![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহাধর্ম: মানবধর্ম ভিত্তিক অন্ধবিশ্বাস মুক্ত মানব বিকাশ মূলক ধর্ম। মানুষের মৌলিক ধর্ম।
।। প্রসঙ্গ : সত্য ।।
~মহর্ষি মহামানস
চেতনার ন্যুনাধিক্যের ভিত্তিতে 'সত্য' বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন রূপে প্রতিভাত হয়ে থাকে। কারো কাছে তার বিশ্বাসের বিষয়বস্তুই সত্য। কারো কাছে একমাত্র যুক্তি-প্রমাণ সিদ্ধ বিষয়বস্তুই সত্য। আবার, কারো কাছে সবকিছুই আপাত সত্য।
তাহলে প্রকৃত সত্য কাকে বলা হবে?
যা আছে, যার অস্তিত্ব আছে, তাই হলো সত্য।
কিন্তু সমস্যা হলো, সব বিষয় বস্তুর অস্তিত্ব সবার নিকট প্রতীয়মান নয়। আবার, অনেক কিছুই আছে বলে অনুমান, কিন্তু কারো কাছেই প্রত্যক্ষ বা উপলব্ধ নয়। সমস্যা এখানেই।
অন্ধবিশ্বাসীগণ সেই অপ্রত্যক্ষ অ-উপলব্ধ বিষয়বস্তুর কাল্পনিক অস্তিত্বকেই অনেক সময় সত্য বলে বিশ্বাস করে।
আর যুক্তিবাদী-- বিজ্ঞানমনস্ক মানুষদের কাছে যুক্তি ও প্রমাণ সিদ্ধ বিষয়বস্তু ছাড়া বাকি অনুমান সাপেক্ষ সম্ভাব্য বিষয়বস্তু গুলি--- প্রকল্প বা তত্ত্বপ্রকল্প (হাইপোথিসিস) অথবা তাত্ত্বিক দর্শন রূপে গণ্য হয়ে থাকে। আর, এর বাইরের কল্পনা বা ধারণাগুলোকে তারা--- অসম্ভব বা অলীক, বা আপাত মিথ্যা বলে, অথবা গ্রহণযোগ্য নয় বলে, মনে করে।
এছাড়াও, একজন সত্যনিষ্ঠ দূরদর্শী দার্শনিক এর কাছে এই জগতের বাস্তব-অবাস্তব সবকিছুই আপাত সত্যরূপে গৃহীত হতে পারে। আজ যে সত্য--- কাল সে মিথ্যা হয়ে যেতে পারে, আজ যে মিথ্যা কাল সে সত্য বলে প্রমাণিত হতে পারে। তাই, সে সব কিছুকেই আপাত সত্য রূপেই গ্রহণ করে থাকে।
'সত্য' হলো--- যথার্থ বা যথার্থতা, বাস্তব বা বাস্তবতা। প্রকৃত। আর, বাস্তবতা--- যথার্থতা যার আছে, তার অস্তিত্বও আছে। সে অস্তিত্বশীল। সেই হিসাবে মিথ্যাও সত্য। মিথ্যা রূপে সে সত্য, অর্থাৎ ওটা যে মিথ্যা--- সেটা তো সত্য!
'অস্তিত্ব' হলো--- বিদ্যমানতা, অর্থাৎ বিদ্যমান থাকা। যা আছে তা-ই হলো অস্তিত্বশীল। সেই হিসাবে, ঠান্ডা ও অন্ধকারেরও অস্তিত্ব আছে। ঠান্ডা ও অন্ধকার এগুলো হলো এক একটা অবস্থা। আর সেই অবস্থাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। ওরা ঐ ঐ অবস্থায় অস্তিত্বশীল।
কেউ যদি বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে ঠান্ডা ও অন্ধকার -এর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে, তা' হবে দুর্ভাগ্যজনক। হবে, অপবিজ্ঞান বা বিজ্ঞানের ভুল ব্যাখ্যা।
প্রচলিত ধর্ম-- রাজতন্ত্র অধুনা রাজনীতি এবং বৈশ্যতন্ত্র এরা নিজেদের স্বার্থেই মানুষকে গভীরভাবে ভাবতে শেখায়নি কোনো দিনও। তাই মানুষ ওপরে ওপরে --ভাসা ভাসা জ্ঞান আর শেখানো তোতাবুলি নিয়েই মজে আছে।
অনভ্যাসের কারণে তলিয়ে ভাবতে তাদের বড়ই অনিহা। ফলে, সত্য তাদের কাছে অধরাই থেকে যায়। আর স্বার্থান্বেষীরাতো এটাই চেয়ে এসেছে বরাবর।
ঈশ্বর-অস্তিত্ব!
প্রচলিত ধর্ম--- দর্শন---মতবাদ -এর কথা আমি বলতে পারবো না। আমাদের ধর্ম-দর্শন-মতবাদে এই মহাবিশ্ব অস্তিত্বই হলো ঈশ্বর। এই বিশ্ব-অস্তিত্বকে কি তুমি অস্বীকার করতে পারো !?
