নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমার পরিবার আমার পৃথিবী। ভালোবাসি পরিবার, ভালোবাসি দেশ, তবে সেই ভালোবাসা আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা\'আলা আর তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেয়ে বেশি নয়।

মিঃ হাসান

যুক্তি আর আবেগের গ্যাঁড়াকলে আটকে থাকি আর ভাবি চলছে তো মন্দ নয়, না হোক কেউ বিজয়ী । দিনশেষে জয়টাই কি সব?

মিঃ হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সঠিক সময়ে বিয়ে এবং কিছু বাস্তবতা......

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৫৮

আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি সাহেবের ভাষায় বলতে গেলে লেখালেখি করার অভ্যাসটা অনেকটা “গরীবের বউ”-এর মত।সবার সম্পত্তি।সৈয়দ শামসুল হক তাঁর “মার্জিনে মন্তব্য” নামক বইতে বলেছেন, কাউকে গান করতে বললে ভালো গাইতে না পারলে সে কোনোদিনও গাইবে না কিন্তু কাউকে কোন বিষয় দিয়ে কিছু লিখতে বলা হলে সে কয়েকপাতা লিখে ফেলবে ঠিকই।মানে এটা এতটাই ‘সহজ’।আগে তাও এই লেখকদের সংখ্যা কমই ছিল কারণ নিজের লেখা বা মনের ভাবনা-চিন্তা অন্যকে জানানোর মাধ্যমের স্বল্পতা ছিল,তবে ইদানিং মাধ্যমের অভাব নেই,অভাব নেই লেখকেরও,পাঠকেরও।অভাব শুধু চিন্তার শুদ্ধতা আর ব্যাপ্তির।এমতাবস্থায় আমারও তাই কিছু লিখতে ইচ্ছে হয়।

