![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সৌদি আরবের এক বাসিন্দা স্বপ্নে দেখলো যে, এক ব্যক্তি তাকে বলছে: এই ফোন নম্বরের ব্যক্তিকে উমরা করাও। ফোন নম্বর একদম সহজই ছিলো। নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পরও স্বপ্নটি তার নিকট ভালভাবেই স্মরণে ছিলো। কিন্তু স্বপ্নটিকে সে তার কল্পনাপ্রসূত মনে করে সে উপেক্ষা করলো। পরের রাত্রিতে সেই একই স্বপ্ন সে দেখলো যে, কোনো ব্যক্তি তাকে বলছে, এই ফোন নম্বরে ফোন করো এবং তাকে উমরা করাও। দ্বিতীয় রাতে একই স্বপ্ন আবার দেখার পর লোকটি মহল্লার মসজিদের ইমামের নিকট গিয়ে তাকে বললো যে, আমি ধারাবাহিক দুদিন ধরে স্বপ্ন দেখছি যে, আমাকে নম্বর দিয়ে ফোন করতে বলছে আর সেই ফোন নম্বরধারী ব্যক্তিকে উমর করানোর জন্য বলছে। মসজিদের ইমাম সাহেব বললেন: যদি আবারো স্বপ্নে দেখেন তাহলে ফোন নম্বরটি ভালোভাবে মনে রাখবেন এবং সম্ভব হলে খাতায় লিখে রাখবেন তারপর ফোনের ব্যক্তিটিকে ফোন করে তাকে উমরা আদায় করার ব্যবস্থা করবেন। তৃতীয় রাত্রিতে সে স্বপ্নে দেখলো, এই ফোন নম্বরে অমুক নামের ব্যক্তিকে তুমি উমরা আদায় করাও।
পরের দিন স্বপ্নে বলে দেওয়া ফোন নম্বরে কল করলো। এবং যে ব্যক্তি ফোন ধরেছে তার সাথে প্রাথমিক পরিচিতির পর সে বললো: আমাকে স্বপ্নে বলা হয়েছে যে, আমি যেন তোমাকে উমরা করাই। তাই আমি এই নেক কাজ আঞ্জাম দিতে চাই। যাকে ফোন করা হলো সে জোরেজোরে হাঁসতে লাগলো। বলতে লাগলো: কীসের উমরার কথা তুমি বলছো? আমি দীর্ঘদিন যাবত কোনো ফরজ নামাজই আদায় করিনি অথচ তুমি আমাকে উমরা করাতে চাচ্ছো!!
যে ব্যক্তি স্বপ্নে দেখেছে সে তাকে পীড়াপীড়ি করতে লাগলো, সে এ কাজকে মান্নত ভেবে নিলো। আর বললো: দেখ ভাই! আমি তোমাকে উমরা করাতে চাই। এর সম্পূর্ণ খরচ আমার হবে। যথেষ্ট কথাবার্তা ও আলোচনার পর ব্যক্তিটি শর্তসাপেক্ষে রাজি হয়ে গেলো। শর্ত দিয়ে বললো: ঠিকাছে, তোমার সাথে উমরা করবো। আমাকে পুনরায় রিয়াদে নিয়ে আসবে এবং সম্পূর্ণ খরচ তোমার জিম্মাদারিতে থাকবে। সে সম্মতি জানালো।
নির্দিষ্ট সময়ে যখন একে অপরের সাথে সাক্ষাত হলো তখন স্বপ্ন দেখা ব্যক্তিটি দেখলো যে, তার অবস্থা ও সুরতের দিক থেকে আসলেই তাকে ভাল মানুষ মনে হচ্ছে না। তার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে, সে মারাত্মক পর্যায়ের মদ্যপ এবং নামাজও তেমন আদায় করে না। সে তাকে দেখে অত্যন্ত আশ্চর্য হলো এবং মনে মনে বললো এই কী সেই ব্যক্তি, যাকে উমরা করানোর জন্য তাকে তিন তিনবার স্বপ্নে আদেশ করা হলো? উভয়ে উমরা আদায় করার জন্য মক্কা মুকাররামায় রওয়ানা হয়ে গেলো। মিকাতে পৌঁছে উভয়েই গোসল করে ইহরাম বেঁধে নিলো এবং হারাম শরিফের দিকে দ্রুতগতিতে চলতে শুরু করলো।
তারা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলো, মাকামে ইবরাহিমের নিকট দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সাফা মারওয়ায় সায়ি করে, মাথা মুন্ডন করার মাধ্যমে উমরা পূর্ণাঙ্গ করলো। এখন তারা ফেরার প্রস্তুতি শুরু করে দিলো। হারাম থেকে বের হওয়ার সময় যাকে খুব বুঝিয়ে সুজিয়ে উমরা আদায় করার জন্য নিয়ে আসলো সে বলল: বন্ধু! হারাম ছাড়ার আগে দু‘রাকাত নফল আদায় করতে চাই। জানি না এরপর উমরার তাওফিক হবে কী হবে না। তার কী অসুবিধা হতে পারে। সে বললো: নফল পড়ো, খুব ভালো করে পড়ো। সে তার সম্মুখেই নফল আদায় করতে শুরু করলো। যখন সে সেজদায় গেল তখন তার সেজদা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে চললো। যখন অনেক দেরি হয়ে গেলো তখন তার সাথি তাকে ডাক দিলো। যখন কোনো নড়াচড়া দেখলো না তখন তাকে স্পর্শ করলো। আচানক সে বুঝতে পারলো যে, তার সাথির প্রাণবায়ু সেজদার হালাতে কবজ করা হয়ে গেছে।
