফেসর বেগ এখন কোথায়, কিভাবে আছেন আমার ধারণা নেই। তবে এ লেখাটি আপনার চোখে পড়লে অবশ্যই আমার শুভেচ্ছা জানবেন প্রিয় অধ্যাপক। এ গল্পে তিনি আমাদের বোঝাতে চেয়েছিলেন, আমাদের দেশের মানুষ মনে করেন ইঞ্জিনিয়ার মানেই তিনি একই সাথে ইলেক্ট্রিক্যাল, ইলেক্ট্রনিক্স, সিভিল, স্ট্রাকচারাল, মেকানিক্যাল, সবকিছুরই বিশেষজ্ঞ। আর, সেই ইঞ্জিনিয়ারের ডিগ্রিটা যদি বুয়েট থেকে হয় তাহলে তো কথাই নেই। তার কথাগুলো সেই ৩০ বছর আগে যেমন সত্য ছিল, আজও তা তেমনই সত্য। আজও দেশের মানুষ মনে করেন বুয়েট মানেই সকল প্রকারের প্রকৌশল সমস্যার সমাধান। চট্টগ্রামের কালুরঘাট-ব্রিজ মেরামত নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন দেখে অন্তত আমার সে ধারণাই হয়েছে।

যতটা জানি, ১৯৩১ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুটি নির্মিত হয়। এ সেতু চট্টগ্রাম শহরের সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সংযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলে আজ বহুদিন। বর্তমানে উত্তর-দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী অংশে প্রায় শতাধিক শিল্প কারখানার ভারী যান এই সেতুর উপর দিয়ে পণ্য পরিবহন করে। অথচ, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ে সেতুটিকে প্রায় ২০ বছর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২০১১ সালেও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একদল গবেষক এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। এরপর ভারী যান এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচলও নিষিদ্ধ করা হয়, যদিও এসব নির্দেশনা না মেনেই বর্তমানে চলছে ভারী যান। যথারীতি, একটা বড়ো ধরনের অঘটন না ঘটা পর্যন্ত বাঙালি মহাস সৃষ্টিকর্তার কৃপার ওপরে নির্ভরেই অভ্যস্ত।

স্বল্প কথায়, কালুরঘাট সেতুটি প্রায় দুদশক আগে থেকেই জরাজীর্ণ আখ্যা পেয়ে এসেছে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের দশ বছর আগেও দেশের অন্য একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল তেমন অভিমতই দিয়েছেন। তারপরও, রেল কর্তৃপক্ষ জরাজীর্ণ এই সেতু দিয়ে ভবিষ্যতে কিভাবে উচ্চগতির ট্রেন চলাচল করাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েটের) দ্বারস্থ হয়েছেন কেন তা জানতে আমার মতো অনেকেই ব্যাকুল। ইতোমধ্যে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল সাইট পরিদর্শন করে প্রায় তের কোটি টাকা পরামর্শ ফি এর একটি হিসাবও দিয়েছেন বলে আমরা পত্রিকান্তরে জেনেছি। ২০ বছর আগে স্বয়ং রেলওয়ের বিবেচনায় যে ব্রিজটি মেয়াদোত্তীর্ণ পরিগণিত হয়েছিল হঠাৎ নতুনভাবে তাতে প্রাণ সঞ্চারের এ আয়োজন অবশ্যই পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।

এ প্রসঙ্গে স্বভাবতই দুইটি প্রশ্ন আমাদের সামনে চলে আসে।

এক. বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল এ ধরনের অতি পুরাতন স্টিল স্ট্রাকচার, বিশেষত ব্রিজ স্ট্রাকচারের, স্থায়িত্ব ও ক্ষমতা নির্ধারণ বা মেরামত কাজে কতটা অভিজ্ঞ? এই ব্রিজের সাথে তুলনীয় কোন ব্রিজ স্ট্রাকচারের মেরামত বা স্থায়িত্ব বৃদ্ধির কোন প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করার অতীত অভিজ্ঞতা বিশেষজ্ঞ দলের আছে কিনা? থাকলে তা কোন দেশের কোন প্রকল্পে? এক্ষেত্রে কংক্রিটের ব্রিজ মেরামতের অভিজ্ঞতা স্টিলের ব্রিজ সংস্কারে কাজে লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে কিনা?

