নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের চাহিদা মতো মানববিকাশ মূলক যুগোপযোগী ধর্ম~ মহাধর্ম -এর আবির্ভাব ঘটেছে। \'মহাধর্ম\' হলো অন্ধবিশ্বাস মুক্ত, খোলা মনের, যুক্তিবাদী আধ‍্যাত্মিক চেতনা সম্পন্ন, আত্মবিকাশকামী মানুষদের উপযোগী একটি ধর্ম।

মানব ধর্মই মহাধর্ম

মহাধর্ম: মানবধর্ম ভিত্তিক অন্ধবিশ্বাস মুক্ত মানব বিকাশ মূলক ধর্ম। মানুষের মৌলিক ধর্ম।

মানব ধর্মই মহাধর্ম › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুখ ও শান্তি

২২ শে মে, ২০১৯ দুপুর ২:০৪

সুখ ও শান্তি
~মহর্ষি মহামানস

শরীর ও মনের চাহিদামত কোন কিছু হতে পারা--- করতে পারা, পেতে পারার ফলে, যে তৃপ্তি--- সন্তোষ--- আরাম লাভ হয়, ভালোলাগা বোধ হয়--- তাই হলো 'সুখ'।

'আনন্দ' সুখেরই একটা রূপ। আনন্দ হলো--- আহ্লাদ ও পুলক যুক্ত, উত্তেজনা বা উচ্ছ্বাস যুক্ত, আমোদ যুক্ত সুখ। যার কমবেশি আচরণগত বহিঃপ্রকাশ ঘটে বা ঘটতে পারে। সুখ বা আনন্দ লাভের চাহিদা ঐচ্ছিক হতে পারে, আবার অনৈচ্ছিকও হতে পারে। অনেক সময়, চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমরা তার সম্পর্কে সচেতন বা জ্ঞাত থাকি না।

আমরা স্ব-ইচ্ছায় যা কিছু করি, সবই ভিতরের চাহিদা--- আশা-আকাঙ্ক্ষা, কামনা-বাসনার দ্বারা তাড়িত হয়েই করে থাকি। এবং তার পিছনে থাকে সেই ইচ্ছা পরিপূর্ণ--- সফল হোক, এইরূপ চাহিদা। অর্থাৎ চাহিদামতো কর্মের ফল লাভের চাহিদা। এই চাহিদা মেটার ফলেই উৎপন্ন হয়--- সুখ। এই সুখ লাভের চাহিদাই আমাদের জীবনের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি।

চাহিদা সূক্ষ্মও হতে পারে, কোন কোন চাহিদার পিছনে সূক্ষ্ম স্বার্থ থাকতে পারে, আবার অনেক চাহিদা এবং তার সঙ্গে জড়িত থাকা স্বার্থ--- স্থূল বা মোটা দাগের বা মেটিরিয়ালও হতে পারে। কল্পনা ক'রে অথবা শুধু দর্শন লাভ ক'রেও সুখ হতে পারে, আবার ভোজন-- মর্দন বা স্পর্শের দ্বারাও সুখ অনুভূত হতে পারে। তারপর, জ্ঞান লাভেও সুখ অনুভূত হয়।

আর, কাম‍্য নয়--- এমন কিছু ঘটলেই সৃষ্টি হয়--- অসুখ। এই অসুখ--- মানুষকে সমস্ত বাধা-বিঘ্ন-বিপত্তি কাটিয়ে তুলতে, আরো বেগবান--- মরিয়া করে তুলতে, সংশোধিত করে তুলতে সাহায্য করে। নানা উপায় অনুসন্ধান ও উদ্ভাবনে সচেষ্ট এবং কৌশলী করে তোলে। কোন কোন সময়, চাহিদা মেটার ফলে--- সুখ উৎপাদিত না হয়ে, দুঃখ উৎপাদিত হতে পারে। এটা ঘটে--- স্বল্প জ্ঞান সম্পন্ন মানুষের ভুল বা ত্রুটিপূর্ণ চাহিদার ফলে। অর্থাৎ যা চাওয়ার নয়, তা-ই চাওয়ার ফলে এমনটি ঘটতে পারে।

এই সুখ কিন্তু খুব বেশি সময় স্থায়ী হয় না। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে--- ক্রমশ এই সুখানুভূতি ধীরে ধীরে বিলীন হতে থাকে। কিছুকাল পরে, সুখের তীব্রতা স্তিমিত হয়ে এলে--- তখন, জোরালো সুখ লাভের জন্য অথবা ভিন্নরূপ কোনো সুখ লাভের জন্য ভিতরে ভিতরে নতুন নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষা চাহিদার সৃষ্টি হতে থাকে আবার।

