নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনের বিপরীতে পার করে এসেছি সহস্রকাল, হঠাৎ এক উদ্ভ্রান্ত অবয়বে বেঁচে থাকি এপার ওপার।
ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না , আকাশের তারারা আজ আছে কি নেই। আমার চোখ যে একদম খারাপ হয়ে গেছে তাও না। আকাশে ভীষণ মেঘ হয়েছে তেমন কোনো সম্ভাবনাও নেই। দূর থেকে ভেসে আসা সুমধুর এক কণ্ঠের গান,মনে হয় আমার কানের কাছেই গুনগুন করে কেউ গাচ্ছে
'' আমি তোমারি কাছের খুব চেনা কেউ,
আমায় হারিয়ে যেতে দিওনা কখনো''।
খুব সাবধানে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি মায়া এসেছে কিনা। এই যে,আজ ডান পাশের দরজার পেছনে লুকিয়ে সে এমন করে অদৃশ্য হয়ে আছে। ইদানিং বড্ডো বোকা হয়ে গেছি,কিছুই বুঝতে চাই না।
বেরিয়ে এসো,সারাদিন চা জোটেনি আজ।বাগান থেকে লেবু তুলে রেখেছি,মায়া এলে যত্ন করে চা বানাবে।কি জানি কি হয়েছে,মায়া আর চা বানায় না। প্রতিদিন তুলে নিয়ে আসা লেবু গুলো শুকিয়ে যায়,কিন্তু মায়ার সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। মাঝে মাঝে ভীষণ রাগ হয়,গোস্যা করে থাকি।কত কাল হয়ে গেলো মায়া চা বানায় না।কি যে এক জাদু আছে মায়ার চায়ে তা আমি কখনো প্রকাশ করতে পারিনি।আজ অনুরোধ করলাম,আমাকে যেন একটু ছুঁয়ে দেয়,মাথায় আলতো করে বিলি কেটে দেয়।ওই আগের মতোই শুধু হাসে আর গুনগুন করে গান গায়,
''তোমার হিয়ায় আমি বেঁচে আছি মায়ার ছায়া হয়ে,
তুমি খুঁজোনা আমায় স্পর্শ পেতে নিঃশেষ অভিলাষে। ''
আমি আচ্ছন্ন হয়ে যাই তন্দ্রায়,মায়া পাশে এসে বসে, ছুঁয়ে দেয় আমার চিবুক,কপাল। বিলি কাটে মাথার এপাশ থেকে ওপাশে। আমার তন্দ্রা থেকে নিদ্রা চলে আসে। জোর করে বেরিয়ে আসি।ভয় হয় অনেক,মায়া যদি চলে যায় এখনই,তবে আমি নিঃসঙ্গ রাত কাটাতে পারবো না।জেগে রই। মায়াকে নিয়ে ছাদে যাই,নিশি পোকার ঝি ঝি শব্দে মায়াকে সুরসুরি দিতে আমার ভীষণ ভালো লাগছে, মায়া যখন কেঁপে উঠে আমাকে সরিয়ে দিয়ে লজ্জা পেলো, আমি তাকে বেগুনি শাড়িতে কেমন মানিয়েছে তা বলতে শুরু করলাম। যদিও রাতে কখনো গাছ থেকে ফুল তুলিনা,তাও আজ একটা ঝুমকো জবা মায়ার কানে গুজিয়ে দিলাম। মায়া বললো, তোমার পাগলামি ঠিক আগের মতো এখনো রয়ে গেছে, একটু তো বড় হও এবার। আমি হাসলাম শুধু। একটা গান ধরলাম,
''কত ফুল শুকিয়ে গেলো আমার ডায়রির পাতায়,
আজ সার্থক হল ফুলের জন্ম তোমার বুনো খোঁপায় ''
মাঝরাত হতে চললো, এবার ঘরে যাবার সময় হল এলো মায়ার। এক প্রকার করা শাসনে মায়া আমাকে ছাদ থেকে নিচে নিয়ে এলো। আমি এতবার আবদার করলাম,আজ একসাথে ভোর হওয়া দেখবো,ভোরের কাক যখন প্রথম ডাকবে তখনই ঘরে যাবো। মায়া বললো, সে অবধি তার আয়ু নেই।
একপ্রকার জোর করেই আমাকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে এলো। কোনো কথা নয়, এখন সোজা ঘুমোবে। আমার শিওরে বসে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো,আমি মায়ার শাড়ীর আঁচল শক্ত করে ধরে রইলাম। ঘুমিয়ে গেলাম কখন নিজেও জানিনা।
বেশ বেলায় ঘুম ভাঙলো। দেখি পাশে ডাক্তার বসে হাত ধরে কি যেন দেখছে। বাসার কাজের লোকটি ডাক্তার কে বলেছে, আমি নাকি আর ঠিকমতো ওষুধ খাই না।একা একাই রাত বিরাতে বারান্দা,বাগান,ছাদে ঘুরাঘুরি করি। কেউ ডাকলেও কিছু শুনিনা। ডাক্তার বললো , অবস্থা খুবই খারাপ, কোনো মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিলে হয়তো একটু ভালো হতে পারে, তবে সময় সাপেক্ষ বেপার। নিজের কাছের কেউ আছে কিনা জানতে চাইলে কাজের লোক বললো, মায়া ম্যাডাম ছিলেন তবে তিনি গত হয়েছেন ২৩ বছর আগে।স্যার নাকি মেডামের সাথেই কথা বলেন এখনো। আমার ভীষণ ভয় করে এ বাড়িতে। ডাক্তার একটু হেসে বললেন এসব কিছু নয়, সবই মনের ভুল। চিকিৎসায় ঠিক হয়ে যাবে।
৩০ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১৮
মায়াস্পর্শ বলেছেন: ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়। ভালো থাকুক সবাই তার প্রিয় মানুষে সশরীরে নিয়ে।
২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:০৪
আজব লিংকন বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন।
john abraham এর Force সিনেমার কথা মনে পড়ে গেল। সিনেমায় উনি ওনার মৃত স্ত্রীর সাথে কথা বলতেন, যার নাম মায়া ছিল।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১:১৩
মায়াস্পর্শ বলেছেন: এটাতো জানতাম না।
ধন্যবাদ ভাই। এই লেখাটা আগের, ভাবলাম আবার রিপোস্ট করি।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩
মেহবুবা বলেছেন: মানুষ বড়ই স্মৃতিকাতর! সশরীরে যে নেই সে অশরীরী হলেও স্বান্তনার জন্য আশ্রয় বৈকি!