প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক সনদের চেয়েও বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি মূল্যবান। এ কারণেই অনেক পিএইচডি ডিগ্রিধারীও যখন একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে চাকরি শুরু করেন তখন তাকে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শুরু করতে হয়। এটাই নিয়ম। কোন বিশেষ ক্ষেত্রে আপনার যতই পড়াশোনা থাকুক ওই ক্ষেত্রে বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলে উন্নতদেশগুলোতে আপনাকে কোনভাবেই সে ধরনের কাজের পুরোপুরি দায়িত্ব দেয়া হয় না। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের স্টিল ব্রিজ মেরামত বা তার শক্তি মূল্যায়নের যথেষ্ট পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে তারা অবশ্যই উপরের কাজটির পরামর্শক হতে পারেন, অন্যথায় নয়। উপরের কাহিনীর বেগ সাহেবের মতো বুয়েটের ভালো রেজাল্ট করা যে কোন প্রকৌশলীকে সকল প্রকার ইঞ্জিনিয়ারিং কাজের বিশেষজ্ঞ ভেবে রেল কর্তৃপক্ষ ভুল করছে কিনা- তাও নিশ্চিত করার উপযুক্ত সময় এখন।

দুই. এ কাজে কেবল পরামর্শ দেওয়ার জন্যই বুয়েট প্রায় ১৩ কোটি টাকা দাবি করছেন বলে জানা গেল যা শুনে অনেকেই চোখ কপালে তুলেছেন। এই ১৩ কোটি টাকার একটি টাকাও কিন্তু ব্রিজটির প্রকৃত মেরামত বা উন্নয়ন কাজে ব্যবহার হবে না। এর পুরোটাই কেবল পরামর্শ প্রদানের জন্য নির্ধারিত থাকবে বুয়েটের জন্য। এই পরামর্শ ফি এর আনুমানিক ২০ গুণ যদি প্রকৃত মেরামত কাজের খরচ ধরা হয় তবে এ উন্নয়ন প্রকল্পে মোট খরচ দাঁড়াতে পারে ৩০০ কোটি টাকার মতো। প্রশ্ন জাগে, এই বিপুল অংকের অর্থ মৃতপ্রায় একটি ব্রিজের পেছনে খরচ করার যৌক্তিকতা কতখানি? পরামর্শক নিয়োগের আগে এ বিষয়ে কোনপ্রকার কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস করা হয়েছে কি? এই অর্থের উৎসই বা কোথায়? রেলওয়ে এর অর্থের জোগান দিতে সম্মত হলেও, তাদের বর্তমান অগ্রাধিকারে এ প্রকল্প আদৌ পড়ে কিনা? এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগেই তের কোটি টাকার বিনিময়ে পরামর্শকের পরামর্শ নিয়ে বসে থাকলে এই টাকার পুরোটাই জলে যাবে বলে ধরে নেওয়া যায়।

প্রসঙ্গত, আমার একটি পেশাধারী কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। কয়েক বছর আগেও আমি কানাডায় একজন প্রফেশনাল স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছি। কানাডীয় কোম্পানি শেরিট ইন্টারন্যাশনাল এর একটি কারখানার স্ট্রাকচারাল শক্তি পরীক্ষা ও সংস্কার বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পরামর্শক হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। এ কাজে আমার সাথে ছিলেন আরো দুই প্রকৌশলী। কারখানাটি কয়েকটি স্টিল স্ট্রাকচারে বিভক্ত ছিল। রাসায়নিক পরিবেশে দীর্ঘ ব্যবহারে স্টিলের অনেক কলাম, বিম, ব্রেসিং, ট্রাস- ইত্যাদি ক্ষয়ে গেছে। বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে এসে ভবনগুলোর অনেকগুলো ভিত বা ফাউন্ডেশনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্টিল আইটেমগুলো এতটাই পুরোনো যে তার শক্তির হিসাব বা স্পেসিফিকেশন খুঁজে পাওয়াও আমাদের পক্ষে পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। ক্ষয়ে যাবার পর স্টিলের বিভিন্ন আইটেমের কত পুরুত্ব কাঠামোগতভাবে কার্যকর আছে তা নির্ধারণ করতে যারপরনাই বেগ পেতে হয়েছে আমাদের।