প্রধানত, সুখ লাভের চাহিদার জন্যই সবকিছু সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। সমস্ত ঘটন---অঘটনের পিছনে রয়েছে এই সুখ। শরীর ও মনের গঠন, আকার ও উপাদানের বিভিন্নতার কারণে, চাহিদারও প্রকারভেদ ঘটে থাকে। সুস্থ শরীর-মনের সুস্থ চাহিদা নিয়ে তেমন কোনো বিশেষ সমস্যা না থাকলেও, অসুস্থ--- বিকারগ্রস্ত শরীর-মনের অসুস্থ বিকৃত চাহিদা নিয়েই যত বেশি সমস্যার উদ্ভব হয়। সুস্থ ও অসুস্থ উভয় ক্ষেত্রেই--- জ্ঞানাভাব বা স্বল্পজ্ঞান থেকে উদ্ভূত চাহিদাই যত অঘটন--- অনাসৃষ্টি--- সমস্যার কারণ। আর এই অজ্ঞানতা থেকেই আসে অসুখ--- অসুস্থতা। অর্থাৎ অজ্ঞানতা বা সঠিক জ্ঞানের অভাবই অধিকাংশ সমস্যার মূল কারণ।

জাগতিক-ব্যবস্থা আমাদেরকে এই সুখের প্রলোভন দিয়েই কর্মে প্রবৃত্ত করিয়ে থাকে, অথবা কর্ম করতে বাধ্য করায় আমাদের। যাতে আমরা জ্ঞান-অভিজ্ঞতা লাভের মধ্য দিয়ে--- ক্রমশ মোহমুক্ত হয়ে, আরো--- আরো বেশি চেতনা লাভ করতে পারি। আমাদেরকে আত্মবিকাশের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই জাগতিক-ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য।

শরীর ও মনের ভিতরকার অথবা বহিরাগত কোন অসহনীয় অসুস্থকর বা অসুখকর--- পীড়াদায়ক কিছু অথবা কোন অবস্থা থেকে মুক্তি ঘটলে, শরীর ও মনের মধ্যে যে স্বস্তি--- উপশম--- আরাম অনুভূত হয়, তা-ই হলো শান্তি।

সুখ লাভ হয়--- সুখদায়ক কোন কিছু ভোগ বা তার সাথে যোগ -এর মধ্য দিয়ে। আর, শান্তি লাভ হয়--- অশান্তিকর কোন কিছু থেকে নিবৃত্তি অথবা তা' থেকে বিয়োগ বা ত‍্যাগের মধ্য দিয়ে। এক এক সময়ে সুখ-ও এমন অসহনীয় এবং পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে, যে তখন আমাদের মনে হয়, ---'সুখের চাইতে শান্তি ভালো'! কিন্তু এই চাওয়াও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। বাস্তবিকই, সুখ ও শান্তি কোনটাই দীর্ঘস্থায়ী নয়।

আসলে, দীর্ঘস্থায়ী সুখ ও শান্তি কোনটাই আমাদের কাম্য নয়। তা' হলো জীবন বিরুদ্ধ। আর তা' বিকাশের পক্ষে অনুকূল নয়। তাই, জাগতিক-ব্যবস্থা মতোই, আমরা অনেক সময় ওপরে ওপরে দীর্ঘস্থায়ী সুখ ও শান্তি চাইলেও, প্রকৃতপক্ষে ভেতর থেকে চাই না, বা চাইতে পারি না। তাইতো--- আমাদের 'সুখে থাকতে ভুতে কিলোয়'। আমাদের কার্যকলাপই অসুখ ও অশান্তিকে ডেকে আনে।

শান্তির জন্য--- ভেতরের এবং বাইরের সুস্থতাসহ অন্তর্জগৎ ও বহীর্জগৎ সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। যার নিজের সম্পর্কে এবং বহির্জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান নেই, সে অজ্ঞানতা বশতঃ অশান্তিকেই ডেকে আনে। যাতে অশান্তি সৃষ্টি হয় সেইরূপ কাজ-ই সে করে থাকে।

শান্তি বলতে আমরা বুঝি--- এমন একটি অবস্থা, যে অবস্থায় শরীর-মন সাময়িকভাবে উদ্বেগ--- উত্তেজনা, উপদ্রব--- যন্ত্রণা, দুঃখ-কষ্ট প্রভৃতি থেকে নিবৃত্তি লাভ ক'রে উপশম বোধ করে। সেই অবস্থা--- সেই অবস্থার বোধ-ই হলো শান্তি।

