নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনার ব্লগের একটি সুন্দর শিরোনাম এখানে লিখুন

মির্জা তানিয়া

শুধু লিখেই যাই।ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষন করবেন পাঠক

মির্জা তানিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মত্যাগ...

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:০৯

জন্মের সাথে সাথেই মা মারা গেলেন।মায়ের আদর মায়ের গন্ধ কিছুই পাইনি।নানীর কাছেই শৈশবের কিছু অধ্যায় কেটেছে।বাবা রিকশা চালাতেন।মাঝেমাঝে এসে দেখে যেতেন।একটু একটু বড় হতে লাগলাম নানীর ছায়ায় কিন্তু হাঁটতে পারতাম না । নানী বহু কষ্ট করে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন বাবাও চেষ্টা করেছেন ভালো করতে কিন্তু তেমন কোন ফল হয়নি।ডান পাঁ সম্পূর্ণই অকেজো।একটা ভালো লাঠি কিনে দিয়েছিলেন বাবা।সেটা ভর করে হাঁটতাম তাও খুব কষ্ট হত।নানী গ্রামের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন।অনেক কষ্টে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছিলাম নানীর অক্লান্ত পরিশ্রমে।কিন্তুনানীও চলে গেলেন আমায় ফেলে।
বাবা নিয়ে আসলেন তার কাছে ওখানে আর কেউ রইলো না আমায় দেখার মত।তবে পড়াশুনা হলনা।বাবাই বা কি করতেন আমার পেছনে বসে থাকলে খাবে আর খাওয়াবে কি ! কোনরকম দুবেলা খেয়ে দিন কাটতো।আর সারাদিন সামনের খোলা মাঠের কোণে বসে ছেলেদের ফুটবল খেলা দেখতাম।চলতে থাকে কোনরকম।একসময় বাবা সন্ধারাতে নিজের রিকশায় করে এক সুন্দরী লাল শাড়ি পরিহিত মহিলাকে ঘরে নিয়ে ফিরলেন।বললেন এ তোর নতুন মা।তোকে অনেক আদর করবে তোকে কষ্ট করে চুলার পাশে বসে ভাত সিদ্ধ করতে হবে না আর।
প্রথম প্রথম ভালো দেখাশুনা করত।তবে সংসারে নতুন সন্তান আসার সাথে সাথেই রুপমতীর আসল রুপ বেরিয়ে পড়ল। খেতে দিত না।ঘরের সমস্ত বাসন ধুতে হত কাপড় কাঁচতে হত বসেবসে সব কাজ করাতো।যদি করতে না পারতাম আর কাজের ভুল হলেই জুতাপেটা করত চড় থাপ্পর আরও কত কি....!
শারীরিক অক্ষমতার কারণে অথবা অসুস্থ থাকলে সেদিন না খেয়ে থাকতাম।বাবা এলেই শুধু খেতে পেতাম।তবে বাবার ধারে কাছেও কখনও ভিড়তে দিত না।যদি সব বলে দেই !
বহু কষ্টে দিন কাটতো।মাঝে মাঝে খোলা আকাশের দিকে তাঁকিয়ে চিৎকার করে মাগো মাগো ডাকতাম ... হায় নসিব নানীও চলে গেলেন ! বাবাও বেশ উদাসীন আমার প্রতি।
একদিন সুযোগ পেয়ে বাবাকে বলেছিলাম সব। কিন্তু কোন কাজে আসেনি বাবাকে রুপমতী অনেক আগেই বস করেছে।বাবা বিশ্বাস করেনি উল্টো চড় মারল ! বাবা কাজে বেরিয়ে গেলে সৎ মা দরজা বন্ধ করে অনেক মেরেছিলো সেদিন...!