এতো সীমাবদ্ধতার মাঝেও পুরোনো স্ট্রাকচার বা কাঠামোগুলো সম্পর্কে সব মিলিয়ে মোটামুটি একটা ধারণা ওই কোম্পানিকে আমরা হয়তোবা দিতে পেরেছি। তবে, ভবনগুলো মেরামতের সম্ভাব্য খরচ শুনে শেরিট ইন্টারন্যাশনাল সে পথে হাঁটবেন বলে আমাদের মনে হয়নি। সোজা বাংলায় বলা চলে, আমাদের এই টিমের পেছনে নয় মাসে তারা যে খরচ করেছেন- তা কতখানি তাদের প্রত্যাশা পূরণ করেছে সে প্রশ্ন আমাদের মনেও জেগেছিল। চট্টগ্রামের কালুরঘাট ব্রিজটিও অতি পুরাতন মডেলের স্টিলের তৈরী যার শক্তিমত্তা বা স্পেসিফিকেশন আদৌ জানা যাবে কিনা সে বিষয়ে একজন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। এ ধরনের মরচে ধরা বা ক্ষয়ে যাওয়া অজ্ঞাত স্টিলের উপর নতুনভাবে ওয়েল্ডিং বা বোল্ট কানেকশন দিতেও যথেষ্ট চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে বলে আমি মনে করি। অধিকন্তু, স্থাপনাটি ভবন না হয়ে সেতু হওয়ার কারণে ব্রিজটির বিভিন্ন পরিবর্তিত/সংশোধিত মেম্বারে (আইটেম) যে নিয়মিত ডাইনামিক লোডিং হবে তা-ই বা কতটা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব তাও গভীর বিবেচনার অবকাশ রাখে। সংস্কার করা একটি স্ট্রাকচারের রিপ্রেজেন্টেটিভ কম্পিউটার মডেল করা ছেলেখেলা নয়।

বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে স্টিল স্ট্রাকচারের ইতিহাস খুব বেশিদিনের নয়। আমি যখন বুয়েটে পড়েছি সেই সময়ও দেশের কোথাও স্টিল স্ট্রাকচারের উপর কোন কোর্স অফার করা হতো না। সঙ্গত কারণেই, স্টিল স্ট্রাকচার ডিজাইনে নির্ভরযোগ্য কোন বিশেষজ্ঞ গ্ৰুপ বাংলাদেশে আদৌ তৈরি হয়েছে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। আবারো বলি, কংক্রিট ব্রিজের অভিজ্ঞতা সরাসরি স্টিল ব্রিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা চলে না। দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের ডিজাইন। পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে বলে রাখি, কংক্রিটের ভেতরে স্টিলের রড ঢুকিয়ে যে স্ট্রাকচার করা হয়, তা কিন্তু স্টিল স্ট্রাকচার নয়; তা আরসি বা, কংক্রিট স্ট্রাকচার। সাধারণভাবে, স্টীল স্ট্রাকচারের স্টিল ওভাবে কংক্রিটের ভেতরে ঢোকানো থাকে না।

চট্টগ্রামের সুপ্রাচীন কালুরঘাট ব্রিজের সংস্কার আদৌ জরুরী মনে হলে তা অভিজ্ঞ ব্রিজ-স্টিল-স্ট্রাকচার বিশেষজ্ঞ, যাদের এ ধরনের একাধিক সংস্কার-প্রকল্প সফলভাবে সম্পাদনের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে, তেমন কোন পরামর্শক দলের নেতৃত্বে করাই যৌক্তিক মনে করি। এ ধরনের বিশেষজ্ঞ টিমের সহযোগী হিসেবে বুয়েট, চুয়েট, এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের কয়েক প্রকৌশলীকে সাথে রাখা যেতে পারে যাতে ভবিষ্যতে আমাদের দেশেও এ ধরনের প্রকল্প মোকাবেলা করার মতো বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রফেশনাল গ্ৰুপ তৈরি হয়, এবং একইসাথে, বুয়েট, চুয়েট, বা অন্য কোন গ্ৰুপ যেন এ ধরনের প্রকল্পে পরামর্শ প্রদানে একচ্ছত্র (মনোপলি) ব্যবসা করতে না পারে।

