![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুবই সাধারন একটা মানুষ।জ্ঞানের দিক থেকেও অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য।তবে স্বপ্ন দেখি অনেক বিশাল।কারন স্বপ্ন দেখতে কোন খরচাপাতি লাগে না।আমি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।তবে ধর্মান্ধ নই।
লাশ টি কার
-------------------------------
মাঠের ঠিক দক্ষিণে ঘন ভেট গাছের জঙ্গল।তার পাশেই শতবছরের একটা পাকুড় গাছ তার ডালপালা ছড়িয়ে দিয়েছে তিন চার শতক জায়গা জুড়ে।এ দিকে গায়ের লোকজনের খুব একটা যাতায়াত নেই বললেই চলে।থাকবেই বা কেমন করে, গায়ের লোকের মগজে ঘাপটি মেরে বসে আছে জহির আলী পরামানিকের ভূতের ভয়।গতবছর আশ্বিণের শেষে এক অজানা কারনে পাকুড় গাছের উত্তরের লম্বা ডালের সাথে নিজের গামছা দিয়ে ফাস লাগিয়েছিলো জহির আলী।মরার পর প্রায় একহাত জিব বেরিয়েছিলো তার।তা দেখে ভয়ে গনি মন্ডলের ১০ বছরের ছেলেটার জ্বর প্রায় মাস খানিক পরে কবিরাজের অনেক ঝাড়ফুক, হুজুরের পানি পড়ার দৌলতে সেরেছিলো।জহিরের মরার কারন এতোদিন কেউই ঠাওর করতে পারেনি। দারগা-থানা-পুলিশ-মামলা-মকদ্দমাও কম হয় নি।গত বছরে থানা পুলিশের ভয়ে গায়ের বেটা ছেলে কেউই ঘরে থাকতে পারেনি।
মসজিদের ঈমাম মোসলেম উদ্দিনের ফতোয়া মোতাবেক জহির আলী পরামানিকের জানাজাও হয়নি।ঈমাম সাহেবের কড়া ফতোয়া ছিলো যে, ফাস লাগানো মরা মানষের জানাজা, মাটি দেওয়া যাবে না। যদি কোন মুসলমান তার জানাজা পড়ে তাইলে সেও জাহান্নামের আগুনে পুড়বে।গায়ের লোকজন ঈমাম সাহেবের কথায় খুব মান্যি গন্যি করে।তাই তো ডোমের ঘর থেকে লাশ গায়ে ফেরার পর জহিরের বাড়ির পুবের ভিটায় জানাজা ছাড়াই কাছের দুই একজন আত্নীয় মিলে কোনমতে মাটি চাপা দিয়েছে।সেই থেকে গায়ে সব ঘটনার পেছনে এই জহির আলী পরামানিকের ভূতের হাত আছে বলেই সবাই মনে করে।সবার ধারনা যেহেতু গায়ের লোক জানাজা ছাড়াই জহির কে মাটি চাপা দিয়েছে সেহেতু এই জহিরের ভূত গায়ের সকলের উপর ভীষন নারাজ।আর তাই সে গায়ে নানা অনাচার অনিষ্ট করে চলেছে সবার।
এই জহিরের ভূতের ভয়ে গায়ের লোকজন পাকুড় গাছের এদিকে যাওয়া আসা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে।জমির বিশেষ কাজ না থাকলে কেউই ওদিকে ভূলেও যায় না।যদিও কারো যাওয়ার দরকার পড়ে তাহলে সাথে দু একজন কে নিয়ে যায় কিন্তু একা একা যাওয়ার সাহস কেউ করে না কখনো।
গনি মোল্লা আজ সকাল সকাল বেরিয়েছে পাকুড় গাছের দক্ষিণে তার আড়াই বিঘা ফসলের জমির ধান দেখতে। সকাল দেখে সে অন্য কাউকে সাথে নেয়নি আজ।ভেট গাছের জঙ্গলের কাছে আসতেই হঠাৎ গনি মোল্লার নজর পড়ে জঙ্গলের ভিতরে একটা ছিট কাপড়ের দিকে। সে মনে মনে চিন্তা করে এখানে মেয়ে মানুষের কাপড় আসলো কই থেকে? এদিকে তো ভয়ে লোকজন কেউ আসে না।আস্তে আস্তে সে জঙ্গলের ভিতরে যায়।
ইয়া রাসুল্লাহ ইডা কি?--
