নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের কথা বলতে চাই

পাখির চোখে বিশ্ব দেখি

পাখির চোখে বিশ্ব দেখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা নববর্ষের ইতিহাসঃ বর্তমান চিত্র, আমাদের বর্জনীয় এবং করণীয় কাজ।

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৩৫


ইতিহাসঃ
আমাদের দেশে প্রচলিত বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন মূলত ইসলামী হিজরী সনেরই একটি রূপ। ভারতে ইসলামী শাসনামলে হিজরী পঞ্জিকা চন্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চন্দ্র বৎসরের চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বৎসর ৩৬৫ দিন, আর চন্দ্র বৎসর ৩৫৪ দিন। এ করণে চন্দ্র বৎসরে ঋতু গুলি ঠিক থাকে না। আর চাষবাদ ও এজাতীয় অনেক কাজ ঋতু নির্ভর। এজন্য ভারতের মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে প্রচলিত হিজরী চন্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সম্রাট আকবর তার দরবারের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোর্তিবিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরী চন্দ্র বর্ষপঞ্জিকে সৌর বর্ষ পঞ্জিতে রুপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে সম্রাট আকবর এ হিজরী সৌর বর্ষপঞ্জির প্রচলন করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহনের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ইতোপূর্বে বঙ্গে প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ইতোপূর্বে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস ছিল চৈত্র। কিন্তু ৯৬৩ হিজরী সালের মুহাররাম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দে বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১ বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়।
তাহলে বাংলা সন মূলত হিজরী সন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হিজরত থেকেই এ পঞ্জিকার শুরু। ১৪১৫ বঙ্গাব্দ অর্থ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হিজরতের পর ১৪১৫ বৎসর।৯৬২ চন্দ্র বৎসর ও পরবর্তী ৪৫৩ বৎসর সৌরবৎসর । সৌর বৎসর চন্দ্র বৎসরের চেয়ে ১১/১২ দিন বেশি এবং প্রতি ৩০ বৎসরে চন্দ্র বৎসর বেড়ে যায়। এজন্য ১৪৩৩ হিজরী সাল মোতাবেক বাংলা ১৩১৮-১৯ সাল হয়।
মোগল সময় থেকেই পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান করা হতো। প্রজারা চৈত্রমাসের শেষ পযর্ন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখে জমিদারগণ প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন এবং কিছু আনন্দ উৎসব করা হতো। এছাড়া বাংলার সকল ব্যবসায়ী এ দোকানদার পহেলা বৈশাখে ‘হালখাতা’ করতেন। পহেলা বৈশাখ এসব কর্মকান্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এটি মূলত: রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন নিয়ম-কানুনকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে কাজ-কর্ম পরিচালনার জন্য নির্ধারিত ছিল। এ ধরনের কিছু সংঘটিত হওয়া মূলত ইসলামে নিষিদ্ধ বলার কোন যৌক্তিক কারণ নেই।

বর্তমান চিত্রঃ
নববর্ষ, বর্ষবরণ, পহেলা বৈশাখ— এ শব্দগুলো বাংলা নতুন বছরের আগমন এবং এ উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব-অনুষ্ঠানাদিকে ইঙ্গিত করে। এই উৎসবকে প্রচার মাধ্যমসমূহে বাঙালির ঐতিহ্য হিসেবে রঞ্জিত করা হয়ে থাকে। তাই জাতিগত একটি ঐতিহ্য হিসেবে এই উৎসবকে এবং এর সাথে সম্পৃক্ত কর্মকাণ্ডকে সমর্থন যোগানোর একটা বাধ্যবাধকতা অনুভূত হয় সবার মনেই - এ যে বাঙালি জাতির উৎসব! তবে বাংলাদেশে বসবাসরত বাঙালি জাতির শতকরা ৯০ ভাগ লোক আবার মুসলিমও বটে, তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে: নববর্ষ উদযাপন এবং সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানাদি যেমন: রবীন্দ্রসংগীতের মাধ্যমে বর্ষবরণ, বৈশাখী মেলা, রমনার বটমূলে পান্তা-ইলিশের ভোজ, জীবজন্তু ও রাক্ষস-খোক্কসের প্রতিকৃতি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা - এবং এতদুপলক্ষে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, হাসি-ঠাট্টা ও আনন্দ উপভোগ, সাজগোজ করে নারীদের অবাধ বিচরণ ও সৌন্দর্যের প্রদর্শনী, সহপাঠী সহপাঠিনীদের একে অপরের দেহে চিত্রাংকন - এসবকিছু কতটা ইসলাম সম্মত অথবা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ? ৯০ ভাগ মুসলিম যে আল্লাহতে বিশ্বাসী, সেই আল্লাহ কি মুসলিমদের এই সকল আচরণে আনন্দ-আপ্লুত হন, না ক্রোধান্বিত হন? নববর্ষকে সামনে রেখে এই নিবন্ধে এই বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।

