পরিত্যাক্ত

১৩ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫২

রাত তিনটা সাইত্রিশে মাংসের দোকানী ফোন দিয়ে বলল "তুমি পরিত্যাক্ত "
ফজরের আজানের পর হাদিস পার্কের বেশ্যা কড়া নেলে জানাল "স্যার আপনি পরিত্যাক্ত "
কবিতার ঠাসবুননের দেয়ালে ঘুরে বেড়ানো তক্ষক সহমর্মিতা জানাতে নেমে এসে বলল "স্যার আমাকে একখানি কবিতার বই দিয়ে যাবেন? আয়োজন করে ঘুমাতাম,
চা বানিয়ে আনি? "
আমাদের পাড়ার কুকুরদের সভামনি আলো হলে এসে জানাল "স্যার আপনার মালামাল নেবার জন্য একখানি পিক আপ ভাড়া করেছি "
আমি সব তুলে নিলাম।
কুকুরের অসহায় চাহনিতে বা কৃতজ্ঞতায় বা মমতায় বা অভালবাসায় আমার "মদের বোতল, প্রিয় মদের গ্লাস,অর্ধেক কবিতা " এই দিয়ে ভ্যানে চেপে মানিয়ে নেয়ার যান্ত্রিক শহর ছেড়েছি আমি।
কোথায় যাই আমি?
লাখ লাখ অলি গলি তোমার শহরে।
পচা গলে যাওয়া গলি।
নদীতীর।
কারখানা।
সিটি কর্পোরেশন।
কোথায় যাই আমি?
আমি তাবত শহরেই পরিত্যাক্ত।
তোমাদের স্বচ্ছ বিকেলে এবং আমার ক্লান্ত বিকেলে রুপসা ঘাটে এক অন্ধকার বিক্রেতার সাথে দেখা হয়।
--"স্যার, আপনি তো অন্ধকারের ছন্দকার।
আমি অন্ধকার বেচে খাই।
একদম বিক্রি নাই।
অল্প দামে একখান অন্ধকার গলি কেনেন স্যার।""
সন্ধ্যা নেমেছে তোমাদের শহরে।
এই সময় ই আমার আদিম স্বপ্নপাথর গুলো কথা কইতে চায়।
আমি কই যাব?
কে নেবে আমায়?
একখানি অন্ধকার গলি বুকপকেটে নিয়ে ঘুরছি গোপনে।
দেখতে পেলে পরিত্যাক্ত আমায় তুলে নেবে সিটি কর্পোরেশন এর ট্রাকগুলি আদরে।
আমি চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছি জাতিসংঘ ময়দান এর এককোনে।
এখানে শহরের দ্রুত উন্নয়ন নিয়ে কথা হচ্ছে।
বক্তৃতে দিচ্ছেন আমার পাড়ার কুকুরের সভাপতি।
"এক কবি তার মদের গ্লাস চুরি করে পালিয়েছে,
কবিসমাজের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাল তারা "

আমি কই যাব?
কে নেবে আমায়?
অন্ধকারে আরো অন্ধ হওয়া শরীর শিউরে ওঠে।
অমর স্তব্ধতা।
কে নেবে?

আমি
একখানি অন্ধকার গলি এনেছি ।
আদর করে কাছে টেনে নাও।
যেমন করে হাত বুলাও পুরনো ডায়েরীর পাতায়।
তোমার শহরে আমার দাড়ানোর কোন জায়গা নেই।
অন্ধকার গলিটাকে বুকে ধারন কর।
মাঝরাতে তামাক জ্বালিয়ে দাও।
দুর থেকে অস্পষ্ট কে ওই?
কেউ না!
কেউ না!
মায়া কবি, মায়া।

আমি একটু একটু করে এই যান্ত্রিক শহরের প্রতিটি কনা থেকে পরিত্যাক্ত।
কবিতার আত্মীয়,
জঞ্জাল হটাও বুক থেকে।
অন্ধকার গলি বুকে জড়াও।
আমি ঘুমুতে যাব ওই বুকে।
দীর্ঘ ভ্রমনে ক্লান্ত আমিকে টেনে নাও গভীরে।

১ টি +১/-০