নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের চাহিদা মতো মানববিকাশ মূলক যুগোপযোগী ধর্ম~ মহাধর্ম -এর আবির্ভাব ঘটেছে। \'মহাধর্ম\' হলো অন্ধবিশ্বাস মুক্ত, খোলা মনের, যুক্তিবাদী আধ‍্যাত্মিক চেতনা সম্পন্ন, আত্মবিকাশকামী মানুষদের উপযোগী একটি ধর্ম।

মানব ধর্মই মহাধর্ম

মহাধর্ম: মানবধর্ম ভিত্তিক অন্ধবিশ্বাস মুক্ত মানব বিকাশ মূলক ধর্ম। মানুষের মৌলিক ধর্ম।

মানব ধর্মই মহাধর্ম › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'বিশ্বাস ও জ্ঞান\' প্রসঙ্গে মহর্ষি মহামানস

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:০৫

বিশ্বাস ও জ্ঞান
~মহর্ষি মহামানস

প্রকৃত জ্ঞানের অভাব থেকেই বিশ্বাসের জন্ম। প্রকৃত বা অপর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব সত্ত্বেও, কোন বিষয়-বস্তু বা ব্যক্তি সম্বন্ধীয় ধারণাকে , অথবা স্পষ্ট উপলব্ধ নয়--- এমন কোনো ধারণাকে সত্য বলে মনে করা বা মেনে নেওয়া অথবা লব্ধ জ্ঞান বলে মনে করাই হল প্রকৃত বিশ্বাস। আর, এই সহজ স্বভাবজ বিশ্বাসকে দৃঢ়মূল এবং আমাদের মজ্জাগত করে তুলেছে, প্রচলিত ধর্ম।

দুর্বল বা শিথিল বা সন্দেহযুক্ত বিশ্বাসকে প্রকৃত বিশ্বাস বলা যায় না। সেক্ষেত্রে বিশ্বাস দৃঢ়--- একমুখী হয় না। বিশ্বাসের মধ্যে দ্বিধা- দ্বন্দ্ব- সন্দেহ যুক্ত থাকে। অথবা বিশ্বাসের সাথে জ্ঞান মিশ্রিত থাকে সেখানে।

তবে, কোনো কিছু অনুমান করা অথবা কাজের সুবিধার জন্য কোন কিছু ধরে নেওয়া, অথবা কল্পনা করে নেওয়াটা--- বিশ্বাস নয়।

অবিশ্বাসও বিশ্বাস। তা অপর কোন কিছুতে বিশ্বাস। অপর কোনো কিছু বিশ্বাসের সাপেক্ষে--- 'এটা নয়' অথবা 'এটা হতে পারে না' ---এরূপ বিশ্বাস।

বিশ্বাস অনেক প্রকারের হতে পারে, ---প্রকৃত বিশ্বাস বা দৃঢ় (অন্ধ) বিশ্বাস, জ্ঞানের মোড়কে বিশ্বাস, আংশিক বিশ্বাস বা আংশিক জ্ঞান মিশ্রিত বিশ্বাস, বিশ্বাসের মোড়কে জ্ঞান--- যে জ্ঞানকে যুক্তি-প্রমাণের দ্বারা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আর এক প্রকার হলো, উদ্দেশ্যমূলকভাবে সৃষ্ট বিশ্বাস--- কাল্পনিক কোনো কিছুকে, কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে বিশ্বাস রূপে, অর্থাৎ সত্য বলে, প্রতিষ্ঠা করা--- বিশ্বাস।

প্রকৃত বা দৃঢ় (অন্ধ) বিশ্বাসী বা বিশ্বাসকারীদের কাছে, তার বিশ্বাসই শেষ কথা। ---তা'ই পরম সত্য! সেখানে কোনো তর্ক- বিতর্ক চলতে পারে না। তবে, যারা তাঁদের বিশ্বাসকে--- লব্ধ জ্ঞান বলে মনে করে, তারা অনেক সময়েই যুক্তি প্রমাণাদির দ্বারা তাদের বিশ্বাসকে প্রকৃষ্ট জ্ঞান রূপে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে থাকে। অনেক সময়েই এদের বিশ্বাসের সাথে জ্ঞান মিশ্রিত থাকে।