নতুন বছরের সাথে মানুষের কল্যাণের সম্পর্ক
নতুন বছর নতুন কল্যাণ বয়ে আনে, দূরীভূত হয় পুরোনো কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানি - এধরনের কোন তত্ত্ব ইসলামে আদৌ সমর্থিত নয়, বরং নতুন বছরের সাথে কল্যাণের শুভাগমনের ধারণা আদিযুগের প্রকৃতি-পুজারী মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার অবশিষ্টাংশ। ইসলামে এ ধরনের কুসংস্কারের কোন স্থান নেই। বরং মুসলিমের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই পরম মূল্যবান, হয় সে এই মুহূর্তকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করবে, নতুবা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে উঠবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বছরের প্রথম দিনের কোন বিশেষ তাৎপর্য নেই।
কেউ যদি এই ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোন সম্পর্ক রয়েছে, তবে সে শিরকে লিপ্ত হল, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করল। যদি সে মনে করে যে, আল্লাহ এই উপলক্ষ দ্বারা মানবজীবনে কল্যাণ বর্ষণ করেন, তবে সে ছোট শিরকে লিপ্ত হল। আর কেউ যদি মনে করে যে নববর্ষের আগমনের এই ক্ষণটি নিজে থেকেই কোন কল্যাণের অধিকারী, তবে সে বড় শিরকে লিপ্ত হল, যা তাকে ইসলামের গন্ডীর বাইরে নিয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সাথে মঙ্গলময়তার এই ধারণার সম্পর্ক রয়েছে বলে কোন কোন সূত্রে দাবী করা হয়, যা কিনা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। মুসলিমদেরকে এ ধরনের কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে ইসলামের যে মূলতত্ত্ব সেই তাওহীদ বা একত্ববাদের ওপর পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

নববর্ষের অনুষ্ঠানাদি: শয়তানের পুরোনো কূটচালের নবায়ন
আমাদের সমাজে নববর্ষ যারা পালন করে, তারা কি ধরনের অনুষ্ঠান সেখানে পালন করে, আর সেগুলো সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য কি? নববর্ষের অনুষ্ঠানাদির মধ্যে রয়েছে: বৈশাখী মেলা, যাত্রা, পালাগান, কবিগান, জারিগান, গম্ভীরা গান প্রভৃতি বিভিন্ন লোকসঙ্গীতের ব্যবস্থা, প্রভাতে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানান, নতুন সূর্যকে প্রত্যক্ষকরণ, নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে শিল্পীদের সংগীত, পান্তা-ইলিশ ভোজ, চারুশিল্পীদের শোভাযাত্রা, রমনার বটমূলে ছায়ানটের উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথের আগমনী গান “এসো হে বৈশাখ...”, এছাড়া রেডিও টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান ও পত্রপত্রিকার বিশেষ ক্রোড়পত্র।

বাংলা নববর্ষ সংক্রান্ত যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এজন্য যে এতে নিম্নোলিখিত চারটি শ্রেণীর ইসলাম বিরোধী বিষয় রয়েছে:
১. শিরকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি, চিন্তাধারা ও সংগীত
২. নগ্নতা, অশ্লীলতা, ব্যভিচারপূর্ণ অনুষ্ঠান
৩. গান ও বাদ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান
৪. সময় ও অর্থ অপচয়কারী অনর্থক ও বাজে কথা এবং কাজ।

আমারা যা করতে পারিঃ
১. আল্লহর নিকট সারা বছরের কল্যাণ কামনা করে নামাজ পড়া ও দুয়া করা।
২. বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, অফিস পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা।
৩. পান্তা ইলিশ নয় বরং ভালো খাবারের আয়োজন করা।
৪. আত্মীয় স্বজনদের সাথে কুশল বিনিময় করা এবং দাওয়াত করে খাওয়ানো।
৫. ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে মিষ্টি বিতরন এবং হালখাতা করা।
৬. ইসলাম সমর্থিত বিনোদন মুলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
৭. আজে বাজে জিনিসের নয় বরং প্রয়োজনীয় জিনিসের মেলার আয়োজন করা।
৮. শালীনভাবে নুতন পোশাক পড়া।
৯. গরীবদের কাবার এবং পোশাক বিতরন।
১০. নুতন বছরে ভালো কোন কাজের সূচনা করা।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫১

প্রামানিক বলেছেন: মোগল সময় থেকেই পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান করা হতো। প্রজারা চৈত্রমাসের শেষ পযর্ন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখে জমিদারগণ প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন এবং কিছু আনন্দ উৎসব করা হতো। এছাড়া বাংলার সকল ব্যবসায়ী এ দোকানদার পহেলা বৈশাখে ‘হালখাতা’ করতেন।

ভাল লাগল। ধন্যবাদ

২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫৯

স্বপ্ন007 বলেছেন: ধর্মের জন্য নয়। কারন অনেকই তো ধর্ম কেয়ার কারে না। তবে মঙ্গল শোভাযাত্রা কে আমি স্রেপ কুসংস্কার মনে করি। কারন মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহন করে আগামী বছর ভাল কাটার জন্য। আরে ভাই বছর ভাল কাটবে না খারাপ কাটবে তা আমার কর্মের উপর ডিপেন্ড করবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা আমার ভাগ্য কিভাবে নির্ধরন করবে?
কোন শিক্ষিত মানুষ এটা করতে পারে না যদি সে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে থাকে।

৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:০৩

নতুন বলেছেন: প্রতিটা সমাজের কিছু উতসব থাকে যেটা ধম`দিয়ে বিচার করলে চলেনা।

৪| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৩৩

বিপরীত বাক বলেছেন: মানুুষ জন আনন্দের একটা উপলক্ষ্য পেয়েছে তা করুক না কিছুটা। এতে এতটা বিদ্বেষ পোষণ করার কি আছে?

৫| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:০৩

পরিবেশবাদী ঈগলপাখি বলেছেন: "বং এতদুপলক্ষে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, হাসি-ঠাট্টা ও আনন্দ উপভোগ, সাজগোজ করে নারীদের অবাধ বিচরণ ও সৌন্দর্যের প্রদর্শনী, সহপাঠী সহপাঠিনীদের একে অপরের দেহে চিত্রাংকন "


ল্যাঞ্জা ইজ ভেরি ডিফিকাল্ট টু হাইড

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.