![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহাধর্ম: মানবধর্ম ভিত্তিক অন্ধবিশ্বাস মুক্ত মানব বিকাশ মূলক ধর্ম। মানুষের মৌলিক ধর্ম।
।। প্রসঙ্গ : মায়া ।।
~মহর্ষি মহামানস
মায়া হোলো--- চিত্তবিভ্রম--- ভ্রান্তি, ভুল ধারণা--- অন্ধবিশ্বাস--- মিথ্যা প্রত্যয়। মায়া হলো--- মোহ-আবেশে আচ্ছন্ন এমন একটা ঘোর লাগা মানসিক অবস্থা, যে অবস্থায় মানুষ সতত প্রতারিত হয়ে থাকে। এই মায়ার কারণ হলো--- অজ্ঞানতা ও চেতনার স্বল্পতা। সচেতন মনের যথেষ্ট বিকাশ না ঘটা পর্যন্ত, পর্যাপ্ত জ্ঞান ও চেতনার অভাবে--- মানুষ মায়াকবলিত হয়ে নানাবিধ দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা ভোগ করে থাকে। এইভাবেই ক্রমশঃ জ্ঞান-অভিজ্ঞতা ও চেতনা লাভের মধ্য দিয়ে, ধীরে ধীরে একটু একটু করে মোহমায়া থেকে মুক্তি লাভ করে থাকে মানুষ।
অসুস্থতাও মোহমায়ার কারণ হতে পারে কখনো কখনো। অসুস্থতার কারণেও অজ্ঞানতা আসতে পারে এবং চিত্রবিভ্রম ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে অসুস্থতা থেকে মুক্তি ঘটলে--- মানুষ অসুস্থতা জনিত চিত্তবিভ্রম বা মোহ-আবেশ থেকে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হয়।
স্নেহ-মমতাকেও মায়া নামে অভিহিত করা হয় অনেক সময়। সাধারণত, আমাদের স্নেহ-মমতা--- ভালবাসার পিছনেও থাকে মায়া-মোহ অজ্ঞানতা জনিত ভ্রান্তি। নিজেকে নিজের স্বরূপে না জেনে, ভালোবাসার বিষয়-বস্তু বা ব্যক্তিকে সঠিকভাবে না জেনে, আমরা মিথ্যা প্রত্যয় নিয়ে যেভাবে ভালোবেসে থাকি, ---তা' মায়া বৈ আর কিছু নয়। কে ভালোবাসছে--- কেন ভালোবাসছে--- কাকে ভালবাসছে, এবং 'ভালোবাসা'-টা আসলে কী--- জানার পরে, কেউ যদি মোহমুক্ত হয়ে ভালবাসতে পারে, সেই হবে প্রকৃত ভালোবাসা।
আমরা চাঁদকে ভালবাসি--- ফুলকে ভালবাসি---, এইরকম অনেক কিছুকেই আমরা ভালোবেসে থাকি। কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান বর্জিত ভক্তি--ভালোবাসা আসলে মায়া ছাড়া আর কিছু নয়। চাঁদ ও ফুলকে তাদের স্বরূপে জানার পরে--- কেউ যদি তাদের ভালোবাসে, সেই হবে প্রকৃত ভালোবাসা। তুমি কি একটি ফুলকে--- উদ্ভিদের জননাঙ্গ বিবেচনা করে ভালোবাসো?
আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঈশ্বরের আরাধনা করছে--- শুধুমাত্র মায়ামুক্ত হওয়ার প্রার্থনা নিয়ে। কিন্তু ভালো করে লক্ষ্য করলে বুঝবে, সে-ও মায়ার বশবর্তী হয়েই তা করছে। মায়াকে ভালোভাবে না জেনে--- না বুঝে, মায়ামুক্ত হতে চাওয়া তো মায়াই! নিজেকে না জেনে--- ঈশ্বরকে তার স্বরূপে না জেনে---, ঈশ্বরের উপাসনা করাটা মায়ার খেলা ছাড়া আর কিছু নয়।
সবকিছু মোটামুটি জানা--- বোঝার পরেও, অনেকসময় আমরা মায়ামুক্ত হতে পারি না। আসলে, আমাদের 'বোঝা'-টা উপরে উপরে 'বোঝা' হয়ে থাকে, সম্পূর্ণ উপলব্ধ জানা--- বোঝা হয়না। বুঝতে পারছি, এটা করা ঠিক নয়, তবুও তা' থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না! এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। এটাই হলো মোহ-আবেশে আচ্ছন্ন মনের ঘোর লাগা অবস্থা।
আমরা জানি, আমাদের এই মানব অস্তিত্বসহ আমাদের অর্থ-সম্পদ, আত্মীয়-পরিজন প্রভৃতি সবকিছুই অস্থায়ী। এ' সত্ত্বেও আমরা তা' বিস্মৃত হয়ে, কতোই না বাদ-বিবাদ অশান্তি সৃষ্টি করে থাকি। এ' সমস্তই আমরা করে থাকি মায়ার বশবর্তী হয়ে।
মায়া মুক্ত হতে চাইলে, অজ্ঞান-অন্ধত্ব থেকে মুক্ত হতে চাইলে--- মায়াজ দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হতে চাইলে, ---মনের বিকাশ ---আত্মবিকাশের পথে অগ্রসর হতে হবে আমাদের। সেইসাথে সর্বাঙ্গীন সুস্থতা লাভের চেষ্টা এবং সুস্থ থাকার চেষ্টা করতে হবে--- সঠিক পথে। কিন্তু মায়ার কারণেই, আমরা অনেকেই সে পথে অগ্রসর হতে চাই না--- অগ্রসর হতে পারিনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, মায়ামুক্ত হতে চাওয়াটাও আমাদের ভেতর থেকে চাওয়া নয়--- ওপরে ওপরে চাওয়া। আমরা মোহমায়া বশতঃ প্রকৃতই মায়ামুক্ত হতে চাই না।
অজ্ঞান-অন্ধকূপ-এর মধ্যে--- নিজেদের চতুর্দিকে মায়াজাল বিস্তার ক'রে, তাতেই মহোমায়াজ সুখে আবিষ্ট হয়ে--- বুঁদ হয়ে থাকতে চাই আমরা। মায়াবদ্ধ জীব, আমরা একে অপরের দ্বারা মায়াবদ্ধ হই, আবার একে অপরকে মায়াবদ্ধ করে থাকি। আসলে, কেউ কাউকে মায়াবদ্ধ করে না। মায়াবদ্ধ--- মোহাচ্ছন্ন আমাদের মনটাই। কেউ আমাদেরকে মায়া--- মোহ-আবেশ থেকে মুক্ত করতে চাইলে, আমরা তার ওপরে বিরূপ হয়ে উঠি। তাকে শত্রু বলে মনে করি। ---এরই নাম মায়া!
যদিও, আমাদের অগোচরে--- অন্তরের গভীরে, সেখানে বিকাশ লাভের তাড়নাও নিঃশব্দে কাজ করে চলেছে। আর এই বৈপরীত্যের মাঝে প'ড়ে--- আমরা যারপরনাই নাস্তানাবুদ হয়ে চলেছি। যখন যার ক্ষমতা বেশি--- তার দ্বারা-ই চালিত হচ্ছি আমরা। কখনো বলছি, এই বেশ আছি--- রসেবসে মায়ার আঁচল তলে। আবার কখনও বলছি, এই মায়া-ই যত অনিষ্টের কারণ। ---আমাকে মায়া মুক্ত হতে হবে। এ-যেন, বাবা বলছে, খোকা বেরিয়ে পড়--- যদি জীবনে উন্নতি করতে চাস তো বেরিয়ে পড়। আর মা বলছে, না আমার খোকা দূরে কোথায় যাবে না। সব সময় আমার চোখের সামনেই থাকবে। সচেতন আর অবচেতন মনের এই খেলা চলছে অবিরত আমাদের মধ্যে।.
©somewhere in net ltd.