নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের চাহিদা মতো মানববিকাশ মূলক যুগোপযোগী ধর্ম~ মহাধর্ম -এর আবির্ভাব ঘটেছে। \'মহাধর্ম\' হলো অন্ধবিশ্বাস মুক্ত, খোলা মনের, যুক্তিবাদী আধ‍্যাত্মিক চেতনা সম্পন্ন, আত্মবিকাশকামী মানুষদের উপযোগী একটি ধর্ম।

মানব ধর্মই মহাধর্ম

মহাধর্ম: মানবধর্ম ভিত্তিক অন্ধবিশ্বাস মুক্ত মানব বিকাশ মূলক ধর্ম। মানুষের মৌলিক ধর্ম।

মানব ধর্মই মহাধর্ম › বিস্তারিত পোস্টঃ

।। মহাধর্ম ।। পর্ব ~৩

০৩ রা মে, ২০১৯ সকাল ৯:৩০

।। মহাধর্ম ।। পর্ব -৩

'মহাধর্ম' প্রচলিত রিলিজিয়ন, প্রচলিত ধার্মিক সিস্টেমের মতো কোন ধর্মমত নয। মহাধর্ম হলো~ মানবধর্ম। মানুষের প্রাকৃতিক ধর্ম এবং ঠিকমতো বিকশিত হয়ে ওঠার ধর্ম।

একজন মানুষ অনেক জ্ঞান, চেতনা ও সুস্থতা লাভের মধ্য দিয়ে অনেকটাই বিকশিত মানুষ হয়ে উঠলে, সে তখন নিজেই বুঝতে সক্ষম হয়, যে কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক নয়, কি তার করণীয়, কোনটা গ্রহণ করা উচিত আর কোনটা উচিত নয়। এমনকি নতুন পথও উন্মোচিত হতে পারে--- সেই সচেতন দৃষ্টির সামনে।

'মহাধর্ম' তাই আমাদের কোন তত্ত্ব--- কোন দর্শন চাপিয়ে না দিয়ে, যথেষ্ট বিকাশপ্রাপ্ত মানুষ হয়ে ওঠার উপরেই গুরুত্ব দেয়। পূর্ণবিকশিত মানুষ হয়ে ওঠার জন্য পালনীয় কর্মই হলো--- মহাধর্মাচারণ।

মহাধর্ম বলে, আগে নিজেকে জানো, জীবনের উদ্দেশ্য--- লক্ষ্য কি তা জানা, এবং সেই সঙ্গে জগত সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান লাভ করো। এই ভিত্তিমূল জ্ঞান অর্জনের মধ্য দিয়ে--- চেতনা বৃদ্ধির সাথে সাথে--- তুমি নিজেই নিজের কর্তব্য স্থির করতে পারবে। কর্তব্যকর্মের মধ্যে আপাত করণীয় কিছু কর্ম আছে, ---যা তোমায় আগে করতে হবে, আর ভবিষ্যতে করণীয় কর্মগুলি ভবিষ্যতেই করতে হবে। শুধু মাথায় রাখতে হবে যে আপাত করণীয় কর্মগুলির মধ্য দিয়ে তোমাকে ভবিষ্যতে করণীয় কর্মের যোগ্য হয়ে উঠতে হবে।

এই মহা-চেতন-সিন্ধুর তুমি হলে একটি বিন্দু স্বরূপ। যে ব্যক্তি নিজেকে প্রকৃতই জানে, একমাত্র সে-ই ঈশ্বরকে জানতে সক্ষম--- তার স্বরূপ (প্রকৃতরূপে)। যার আছে নিজের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা--- ভ্রান্ত বিশ্বাস, তার ঈশ্বরও হয়, ভ্রান্ত ধারণা--- ভ্রান্ত বিশ্বাসের উপর গড়ে ওঠা--- এক কল্পলোকের ঈশ্বর।

তাই, নিজেকে না জেনে--- ঈশ্বরকে (তার স্বরূপের) না জেনে, ঈশ্বরলাভ--- ঈশ্বরের কৃপা লাভ--- মুক্তিলাভ বা স্বর্গ লাভের পিছনে ছুটে মরো না। বাস্তব জ্ঞানসহ প্রকৃত অধ‍্যাত্ম-জ্ঞান ও যথেষ্ট চেতনা লাভের মধ্য দিয়ে, এবং সর্বাঙ্গীন সুস্থতা লাভের মধ্য দিয়ে--- প্রকৃত বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠো।

একজন মানুষ হিসেবে--- পূর্ণ বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠার ধর্মই হোক তোমার ধর্ম। মহাধর্ম হলো মানুষের প্রাকৃতিক ধর্ম--- স্বধর্ম। যে ধর্ম পালনের মধ্য দিয়ে মানুষ--- সার্বিক বিকাশপ্রাপ্ত মানুষ হয়ে ওঠার পথে অগ্রসর হতে পারে, সে আচরিত ধর্মই হলো মহাধর্ম।