রাতে প্রচন্ড জ্বর ওঠে !
কত আর সহ্য হয় ! ঠিক করলাম হাঁটতে নাহয় খুব কষ্ট হয় কিন্তু এক পাঁ আর দুটি হাত তো আছে ! গতরে খেটে খাব ভিক্ষা বা দয়ায় কেন বাঁচব ! নানী আদর করে মাঝেমাঝে টাকা হাতে দিতেন লুকিয়ে জমিয়েছিলাম সেগুলো স্কুলের টিফিন না খেয়ে।বাবাও আগে মাঝেমধ্যে কিছু চকলেট আবার কখনও টাকা দিতেন জমাতে ! জমিয়েছিলামও গোপনে।সেগুলো নিয়েই পালাবো শহরে কত কাজ একটা কিছু ঠিকই খুঁজে নেব।
কাঁক ডাকা ভোরে অক্ষম পাঁ শরীরে জ্বর নিয়েই মনের জোরে পালিয়েছিলাম।শহরে এক রেলস্টেশনে পৌঁছলাম।আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি ক্ষুধা ও জ্বরের কষ্টে হাতের পোটলা বুকে চেঁপে নিস্তেজ ঘুমিয়ে পড়লাম।ওখানে এক কোণে ঠাই নিয়ে পড়ে থাকলাম ।আস্তে আস্তে একটু সুস্থ হলাম খেয়াল করলাম এক চাচা আমার থেকে একটু দূরে জুতা পলিশ সেলাই করে বেশ ভালোই কামাচ্ছেন !
এগিয়ে পাশে বসলাম কাজের কৌশল শিখতে। চাচাও আগ বাড়িয়ে অনেক প্রশ্ন করলেন তারপর সবকথা খুলে বললাম ! চাচা আমাকে রোজ তার পাশে বসিয়ে কাজ করতেন মাঝেমাঝে কিছু খেতে দিতেন ।ভালোই সম্পর্ক হল তারপর চাচার পাশে অল্প কিছু পুঁজি দিয়ে আমিও কাজে লেগে গেলাম।চাচা তার বাড়িতে নিতে চাইলেন কিন্তু যাইনি এই অক্ষম শরীরের বোঝা কাউকে আর দেব না ভেবেছিলাম।কোন রকম খেয়ে বাকী কিছু টাকা জমাতাম আর কিছু দিয়ে বই কিনে সুযোগ পেলে পড়তাম।চলে যেত কোনমতে দিন...
একদিন চাচা এলেননা ! এক মাস কেটে গেলো চাচা আজও এলেননা।ভাবলাম চাচার কোন বিপদ হল কিনা ! বাড়ির ঠিকানা জানতাম । কষ্ট করে চাচার খোঁজে গেলাম।শুনি চাচা হঠাৎ ক'দিনের তীব্র জ্বরে মারা গেছেন।তার একটা মেয়ে রেখে গেছেন।মেয়েটি
বাসাবাড়ির কাজ করে চলে কোনমতে।
কেমন একটা মায়ায় জড়িয়ে গেলাম মেয়েটির জন্য।মাঝেমাঝে কিছু টাকা জোর করে মেয়েটিকে দিয়ে আসতাম...!মেয়েটিও আর বাঁধা দিত না।একে অপরের মায়ায় জড়িয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলাম করেও ফেললাম বিয়ে...
সুখে দুঃখে আত্মত্যাগে দু যুগ পেরিয়ে গেছে দুজনের !
আমাদের একমাত্র মেয়ে আলেয়া আজ সম্পূর্ণ সরকারী খরচে ডাক্তারি পড়ছে।স্রষ্টার অপার মহিমা তিনি আমার সন্তানকে আমার মতন অক্ষমতা দান করেননি !
একটা সময় মরে যেতে ইচ্ছে হত! মায়ের কাছে নানীর কাছে চলে যেতে মন চাইতো কিন্তু এখন চাই আরো অনেকদিন বাঁচতে।একজন সৎ দয়ালু ডাক্তারের গর্বিত পিতা হয়ে বাঁচতে চাই ।।।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.