সাথির এতো সুন্দর মৃত্যু দেখে সে ঈর্ষা করতে লাগলো। আর সে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, এ তো হুসনে খাতেমা। সুন্দর মৃত্যু। ইমানের সাথে মৃত্যু। হায়! এমন মওত যদি আমার নসিব হতো! বলতে লাগলো মনে মনে: এমন মৃত্যু যেন সবার নসিব হয়।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ কথা আর বলার প্রয়োজন নেই যে, এই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিকে জমজমের পানি দিয়ে গোসল দিয়ে জানাজার নামাজ আদায় করা হয়। লাখ লাখ মুসলিম তার জানাজা পড়ে এবং তার মাগফিরাতের জন্য দুআ করে। এরই মাঝে রিয়াদে তার পরিবারকে তার মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়। স্বপ্ন দেখা ব্যক্তিটি ওয়াদামাফিক তার মাইয়িতকে রিয়াদে পৌঁছে দেয় যেখানে তাকে দাফন করা হয়।
তার বাড়িতে আত্মীয়স্বজন সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আসতে থাকে। কিছুদিন পর যে ব্যক্তি স্বপ্নে দেখেছিল সে উক্ত উমরা আদায়কারী মৃতব্যক্তির বিধবা স্ত্রীকে ফোন করলো। সান্ত্বনার বাণী শোনানোর পর বললো: আমি জানতে চাই, আপনার স্বামী এমন কী নেক কাজ করেছিলো, যার বিনিময়ে তার এত সুন্দরভাবে মৃত্যু হলো যে, সে কা‘বার হেরেমে সেজদার হালতে মৃত্যুবরণ করেছে? এই মৃত্যু দেখে তো নেককার মুত্তাকি ব্যক্তিরাও ঈর্ষান্বিত হবে এবং এমন মৃত্যুর তামান্না করতে থাকবে।
বিধবা নারী বললো: ভাই! আপনি ঠিকই বলছেন। আমার স্বামী কোনো ভালো মানুষ ছিলো না। সে দীর্ঘ সময় ধরে নামাজ রোজা পরিত্যাগ করে আসছিল এবং সে মদ্যপ ছিলো, বেশিরভাগ সময় তার বিছানায় মদের বোতল থাকতো। সে রাতেও মদ পান করে ঘুমাতো। আর যেখানেই যেতো চেষ্টা করতো যেন মদ রেখে না যায়। আমি তার ভালো কোনো গুণ বলতে পারবো না। হ্যাঁ, একটি ভালো গুণ ছিলো। আমাদের পাশেই খুবই দরিদ্র একজন বিধবা নারী থাকে, যার ছোটো ছোটো শিশু বাচ্চা আছে। আমার স্বামী দৈনিক বাজারে যেতো, আমাদের সন্তানদের জন্য খাবার নিয়ে আসলে ঐ মহিলা ও তার বাচ্চাদের জন্যও খাবার কিনে নিয়ে আসতো। এবং তার দরজায় রেখে তাকে আওয়াজ দিয়ে বলতো: আমি খানা বাহিরে রেখে দিয়েছি। নিয়ে নাও।
ঐ বিধবা নারীটি খানা উঠিয়ে নিতো আর আমার স্বামীর জন্য দুআ করতো:
الله يحسن خاتمتك.
“আল্লাহ তোমাকে ইমানের সাথে মৃত্যু দান করুন।”
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এভাবেই উক্ত বিধবা মহিলার দুআ কবুল করলেন আল্লাহ তাআলা। এটা ঐ বিধবা নারীর দুআর প্রতিফল যে, একজন মদ্যপায়ীকে আল্লাহ তাআলা এমন সুন্দর মৃত্যু দান করলেন, যে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা করে প্রত্যেক মুসলিম এবং এমন মৃত্যুর জন্য তার ঈর্ষা করে।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! একথা সর্বদা স্মরণ রাখবেন, আল্লাহর রাসুল (সা এরশাদ করেছেন:
صنائع المعروف تقى مصارع السوء
ভাবাৰ্থঃ “ভালো কর্ম মানুষকে খারাপ মৃত্যু থেকে রক্ষা করে। (আল জামিউস সাগির : ৫০২৩)
©somewhere in net ltd.