নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একদিন জীবন শেষ হয়ে যাবে তবুও অনেক কিছু করার সাধ জাগে..............
অনুরাধা এসেছিল আমার বাড়িতে। বাহিরে তখন দমকা হওয়ায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল। অনুরাধা প্রথমে আমার হাত ধরে বলেছিল প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না।
কিন্তু আমার পক্ষে অনুরাধা-কে গ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। অনুরাধা অবুঝের মতো অনুনয়- বিনয় করেই চলল। শেষমেষ আমার পা ধরে বলল, আপনি যদি আমাকে গ্রহণ না করেন তাহলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন গতি থাকবে না। আপনি ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে আমি কল্পনাও করতে পারিনা। অন্য কোন ছেলেকে মেনে নেওয়া অসম্ভব।
আমি ওকে বুঝালাম দেখো অনুরাধা, তুমি আমার ছোট বোনের মতন। তুমি আমাকে ভালোবাসো ঠিক আছে কিন্তু সে ভালোবাসা ছাত্রী-শিক্ষকের নি:কলুষ ভালোবাসা হিসেবেই থাক। আর আমি তো কোনদিন তোমাকে ছাত্রী ছাড়া অন্য কোন সম্পর্কের হিসেব ধরে ভালোবাসিনি।
-আমার সংসার আছে। স্ত্রী আছে, সন্তান আছে। ওদেরকে আমি কি জবাব দেব। ওদেরকে ফেলে তোমাকে নিয়ে আমি থাকতে পারবো না। কারণ সমাজ, সংসার, ধর্ম এই সম্পর্ককে কখনোই মেনে নেবে না।
তুমি হিন্দু আমি মুসলিম আর তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা আমি তোমার শিক্ষক। আমি শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক হতে চাই না ।আমার একটি ভুলের জন্য অন্য শিক্ষকদের মুখে কালিমা লেপন হোক তা আমি হতে দিতে পারিনা।
তোমার সামনে সারা জীবন পড়ে রয়েছে। তুমি চাইলেই স্মার্ট, সুন্দর, ধনী কোন ছেলেকে বিয়ে করতে পারবে। কিংবা তোমার বাবা-মা যেখানে তোমার বিয়ে ঠিক করেবে সেখানেই তোমার বিয়ে করা উচিত।
-উচিৎ অনুচিৎ বুঝিনা। আমি শুধু আপনাকে চাই। আমার কাছে ভালোবাসার অপর নাম আপনি।
আমি বললাম, তুমি কি পাগল হয়ে গেছো অনুরাধা । আমি কিছুতেই আমার চরিত্রে কালি লাগাতে চাইনা।
অনুরাধা, আর যাই করো একজন চরিত্রবান ছেলেকে বিয়ে করবে। কারণ চরিত্র এমন এক জিনিস যা হারালে জীবনের সবকিছু হারাতে হয়। চরিত্রহীন মানুষ পশুর চেয়ে অধম। যে তোমার রুপ, সৌন্দর্য, ধন দৌলত দেখে ভালোবাসবে সে একদিন তোমার চেয়ে আরো ভালো কোন তরুণীকে পেলে তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে একটুও দ্বিধাবোধ করবে না।
অনুরাধা কেঁদেই চলেছে। সে কিছুতেই বুঝ মানতে চাইছে না। আকাশও যেন কাঁদছে অনুরাধার কান্না হয়ে।
তবুও শেষবারের মতো বললাম, অনুরাধা তুমি কি তোমার শিক্ষকের মর্যাদা রাখবে না। তোমাকে বিয়ে করলে আমি কি আর কলেজে মুখ দেখাতে পারবো ? আমার ছাত্র-ছাত্রীরাই তো আমাকে তখন আঙ্গুল দেখিয়ে বলবে, মানুষ নামের অমানুষ।
অনুরাধা উঠে দাঁড়ালো ।চোখ মুছল। তারপর বলল, স্যার আমি আপনার মর্যাদা রাখবো । আমি আমার ভালোবাসাকে জলাঞ্জলি দিয়ে চিরদিনের জন্য আপনার জীবন থেকে চলে যাব। যাতে কোনদিন কেউ বলতে না পারে অনুরোধার জন্যই স্যারের আজকের এই পরিণতি।
তারপর যেমন হুট করে অনুরোধে এসেছিল তেমনি করে রাতের আঁধার, ঝড়, জল উপেক্ষা করেই চলে গেল।
আমি তার চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বেদনায় বুকের ভেতরটা নীল হয়ে গেছে। বিষন্ন মুখে দরজা যখন বন্ধ করতে যাব তখন আমার স্ত্রী সারিকা এসে বলল, কি ব্যাপার এত রাতে তুমি দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছো কেন ?
