নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যেই সুন্দর সুন্দরই আমার সৌন্দর্য

মো: মেহেরুল ইসলাম

আমি খুবই সাধারন একটা মানুষ।জ্ঞানের দিক থেকেও অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য।তবে স্বপ্ন দেখি অনেক বিশাল।কারন স্বপ্ন দেখতে কোন খরচাপাতি লাগে না।আমি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।তবে ধর্মান্ধ নই।

মো: মেহেরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাশ টি কার

০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:০৬

লাশ টি কার
---------------------------------

পর্ব-০২

গভীর চিন্তার বিষয় মিয়া গভীর চিন্তার বিষয়।মাইয়াডা হিন্দু না মুসলমান না যাইনা তো আর কিছু করন যাবো না বুঝলা গনি মিয়া?

হুম বুঝছি মেম্বার সাব।
তয় দেহি চেয়ারম্যান সাব আসুক, কি কয় আগে শুনি, উনার ও তো একখান মতামত আছে কি কও মিয়া।
হুম তাও কতা ঠিক।

ঐ মিয়ারা সরো না কে এ্যা, দূরে গিয়া দারাও তো দেহি। সরো সরো মিয়ারা।বলে চৌকিদার দুজন লাশের কাছ থেকে গায়ের মানুষ গুলাক হাত তিনেক সরিয়ে দিলো।
এরি মধ্যে আমরুল আর তার সাথে এ গায়ের দুজন তাগড়া জুনান ছেলে মিলে দু খান ব্রেঞ্চ নিয়ে লাশের কাছে হাজির।
মেম্বার সাব ব্রেঞ্চ আনিছি এহন কি করুম।
যা ঐ গাছের নিচে একখান ভালো জায়গা দেইখা বসার ব্যাবস্থা করেক গিয়া, চেয়ারম্যান সাব আসলো বইলা।
চলো মিয়া ঐহানে যাই দেহি চেয়ারম্যান সাব আইসা কি করে।
উপস্থিত সকলেই লাশ কার সেই নিয়ে কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছে।কেউ বলছে এই মাইয়া পাশের গায়ের কেউ হইবার পারে।সাববিলে একখান খবর দেও গো মিয়ারা ওরা আইসা দেহুক চিনবার পারে কিনা।জমিতনের মায়ের সোজা উত্তর না না মিয়ারা এই মাইয়া সাববিলের কেউ হইবার পারে না। ঐ গায়ের বেবাক মানুষরে আমি চিনি, হাজারো হোক ঐডা তো বাপদাদার গাও।এই মাইয়া ঐ গায়ের হইবার ই পারে না। তয় মধ্যে গায়ে কেউ হইবার পারে মনে হয়।
কথাগুলো মাজু মেম্বার এতোক্ষন চুপচাপ শুনছিলো। এবার সে ধমক দিয়ে ঐ মিয়ারা কি শুরু করলা এ্যা কি শুরু করলা। এক কাম করো আশপাশ যতো গাও আছে সবহানে খবর বিলাও বেবাক আইসা দেইহা যাক। তারা চিনবার পারে কিনা তুমরা হুদাই কাউলা কাউলি কইরো না তো।
এমনিতেই একখান চিন্তার মধ্যি আছি।যাও যাও পারলি যেরাম কইলাম সেরাম খবর বিলাও।
ইতিমধ্যে ইউনিয়নের ছামেদ আলী চেয়ারম্যান এসে হাজির। সবাই একসাথে সালাম
আসসালেমালাই কুম চেয়ারম্যান সাব।
চেয়ারম্যান মুখে কোন উত্তর না দিয়ে শুধু সালাম নেওয়ার ভঙ্গিতে মাথাটা একটু নাড়লো।তারপর লাশের কাছে এগিয়ে গিয়ে লাশটা ভালোভাবে দেখে নিলো।তারপর মাজু মেম্বার চেয়ারম্যান কে ডেকে নিয়ে পাকুড় গাছতলায় যেখানে আমরুল বসার জন্য ব্রেঞ্চ পেড়েছে সেখানে বসালো।সাথে সাথে লাশের কাছে মানুষের সব জটলা পাকুড় গাছের নিচে চলে গেলো।লাশ পাহাড়ায় তখন শুধু পরিষদের চৌকিদার দুজন। মানুষের জটলার ঠিক মাঝখানে ব্রেঞ্চের উপর চেয়ারম্যান,মাজু মেম্বার,গনি মোল্লা,আসগর আর করিম উল্লাহ বসা।