ঈশ্বর-অস্তিত্ব নিয়ে এর পূর্বে আমি লিখেছি। আগ্রহী হলে দেখে নেবে।
বিশ্বাসের চশমাটাকে খুলে রেখে দেখো।
মহাধর্ম ও মহাবাদ-এর মধ্যে তুমি তোমার বিশ্বাসের ঈশ্বরকে খুঁজতে যেওনা। –পাবেনা। তথাকথিত স্বর্গলাভ– ঈশ্বরলাভ অথবা ব্রহ্মলাভের কোন পথ বা পদ্ধতির সন্ধান নেই এখানে। আছে মানবত্ব লাভের উপায়।
বিশ্বাসের চশমাটাকে খুলে রেখে, যথাসম্ভব প্রভাবমুক্ত হয়ে– খোলা মন নিয়ে, সত্যানুসন্ধিৎসুর দৃষ্টি নিয়ে-– এর গভীরে প্রবেশ করলে, তবেই বিস্ময়কর সত্য তোমার কাছে প্রকাশলাভ করবে।
মহাধর্ম ও মহাবাদ হলো– যথাক্রমে এক স্বতন্ত্র ধর্ম এবং স্বতন্ত্র মতবাদ। বিভিন্ন শাস্ত্র –বিভিন্ন মতবাদ অথবা প্রচলিত ধ্যান-ধারণার সাথে এর তুলনামূলক বিচার করতে গেলে– ধন্দে পড়ে যাবে। দেখবে, কোথাও হয়তো মিলছে– কোথাও মিলছে না। তারফলে, তোমরা অনেকেই মানসিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে– হতবুদ্ধি হয়ে যেতে পারো।
তাই, মহাধর্ম ও মহাবাদ-এর দ্বারা লাভবান হতে চাইলে, একে এর দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। যুক্তিবাদী সচেতন মুক্ত মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
ঠিকমতো উপলব্ধি হলে, তখন বুঝতে পারবে, কোনটা লভ্য ---কোনটা লাভ করা সম্ভব, আর কোনটা আকাশ-কুসুম কল্পনা! বুঝতে পারবে, এতদিন কিভাবে মরিচিকার পিছনে ছুটে ছুটে মরেছো তুমি। বুঝতে পারবে মানব জীবনের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য কী।
তুমি নিজেই উপলব্ধি করতে পারবে, তোমার জীবনের অধিকাংশ অসাফল্য– পরাজয়– হানি, অধিকাংশ দুঃখ– কষ্ট– যন্ত্রনার পিছনে প্রধানত দায়ী– তোমার অজ্ঞানতা –তোমার অন্ধ-বিশ্বাস। সঠিকভাবে নিজেকে না জানার ফলে, তোমার সামনের মানুষকে ঠিকমতো চিনতে না পারার ফলে, তুমি বহুবার ঠকেছ– প্রতারিত হয়েছো। এর পুণরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে, যতদিন না তুমি আলস্যতা কাটিয়ে সজাগ–সচেতন থেকে– সত্য– মিথ্যা, বাস্তব– অবাস্তব-কে চেনার ক্ষমতা লাভ করছো।
নিজেকে সজাগ–সচেতন রেখে— প্রভাবমুক্ত হয়ে, যুক্তি-বিচার প্রয়োগ করে– সত্যানুসন্ধান করতে, –গভীরভাবে চিন্তা করতে, অনেকটাই মানসিক পরশ্রম করতে হয়। তার চাইতে বিশ্বাস করা অনেক সহজ কাজ। বিশ্বাস করতে তেমন পরিশ্রমের দরকার হয় না। তাই, মানসিক শ্রমবিমুখ মানুষ –বিশ্বাসের পথটাই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু তার ফলে যে কী ক্ষতি হয়, –তা’ বোঝার জন্যেও মানসিক পরিশ্রম করতে সে নারাজ বা অপারক।
বিশ্বাসের পথে আত্মোপলব্ধি –সত্যোপলব্ধি –ঈশ্বরলাভ অথবা ঈশ্বরত্ব লাভ কিছুই সম্ভব হয় না। তবু, মানুষ বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধ’রে ছুটে–ছুটে মরে। তাই, মানুষকে সজাগ-সচেতন –যুক্তিবাদী –সত্যানুসন্ধিত্সু ক’রে তুলতে, মানুষের জীবনে একের পর এক দুর্ভাগ্য নেমে আসে। মানুষ যথেষ্ট সজাগ-সচেতন না হওয়াবধি বারবার আঘাত আসতে থাকে, এবং আসতেই থাকে।
বিশ্বাসের দ্বারা পৃথিবীতে যতটুকু ভালো হয়েছে, মন্দ হয়েছে তার চাইতে অনেক গুণ বেশি। সারা পৃথিবী জুড়ে যত অমানবিক কর্ম সংঘটিত হয়েছে ও হচ্ছে, তার অধিক অংশের মূলেই আছে বিশ্বাস। অন্ধ বিশ্বাস।
আর, যদি মনে কর, তোমার বিশ্বাসের পথই শ্রেষ্ঠ পথ, ওটাই শেষ কথা, তাহলে বুঝতে হবে, মহাধর্ম ও মহাবাদ তোমার জন্য নয়।
মহাধর্ম ও মহাবাদ সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে, গুগল সার্চ করো> MahaDharma / MahaVad / MahaManan
©somewhere in net ltd.