![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাকে ভাবতে সময় দাও, আমি তোমাকে গল্প দেবো।
টিনের চালে বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ। অদ্ভুত এক শব্দ। চোখ বন্ধ করে অচেনা এক মায়াবিণীর নূপুরের রিনঝিন শব্দ শুনছি। আকাশ আবারো অন্ধকারে ঢেকে গেছে। সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ক্লাস হয়নি আজ। শুধুমাত্র বাংলা ক্লাসটা হয়েছে, সেটাও পাঠ্য বইয়ের বাইরের পড়া।
সফি মোল্যা স্যার বাংলা পড়াচ্ছেন। স্যারের বিশেষ একটা গুণ আছে। প্রতিটা শব্দের শেষ হয় বাঁশির মতো সুরে। স্যার কবিতা পড়াচ্ছেন-
“এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন দিনে মন খোলা যায়—
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরোঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়॥”
কবিতা শেষে স্যার আমাকে প্রশ্ন করলো-
“কি বুঝলে?”
আমি নির্বোধের মতো মাথা নাড়িয়ে বললাম-
“স্যার, কবিতা আমার মাথায় ঢুকে না। এ আমি বুঝি কম।“
সফি মোল্যা স্যার মুচকি হেসে তার বাঁশির সুরে কবিতার অর্থ বোঝালেন। শুনতে নেশার মতো লাগছিলো।
আমার সমস্ত শরীরে ভেজা কাঁদার গন্ধ। বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলা হচ্ছে। আমাকে বাধ্য হয়ে খেলতে হলো রেফারীর ভূমিকায়। দলের ক্যাপ্টেন মিয়াদ কাকা। গোলকিপার ঝিলু। উইংসে ফয়সাল, জাকির; ফরোয়ার্ডে সিকান; মিডফিল্ডে লিটন; আরো আছে শিমুল, রাসেল, জাকির এবং চেনা কিছু বন্ধু। ভুল রেফারীং এর কারনে কাঁদার সাথে জোর করে আমার সখ্যতা গাড়ালো দুই দলের খেলোয়ার। খেলা শেষে পুকুরে ঝাপাঝাপি।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মাঝে দু চাকার ফনিক্স সাইকেলটা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম।সাইকেলটা আমার নানাজান আমাকে দিয়ে বলেছিলো-
“যৌতুক হিসাবে দিলাম সাইকেলটা।“
হঠাৎই আমার সাইকেলের পেছনে কাউকে অনুভব করলাম। কে যেন বসে আছে আমার কাঁধ ছুঁয়ে। পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি কেউ নেই। তবে কে ছিল? তার স্পর্শ তো মিথ্যে হতে পারে না! আমার অনুভূতি তো ভুল হতে পারে না! তবে কি বৃষ্টিই ছুঁয়ে গেছে আমায়!
ঘুম ভেঙে গেল। ঘর ভরতি তখনো কাঁদার গন্ধ। চার দেয়ালের মাঝে দু চোখ কাকে যেন খুঁজে ফিরছিল। নিমিষেই কাঁদার ভেজা গন্ধ মিলিয়ে গেল। স্বপ্ন থেকে বাস্তবে ফিরলাম। জানালায় চোখ পরতেই দেখি, ক’ফোটা বৃষ্টি প্রাণপণ চেষ্টা করছে আমাকে ছুঁয়ে যেতে!
আমি আবার চোখ বন্ধ করি। টিনের চালায় বৃষ্টির শব্দ শুনতে অপেক্ষা করি। ভেজার কাঁদার গন্ধ আর খুঁজে পাই না। খুঁজে পাই না দু চাকার ফনিক্স সাইকেলটাতে বসে আমার কাঁধে হাত রাখা কাউকে।।
©somewhere in net ltd.