অনেক সময়, জ্ঞান আর বিশ্বাসকে আলাদা ক'রে বোঝা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সাধারণত, মানুষ যাকে 'জ্ঞান' বলে থাকে, অনেক সময়েই দেখা যায়, সেই জ্ঞানও এক প্রকার বিশ্বাস। অর্থাৎ কোনো অপ্রত‍্যক্ষ অনুপলব্ধ তথ্য বা তত্ত্বকে জ্ঞান বলে, বিশ্বাস করা হয়ে থাকে। অনেক সময়, এই সমস্ত জ্ঞান নানা বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে, এবং এই সমস্ত জ্ঞানের সাথে বিশ্বাসও মিশ্রিত থাকে। তাই, এইসব জ্ঞান আসলে বিশ্বাসেরই নামান্তর। এগুলি প্রকৃত বা বিশুদ্ধ জ্ঞান নয়।

জ্ঞান হলো--- কোন বিষয়-বস্তু সম্বন্ধে নিরপেক্ষ দৃষ্টি সম্পন্ন অথবা ওই বিষয়-বস্তুতে অনাসক্ত একজন সজাগ-সচেতন-সত্যপ্রিয় সত‍্যানুসন্ধিৎসু মানুষের উপলব্ধ পর্যাপ্ত ধারণা। একজনের কাছে যেটা জ্ঞান, আরেকজনের কাছে সেটাই আবার বিশ্বাস হতে পারে। যদি কোনো বিশ্বাসপ্রবন মানুষ ওই জ্ঞানীর উপলব্ধ জ্ঞানের কথার উপর বিশ্বাস ক'রে থাকে, তখন তার কাছে তা' শুধুই বিশ্বাস।

কোনটা জ্ঞান কোনটা জ্ঞান নয়, অথবা শুধুই বিশ্বাস, ---এটা বোঝার জন্য যথেষ্ট জ্ঞান-অভিজ্ঞতা-চেতনা থাকা আবশ্যক। সেইসাথে নিরপেক্ষ দৃষ্টি বা অনাসক্ততা সহ থাকতে হবে সত্যপ্রিয়তা। বিশ্বাসপ্রবণতা--- ব্যক্তিকে প্রকৃত জ্ঞান লাভে অক্ষম করে তোলে।

এই মানব জগতে--- এত অন্ধকার কেন! এই জগতের একটা অংশ গড়ে উঠেছে--- জ্ঞান-বুদ্ধি যুক্তি-বিচার ও বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি ক'রে। আর, অপর অংশটি গড়ে উঠেছে--- অজ্ঞান অবচেতন মনের অন্ধবিশ্বাস, সহজপ্রবৃত্তি ও অন্ধ-আবেগের উপর ভিত্তি করে। সচেতন মনের বিকাশের সাথে সাথে--- মানুষ এদের সম্পর্কে সচেতন হয়ে, এদের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভে সক্ষম হয়ে উঠলে, তবেই এই জগতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জমাট বেঁধে থাকা অন্ধকার দূর হয়ে--- জ্ঞান ও চেতনার আলোকে আলোকিত হয়ে উঠবে এই জগত।

বিশ্বাস হলো--- অন্ধ ধারণা মায়াত্মক জ্ঞান। আবার, সাধারণত আমরা যাকে জ্ঞান বলে, বিশ্বাস করে থাকি, --- তার অধিকাংশই কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে প্রতীয়মান সত্য বা আপাত সত্য। যাকে বলে, ওপর ওপর--- ভাষা ভাষা জ্ঞান। বিশ্বাসের বিষয়-বস্তু কখনো সত্য হতেও পারে, আবার কখনো নাও হতে পারে। কখনো আবার আংশিক সত্যও হতে পারে। কিন্তু সে যা-ই হোক, তা' বিশ্বাসকারীর উপর নির্ভর করেনা।