বলেই এক লাফে সে চার পাচ হাত সরে আসে।আবার উকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে।একটা মেয়ে মানুষের উলঙ্গ দেহ জঙ্গলের মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। পড়নে পায়জামা ছাড় আর কিছুই নাই।তাও সে পায়জামার পাম পাশের অংশ ছেড়া।আর গায়ের ওড়না পাশে পড়ে আছে মানে যেটা দেখে গনি মোল্লা জঙ্গলের মধ্যে যায়।
এবার গনি মোল্লার ভয়ে হাত পা হীম হয়ে আসে। সে বার বার আল্লাহ রসুলের নাম যেমন জপতে থাকে তেমনি একনাগাড়ে চলে দোয়া ইউনুস পড়া। এরি ফাকে সে নিজের পাঞ্জাবির গলা খানিক উচু করে কয়েক বোতলা থুতু নিজের বুকে ছিটিয়ে দেয়।
আবার একটু উকি মেরে দেখার চেষ্টা করে পিছিয়ে যায়।উলঙ্গ দেহ খানের উপর নিজের গায়ের চাদরখান বা হাতে বিছিয়ে দেয়।
সারা গায়ে দাগ আর ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে। লাশ উপুড় হয়ে থাকায় খালি পিঠ দেখা যাচ্ছে ভালোভাবে।মাথার চুল গুলান মনে হচ্ছে কেউ হাত দিয়ে উপড়ে উপড়ে দরি বানিয়েছে কাজের জন্য।বাম গালের দুই দিকে আচড়ের দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।মনে হচ্ছে কোন মানব পশু তার দেহ ভোগ করে এই জঙ্গলে ফেলে গেছে। সেটা একজন ও হতে পারে আবার কয়েকজন মিলেও হতে পারে। গনি মোল্লার ওতো ভাববার সময় এখন নেই। সে যতো দ্রুত সম্ভব এখান থেকে পালাতে পারলেই বাচে।শেষমেশ যদি জহির আলীর ভূতে তার উপর হামলা করে!
সে চাদরখান বিছিয়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে রাস্তা ধরেছে বাড়ির।
অল্প সময়ের পরেই গায়ের ঘন সবুজ দেওয়াল ভেদ করে মানুষের পাল ছুটেছে।কেউ দৌড়াচ্ছে তো কেউ আরেক জনকে ডাকতে ডাকতে হয়রান।ছেলে বুড়ো জোয়ান, মেয়ে ছেলে মানুষ, ছোট ছোট নেংটা উদোম শরিরের বাচ্চা গুলান কেউই বাদ নেই, সবার যাত্রাপথ পাকুড় গাছের পাশে ভেট গাছের জঙ্গলের দিকে।এই অল্প সময়ের মধ্যেই যে গনি মোল্লা পুরো গাও এই খবর রাষ্ট্র করতে পেরেছে সে জন্য তাকে ধন্যবাদ দিতেই হয়।
সবার মুখে এক কথা আহ আহ আল্লাহ মাবুদ একি সর্বনাশ, একি সর্বনাশ। এমন কাম কেডায় করলো, আহ তার উপর আল্লার গজব পড়ুক।
ভেট গাছের ঝোপের চারিদিকে মানুষের গোল চত্বর তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যেই।গনি মোল্লাও এসেছে, সাথে ডেকে এনেছে ইউনিয়ন পরিষদের মাজু মেম্বার কে।
ইতিমধ্যে মাজু মেম্বার আবার তার ছোট ছেলেকে দিয়ে পরিষদে খবর পাঠিয়েছে চেয়ারম্যানের কাছে, আর বলে দিয়েছে দফাদার কে বলিস দুটো চৌকিদার কে যেন এখনি পাঠিয়ে দেয় এখানে।
খালেক মুন্সির বউ আবার তার কোলের তিন বছরের ছেলেটাকে সাথে নিয়ে এসেছে।বাচ্চা ছেলে মানুষ তাই বাড়িতে একা একা রেখে আসতে ভরসা পায় নি, যদি জহিরের ভুতে কিছু করে বসে।কোলে নেওয়া ছেলেটার ছোট চ্যাট খান আচলের নিচ দিয়ে বেড়িয়ে আছে। সেদিকে মা ছেলে কারোই হুস নেই।
দুজনেই ব্যাস্ত লাশটা কার সেটা দেখতে।ছোট ছোট নেংটা উদোম বাচ্চা ছেলে মেয়ে গুলান হুড়োহুড়ি শুরু করে দিয়েছে ভীড় ঠেলে লাশের কাছে যাবে বলে।কিন্তু ভীর এতোই বড় যে এরা কোন কূল কিনারাই করতে পারছে না, বরং দু একজনের ধমক খেয়ে সরে আরেক খানে গিয়ে আবার চেষ্টা করছে।
মাজু মেম্বার উচু গলায় খেকিয়ে:
