নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের চাহিদা মতো মানববিকাশ মূলক যুগোপযোগী ধর্ম~ মহাধর্ম -এর আবির্ভাব ঘটেছে। \'মহাধর্ম\' হলো অন্ধবিশ্বাস মুক্ত, খোলা মনের, যুক্তিবাদী আধ‍্যাত্মিক চেতনা সম্পন্ন, আত্মবিকাশকামী মানুষদের উপযোগী একটি ধর্ম।

মানব ধর্মই মহাধর্ম

মহাধর্ম: মানবধর্ম ভিত্তিক অন্ধবিশ্বাস মুক্ত মানব বিকাশ মূলক ধর্ম। মানুষের মৌলিক ধর্ম।

মানব ধর্মই মহাধর্ম › বিস্তারিত পোস্টঃ

অলৌকিকতা প্রসঙ্গে মহর্ষি মহামানস

০৬ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৪:১৯

অলৌকিকতা প্রসঙ্গে মহর্ষি মহামানস

অলৌকিক হলো তা'-ই ---যা লৌকিক নয়। অর্থাৎ ইহলোকের বা ইহজগতের নয়। পরলোক বা প্রেতলোকসহ এই জগতের বাইরের বিভিন্ন বিষয়-বস্তু, শক্তি- ক্ষমতা, ঘটনা এবং চেতন-সত্তা যখন আমাদের গোচরে আসে, তখন তাকেই অলৌকিক বলা হয়। আমাদের ইন্দ্রিয় ও বুদ্ধিগ্রাহ‍্য নয় এমন কিছুকে অনেকে অলৌকিক মনে করলেও, সবসময় যে তা' অলৌকিক হবে এমন নয়।

বিশ্বাস করি অথবা না করি, অলৌকিকতার প্রতি আমরা প্রায় সবাই--- কমবেশি আকর্ষণ বোধ করে থাকি। আমরা আমাদের দেখা-শোনা--- জানা জগতকে নিয়েই সন্তুষ্ট নই। আমাদের ধারণা--- এর বাইরেও বহু কিছু আছে, ---যা আমাদেরকে জ্ঞাতে---অজ্ঞাতে আকর্ষণ করে।

বিশ্বাসের সাথে সাথে সন্দেহও উঁকি দেয় আমাদের মনের কোণে। সত্যিই অলৌকিক বলে কি কিছু আছে? আমরা এমনতো অনেক কিছু দেখি, ---যা গতকালের ভাবনায় ছিল অলৌকিক--- অসম্ভব, আজ তা' লৌকিক হয়ে উঠেছে। শুধু অজানা থাকায় তারা অলৌকিক হয়ে ছিল আমাদের কাছে এত কাল।

হ্যাঁ, ইহলোকের অনেক কিছুই এখনো পর্যন্ত আমাদের অজানা। আমাদের চেনা জগতের মধ্যেই--- বিস্ময়কর এমন অনেক কিছু আছে, যা আমাদের অজানা। অনেক সময়, তাদের সম্পর্কে কাল্পনিক ধারণা এবং তাদের কারো কারো আকস্মিক প্রকাশকেই আমরা আমাদের স্বল্প জ্ঞান ও চেতনার কারণে অলৌকিক বা অবাস্তব বলে ধরে নিই। কিন্তু এগুলিকে অলৌকিক বলা যাবে না। প্রথমেই বলেছি, অলৌকিক কথার অর্থ হলো--- যা লৌকিক নয় ইহজাগতিক নয়।

দূরদর্শন--- দূরশ্রবন যন্ত্র দেখতে আমরা অভ‍্যস্ত। সেক্ষেত্রে আমরা তেমন বিস্মিত হইনা। কিন্তু মন তথা মস্তিষ্ক যন্ত্রের দূরদর্শন---দূরশ্রবন ক্ষমতার কথা শুনলেই আমরা তখন বিস্ময় প্রকাশ করি। তাকে অলৌকিক ক্ষমতা বলে ভেবে নিই।