আমরা সত্যকে ভালোবাসি--- শুধু মুখের কথায়, ওপরে ওপরে। প্রকৃতপক্ষে, আমরা সত্যকে চাইনা। আমরা আসলে সত্যকে ভয় পাই। এই ভয় হলো, আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার ভয়। যা দাঁড়িয়ে আছে অনেকাংশে মিথ্যার উপর ভিত্তি করে। আমরা আমাদের বিশ্বাসকেই সত্য বলে ভাবতে ভালোবাসি। তবে এসবই ঘটে আমাদের অজান্তে--- অবচেতনে।

আমাদের অজ্ঞান-অন্ধ মন, ---তার বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করতে, সে নানা যুক্তি--- কারণ--- প্রমাণ খোঁজ ক'রে থাকে। অনেক সময় সে তার বিশ্বাসকে মজবুত করে তুলতে--- ভালো কোনো গল্প ফাঁদে। যারা তার ওই বিশ্বাসকে এবং তার গল্পকে সত্য বলে মেনে নেয় বা বিশ্বাস করে, সে তাদেরকেই ভালোবাসে এবং তাদেরকে তার নিজের লোক বলে, মনে করে। অধিকাংশ মানুষ গল্পেই মজে থাকতে ভালোবাসে, সত্যে তাদের অত্যন্ত অনীহা।

এ এক মায়াময় জগত। বিশ্বাসই এই জগতকে কখনো স্বর্গীয় সুষমামন্ডিত করে তোলে, আবার বিশ্বাসই এই জগতকে নরকে পরিনত করে তোলে। বিশ্বাসেই মানুষ নিজেকে সুখী মনে করে, আবার বিশ্বাসেই মানুষ নিজেকে দুঃখী ভেবে থাকে। অজ্ঞান-অন্ধ মানুষ--- তাদের এই মায়াত্মক বিশ্বাসের জগত থেকে বেরিয়ে এসে--- নিজের এবং এই জগতের প্রকৃত স্বরূপকে জানার বা দেখার কথা ভাবতেই পারেনা। তাদের মধ্যে নিজের সম্পর্কে এবং এই জগৎ ও তার কার্যকারণ সম্পর্কে জানার প্রবল ইচ্ছা জাগ্রত হয়না। তাদের কাছে তাদের ঐ বিশ্বাসের জগৎটাই বাস্তব জগত। তার বাইরে আর যা কিছু--- সব অবাস্তব।

এত অল্প জ্ঞান--- চেতনা ও ক্ষমতার অধিকারী হয়ে, মানুষ মোটেই সুখী--- সন্তুষ্ট নয়। আবার এই স্বল্প জ্ঞান ও চেতনার কারণেই মানুষের অহংকার--- আত্মম্ভরিতাও বেশি। জ্ঞানাভাবকে মানুষ তাই মেনে নিতে পারে না। অনেকে আবার তাদের জ্ঞানাভাবকে স্বীকারই করতে চায় না। অপরাপর মানুষের কাছে নিজেদেরকে অসাধারণ জ্ঞানী প্রতিপন্ন করতে গিয়েই যত সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেক বিশ্বাসের সৃষ্টি হয় এখান থেকেই।

অন্ধ বিশ্বাসপ্রবণ সেই সব মানুষদের সমস্যার কোনো সহজ সমাধান নেই। জ্ঞান---চেতনা, বোধশক্তি অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও, যারা ওপর-চালাকির দ্বারা জ্ঞানের ঘাটতি পূরণে সর্বদা তৎপর, যারা মনে করে অথবা ভান করে--- তারা সব জানে, অথচ বিশেষ কিছুই জানে না, জাগতিক দুর্ভোগ--- দুঃখ -কষ্ট, যন্ত্রণার মধ্য দিয়েই তিলে তিলে জ্ঞান ও চেতনার বিকাশ ঘটে থাকে তাদের।

চেতনা বৃদ্ধির সহজ ও স্বাভাবিক পথ হলো--- মানুষ যদি তার নিজের সম্পর্কে, নিজের ক্ষমতা-অক্ষমতা ---অজ্ঞানতা সম্পর্কে সজাগ থেকে, জ্ঞান লাভের জন্য সত্যান্বেষীর মতো চোখ-কান খোলা রেখে--- সর্বদা সচেষ্ট থাকে, তাহলেই তার দ্রুত জ্ঞান ও চেতনা বৃদ্ধি পাবে।