কয়েকদিন ধরে দেখতে পাচ্ছি সুশীল সমাজ সঠিক সময়ে বিয়ে করতে চাওয়া এবং দেওয়া নিয়ে খুব সরব।তাদের স্লোগান, “বাঁচার মত বাঁচতে চাই,সঠিক সময় বউ চাই।” বেশ চটকদার আর মজাদার স্লোগান।এই বিষয়ে তারা ব্যাপক ফেইসবুক আন্দোলন গড়ে তুলেছে,লাইক,কমেন্ট আর শেয়ারেরও অভাব হচ্ছে না। এতে করে বোঝা যায় দেশে বিবাহপ্রার্থীর সংখ্যা অনেক।সবার মনেই বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে,প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অনেক ক্ষোভ।তবে এই বিষয়টা নিয়ে আমার কিছু বলার আছে।
তাদের ভাষ্য হল, ছেলেরা গড়ে ১৫বছর আর মেয়েরা ১৩বছরে ম্যাচিউর হয় আর আমাদের সমাজ ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ আর মেয়েদের ১৮ করে রেখেছে তাও সেটা কাগজে-কলমে। ৩২বছরেও আমাদের বাবা মায়েরা আমাদের বিয়ে দিতে চায়না, বলে- “বিয়ে করলে বউকে খাওয়াবা কী?” তাদের দুঃখ হল যে, বউ কি শুধু খেয়েই যাবে?তাই তাদের কথা হল বাবা মায়ের এই যুক্তি অযৌক্তিক।তাদের যুক্তি ইসলাম বলে, “সাবালক হলেই তোমরা সন্তানদের বিবাহ দাও।” আমাদের বাবামায়েরা সব বিষয়ে ইসলাম মেনে চলে এখানে মানেনা,মেয়ের বাবামায়েরাও ২২/২৩ বছরের ছেলেদের সাথে নিজের মেয়েদের বিয়ে দিতে চায়না, তারা খুঁজে টাকাওয়ালা প্রতিষ্ঠিত বেশি বয়সের পাত্র।এটা তাদের ভাষায় একটি প্রহসন।তাই তারা মানে সন্তানরা উপায়ান্তর না দেখে যদি “লিটনের ফ্ল্যাটে”, রেস্টুরেন্টের খুপরি ঘরে বা পতিতালয়ে যায় তাহলে তাদের নাকি কোন দোষ নেই,সব দোষ সমাজের আর পিতা-মাতার।
আমার এই বিষয়টাতে একটু দ্বিমত আছে।প্রথমত বিয়েটা যদি আপনার কাছে শুধু শরীরের বিষয় হয়ে থাকে তাইলে বুঝতে হবে আপনার বয়স ৩০ হলেও আপনার এখনও আসলে ম্যাচিউরিটি আসেনি,সিমেন প্রোডাকশন করতে পারা মানে ভাই ম্যাচিউরিটি না।আর বিয়ে করলে বউকে কী খাওয়াবা, এটা হল ভদ্র সমাজের কথা।আসল কথাটা হল বাবা-মা বলতে চান বিয়ের সাথে সম্পর্কিত আরও হাজার খানেক রীতি-নীতির কথা।এর মধ্যে বউয়ের স্যানিটারি প্যাড থেকে শুরু করে বছরখানেক বাদে যে আসন্ন সন্তান তার বিষয়টিও চলে আসে।শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় মিষ্টি নয় না-ই নিলেন, কিন্তু বউয়ের প্যাডের টাকাটা নিশ্চয় আপনার বাবার কাছ থেকে নিতে পারবেন না,তাইনা?আর ইদানিং তো বিয়ে-বাজেটের অর্ধেকের বেশি খরচ হয় পার্শ্ববর্তী দেশের বিয়ে-সংস্কৃতি অনুসরণ করতেই।সবচেয়ে বড় ব্যপারটা আমার শিক্ষকের ভাষাতেই বলি, “আজ তোমার একটা চকচকে শার্ট বা জুতা যত ভালো লাগছে,পরে ফেললে,কয়েকদিন কেটে গেলে কি আর তত ভালো লাগবে?শখ আর প্রয়োজনের মধ্যে পার্থক্য করতে জানতে হবে।শার্টটা যদি তোমার প্রয়োজন হয়, চকচকে না থাকলেও তুমি পরবে আর যদি শখ হয়,পুরান হয়ে গেলে আর ভালো লাগবেনা।এটাই মানুষের ধর্ম।” একথা পাড়লাম এই কারণে যে, সিমেন প্রোডিউস করতে শুরু করার পরপর বিয়ে বা নারী সঙ্গ মানুষের শখ,আকর্ষণ।আপনি যদি ২১ বছর বয়সেই বিয়ে করতে চান বিশ্বাস করুন আর নাই করুন আপনার ক’দিন পর অন্যদিকে চোখ পরবেই।এটা আপনি জানেন না কিন্তু আপনার বাবা-মা জানেন ঠিকই।তাই অপেক্ষা করতে বলেন সঠিক সময়ের যে সময়ে আপনার কাছে বিয়েটা নিছক শখ না,প্রয়োজন হয়ে দাঁড়াবে এবং বিয়ে আপনার কাছে শুধু শারীরিক বিষয় থাকবেনা।আপনি দায়িত্ব নিতে শিখবেন আরেকজন মানুষের যাকেও তাঁর বাবা-মা পরম যত্নে বছরের পর বছর পালন করেছেন,তার প্রতিটা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয় আপনাকে ভাবাবে,আপনি তার প্রতিটা প্রয়োজন যে কোন মূল্যে পূরণ করতে চাইবেন,ঠিক তার বাবার মত করেই।বলাই বাহূল্য এর জন্য নূন্যতম একটা উপার্জন দরকার আছে বৈকি,যেটার কথাই আমাদের বাবা-মায়েরা একটু ঘুরিয়ে এক কথায় বলে থাকেন, “কী খাওয়াবা?”। তখন আপনি দায়িত্ব নিতে শিখবেন আপনার রক্তের সন্তানের।তখন আপনি চাইলেও আপনার চোখ অন্যদিকে যাবেনা।কারণ আপনি এবার আসলেই ম্যাচিউর।