আত্মবিস্মৃত মানুষকে তার আত্মা-স্বরূপ--- আত্মপরিচয় জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে স্বধর্মে দীক্ষিত ক'রে--- জীবনের মূল লক্ষ্য পানে এগিয়ে দেওয়া হলো, এই ধর্মের প্রধান উদ্দেশ্য। নিজের সাথে নিজের পরিচয় ঘটানোই এই ধর্মের প্রথম পাঠ।

এই প্রসঙ্গে সেই বাঘ্রশাবকের গল্পটা উল্লেখযোগ্য:
এক গ্রামে এক পশুপালক বাস করতো। তার খই খোঁয়াড়ে অনেক গরু ছাগল ভেড়া ছিল। প্রতিদিন সেই পশুপালক তার পোষ‍্যদের বনের ধারে নিয়ে যেত, ঘাসপাতা খাওয়ানোর জন্য।

একদিন সে দেখতে পায়, পথের ধারে একটা বাঘ্রশাবক প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছে। স্নেহ-মমতা বসত সে ওই বাঘ্রশাবকটিকে নিয়ে এসে--- অন্যান্য পশুদের সঙ্গেই লালন পালন করতে থাকে। বাঘ্রশাবকটি একটু সুস্থ হয়ে উঠতেই, সে নিজেকে ওই গরু-ছাগল-ভেড়াদের মতোই একজন ভাবতে থাকে, এবং ওদের দেখাদেখি সে-ও ওদের মতোই ঘাস পাতা আহার করতে থাকে। ওদের সাথে।

বনের ধারে অন্যান্য পশুদের সঙ্গে বিচরণ করতে করতে, একদিন হঠাৎ সে এক বড় বাঘের সম্মুখীন হয়। বাঘটি আশ্চর্য হয়ে তাকে দেখতে থাকে। বাঘ্রশাবক হয়েও, তাকে গরু-ছাগলের মতো আচরণ করতে দেখে, বাঘটি তার কাছে এগিয়ে আসে, এবং তাকে নিয়ে যায় নিকটবর্তী এক জলাশয়ের ধারে। জলাশয়ে উভয়ের প্রতিফলিত আকৃতি দেখিয়ে--- বড় বাঘটি তাকে বোঝায়, তার রূপ-জাত-ধর্ম সবই বাঘের মতো। যেসব পশুদের সাথে সে এতকাল কাটিয়েছে, মোটেই তাদের মত নয়। ওইসব পশুদের হত্যা করে খাওয়াই তার ধর্ম।

এখানে বিষয়টি হত্যা করা বা রক্ষা করা নয়, বিষয়টি হলো--- নিজের স্বরূপ -এর জ্ঞান। তুমি প্রকৃতই যা--- তোমার সেই স্ব-রূপের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেওয়াই হলো মহাধর্মের প্রথম পাঠ।

নিজেদের তথা মানবজাতির প্রকৃত উন্নয়নে, এই মহা কর্মযজ্ঞে শরিক হোন। মহাধর্ম -এর মনোবিকাশ মূলক (আত্মবিকাশ যোগ) শিক্ষার আলো চতুর্দিকে যত বেশি প্রসারিত হবে, অজ্ঞান- অন্ধত্ব- অন্ধকার ততই দূর হয়ে যাবে। আমরা ততই শান্তি-- সুস্থতা, আত্মবিকাশ লাভ করতে পারবো। আরো উন্নত, আরও ভালো জীবন লাভ করতে পারবো আম‍রা।

সমস্যা— তার মূল কারণ ও সমাধান

সমস্ত অমানবিক— ধ্বংসাত্মক— নিষ্ঠুর কার্যকলাপের জন্য দায়ী মানুষের অজ্ঞানতা বা জ্ঞানের স্বল্পতা আর অসুস্থতা —অস্বাভাবিকতা বা বিকৃত মানসিকতা। সারা পৃথিবীব্যাপী প্রতিনিয়ত হিংসা-বিদ্বেষ, নিপীড়ন— নির্যাতন— অত্যাচার— নিষ্ঠুরতা, ধর্ষন, প্রতারণা, হত্যা—ধ্বংস প্রভৃতি অসংখ্য অমানবিক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে চলেছে। এ’সবের জন্য একমাত্র দায়ী হলো— মানুষের যথেষ্ট চেতনা রহিত অজ্ঞান ও অসুস্থ মন।

প্রচলিত ধর্মগুলির সাথে মহাধর্মকে গুলিয়ে ফেললে হবেনা। মহাধর্ম হলো আমাদের প্রাথমিক ধর্ম— মৌলিক ধর্ম— মানব ধর্ম। সর্বাঙ্গীন সুস্থতাসহ মনোবিকাশের পথে এগিয়ে চলাই এই ধর্মের মূল কথা।