কিন্তু জ্ঞান অর্জন করতে যে অনেক পরিশ্রম করতে হয়, বিশ্বাস করতে তো আর তার দরকার হয় না! তাই পরিশ্রম বিমুখ কল্পনাবিলাসী মানুষ জ্ঞানের পথে না গিয়ে--- বিশ্বাসেই মজে থাকতে ভালোবাসে।

অল্প বা স্বল্প চেতন-স্তরের মানুষের পক্ষে বিশ্বাস ছাড়া বাঁচাই সম্ভব নয়। জ্ঞান ও বিশ্বাস উভয়কেই প্রয়োজন। এদের জ্ঞানের যা অবস্থা, তাতে করে সেই জ্ঞানের উপর নির্ভর বা ভরসা করে থাকা সম্ভব নয়। তাই বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে বা ভরসা করেই বেঁচে থাকে তারা। কিন্তু এভাবে তো আর চিরকাল চলে না, জীবনের পথে চলতে চলতে--- মনোবিকাশের সাথে সাথে, জ্ঞান ও চেতনা বৃদ্ধির সাথে সাথে--- বিশ্বাসের ক্ষয় হতে থাকে ক্রমশ।

চেতনায় এগিয়ে থাকা অনেক মানুষই এটা বোঝেন, যে অন্ধ-বিশ্বাস তাদের বিকাশের পরিপন্থী। তাই, বিশ্বাস থাকুক বিশ্বাস রূপেই, জ্ঞান বা সত্য রূপে নয়।

বিশ্বাসের প্রয়োজন আছে, কিন্তু বিশ্বাসকে সচেতন ভাবে--- 'বিশ্বাস' রূপেই চিহ্নিত করতে হবে, এবং গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বাসকে সত্য বা উপলব্ধ জ্ঞান রূপে গ্রহণ করলে, আমাদের বিকাশ প্রায় থমকে যাবে, অথবা বিকাশের গতি অতি মন্থর হয়ে পড়বে। আর যথাযথ বিকাশ না ঘটলে, এইভাবে অজ্ঞান- অন্ধ হয়ে--- দুঃখ-কষ্ট যন্ত্রণার মধ্য দিয়েই কাটাতে হবে সারা জীবন। মনে রাখতে হবে, আমাদের একটি সচেতন মন আছে বলেই, আমাদের অন্ধ-আবেগকে সচেতন মনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হই বলেই, আমরা মানুষ। সেই সচেতন মনের বিকাশ ঘটাতে সচেষ্ট হওয়াই প্রতিটি মানুষের প্রধান কর্তব্য।

.

শুনতে অবাক লাগলেও, আমার অভিধানে 'বিশ্বাস' নামে কোনো শব্দ নেই। এই 'বিশ্বাস'-ই হলো~ পৃথিবীতে যত নষ্টের গোড়া।

যুগ যুগ ধরে প্রচলিত ধর্ম মানুষকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে, তার স্বার্থে। তাই বিশ্বাস মানুষের মজ্জাগত হয়ে গেছে। বিশ্বাস ছাড়াও যে জীবন চলতে পারে, এ কথা মানুষ ভাবতেই পারেনা।

আমি কখনোই বলি না, আমার কথা বিশ্বাস করো। আমি বলি, যুক্তি- বিচার আর বিজ্ঞান- মনষ্কতার কষ্ঠিপাথরে আমার কথা যাচাই করে, তারপর গ্রহণযোগ্য মনে হলে, তবেই তাকে গ্রহণ করো। আমি তোমাদের বিশ্বাস অর্জন করতে চাইনা, চাই নির্ভরযোগ্য হতে।

বিশ্বাস কথাটা নয়, বলো-- জানি অথবা জানি না। এর মাঝখানে আছে--- হতে পারে, অনুমান, ধারণা, মনে হয়, প্রভৃতি। বড়জোর বলা যেতে পারে, আপাত বিশ্বাস।