পরলোক সম্পর্কে আমাদের অনেকের সন্দেহ--- অবিশ্বাস থাকলেও, আগ্রহ---ও কৌতুহলও কম নেই। সেই পারলৌকিক কোন সত্তা যদি সত্যিই কোন ভাবে আমাদের জ্ঞান-গোচর হয়, তাহলেও আমরা তাকে ইহজাগতিক বলবো না, অলৌকিক বা পারলৌকিক-ই বলব। চেনা-জানা হলেই তা' লৌকিক হয়ে যাবে না।

আমাদের মধ্যে বেশকিছু মানুষ আছে, যারা অলৌকিকতার প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করে থাকে। এরা অধিকাংশেই অত্যন্ত বিশ্বাসপ্রবন মানুষ। এদের এই বিশ্বাসপ্রবণতা আর অলৌকিকতার প্রতি দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে--- কিছু ধূর্ত-প্রতারক মানুষ এদেরকে শোষণ করে চলেছে। অনেকসময় ঠকলেও, এরা এদের অন্ধবিশ্বাসের মধ্য দিয়ে উৎপন্ন হওয়া বিশেষ মনঃশক্তির দ্বারা মাঝে মাঝে লাভবানও হয়ে থাকে। ---যা এদের কাছে কোনো অলৌকিক সত্তা বা শক্তির কৃপা বা দান বলেই মনে হয়। ('বিশ্বাস ও জ্ঞান' এবং 'ঈশ্বর প্রসঙ্গে' দ্রষ্টব্য)

এ' হলো আসলে--- অন্তর্নিহিত বিশেষ মনঃশক্তির তাৎক্ষণিক স্ফূরণ! এবং তার দ্বারা সাময়িকভাবে লাভবান হওয়ার ঘটনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা' এই বিশেষ মনঃশক্তি -কেন্দ্রের স্থায়ী বিকাশ নয়। মস্তিষ্কের এই বিশেষ শক্তি-কেন্দ্রের স্থায়ী বিকাশ ঘটলে, ব‍্যক্তি অনেক অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে। ---যা লৌকিক হলেও, অনেকের কাছে অলৌকিক ক্ষমতা বা শক্তি বলেই মনে হবে। মন সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞানের অভাবেই আমরা অজ্ঞান-অন্ধের মত জীবন যাপন করে চলেছি।

এই মহাজগতে অসংখ্য অলৌকিক অস্তিত্বের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু অলৌকিক রূপে যেগুলি আমাদের সামনে আসে, তাদের মধ্যে কিছু অলৌকিক ঘটনা থাকলেও, বেশিরভাগেই থাকে অজানা জাগতিক ঘটনা আর প্রতারণামূলক কারসাজি, ---যা ম্যাজিকের মতোই কোনো না কোনো কৌশল। জাগতিক ঘটনার মধ্যে আবার কিছু থাকে--- বস্তুগত ও জাগতিক শক্তির খেলা। আর কিছু হলো--- আমাদের মনোজগতের নানান কাণ্ডকারখানা। জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে যেগুলি আমাদের কাছে অলৌকিক রূপে প্রতীয়মান হয়।

অলৌকিক ঘটনার মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য হলো, গ্রহান্তরের জীব ও যন্ত্র এবং মহাকাশযানদের পৃথিবীতে অবতরণের ঘটনা। এ' বিষয়েও মানুষের চরম কৌতূহল--- আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। এ'নিয়ে বহু গল্পগাঁথা, প্রবন্ধ, কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র প্রস্তুত হয়েছে, গবেষণাও হয়েছে এবং হচ্ছে এখনো। কিন্তু এসবের অনেক সম্ভাবনা থাকলেও, বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু প্রমাণ থাকলেও, সর্বজনগ্রাহ্য--- যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য ---নিশ্চিত প্রমাণ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