বস্তুত, এই জগত মোটেও শান্তি পূর্ণ নয়। আর আমাদের ভেতরটাও সর্বদা শান্তিপূর্ণ থাকে না। জীবনের চলা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই অশান্তি শুরু হয়ে যায়। কখনো কম কখনো বেশি। কখনো অনুভূত হয়, কখনো হয় না। ব্যক্তি বিশেষে এক এক জনের ক্ষেত্রে এক একটি সহ্যসীমা বা মাত্রা পর্যন্ত অশান্তি অনুভূত হয় না। এই সহ্যসীমা আবার সব সময় এক থাকে না।

জীবনের স্বার্থেই আমরা শান্তি কামনা করি, এবং মাঝে মাঝে কমবেশি তা' লাভ করেও থাকি। কিন্তু সাময়িক শান্তিতে আমরা অনেকেই খুশি নই। চাই আরো বেশি করে--- আরো স্থায়ীভাবে। আমরা অনেকে চিরস্থায়ী শান্তিও কামনা করি, যা আসলে জীবন বিরোধী। জীবনের লক্ষ্য--- জীবনের উদ্দেশ্য অনেকেরই জানা না থাকায়, আমরা এমনটি চেয়ে থাকি।

তাছাড়া, ঘটনাচক্রে বা দুর্ভাগ্যক্রমে অনেকের জীবনে অশান্তির পরিমাণ খুব বেশি হওয়ায়, এবং /অথবা অনেকের ক্ষেত্রে সহ্য ক্ষমতা কম থাকায়, তারা তীব্রভাবে শান্তিকামী হয়ে ওঠে।

অনেককে দেখা যায়, তারা একদিকে শান্তির জন্য ব্যাকুল, আবার অপরদিকে--- যাতে ঘোর অশান্তির সৃষ্টি হবে, তার আয়োজনে ব্যস্ত। তারা অজ্ঞানতাবশত নিজেদের অজান্তেই অশান্তি ডেকে আনে। অনেক মানুষই সারাজীবন শান্তির খোঁজে ছোটাছুটি ক'রে--- হতাশ হয়েছে এবং হচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার জীবনের মূল স্রোত থেকে সরে গিয়েছে অথবা সরে যাচ্ছে।

একটু ভালো ক'রে পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাবে, অশান্তির মূল কারণই হলো--- যথেষ্ট জ্ঞান-চেতনা এবং সুস্থতার অভাব। এই জাগতিক সিস্টেম আমাদেরকে ক্রমশ জ্ঞান ও চেতনা সম্পন্ন করে তুলতেই আমাদের জীবনে অশান্তির বন্যা বইয়ে দেয়। অপরপক্ষে, জ্ঞান ও চেতনার অভাবেই আমরা নানা অশান্তি--- দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা ভোগ করে থাকি।

যথেষ্ট জ্ঞান ও চেতনা লাভ হলে, তখন সুস্থতা ও শান্তি আমাদের করায়ত্ত হবে। সুতরাং সত্যিই যদি শান্তি চাও, তাহলে শান্তি না চেয়ে জ্ঞান ও চেতনা চাও। ---একান্ত ভাবে চাও। জ্ঞান-চেতনা লাভের পথেই প্রকৃত শান্তি লাভ সম্ভব হবে। জ্ঞান ও চেতনা লাভ-ই আমাদের জীবনের প্রধান লক্ষ্য।

কখনো কখনো চরম অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে--- আমরা শান্তি কামনা করি। কিন্তু শান্তি লাভ হলেই, তখন আমরা সুখ লাভের জন্য ব‍্যাকুল হয়ে পড়ি। তখন সেই সুখ লাভের চাহিদা এবং লব্ধ সুখ থেকেই আবার সৃষ্টি হয় অশান্তি। অধিকাংশ সময়েই আমরা শান্তির চাইতে সুখ ও আত্মসন্তুষ্টি-ই বেশি কামনা করে থাকি।

অনেক সময়েই, আমরা ঠিক কী চাই, তা' আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। আমরা ওপরে ওপরে শান্তি চাইলেও, আমাদের ভিতরে--- অন্তরের গভীরে যেন এক বিরোধী সত্তা বসে আছে। সে এমন সব কর্ম ক'রে চলেছে, যার ফলে আমরা দুঃখ-কষ্ট-অশান্তি ভোগ করতে বাধ্য হচ্ছি। অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে, চাই--- আত্ম-জ্ঞান, আত্ম-নিয়ন্ত্রণ, যা মহা আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রম তথা 'মহাধর্ম' গ্রহণের মধ্য দিয়েই লাভ করা সম্ভব।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.