মাজু মেম্বার সবাই কে থামিয়ে দিয়ে ঐ মিয়ারা তোমগো মুকখান কি বন্ধ থাহে না,হারাদিন প্যাচ প্যাচ করা লাগে কে? দেখতাছো না চেয়ারম্যান সাব আইছে হেই ঠিক করবো কি করন লাগবো।চুপ করো তো মিয়ারা।
সবাই মাজু মেম্বারের ধমকে চুপ হয়ে গেলো।
এবার ছামেদ আলী চেয়ারম্যান জেরা শুর করলো ঘটনার আদ্যাপান্ত জানতে।

তা এই লাশখান প্রথম দেখলো কেডা?
যে চেয়ারম্যান সাব গনি নাকি দেখছে।
তুমি থামো তো মেম্বার বেশি কতা কও ক্যা।যে দেখছে আমি তারে জিগাইছি তারেই কইতে দেও।
তা গনি তুমি কি দেখিছো কও তো একটু শুনি, আর এই সকাল সকাল তুমি এইহানে কেন আইছিলা, এদিকে তো ভয়ে কেউ আহে না বাবা।

না চেয়ারম্যান সাব তা না। ঘটনা হইলো ঐ যে জমিডা দেখতাছেন না ঐডাতে পানি দেওন লাগবো কিনা হেইডা দেখতে আইছিলাম।তয় একা একা আমার ঐ সব ভুতে একটু ভয় ডর কম, তাছাড়া সকাল সকাল ভুত পেত আইবো কোত্থেইকা।তো আইসা দেহি ভেট গাছের চিপা দিয়া একখান ছিট কাপড়ের লাহান দেহা যায়। মনে মনে ভাবলেম এইহানে কাপড় কিসের।এই দিহে তো কেউ তেমন আহে না।যেই ভেট গাছের মিধ্যি গেছি চেয়ারম্যান সাব দেহি এই লাশখান উপুড় হয়া পইড়া আছে।হারা গায়ে কুনো কাপড় নাই।প্ররথমে ভয় পাইছিলাম, মনে করছিলাম ভূত পেত কিছু।তয় পরে সাহস কইরা কাছে যাইতেই দেহি না এইডা তো একখান মাইয়া মানুষের লাশ।মনে হয় কুন বজ্জাত আকাম কুকাম কইরা লাশহান এই হানে ফালাই গেছে। উদোম শরির দেইখা আমার গায়ের চাদরখান লাশের গায়ে ঢাইকা দিয়া একনাগারে দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে বাড়িত যাইয়া খবর দেই। মেম্বার সাবরেও আমিই খবর খান পৌছাইছি।
তাই না মেম্বার চাচা।
হুম --
বলে মাজু মেম্বার একটু মাথা নাড়লো।
ও বুঝছি।তা মিয়ারা তোমরা লাশের গায়ে হাত দিছো কে।এহন পুলিশ আইসা তো ভেজাল করবো।
পাশ থেকে আমরুল-
মেম্বার চাচাই তো উল্টাইতে কইছে।
ঐ আমরুইল্লা কি কইতাছোস, চাপা সামাল দে।তোর থেইকা বুদ্ধি নিমু নাকি?
ধমক দেয় মাজু মেম্বার।
থামো তো মেম্বার। যা হবার হইছে। এখন কি করা যায় সেইডা চিন্তা করো।এই মাইয়ারে তো দেহি কেউ চেনে না এহন থানা পুলিশে খবর দেওয়া ছাড়া তো কুনো উপায় দেখি না।

চেয়ারম্যান সাব আশপাশ দুই চার গায়ে খবর দিয়া দেহি। কোন গায়ের মেয়েছেলে? তারপর না হয় থানা পুলিশ করা যাবো।
মাজু মেম্বার কে উদ্দেশ্য করে- তা দাও মেম্বার কিন্তু এই লাশ তো ভালো মরা না থানা পুলিশে খবর না দিলি শেষমেশ আমরা বিপদে পড়মু।
তুমি এক কাজ করো মেম্বার চৌকিদারে দিয়া থানায় একখান খবর দেও।দেশে আইন বলে তো একখান কতা আছে নাকি?
আচ্ছা চেয়ারম্যান সাব খবর দিতাছি বলে একজন চৌকিদার কে ডেকে থানাতে খবর পাঠালো মাজু মেম্বার।
এবার গনি মোল্লা চেয়ারম্যান ছামেদ আলীকে উদ্দেশ্য করে -
চেয়ারম্যান সাব একখান কতা।