এভাবে চললে, কখনোই বিশ্বাস হারানো--- বিশ্বাস ভঙ্গ, অবিশ্বাস, বিশ্বাস ঘাতকের কবলে পড়তে হবেনা। 'বিশ্বাস' ছাড়াই---বিজ্ঞানমনষ্ক হয়ে চললে, জীবন অনেকটাই শুভ ও ধনাত্মক হয়ে উঠবে। ঋণাত্মকতা দূর হয়ে যাবে।

তা'ই বলে আমি বলছি না, অবিশ্বাস-- সন্দেহের চোখে দেখতে। আমি বলতে চাইছি, সর্বদা সজাগ- সচেতন ভাবে থাকতে।

'বিশ্বাস' কথাটার মধ্যেই নিহিত থাকে-- অজ্ঞান-অন্ধত্ব, অনিশ্চয়তা, সন্দেহ-অবিশ্বাস -এর একটা চোরা স্রোত। থাকে বিশ্বাস ভঙ্গ হওয়ার বা বিশ্বাস হারানোর আশঙ্কা।

'বিশ্বাস' মানেই নিশ্চয় জ্ঞান নয়, এটা জানা সত্বেও, সম‍্যক জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও, সচেতন মনের সতর্কতার বিরুদ্ধে গিয়ে-- কোনো কাউকে বা কিছুকে জোর ক'রে সত্য বলে মেনে নেওয়ার ভিতরে প্রচ্ছন্ন থাকে-- আত্মপ্রবঞ্চনা। থাকে দুটি (সচেতন ও অবচেতন) মনের অন্তর্দ্বন্দ্ব।
.

মানব জাতির বহু সমস্যার কারণ এবং প্রগতি ও বিকাশের প্রধান প্রতিবন্ধ হলো অন্ধ বিশ্বাস বা দৃঢ় বিশ্বাস।

আমি বরাবরই অন্ধবিশ্বাসের বিরোধী এবং মানুষকে অন্ধ বিশ্বাস এবং তার মূল কারণ অজ্ঞান-অন্ধত্ব থেকে মুক্ত করতে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছি। কিন্তু সমদর্শী মনোভাব নিয়ে দেখলে, বিশ্বাসেরও কিছু সুফল আছে, বিশেষত শরীর মন ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশ্বাসের একটি ধনাত্মক ভূমিকাও রয়েছে।

আর বাস্তব সত্য হলো, পৃথিবীব্যাপী অসংখ্য স্বল্প-জ্ঞান ও স্বল্প-চেতন মানুষের চেতনার যথেষ্ট বিকাশ ঘটতে এখনো বহু সময় লাগবে। মানুষ যথেষ্ট জ্ঞান ও চেতনা সম্পন্ন না হওয়া অবধি বিশ্বাস আছে--- বিশ্বাস থাকবে।

তাই, মানুষকে অজ্ঞান অন্ধত্ব থেকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা বজায় রেখে, মানুষকে সুস্থ ও যন্ত্রণা মুক্ত করে তোলার উদ্দেশ্যে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশ্বাস মূলক পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া যেতেই পারে। যদি না সেখানে মানুষকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্য থাকে।

সব চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গেই সরাসরি বা পরোক্ষভাবে বিশ্বাস যুক্ত থাকে। তার মধ্যে, শুধু বিশ্বাস ভিত্তিক চিকিৎসা হলো একেবারেই নির্মল চিকিৎসা। 'ফেইথ হিলিং' হলো মনোপথে আরোগ‍্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি।

তবে, আমি একথা বলছি না, যে এই পথেই সমস্ত রোগ আরোগ্য করা সম্ভব। জানতে হবে, কোন কোন ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে আরোগ্য হতে পারে। সাইকোটিক ও সাইকোসোমাটিক রোগ-ব‍্যাধির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অধিক কার্যকর।

তবুও বলবো, অন্ধ-বিশ্বাসে এই পদ্ধতির উপর রোগীকে দীর্ঘকাল ফেলে না রেখে, প্রয়োজনে অন‍্যান‍্য চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নিতে হবে। গুরুতর রোগের ক্ষেত্রে, তা আরোগ্য করতে, বিশ্বাস খুব তীব্র হওয়া দরকার। সাংঘাতিক বা মারাত্মক রোগ-ব‍্যাধির ক্ষেত্রে, এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা উচিৎ নয় বলেই মনে ক‍রি।