ঐ মিয়ারা এতো কি দেহ এ্যা, মেয়ে ছেলের লাশ এতো কি দেখনের আছে। যাও যাও দূরে যাও, আর তোমরাও যে হইছো বাপু খালি কুনো কিছুর খবর পাইলে হয়।
ঐ আমরুল্লা লাশখান সিদা কর দেখি।কার লাশ এইডা।
আমি কেন মেম্বার চাচা।এইডা মেয়ে ছেলের লাশ, বেটা ছেলেপেলে হাত লাগানোডা কি ঠিক হবিনে।
তাও ঠিক কতাই তো কচু রে আমরুইল্লা।ঐ জমিতনের মাও তুমি উল্টাও তো দেখি।তুমি তো শক্তি সামর্থবান মানুষ নামাজ কালাম জানো। তুমিই উল্টাও তো দেহি এইডা কার লাশ।
প্রথমে জমিতনের মা আপত্তি জানালেও শেষমেশ মেম্বারের ধমকে লাশের ডান দিকে হাত দিয়ে লাশখানা উল্টিয়ে দিয়ে চাদর খানা ভালো করে লাশের গায়ে ঢেকে দিলো।
লাশের মুখ এদিক করতেই ভীরের মধ্যে হইচই এইডা কার লাশ।
এই মাইয়া তো এই তল্লাটের কেউ না।
কিগো মিয়ারা এই মাইয়ারে কি তোমরা কেউ চেন?
কি মিয়ারা কথা কও না ক্যা।ধমক দেয় মাজু মেম্বার।
উপস্থিত সকলেই একবাক্য জানান দেয় এই লাশ তারা চেনে না আর কোনদিন এই মেয়েকে তারা দেখেও নি এই তল্লাটে।
ইতিমধ্যে মেম্বারের ছেলের খবরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দুজন চৌকিদার এসেছে।মেম্বার কে সালাম দিয়ে :-
যে মেম্বার সাব আমরা আইছি।
চেয়ারম্যান সাব আইতাছে।কি করতে হইবো কন।
আগে লাশের কাছ থেইকা এই মানুষ গুলান রে সরা।ঐ আমরুল্লাহ চেয়ারম্যান সাব আসপো জলদি কয়খান ব্রেঞ্চ নিয়া আয় তো।যা তারাতারি আনিস নির্দেশ দিয়ে মাজু মেম্বার গনি মোল্লারে একটু সাইটে ডেকে নিয়ে পুনরায় ঘটনার বিস্তারিত শুনতে চাচ্ছে। কেননা চেয়ারম্যান আসবে তাকে তো পুরো ঘটনার বর্ননা দিতে হবে ।
যাই কন মেম্বার সাব আমার মুনে হয় কুনো বজ্জাত মাইয়াডার সাথে আকাম কুকাম কইরা মাইরা লাশখান এইহানে ফালাই গেছে।
তা হইবার পারে। লাশ দেইখা তো তাই মনে হয়।মেম্বারের একটু চিন্তা।
খানিক চিন্তা শেষে হকচকিয়ে মেম্বাবারের প্রশ্ন?
ঐ মিয়া লাশডা তো একখান মাইয়া মানসের, এই মাইয়া হিন্দু না মুসলমান না জাইনা আমরা যে এতো কাউলা কাউলি করতাছি এইডা কেমুন কতা কও দেহি।যদি হিন্দু হয় তাইলে তো মুসলমানের নাড়াচাড়া করা যাবো না। পাপ হবো মিয়া।
হুম হুম ঠিকই তো কইছেন মেম্বার সাব। আমি তো এইডা ভাইবা দেখি নাই।যদি হিন্দু হয় তাইলে কি হইবো?। আর আমি কিনা না জাইনা আমার গায়ের চাদর খান গায়ে দিলেম।যদি সত্যে সত্যে মাইয়াডা হিন্দু হয়?
----
(চলবে)
২| ২৮ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:২৮
হাফিজ মাহমুদ বলেছেন: সুন্দর
৩| ২৮ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৪৯
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: শেষ পর্যন্ত বিতর্কই জয়ী!!
৪| ২৮ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:২৪
ধ্রুবক আলো বলেছেন: ভালো লিখেছেন
৫| ২৮ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:০৯
মো: মেহেরুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ সবাই কে
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:০৩
নিশির আলো বলেছেন: গল্পটা ভালোই হচ্ছে। চলুক..