প্রায় ৩০ বছর আগের কথা। আমি তখন বুয়েটে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। রেজাউল করিম বেগ নামে এক তরুণ প্রভাষক আমাদের বিদ্যুৎ বিষয়ক একটি কোর্স পড়াতেন। তিনি তার ব্যাচে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স (ট্রিপল ই) বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেই প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন বুয়েটে। সচরাচর বুয়েট বা বাংলাদেশের অন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর ডিগ্রি করেই শিক্ষকতা শুরু করা যায়। কানাডাসহ উন্নতদেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে কমপক্ষে পিএইচডি ডিগ্রি থাকতে হয়। যাক, এ লেখার প্রসঙ্গ ভিন্ন। লেখাটির লক্ষ্য চট্টগ্রামের কালুরঘাট ব্রিজের মেরামত কাজ নিয়ে সহজ ভাষায় একটি কারিগরি আলোচনা।

তরুণ শিক্ষক বেগ সাহেব মাঝেমাঝে তার কিছু অভিজ্ঞতা ক্লাসে শেয়ার করতেন। এমনই এক ঘটনা এটি। তিনি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ প্রথম স্থান অধিকার করে পাশ করলেন। রেজাল্ট বেরোনোর পর গ্রামের বাড়িতে গেলেন মা-বাবাসহ অন্যান্য মুরুব্বিদের দোয়া নিতে। তার ভাষায়, তাদের বাড়ি ছিল এক অজপাড়া গাঁ-য়ে। তিনি বাড়িতে পৌঁছার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার যাওয়ার খবর রটে গেল চারিদিকে। ধীরে ধীরে গ্রামের স্কুলের সহপাঠীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী এসে জমায়েত হলেন তাদের বাড়িতে। উঠোনের মধ্যখানে তাকে ভালো একটি চেয়ারে বসিয়ে অন্যরা আশেপাশে পাটি বিছিয়ে বসে পড়লেন। সবারই মুখে এক কথা, “আমাদের রেজাউল বাংলাদেশে এক নম্বর ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে।” ধন্য ধন্য চারিদিকে।

এরই মাঝে রেজাউল করিম বেগ সাহেবের চাচা সম্পর্কের এক মুরুব্বি প্রস্তাব দিলেন তাদের বাড়ির কাছেই খালের উপর যে নড়বড়ে কংক্রিটের ব্রিজটা আছে তা কিভাবে মেরামত করা যায় তা নিয়ে ‘বিখ্যাত প্রকৌশলী বেগ’ সাহেবের পরামর্শ নিতে। কী করা দরকার তার নির্দেশনা পেলে গ্রামের লোকেরা চাঁদা দিয়েও ব্রিজটি মেরামতে রাজি আছেন বলে বেগ সাহেবকে জানানো হলো।

ব্রিজ মেরামতের পরামর্শ দিতে পারেন সিভিল বা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, ট্রিপল-ই না। বেগ সাহেব তো সিভিল ইঞ্জিনিয়ার না। তাই, তিনি ব্রিজের খুব কিছু বোঝেন না। তাই, চাচার প্রস্তাব শুনে তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত হলেও তা তাৎক্ষণিক প্রকাশ করলেন না। গ্রামের এই মুরুব্বিরা কি ইঞ্জিনিয়ারিং- এর এতো বিভাজন বুঝবেন? এছাড়া, ব্রিজ বিষয়ে তার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার বয়ান দিয়ে উপস্থিত শুভানুধ্যায়ীদের হতাশ করতেও তার মন চাইছিল না। তাই, তিনি তাদের সাথে সেই ব্রিজ পরিদর্শনে গেলেন। ব্রিজের দৈর্ঘ্য, প্রস্থের কিছু পরিমাপও কাগজে টুকে নিলেন। কয়েকদিনের মাথায় ঢাকায় ফিরে তিনি ব্রিজ ডিজাইনে অভিজ্ঞ এক সিনিয়র প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে গ্রামের মুরুব্বিদের কাছে প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাঠিয়ে দিলেন। সেদিন ক্লাসের সবাই তার সে গল্প এতটাই উপভোগ করেছিল যে আজ প্রায় তিন দশক পরও গল্পটি আমার পরিষ্কার মনে আছে।