বিশ্বাসের পিছনে থাকে অবচেতন মন। আর, এই অবচেতন মনের অধিকারে রয়েছে আমাদের শরীর ও মন অনেকাংশে। বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে অবচেতন মনের আরোগ্যকর ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে, বিশ্বাস ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি সাফল্য লাভ করে থাকে।

সাংঘাতিক কুফল দায়ক বিষাক্ত ওষুধ গ্রহণের চাইতে, সম্ভাব্য ক্ষেত্রে বিশ্বাস ভিত্তিক নির্মল চিকিৎসাপদ্ধতি বহুগুণে ভালো বলেই মনে করি আমি।
.

অন্ধবিশ্বাস, সাধারণ বিশ্বাস ও আপাত বিশ্বাস নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করতে গিয়ে, কিছু কিছু কথার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।

অন্ধবিশ্বাস ও সাধারণ বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা করার আগে, বিশ্বাস সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা থাকা প্রয়োজন। জানতে হবে, বিশ্বাস আসলে কী!

কোনো বিষয়--- বস্তু, তথ্য--- তত্ত্ব, ব‍্যক্তি প্রভৃতি যেকোনো কিছু সম্পর্কে একজনের সম‍্যক জ্ঞান বা ধারণা না থাকা সত্ত্বেও, তাকে সত্য বলে মেনে নেওয়া অথবা মনে স্থান দেওয়ায়ই হলো--- বিশ্বাস।

অন্ধবিশ্বাস কোনো যুক্তি--- বিচার, প্রমানের ধার ধারে না। অন্ধবিশ্বাস হলো দৃঢ়মূল অটুট বিশ্বাস।

আর সাধারণ বিশ্বাস হলো--- কতকটা আপাত বিশ্বাসের মতো অস্থায়ী বিশ্বাস। এই বিশ্বাস--- যুক্তি-প্রমাণ এবং বিশেষ ঘটনা সাপেক্ষে যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে।

তবে, 'আপাত বিশ্বাসের' সঙ্গে এর পার্থক্য আছে। 'আপাত বিশ্বাস' হলো সজাগ-সচেতন যুক্তিবাদী মানুষের, ব‍্যবহারিক কাজ চালানোর জন্য, কর্ম সম্পাদনের জন্য সাময়িক বিশ্বাস। এই বিশ্বাস যেকোনো সময় ভঙ্গ হতে পারে বা পরিবর্তীত হতে পারে, এমন মানসিক প্রস্তুতি থাকা--- সজাগ-সচেতন মনের বিশ্বাস।
.

অন্ধবিশ্বাস--- সাংঘাতিক সংক্রামক জীবাণুর চাইতেও ভয়ংকর!

মাঝে মাঝেই অন্ধবিশ্বাসীদের বলতে শোনা যায়, --তাঁঁদের বিশ্বাস (যা আসলে অন্ধবিশ্বাস) -এর বিরোধিতা করা নাকি তাঁঁদের ব‍্যক্তি-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা!

এখন, একজন অন্ধবিশ্বাসী কি তার বিশ্বাস শুধু তাঁঁর ব‍্যক্তিগত ক্ষেত্রে--- নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন? ---না, তা' রাখেন না। তা' যদি রাখতেন, তাহলে খুব বেশি সমস্যা সৃষ্টি হতোনা।

ঠিক ভয়ানক সংক্রামক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত মানুষের মতোই, একজন অন্ধবিশ্বাসী--- তাঁঁর সন্তান এবং নিকটজনসহ তাঁঁর চারিপাশের বহু মানুষের মধ্যেই তাঁঁর অন্ধবিশ্বাসের সংক্রমণ ঘটাতে সদা তৎপর থাকেন। আর এইভাবেই, ক্রমাগত মানব সমাজের সাংঘাতিক ক্ষতি করে চলেছেন তাঁঁরা!

ক্রমশ...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.