প্রকৃত অলৌকিক ঘটনা হিসেবে--- যে ঘটনাগুলি সাধারণত ঘটে থাকে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই--- প্রেতলোকের বাসিন্দাদের দ্বারা সংঘটিত হওয়া ঘটনা। নিম্ন-চেতন-স্তরের প্রেতাত্মা, যারা ইহজগতের মায়া ত্যাগ করতে পারেনি, অতৃপ্ত সেইসব আত্মাই আমাদের চারিপাশে ঘোরাফেরা করে থাকে ('জীবাত্মা ও দিব‍্যাত্মা' দ্রষ্টব্য)। এবং ওরা আমাদের সাথে যোগাযোগ ঘটানোরও চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু আমাদের মস্তিষ্কের বিশেষ 'রিসিভার' কেন্দ্রটি জাগ্রত ও সক্রিয় না থাকায়, ওরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটাতে পারে না।

কিছু প্রেতবিদ মানুষ বিশেষ বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে--- ওদের সাথে যোগ স্থাপনে সক্ষম। তারা ওদের দ্বারা কিছু কিছু বিশেষ কাজও করিয়ে নিতে পারে, যে কাজ সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়াও বিশেষ কিছু মানুষ আছে, যাদের মস্তিষ্কের বিশেষ 'রিসিভার' কেন্দ্রটি জাগ্রত ও সক্রিয় থাকায়, তারা প্রেতাত্মাদের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে সক্ষম হয়। তবে এরকম মানুষের সংখ্যা খুবই কম। সাধারণত ভুতে-পাওয়া বা ভুতাবিষ্ট ব্যক্তিদের কার্যকলাপের মধ্যে, বেশিরভাগই কিন্তু প্রেত সম্পর্কিত--- ভুত বা প্রেত আবিষ্ট হওয়ার ঘটনা নয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই 'হিস্টেরিয়া' অথবা বিশেষ ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত মানুষ।

আমরা অনেকেই দেব-দেবীদের অলৌকিক ক্ষমতার কথা বিশ্বাস ক'রে--- তাদের দ্বারা লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে, তাদের পূজা-উপাসনা ক'রে থাকি। এইসব দেব-দেবী এবং ঈশ্বর সম্পর্কে ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে, আমরা এগুলি ক'রে থাকি। কোন ঘটনা--- তা' সে লৌকিক হোক, আর অলৌকিক হোক, তার সম্ভাব্য 'সোর্স অফ পাওয়ার' খুঁজে দেখার চেষ্টা করি না আমরা। যে যা বলে, তা-ই বিশ্বাস করে নিই। এই সমস্ত দেব-দেবীদের দ্বারা সংঘটিত হওয়া ঘটনাগুলির মধ্যে, একশ্রেণীর ঘটনা ঘটে--- পূর্বে উল্লেখিত আমাদের বিশ্বাস সম্ভূত বিশেষ মনঃশক্তির দ্বারা। আর অপর শ্রেণীর ঘটনা ঘটে--- প্রেতাত্মাদের দ্বারা।

পরলোকের কিছু কিছু বিদেহী আত্মাদেরকে অনেক সময়েই বিভিন্ন পূজিত দেবদেবীদের ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায়। বিশেষত যেসব মন্দির ও তীর্থস্থান--- অনাচার-কদাচার- দুরাচারে পূর্ণ। সেই সব স্থানেই ভুত-প্রেত-পিশাচাদি নিম্নস্তরের প্রেতাত্মাদের ভিড় থাকে। এদের মধ্যে কিছু কিছু চতুর প্রতারক মনের প্রেতাত্মারা অনেক সময়েই অজ্ঞান-অন্ধ অসহায় মানুষ অথবা দেব-ভক্তদের প্রতারণা ক'রে আনন্দ পায় এবং তাদের পূজা-অর্ঘাদি আত্মসাৎ করে তৃপ্ত হয়।