এবার আসি এই ম্যাচিউরিটি বোধ আসার আগে আপনি তাহলে কী করবেন?আপনি কি পতিতালয়ে যাবেন নাকি লিটনের ফ্ল্যাটে?নাকি মিরপুর মাজার রোডের খুপরি রেস্টুরেন্টে?নাকি সিনেমা হলের বেশি দামি “কর্নারসিট”? গেলে তো আপনার কোন দোষ হবেনা,তাইনা?সব দোষ বাবা-মা’র আর সমাজের!কাজেই যাওয়াই যায়।আর বাবা-মায়েরা সব ক্ষেত্রে ইসলাম মানে কিন্তু সাবালক হলেই বিয়ে দিতে হবে এটা কেন মানবেনা? আপনার কাছে ভাই মনে হইতেছে বাবা-মা সব কিছুতে ইসলাম ইসলাম করে এখানে কেন করতেছে না,আমি যদি বলি আর আপনি কোন কিছুতেই ইসলাম মানেন না খালি নিজের সুবিধার জায়গা ছাড়া।এখানে সাবালক হলে বিয়ে দিতে বলছে দেখেই আপনি এই নিয়মটা খুব মানতে চাইছেন কিন্তু বিয়ে করতে না পারলে বা সামর্থ্য না থাকলে যে সিয়াম পালন করতে হবে,যে কোন মূল্যে গোপনাঙ্গের হেফাযত করতে হবে,কোন মতেই জেনা-ব্যভিচারের নিকটেও যাওয়া যাবেনা এই ব্যপারে কি আপনার ইসলাম কিছু বলেনা?সমাজে প্রচলিত পদ্ধতির নিরিখে ইসলাম হালাল-হারাম নির্ধারণ করেনা।আমাকে ২০/২১ বছরে বিয়ে দেওয়া হচ্ছেনা তার মানে আমি হারাম কাজের বৈধতা দাবী করতে পারিনা,ইসলাম কাউকেই সেই অধিকার দেয় না।বরং আপনি ধৈর্যধারণ করুন,মানসিক স্থিরতা নিয়ে আসুন,রোজার সকল হক আদায় করে রোজা রাখুন।সামনে-পিছনে, উপরে-নিচে, ডানে-বামে, স্বয়নে-স্বপনে সেক্স এর কথা ভাবলে,ভারতীয় সিরিয়ালের আঁটোসাটো সংক্ষিপ্ত পোশাক আর হটপ্যান্ট পরিহিত তরুণীদের মানসে স্থান দিলে আর যৌনতাকে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বানালে মানসিক শান্তি আসবেনা ভাই।

আরেকটা বিষয় ভেবে দেখা দরকার,বিয়ের পরেও আপনি পরিণত আচরণ করতে পারবেন তো?এখন আপনি রাত ২টা পর্যন্ত মোবাইলে গেইম খেলছেন বা চ্যাটিং করছেন,তার আগে রাত ১০টা পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে এসেছেন এবং অভিজ্ঞতা বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনি বিয়ের পরেও স্ত্রীকে সময় না দিয়ে এই বিষয়গুলো বহাল রাখতে চাইবেন।এই বিষয়টাকে আর কেউ বললেও আমি পরিণত আচরণ বা ম্যাচিউরিটি বলতে পারবোনা।তাই ২১ বছরে বিয়ে করে ২২/২৩ বছরে সন্তানের বাবা হলে আপনি নিজের সন্তানকে কীভাবে গাইড করবেন যেখানে আপনার নিজেরই গাইডেন্স দরকার?বউকে খাওয়াবে কী,বাবা-মা ইসলাম মেনে চলছে না,২১ বছরেও কেন বিয়ে দিচ্ছে না-এইসব অভিযোগ করার আগে তাই এই ব্যপারগুলো একটু ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো।

সবশেষে বলি সামর্থ্য থাকলে বিয়ে করে ফেলাটাই মঙ্গল,বাবা-মায়েরও বিষয়টা বিবেচনায় রাখা জরুরী যে বিনা কারণে যেন সন্তানকে আপনারা বিয়ে দিতে দেরী না করেন।তবে চিন্তার ব্যাপ্তি আর মানসিক পরিণতিবোধ অর্জিত না হলে কিন্তু সমাজ সঙ্কটাপন্ন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.