আমরা অধিক অংশেই অন্ধ-আবেগপ্রবণ অবচেতন মনের দ্বারা চালিত হই বলেই আমাদের এত দুঃখ-কষ্ট-দুর্দশা। আমাদের সচেতন মন এখনও পর্যন্ত তেমন বিকশিত নয়। সচেতন মনের বিকাশ ঘটানোই আমাদের মূল লক্ষ্য। যার সচেতন মন যত বেশি বিকশিত, সে ততটাই বিকশিত মনের মানুষ। যে যত বেশি বিকশিত সে তত বেশি জীবনকে উপভোগ করতে সক্ষম।

একেতো আমরা বেশিরভাগ সময়েই (অবচেতন মনের) অন্ধ-বিশ্বাস— অন্ধ-আবেগের দ্বারা চালিত হই, তার সাথে যদি আবার যুক্ত হয় অসুস্থতা— অসুস্থ মানসিকতা, তখন সোনায় সোহাগার মতো— আমাদের ভিতরটা একেবারে নরকে পরিণত হয়। জীবন দুর্বিসহ—বিষময় হয়ে ওঠে তখন। ক্রোধ—অসহিষ্ণুতা—হিংসা—বিদ্বেষ—নিষ্ঠুরতায় পূর্ণ হয়ে ওঠে আমাদের মন।

যার যা আছে সে অপরকে তা-ই দিতে পারে। যার অন্তরে সুখ আছে—শান্তি আছে, সে অপরাপর মানুষকে তা’ শেয়ার করতে সক্ষম। যার অন্তর বিষে পরিপূর্ণ সে বিষই উদ্গিরণ করতে পারে। অমৃত সে দেবে কোথা থেকে!

অন্তরকে বিষ মুক্ত— সুস্থ ক’রে তুলে, জ্ঞান আলোকে আলোকীত হয়ে উঠতে পারলেই দিব্য-সুন্দর জীবন লাভ করতে পারবো আমরা। —এটাইতো মানব জীবনে একান্ত কাম্য হওয়ার কথা। কিন্তু অসুস্থ মনের কাছে তা’ কাম্য নাও হতে পারে। তার কাছে আত্ম-ধ্বংসাত্মক পথই শ্রেয় মনে হতে পারে। সে শুধু নিজেকেই ধ্বংস করে না—সমাজ-সংসার-জগতটাকেও ধ্বংস করতে চায় সে! তার মনোভাব হলো— আমি শুধু একাই কষ্ট পাব কেনো! সবাইকে কষ্ট দিতে পারলেই তার সাময়ীক—অলীক সুখ অনুভূত হয়।

মহাধর্মের সাথে কারো বিরোধ থাকার কথা নয়, —একমাত্র অজ্ঞান-অন্ধ —অসুস্থ মন ছাড়া।

এখন, যারা তুলনামূলকভাবে সুস্থ আছে, —যারা এখনও জীবনকে ভালবাসে, তারা ভালভাবে বাঁচার জন্য, এই সমস্যার সমাধানের জন্য— অনেক পথ অনুসন্ধান করছে, —অনেক কিছুই চেষ্টা করছে। কিন্তু ঠিক যা করণীয়— তা’ না করার ফলে সমস্যার সমাধান হচ্ছেনা এতটুকুও।

এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো— আত্মবিকাশ ও মানববিকাশ মূলক ধর্ম— মহাধর্ম। সমস্যাকে ভালোভাবে তলিয়ে বুঝতে শেখায় এই ধর্ম, সমস্যার মূলে নিয়ে গিয়ে তার সমাধানের পথ দেখায় এই ধর্ম। এমনকি, সমস্যা থেকে মুক্ত হ’তে সরাসরি সাহায্যও করে এই ধর্ম। এখন, একে গ্রহন করা কি ত্যাগ করা ব্যক্তি বিশেষের নিজের নিজের জ্ঞান-চেতনা— বিচার-বুদ্ধি, পছন্দ-অপছন্দের উপর নির্ভরশীল।

প্রসঙ্গত জানাই— এই ধর্ম মূলতঃ জ্ঞান-পথের পথিকদের জন্য হলেও, ভক্তি-পথের পথিকদের জন্যও এই ধর্মে একটি আলাদা বিভাগ আছে। এই ধর্ম গ্রহন করতে ও অনুশীলন করতে— পূর্বের ধর্ম ত্যাগ করা অত্যাবশ্যক নয়। অর্থাৎ আপনি আপনার ধর্ম ত্যাগ না করেও এই ধর্ম অনুশীলনের মধ্য দিয়ে লাভবান হতে পারবেন।

এই ধর্মের মূলে রয়েছে— যুক্তিসম্মত অধ্যাত্মবাদের একমাত্র গ্রন্থ— ‘মহাবাদ’ (Google search= MahaVad) । মহাধর্ম অনুসরণ ও অনুশীলন করতে গিয়ে— মহাবাদের সমস্ত দর্শন ও মতবাদ আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে— গ্রহন করতে হবে, এমন নয়। যার যতটুকু ভালো লাগবে সে ততটুকুই গ্রহন করবে। এখানে মনোবিকাশ-ই হলো মূল কথা। অন্ধের মতো অনুসরণ মোটেই কাম্য নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.