প্রফেসর বেগ এখন কোথায়, কিভাবে আছেন আমার ধারণা নেই। তবে এ লেখাটি আপনার চোখে পড়লে অবশ্যই আমার শুভেচ্ছা জানবেন প্রিয় অধ্যাপক। এ গল্পে তিনি আমাদের বোঝাতে চেয়েছিলেন, আমাদের দেশের মানুষ মনে করেন ইঞ্জিনিয়ার মানেই তিনি একই সাথে ইলেক্ট্রিক্যাল, ইলেক্ট্রনিক্স, সিভিল, স্ট্রাকচারাল, মেকানিক্যাল, সবকিছুরই বিশেষজ্ঞ। আর, সেই ইঞ্জিনিয়ারের ডিগ্রিটা যদি বুয়েট থেকে হয় তাহলে তো কথাই নেই। তার কথাগুলো সেই ৩০ বছর আগে যেমন সত্য ছিল, আজও তা তেমনই সত্য। আজও দেশের মানুষ মনে করেন বুয়েট মানেই সকল প্রকারের প্রকৌশল সমস্যার সমাধান। চট্টগ্রামের কালুরঘাট-ব্রিজ মেরামত নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন দেখে অন্তত আমার সে ধারণাই হয়েছে।

যতটা জানি, ১৯৩১ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুটি নির্মিত হয়। এ সেতু চট্টগ্রাম শহরের সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সংযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলে আজ বহুদিন। বর্তমানে উত্তর-দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী অংশে প্রায় শতাধিক শিল্প কারখানার ভারী যান এই সেতুর উপর দিয়ে পণ্য পরিবহন করে। অথচ, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ে সেতুটিকে প্রায় ২০ বছর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২০১১ সালেও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একদল গবেষক এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। এরপর ভারী যান এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচলও নিষিদ্ধ করা হয়, যদিও এসব নির্দেশনা না মেনেই বর্তমানে চলছে ভারী যান। যথারীতি, একটা বড়ো ধরনের অঘটন না ঘটা পর্যন্ত বাঙালি মহাস সৃষ্টিকর্তার কৃপার ওপরে নির্ভরেই অভ্যস্ত।

স্বল্প কথায়, কালুরঘাট সেতুটি প্রায় দুদশক আগে থেকেই জরাজীর্ণ আখ্যা পেয়ে এসেছে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের দশ বছর আগেও দেশের অন্য একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল তেমন অভিমতই দিয়েছেন। তারপরও, রেল কর্তৃপক্ষ জরাজীর্ণ এই সেতু দিয়ে ভবিষ্যতে কিভাবে উচ্চগতির ট্রেন চলাচল করাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েটের) দ্বারস্থ হয়েছেন কেন তা জানতে আমার মতো অনেকেই ব্যাকুল। ইতোমধ্যে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল সাইট পরিদর্শন করে প্রায় তের কোটি টাকা পরামর্শ ফি এর একটি হিসাবও দিয়েছেন বলে আমরা পত্রিকান্তরে জেনেছি। ২০ বছর আগে স্বয়ং রেলওয়ের বিবেচনায় যে ব্রিজটি মেয়াদোত্তীর্ণ পরিগণিত হয়েছিল হঠাৎ নতুনভাবে তাতে প্রাণ সঞ্চারের এ আয়োজন অবশ্যই পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।

এ প্রসঙ্গে স্বভাবতই দুইটি প্রশ্ন আমাদের সামনে চলে আসে।

এক. বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল এ ধরনের অতি পুরাতন স্টিল স্ট্রাকচার, বিশেষত ব্রিজ স্ট্রাকচারের, স্থায়িত্ব ও ক্ষমতা নির্ধারণ বা মেরামত কাজে কতটা অভিজ্ঞ? এই ব্রিজের সাথে তুলনীয় কোন ব্রিজ স্ট্রাকচারের মেরামত বা স্থায়িত্ব বৃদ্ধির কোন প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করার অতীত অভিজ্ঞতা বিশেষজ্ঞ দলের আছে কিনা? থাকলে তা কোন দেশের কোন প্রকল্পে? এক্ষেত্রে কংক্রিটের ব্রিজ মেরামতের অভিজ্ঞতা স্টিলের ব্রিজ সংস্কারে কাজে লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে কিনা?

