নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনার ব্লগের একটি সুন্দর শিরোনাম এখানে লিখুন

মির্জা তানিয়া

শুধু লিখেই যাই।ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষন করবেন পাঠক

মির্জা তানিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঋণ পরিশোধ..

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১১

বাবা নেই মা নেই, বড় ভাই বিয়ে করে নিজের ভাগের সম্পত্তি বিক্রি করে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে।আর খোঁজ রাখেনি। বাবার রেখে যাওয়া ছোট্ট বাড়িখানায় কোনরকম থাকি।পুরোনো বাড়ি। ছিদ্র চালা দিয়ে ঝড় বন্যায় কত যায়গা থেকে যে পানি পড়ে গুনে বের করা মুশকিল।তবু কষ্ট করে দিন চলছিলো।বিভিন্ন যায়গায় টিউশনি করে কোন রকম ডাক্তারি পড়াশুনাটা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। খেয়ে না খেয়ে চলে গেছে বহুদিন। একটি আলু সিদ্ধ আর গরম ভাত।কখনও ডিম ডালও জোটে।অর্ধাহারে অনাহারে থেকে অনেকদিন চলে গেছে।কি অভাব সে যে কি জ্বালাময় অভাব! সে দুর্দিনের কথা ভাবলে আজও বুকের ভেতরটা ধুক করে ওঠে। চোখের জল গড়িয়ে পড়ে।
টিউশনিতে কখনও কখনও ভালো খেতে পেতাম।শরীর কাঁপুনী জ্বরেও টিউশনি ফাঁকি দিতাম না।ক্ষুধার ভয়ে ক্ষুধার জ্বালায় অধিকাংশ সময় পড়ায় ব্যস্ত থাকতাম আর সন্ধ্যায় কোনরকম খেয়ে ঘুমিয়ে যেতাম।কিন্তু ঘুম আসত না আসলেও ভেঙে যেত । তখন মাকে মনে করে কেঁদেছি....! আর বাবা মার রুমে পায়চারি করেছি।
একসময় কত আপনের যাতায়াত ছিলো কিন্তু আজ কোথাও কোন আপন নেই। কেউ খবর রাখেনা। সত্যি ! রাতের অন্ধকারে আপন খুঁজে পাওয়া যায় না !
কিন্তু থেমে থাকিনি।সহপাঠি ও শিক্ষকের সাহায্যে পড়াশুনা চালানো সম্ভব হয়েছে....।
মাস্টার চাচা ( বাবার বন্ধু ) মাঝেমাঝে খবর নিতেন।কখনও ভালো রান্না হলে ডেকে নিতেন। লজ্জায় যেতে গড়িমশি করলে রেগে ভয়ঙ্কর হুংকার ছাড়তেন ! কি আর করা ! নাছোড়বান্দা চাচার পিছু পিছু চলে যেতাম।
একদিন কি ভেবে, কোন ভরসায় যে হঠাৎ আমার হাতে চাচার একমাত্র মেয়েকে তুলে দিলেন আল্লাহ্ জানেন ! আমি হতবাক হয়ে চাচার মুখের দিকে তাঁকিয়ে ছিলাম।চাচার রাগী ডাগর চোখের দিকে তাঁকিয়ে আরো অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। তবু যেন খুশিও হচ্ছিলাম !
আর মাথা নীচু করে একমুহূর্ত ভাবছিলাম.... এমন কচি সুন্দর হাত ! হয়তো কোনদিন নিজের জন্য একগ্লাস পানিও ঢালেনি ! সেই হাত কিকরে অভাবের জ্বালাময় উননে শুধু ভাত আর আলু সিদ্ধ করবে...?
আবার একরকম সুখ ও ভয়মিশ্রিত আনন্দও লাগছিলো ...! কারণ সবসময়ই তারে মনে মনে চাইতাম, সে যখন স্নান সেরে বারান্দায় চুল ঝাড়তো বই আড়াল করে মুগ্ধ নয়নে দেখতাম আর মনে মনে স্বপ্ন বুনতাম.....!আজ সে ভাঙা ঘরে বৃষ্টির জল না গড়িয়ে চাঁদের আলো চুইয়ে পড়বে ভাবিনি কখনও....।
....................
তারপর অনেকগুলো বছর কেটে গেলো............
অনেক দুঃখ সুখ ভাগাভাগি করে পার করে দিলাম আমরা।আজ আমি ডাক্তার। তবে মাঝের বেশ কিছুদিন প্রচন্ড অভাব ছিলো। শীতের রাতে দুটি মোটা কাঁথা জড়িয়ে কাটাতাম দুজনে।পেট চালানোই মুশকিল ভালো খাবার কিকরে খাওয়াতাম তাঁকে...!
কিন্তু চাচা ঠিক মাঝেসাজে বাজার নিয়ে হাজির হতেন।জোর করে আলেয়ার হাতে সংসার খরচবাবদ কিছু টাকা পুরে দিতেন। ওহ্ বলতেই ভুলে গেছি! আমার ভাঙা ঘরের রানী হল আলেয়া।
মাস্টার চাচা আমার পড়ার খরচও অনেকটা বহন করেছেন বিয়ের পরে।মোট কথা , আমার প্রচন্ড বিপদের দিনগুলোতে পিতা হয়ে সবসময় যে মানুষটি ছায়া দিয়েছিলেন তিনি হলেন মাস্টার চাচা।কিন্তু তাঁকে গল্পের শেষটুকু বলার সুযোগ হয়নি।
রোজ তাহাজ্জুত নামাজ পড়তে উঠতেন মাঝরাতে।একরাতে ওজু করতে গিয়ে পাঁ পিছলে কলঘাটে পড়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায়।ভোর অবদি হৃদস্পন চলছিলো। তারপর খুব কাঁদিয়ে চলে গেলেন আর আমার কাঁধে ঋণের বোঝা রেখে গেলেন।
আমাদের সুখ আরামের জীবন স্বচক্ষে দেখে যেতে পারননি।আমার ডাক্তার হওয়াও দেখে যাননি....
মাস্টার চাচার বাড়িখানা তালাবদ্ধ।কেউ নেই ওখানে।চাচিও চাচার শোকে বেশিদিন বাঁচেননি। ভাবছি ওখানে একটি ছোট হাসপাতাল বানাবো।যেখানে গ্রামের বৃদ্ধ ,শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের বিনামূল্যে চিকিৎসা হবে।তাতে হয়তো চাচার ঋণ কিছুটা শোধ হবে !
নয়তো বাবার কাছে পৌঁছেই সেই নালিশ জুড়ে দেবেন....।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.