![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা তখনো প্রেম শব্দের সাথে হইনি পরিচিত।
আমরা খাওয়া,অভাব, ঘুম আর স্বপ্ন ভঙ্গের গল্পে অভ্যস্ত।
এক রাতে জানতে পারি,
আমাদের পুকুর ঘাটের আমগাছের সাথে ঝুলছে এক নারী!
আমাদের কোন টর্চ লাইট ছিলনা।
দাদাজান হারিকেন নিয়ে আমাদের দলপতি হয়ে সামনে সামনে যাচ্ছিল।
আর বলছিল, আল্লাহরে ডাক বেবাকে, ঘোর বিপদ।
আম গাছের তলায় এক নারীর পদতলে আমরা পুরো পরিবার এক হয়েছি।
পাড়ার কেউ কেউ ঘুম ভেঙ্গে লুঙ্গি পরিহিত খালি গায়ে পুকুর পাড়ে বসেছে।
কতক্ষন চুপ ছিলাম আমরা?
একটা মরন কতক্ষন চুপ করায় আমাদের?
আমি চন্দ্র মুখী হয়নি সেদিন, পুকুরের কোনায় ঘুম ভাঙ্গা পুরুষের সদ্য জ্বালানো বিড়ির আগুনের মধ্যে কি যেন দেখছিলাম।
"লাশ নামানো হোক "দাদাজান বললেন।
ভঙ্গ করলেন মরে যাওয়া নারীর উদ্দেশ্যের নীরবতা।
নিজের মেয়ের লাশ নামাতে গাছে উঠে গেলেন আমার বাবা ।
আমি মৃত্যু বোঝার রাত্রিতে দাদাজান এর ধমক এর ভয়ে নিশ্চুপ মায়ের আহাজারির মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি।
লাশ নামানো হল!
আমি এই প্রথম একই সাথে প্রেম ও মৃত্যু বুঝতে শিখলাম।
আমি সুর করতে ভোরবেলা পড়তাম হুজুরের পড়া।
আমার ই অগ্রজ পর্দা করা জীবনের বাইরে গিয়ে প্রেমে পড়েছিল!
যেমন করে নদীর শুরু হয়।
আপন গতিকে ভালবেসে।
বন্যা, আকাশ, সবুজ আলিঙ্গন করে প্রেমে পড়া।
অবশেষে লাশ হয়ে ঊঠোনের এক কোনায় পেয়ারা গাছের তলে শুয়ে থাকা।
শক্ত হয়ে বসে থাকা দড়ির দাগে, অজস্র অভিমান আর প্রেমের রুপকথা!
বিষাদ সুন্দর মুখখানি।
বাবা শক্ত মানুষ, শক্ত হয়েই এককোনে বসে রইল!
দাদাজান, শুধু চিক পাক করে লোক খুজছিল কবর খোড়ার জন্য।
যেন কেউ মরে যাবে,
নামিয়ে আনবে,
কবর দেবে এটাই স্বাভাবিক।
প্রেমের যেমন নিয়ম নেই, তাই আত্মহত্যাকারীর জন্য কান্নার ও সুযোগ নেই।
ভুবনের সকল সৌন্দর্য নিয়ে জন্ম নিয়েও যাবার কালে সামান্য কান্না পেলনা বোন।
তবুও কি কেউ সত্যি কাদেনি?
সারারাত জেগে জেগে যার আকাশে তুলেছে যুই!
যাকে ও একেছিল ওর দেয়ালের কড়িকাঠে।
দরিদ্রতম ওষ্ঠ যার জন্য এক টুকরো হাসির মেলা বসাত।
কাদেনি এমন কেউ?
প্রেম নিজে কি কেদেছিল দু ফোটা?
নাকি কান্না নিষিদ্ধ?
জানাজা শেষে সাড়ে তিনহাত ঘরের দিক আগাল লাশ!
আগাল সরল তরুনীর প্রেম।
যদিও প্রেমিকা সাড়ে তিন হাতের বদলে লোমশ বুকে মাথা রেখে টিনের চালের উপর বৃষ্টিফোটাকে সুখের ঘরে আনন্দের ধারা বলতে চেয়েছিল।
অবশেষে প্রেম তাকে সাড়ে তিন হাত ঘর দিল।
লোমশ বুক,সকালের পান্তা, মাঝ রাতের নিঝুম পরিবেশে পাতা পড়ার শব্দ, মেহেদী, লাল চুড়ি, নতুন শাড়ি, ব্লাউজ, বিহীন এক ঘর দিল।
তবে মরন ওকে ঢের দিয়েছে প্রেমের থেকে।
মরনের এই ঘর প্রেমের থেকে স্থায়ী!
ও তো স্থায়িত্ব ই চাইত।
মাটিচাপা হয়ে গেল এক বুক প্রেম!
আমার মৃত্যু বোঝার রাত।
প্রেমে অগ্রজ কি পেয়েছিল জানিনা!
দাদাজান পেয়েছিল এক জ্বলজ্যান্ত উদাহরন।
আর আমি পেয়েছিলাম,
বিষন্ন বিদ্রুপময়
রক্তের আধার।
ছায়া আচ্ছন্ন লাজুকতা নিয়ে কেউ আসেনা আর ঘুম পাড়ানি গান শোনাতে!
প্রখর রৌদ্রে হেটে যাওয়া
অনুভবে শুধুই প্রেম আর মরন।
বিষন্ন বিস্ময়।
দুপুর কাটানো ম্লান মগ্নতা,
ঝলসানো ভাঙা দেয়ালের পাশে বাগানে,
লকট গাছের ভিড়ে,
কান পেতে শোনা পাখির কিচির মিচির, সাপের খস খস।
বরষা কালে শুধু ঘরবন্দি হতাম, প্রেম বোঝার নেশায় ওভাবে আর হাটতাম না।
তখন ঘরছূট ছিলেন মা!
বরষা নামলেই নীল প্লাস্টিক নিয়ে দৌড়ে যেত কবর স্থানে
"মেয়েটা আমার ভিজে যাচ্ছে "বলে।
অপলক নয়নে বারান্দা থেকে তাকিয়ে থাকত দাদাজান,
হয়ত তুমুল বরষায় মায়ের চোখ থেকে কান্না আর বরষার পানি আলাদার নেশায় পেয়েছিল তাকে
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:০৪
বিজন রয় বলেছেন: আপনার লেখাগুলো ব্যতিক্রম।
+++++