প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক সনদের চেয়েও বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি মূল্যবান। এ কারণেই অনেক পিএইচডি ডিগ্রিধারীও যখন একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে চাকরি শুরু করেন তখন তাকে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শুরু করতে হয়। এটাই নিয়ম। কোন বিশেষ ক্ষেত্রে আপনার যতই পড়াশোনা থাকুক ওই ক্ষেত্রে বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলে উন্নতদেশগুলোতে আপনাকে কোনভাবেই সে ধরনের কাজের পুরোপুরি দায়িত্ব দেয়া হয় না। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের স্টিল ব্রিজ মেরামত বা তার শক্তি মূল্যায়নের যথেষ্ট পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে তারা অবশ্যই উপরের কাজটির পরামর্শক হতে পারেন, অন্যথায় নয়। উপরের কাহিনীর বেগ সাহেবের মতো বুয়েটের ভালো রেজাল্ট করা যে কোন প্রকৌশলীকে সকল প্রকার ইঞ্জিনিয়ারিং কাজের বিশেষজ্ঞ ভেবে রেল কর্তৃপক্ষ ভুল করছে কিনা- তাও নিশ্চিত করার উপযুক্ত সময় এখন।

দুই. এ কাজে কেবল পরামর্শ দেওয়ার জন্যই বুয়েট প্রায় ১৩ কোটি টাকা দাবি করছেন বলে জানা গেল যা শুনে অনেকেই চোখ কপালে তুলেছেন। এই ১৩ কোটি টাকার একটি টাকাও কিন্তু ব্রিজটির প্রকৃত মেরামত বা উন্নয়ন কাজে ব্যবহার হবে না। এর পুরোটাই কেবল পরামর্শ প্রদানের জন্য নির্ধারিত থাকবে বুয়েটের জন্য। এই পরামর্শ ফি এর আনুমানিক ২০ গুণ যদি প্রকৃত মেরামত কাজের খরচ ধরা হয় তবে এ উন্নয়ন প্রকল্পে মোট খরচ দাঁড়াতে পারে ৩০০ কোটি টাকার মতো। প্রশ্ন জাগে, এই বিপুল অংকের অর্থ মৃতপ্রায় একটি ব্রিজের পেছনে খরচ করার যৌক্তিকতা কতখানি? পরামর্শক নিয়োগের আগে এ বিষয়ে কোনপ্রকার কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস করা হয়েছে কি? এই অর্থের উৎসই বা কোথায়? রেলওয়ে এর অর্থের জোগান দিতে সম্মত হলেও, তাদের বর্তমান অগ্রাধিকারে এ প্রকল্প আদৌ পড়ে কিনা? এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগেই তের কোটি টাকার বিনিময়ে পরামর্শকের পরামর্শ নিয়ে বসে থাকলে এই টাকার পুরোটাই জলে যাবে বলে ধরে নেওয়া যায়।

প্রসঙ্গত, আমার একটি পেশাধারী কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। কয়েক বছর আগেও আমি কানাডায় একজন প্রফেশনাল স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছি। কানাডীয় কোম্পানি শেরিট ইন্টারন্যাশনাল এর একটি কারখানার স্ট্রাকচারাল শক্তি পরীক্ষা ও সংস্কার বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পরামর্শক হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। এ কাজে আমার সাথে ছিলেন আরো দুই প্রকৌশলী। কারখানাটি কয়েকটি স্টিল স্ট্রাকচারে বিভক্ত ছিল। রাসায়নিক পরিবেশে দীর্ঘ ব্যবহারে স্টিলের অনেক কলাম, বিম, ব্রেসিং, ট্রাস- ইত্যাদি ক্ষয়ে গেছে। বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে এসে ভবনগুলোর অনেকগুলো ভিত বা ফাউন্ডেশনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্টিল আইটেমগুলো এতটাই পুরোনো যে তার শক্তির হিসাব বা স্পেসিফিকেশন খুঁজে পাওয়াও আমাদের পক্ষে পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। ক্ষয়ে যাবার পর স্টিলের বিভিন্ন আইটেমের কত পুরুত্ব কাঠামোগতভাবে কার্যকর আছে তা নির্ধারণ করতে যারপরনাই বেগ পেতে হয়েছে আমাদের।