আমাকে মিথ্যা বলতেই হলো। না মানে বাহিরে খুব ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে তো গাছ থেকে গাছের ডাল ভেঙে পড়াতে প্রচন্ড শব্দ হয়েছে। তাই ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। আমি ভাবলাম আবার চোর টোর এলো কিনা তাই দেখতে এলাম।
-চলো চলো ঘুমোতে চলো। খুঁকু আবার উঠে গেলে আমাদের না দেখে ভয় পেয়ে কেঁদে উঠবে।
সেদিন রাতে বিছানায় গেলাম ঠিকই কিন্তু ঘুম হলো না । কেবলই অনুরোধা সেই করুন মিনতির কথা মনে পরতে লাগলো।
আমার পাশে আমার প্রিয়তমা স্ত্রী ঘুমাচ্ছে। ডিম লাইটের আলোয় তার ঘুমন্ত মুখটা কি মায়াবী লাগছে, আমার একমাত্র কন্যা মালিহা ঘুমিয়ে আছে কি সুন্দরই না লাগছে তাকে। আমার একটি ভুলের জন্য হয়তো এই সুখের সংসার ভেঙ্গে যেত।
আমার স্ত্রী আর সন্তান বানের জলের মত ভেসে যেত দূরে আর অনুরাধাকে নিয়ে আত্মগ্লানিতে ভুগে আমিও সুখী হতে পারতাম না কোন দিন।
আমি নেহাল জুবায়ের। কুমিল্লা শহরের একটি সরকারি কলেজের লেকচারার। কলেজে আমি বাংলা পড়াই। একদিন ক্লাসে আমি যখন কবিতা আবৃতি করে ছাত্র-ছাত্রীদের শুনিয়েছিলাম। সেদিন আমার কন্ঠ, চশমার ফাঁকে আমার বড় চোখ, ঝকড়া চুল আর মায়াবী চেহারা দেখে ক্লাসের দু’একটি মেয়ে ঘন ঘন তাকাচ্ছিল। অনুরাধা ছিল তাদের মধ্যে একজন।
মেয়েরা সহজে আমার প্রেমে পড়ে যায়। এটা আমার জন্য নতুন কিছু নয়।
সেদিনের পর থেকে অনুরাধা আমার সাথে দেখা করে বিভিন্ন ধরনের কথা বলার চেষ্টা করত। আমার কন্ঠ সুন্দর, আমার জামা কাপড় পড়ার স্টাইল সুন্দর, ক্লাশে আমার পড়ানোর সিস্টেম সুন্দর ইত্যাদি অনেক ধরনের কথা বলতো আর প্রশংসা করতো।
অনুরাধা অষ্টাদশী তরুণী। দুধে আলতা বদন তার। এক পলক দেখলেই ভালোলাগার একটা আবেশ মনের ভিতর দোল খায়। কলেজের অনেক ছেলেপেলে ইতিমধ্যে অনুরাধাকে নিজের করে পেতে চায়।
অনেকেই চিরকুট দেয়, চিঠি দেয়, এমন কি প্রেম নিবেদনও করে। এসব নিয়ে অনুরাধা আছে মহা ঝামেলায়। দিন দিন তার প্রতি ছেলেদের আসক্তি বেড়েই চলেছে। তাই উপায় না পেয়ে সে বাধ্য হয়ে প্রিন্সিপাল স্যারকে কয়েকজন ছেলের নামে নালিশ করে।
কলেজের সব শিক্ষক এক হয়ে মেয়েদের যারা উত্যক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়ায় তরুণ প্রেমিক যারা মজনু কিংবা দেবদাস হবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে তাদের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এলো।
যেহেতু কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধ তাই ছেলেরা আর কিছু করার সাহস পেলনা। এতে কেরে কলেজে অনুরাধা সহ অন্যান্য মেয়েরাও হাফ ছেড়ে বাঁচল।
অনুরাধা কারণে অকারণে আমাকে উপহার পাঠাতো । তাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণও করেছিল। ভদ্রতার খাতিরে আমাকে যেতে হয়েছিল।
উচ্চবিত্ত অনুরাধার বাবা-মা বেশ আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। কিন্তু আমি দেখতে পাই অনুরাধার চোখে অন্য কিছু। সেখানে প্রেম আর কামের লুকোচুরি খেলা।