এদের কেরামতিতেই সেইসব স্থান এবং সেইসব দেব-দেবী হয়ে ওঠে জগৎ। দেবতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায়, অনেক মানুষই প্রতারিত হয়ে আসছে এইভাবে। অনেকেই ঈশ্বর আর তথাকথিত দেবতাদের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পেরে মায়ার গোলকধাঁধায় ঘুরে মরছে।

সংস্কৃত ভাষায় দেবতার তার অর্থ--- জ্ঞানী--বিদ্বজন, যারা তৎকালীন সাধারণ মানুষ থেকে বেশ কিছুটা উচ্চ শ্রেণীর মানুষ। ভগবান বলতেও সংস্কৃত ভাষায় শুধু ঈশ্বরকেই বোঝানো হয়না। দেবতুল‍্য ব্যক্তি, শৌর্য-বীর্যবান, ঐশ্বর্যশালী--- জ্ঞানী যশবান ও সৌভাগ্যবান ব্যক্তিকেও ভগবান বলা হয়। আর এর ফলেই, সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে দেবতা আর ঈশ্বর সম্পর্কে গুলিয়ে ফেলে।

এছাড়া আছে প্রতীকী দেবতা। প্রাকৃতিক শক্তি এবং প্রকৃতির নানা বিষয়বস্তুকেও অনেকে দেবতা বলে থাকে, অথবা দেবতা বলে চিহ্নিত করে থাকে। আবার, কোনো মানুষকে--- কোন প্রাকৃতিক শক্তি অথবা প্রাকৃতিক বিষয়বস্তুর প্রতিভূ হিসাবে গণ্য ক'রে, তাকে দেবতা জ্ঞানেও পূজা করা হয়ে থাকে, অনেক জায়গায়।

ঈশ্বর প্রসঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবেই দেব-দেবীদের কথা এসে যায়। বহু মানুষই ঈশ্বর ও দেব-দেবী সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে, বিভিন্ন দেবদেবীকেই ঈশ্বর জ্ঞানে পূজা উপাসনা করে থাকে। সারা পৃথিবীতে প্রচলিত অথবা কাল্পনিক দেব-দেবী বা দেবতাগণ, আর 'মহাধর্ম' ও 'মহাবাদ' উক্ত দেবতাগণ এক নয়। মহাবাদ-এর দেবতাগণ অনেক বেশি উচ্চ-চেতন-স্তরের সত্তা। পৃথিবীতে আগমন এবং মানুষের সঙ্গে ননদ লীলা-খেলায় অংশ নেওয়া এদের পক্ষে সম্ভব নয়। মহাবাদ-এ উক্ত দেব-চেতন-স্তরের বাসিন্দারাই প্রকৃত অর্থে দেবতা। এখানে দেব--দেবী বলে কিছু নেই। কারণ এই উচ্চ-চেতন-স্তরে কোনো লিঙ্গ ভেদ নেই। নেই বংশবৃদ্ধির ব্যবস্থা।

ঈশ্বর সম্পর্কে এবং নিজের সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা না থাকাতেই যত সমস্যার উদ্ভব হয়। অলৌকিক প্রসঙ্গে ঈশ্বর সম্পর্কে শুধু এই কথাই বলবো, ঈশ্বরের কর্মকাণ্ডকে লৌকিক অলৌকিক রূপে ভাগ করা চলে না। এই মহাজগৎটাই ঈশ্বর। এখানে যা কিছু ঘটছে ঈশ্বরের মধ্যেই ঘটছে, এবং এসব নিয়েই ঈশ্বরের মহা কর্মকাণ্ড চলছে। আলাদা করে ব্যক্তিবিশেষের জন্য অথবা সরাসরি আমাদের জন্য ঈশ্বর কিছু করে না। ঈশ্বর সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে হলে, 'ঈশ্বর প্রসঙ্গ' 'ঈশ্বর ও আমরা' এবং 'মহাবিশ্ব সৃষ্টিরহস‍্য উন্মোচন' প্রবন্ধ গুলি পড়তে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.