এতো সীমাবদ্ধতার মাঝেও পুরোনো স্ট্রাকচার বা কাঠামোগুলো সম্পর্কে সব মিলিয়ে মোটামুটি একটা ধারণা ওই কোম্পানিকে আমরা হয়তোবা দিতে পেরেছি। তবে, ভবনগুলো মেরামতের সম্ভাব্য খরচ শুনে শেরিট ইন্টারন্যাশনাল সে পথে হাঁটবেন বলে আমাদের মনে হয়নি। সোজা বাংলায় বলা চলে, আমাদের এই টিমের পেছনে নয় মাসে তারা যে খরচ করেছেন- তা কতখানি তাদের প্রত্যাশা পূরণ করেছে সে প্রশ্ন আমাদের মনেও জেগেছিল। চট্টগ্রামের কালুরঘাট ব্রিজটিও অতি পুরাতন মডেলের স্টিলের তৈরী যার শক্তিমত্তা বা স্পেসিফিকেশন আদৌ জানা যাবে কিনা সে বিষয়ে একজন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। এ ধরনের মরচে ধরা বা ক্ষয়ে যাওয়া অজ্ঞাত স্টিলের উপর নতুনভাবে ওয়েল্ডিং বা বোল্ট কানেকশন দিতেও যথেষ্ট চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে বলে আমি মনে করি। অধিকন্তু, স্থাপনাটি ভবন না হয়ে সেতু হওয়ার কারণে ব্রিজটির বিভিন্ন পরিবর্তিত/সংশোধিত মেম্বারে (আইটেম) যে নিয়মিত ডাইনামিক লোডিং হবে তা-ই বা কতটা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব তাও গভীর বিবেচনার অবকাশ রাখে। সংস্কার করা একটি স্ট্রাকচারের রিপ্রেজেন্টেটিভ কম্পিউটার মডেল করা ছেলেখেলা নয়।

বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে স্টিল স্ট্রাকচারের ইতিহাস খুব বেশিদিনের নয়। আমি যখন বুয়েটে পড়েছি সেই সময়ও দেশের কোথাও স্টিল স্ট্রাকচারের উপর কোন কোর্স অফার করা হতো না। সঙ্গত কারণেই, স্টিল স্ট্রাকচার ডিজাইনে নির্ভরযোগ্য কোন বিশেষজ্ঞ গ্ৰুপ বাংলাদেশে আদৌ তৈরি হয়েছে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। আবারো বলি, কংক্রিট ব্রিজের অভিজ্ঞতা সরাসরি স্টিল ব্রিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা চলে না। দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের ডিজাইন। পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে বলে রাখি, কংক্রিটের ভেতরে স্টিলের রড ঢুকিয়ে যে স্ট্রাকচার করা হয়, তা কিন্তু স্টিল স্ট্রাকচার নয়; তা আরসি বা, কংক্রিট স্ট্রাকচার। সাধারণভাবে, স্টীল স্ট্রাকচারের স্টিল ওভাবে কংক্রিটের ভেতরে ঢোকানো থাকে না।

চট্টগ্রামের সুপ্রাচীন কালুরঘাট ব্রিজের সংস্কার আদৌ জরুরী মনে হলে তা অভিজ্ঞ ব্রিজ-স্টিল-স্ট্রাকচার বিশেষজ্ঞ, যাদের এ ধরনের একাধিক সংস্কার-প্রকল্প সফলভাবে সম্পাদনের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে, তেমন কোন পরামর্শক দলের নেতৃত্বে করাই যৌক্তিক মনে করি। এ ধরনের বিশেষজ্ঞ টিমের সহযোগী হিসেবে বুয়েট, চুয়েট, এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের কয়েক প্রকৌশলীকে সাথে রাখা যেতে পারে যাতে ভবিষ্যতে আমাদের দেশেও এ ধরনের প্রকল্প মোকাবেলা করার মতো বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রফেশনাল গ্ৰুপ তৈরি হয়, এবং একইসাথে, বুয়েট, চুয়েট, বা অন্য কোন গ্ৰুপ যেন এ ধরনের প্রকল্পে পরামর্শ প্রদানে একচ্ছত্র (মনোপলি) ব্যবসা করতে না পারে।

কালুরঘাট রেলওয়ে ব্রিজের সংস্কার নিয়ে কিছু ভাবনা

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:০৬

এমএলজি বলেছেন: Contact the author: [email protected]

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.