আমি বুঝতে পেরেছি অনুরাধা কি চাচ্ছে। তাই সব সময় একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলতাম। কিন্তু অনুরাধা সেই অদৃশ্য কাচের দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করতো। তবুও শেষ পর্যন্ত অনুরাধা এমন দেওয়ানা হবে কে জানত ?
আমি ইশারা ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইতাম আমার পক্ষে ওর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
সেদিনের পর থেকে ঝড় বৃষ্টির দিন এলেই আমার অনুরোধা হওয়ার কথা মনে পড়ে যায়। আমার বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর, শুনেছি সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাতে সফল হতে পারেনি।
অনুরাধারা বাবা- মা তাকে ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দিয়েছে। সেখানে সে সুখেই আছে।
আসলেই কি সুখে আছে ? কে যে কিসে সুখী হয় বলা মুসকিল।
অনুরাধা তার বান্ধবী শ্যামলীকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে নেহাল জুবায়ের স্যার কি এখনো কুমিল্লা শহরে আছে নাকি চলে গেছে অন্য কোথাও । তিনি কি অনুরাধার কথা জানতে চান । অনুরাধা কোথায় আছে, কেমন আছে?
শ্যামলী নেহাল জুবায়ের কে চিঠির কথা জানিয়েছিল। বলেছিল, স্যার অনুরাধা যে আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসে সেটা আমি জানতাম। হয়তো এখনো মনে মনে আপনাকে ভালোবাসে । তাই আমি বলেছি স্যার তোমার সম্পর্কে কোন কিছু জানতে চান না । স্যার কুমিল্লা শহরেই আছেন আগের কলেজেই আছেন।
আমি বললাম, শ্যামলী তুমি ভালো করেছো। কারণ তুমি যদি লিখতে আমি অনুরাধার খোঁজ খবর জানতে চাই তাহলে সে হয়তো মন থেকে আমাকে কোনদিনই ভুলতে পারবে না। এতে করে সারা জীবনই সে কষ্ট বয়ে বেড়াবে।
আসলে ভালোবাসা এমনই। কেউ কেউ ভুলতে পারেনা ভালোবাসার মানুষকে। তাইতো তাকে না পেয়ে মনের গহীন কোণে লুকিয়ে রেখে স্মরণ করে দিবানিশি।
অনুরাধার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তার ভাললাগা, ভালোবাসার মানুষ নেহাল জুবায়েরকে সে কখনো ভুলে যেতে পারেনি।
ছবি-David Stoll
১১ ই জুন, ২০২৩ সকাল ১১:৪৮
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
মন ছুঁয়ে গেল ভাই। গল্প আমি প্রায়ই লিখি কিন্তু ব্লগে তেমন পোস্ট দিচ্ছিনা।
কি অদ্ভুত দেখুন বানানটা ঠিক ছিল কিন্তু আমি সার্চ দিয়ে দেখে কনফার্ম হয়েও (বি) উঠিয়ে দিলাম কারণ তখন কলিগের সাথে কথা বলছিলাম। তাই সঠিকটাকে ভুলে রূপায়িত করে পোস্ট দিলাম। ধন্যবাদ ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য।
২| ১১ ই জুন, ২০২৩ সকাল ১১:৫৬
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: আয় হায়!! এ অবস্থা দেশের!! আজকাল ছাত্রীরা স্যারদের প্রতি ফ্যান্টাসিতে ভুগে এই পোস্ট'টি তারই এক প্রমাণ।