এই মাইয়া হিন্দু না মুসলমান হেইডা কিন্তু কওন যাইতাছে না যদি মাইয়াডা হিন্দু হয় তাইলে কি হইবো চেয়ারম্যান সাব।
মাজু মেম্বার ও গনির কথার সাথে সায় দেয়।এতোক্ষন এই ব্যাপারে চিন্তা কারো মাথায় আসে নি।সবাই লাশের বিকৃত বিষয় আর লাশের পরিচয় নিয়েই আলোচনা করছিলো।কিন্তু গনি মোল্লার কথায় এবার তাদের নতুন ভাবনা যুক্ত করে।তাদের মধ্যে এখন মেয়েটার পরিচয়ের চাইতে লাশটি হিন্দুর নাকি মুসলমানের সেই চিন্তার ঢেউ খেলে যাচ্ছে।
জটলাতে তখন একটাই আলোচনা -
হায় হায় এইডা কি কতা।তাই তো লাশ ডা যদি হিন্দু কারো হয় তাইলে কি হবো।জমিতনের মাও এই কথায় একটু নড়েচড়ে বসে। কারন হিন্দু না মুসলমান সেটা না জেনে সেই তো মাজু মেম্বারের কথায় লাশটা নিজের হাতে উল্টিয়েছিলো।
আ্যা কতা তো ঠিকই কইছে গনি।তাইতো মাইয়া ডা হিন্দু না মুসলমান না জাইনা আমরা কেন এতো কাউলাইতাছি প্রশ্ন করে জমিতনের মা।

আরে থামো তো মিয়ারা থামো আগে কথা কইবার দেও ধমক দিয়ে সবাইকে এবার থামিয়ে দেয় ছামেদ আলী চেয়ারম্যান।
বিষয়খান আগে আমারে বুঝতে দেও দেখি।কি কইলা গনি মিয়া আবার কও তো?
না মানে মাইয়াডা যদি হিন্দু হয়?
তাও তো ঠিক মিয়া। তয় আশপাশ গায়ের মানুষ আসুক দেকুক। দেখি কেউ চিনবার পারে কিনা। তারপর দেখা যাইবো।যদি কেউ চিনবার পারে তাইলে তো মিটাই গেলো।মাইয়া ডা হিন্দু না মুসলমান তখন জানাই যাবো। আর এক কাম কর তো আমরুল যা ঈমাম সাহেব মোসলেম উদ্দিন রে একটু খবর দে, যা কবি আমি সালাম দিছি জলদি যেন এইখানে আসে।
পাকুড় গাছের নিচে হিন্দু না মুসলমান এই প্রশ্নের আলোচনা চলতেই থাকে।একেক জনের অভিমত একেক রকম।এরি মধ্যে আমরুল ঈমাম সাহেবের সাথে দেখা করে ফিরতি খিবর নিয়ে এসেছে।

ঈমাম সাহেব কি কইলো রে আমরুল?
ঈমাম সাহেব কইলো আর একটু পরে জোহরের আযান হবে। তিনি যোহরের নামাজ পইড়া আসবেন কইছে।

দেখতে দেখতে সকাল থেকে বেলা যে কখন যোহরের ওয়াক্তে পৌছাইছে সে দিকে কারোই কোন খেয়াল ছিলো না।আমরুলের ফিরতি খবরে সবার হুস ফিরে আসে।

জমিতনের মা তো বলেই বসে -
হায় হায় কি কস আমরুল্লা।যোহরের ওয়াক্ত হয়া গেছে?হিন্দু না মুসলমান তার কোন খবর নাই নামাজ কালাম বাদ দিয়া হুদায় বইসা আছি, যাই গাও গোছল কইরা আবার নামায পড়তে হবো।তার মধ্যি আবার মরা খান ধরছি।বলে সে বাড়ির পথে পা বাড়ালো।
নামাযের ওয়াক্তের কথা শুনে এবার একে একে ছামেদ আলী চেয়ারম্যান,মাজু মেম্বার,গনি মোল্লা, সহ মুরুব্বিরা সবাই নিজ নিজ বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছে।
বাড়ি যাওয়ার পথে মাজু মেম্বার চৌকিদার কে কড়া নির্দেশ দিয়ে গেলো কোন মতেই যেন কেউ লাশের কাছে ঘেষতে না পারে।সে যেন চেয়ারম্যান ফিরে না আসা পর্যন্ত কড়াভাবে লাশ পাহাড়া দেয়।

(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.