গল্প ভালো হয়েছে।
১১ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:০৯
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
তার উপর স্যার যদি হয় আপনার প্রোপিকের মত হ্যান্ডসাম তাহলে মেয়েরা কি করবে !!! আমারতো মনে হয় সবদেশেই দু একটা এরকম ঘটনা ঘটে। প্রকাশ পাক বা না পাক।
৩| ১১ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৫
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: ঘটনা বাস্তব! ভাবীকে ধুন ফুন বুঝানোর জন্য গল্প বলে চালিয়ে দিয়েছেন
১১ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ২:১২
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
না ভাই এটা গল্পই। ধন্যবাদ।
৪| ১১ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১:১১
রাজীব নুর বলেছেন: মেয়েদের সম্পর্কে আপনার ধারনা সঠিক নয়।
১১ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ২:১৩
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
এটা একটা জীবনঘেষা গল্প। এখানে তো কারো সম্পর্কে কোন ধারনা দেওয়া হয়নি।
৫| ১২ ই জুন, ২০২৩ রাত ৯:১১
জটিল ভাই বলেছেন:
একদমই সাধারণ হলোনা প্রিয় ভাই
১৩ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ২:০৭
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ধন্যবাদ।
৬| ১২ ই জুন, ২০২৩ রাত ৯:৪৪
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: এই গল্পটা দারুণ কিন্তু একটা কথা বলি বড় ভাই । বর্ণনার ভঙ্গিটা সুন্দর না অথচ আপনি কিন্তু দারুণ লিখতে পারেন । যদি সম্ভব হয় এই গল্পটাকে একটা প্রাণ দিন । এই গল্প ছটফট করছে পূর্ণ যৌবনা হবার জন্য !!
কিছু মনে করবেন না । আমি নিজেও ভালো লিখতে পারি না তবে এইভাবে একটা গল্পকে আর একজন লেখকের সৃজনশীলতার মৃত্যু দেখতে আমি রাজি নই !!!
১৩ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ২:০৯
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ঠিক বলেছেন। আসলে প্রতিযোগিতার জন্য হুট করেই গল্পটা লেখা এবং সময় না থাকায় গল্পনার আকার বড় করতে পারিনি বিধায় কিছুটা অপূর্ণ রয়েছে, অনুগল্প হিসেবে ঠিকাছে। ধন্যবাদ।
৭| ১৩ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৩:১৯
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: কিসের প্রতিযোগীতা ??
২০ শে জুন, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৬
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
গল্প লেখার প্রতিযোগিতা।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই জুন, ২০২৩ সকাল ১১:৩১
গেঁয়ো ভূত বলেছেন: মাইদুল ভাই, অসাধারন গল্প! আপনার গল্প লেখার হাত অনেক বলিষ্ঠ, কিন্তু এর আগে সম্ভবত আপনার কোন গল্প আমার পড়া হয়নি, কারন আমি সাধারণত গল্প কম পড়ি, আপনি গল্প লিখুন এখন থেকে মিস করব না কথা দিলাম।
উচ্চবিত্ত বানান তা ঠিক করে দিন প্লিজ।