নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সখের লেখালেখি

মুহিব্বুল্লাহ

একত্ববাদী

মুহিব্বুল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অখ্যাত এক সাহাবি যেভাবে ভাগ্যবান হলেন

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:০৩

জুলাইবিব (রাদি)


যে ঘটনাটি এখানে উল্লেখ করব সেটি হল মর্যাদাবান একজন সাহাবির ঘটনা। যার নাম হল ‘জুলাইবিব’ রাদিয়াল্লাহু আনহু। বহু মানুষের দৃষ্টিতে তিনি কোনো সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির অধিকারী হতে পারেননি। কারণ হল, তারা মনে করে প্রকৃত সৌভাগ্য ও সফলতা হল ধন সম্পদের মধ্যে অথবা পদমর্যাদায় কিংবা বংশ – গোত্রের মধ্যে। কিন্তু জুলাইবিবের অবস্থা ছিল অস্বচ্ছল, কিন্তু তিনি ছিলেন ইমানের ধনে ধনী। আল্লাহ তাআলা ইসলামের মাধ্যমে তার নামকে সমুন্নত করেছেন এবং এই দীনে প্রবেশের কারণে তাকে মর্যাদাবান করেছেন। তার ঘটনাটি আপনারা পড়ুন।

ইমাম আহমদ (রাহি) বলেন: আমাদের হাম্মাদ, তিনি ছাবেত থেকে, তিনি কিনানা থেকে, তিনি আবু বারযা আসলামি থেকে বর্ণনা করেন। আবু বারযা আসলামি বলেন: জুলাইবিব এমন লোক ছিল, যে কীনা নারীদের মাঝে ভীড় জমাত ও এবং তাদের সাথে হাস্য রসিকতা করত (হিজাবের বিধান নাজিল হওয়ার পূর্বে)। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, জুলাইবিব যেন তোমাদের কাছে প্রবেশ করতে না পারে। যদি সে প্রবেশ করে তাহলে আমি এমন এমন করব। (বর্ণনাকারী) বলল: আনসারদের কারো যদি কোনো অবিবাহিত কোনো নারী থাকত তাহলে তারা জেনে নিত যে, নবিজি (সা) এর প্রয়োজন আছে কীনা। সুতরাং নবিজি (সা) আনসারদের জনৈক ব্যক্তিকে বললেন: তোমার মেয়েকে আমার কাছে দাও বিয়ে দেওয়ার জন্য। লোকটি বলল: হাঁ। তা তো আমাদের জন্য সম্মানের আলামত এবং সাক্ষাত নেয়ামত। তখন নবিজি (সা) বললেন: মেয়ে আমার জন্য নয়। আমি নিজের জন্য মেয়ে চাচ্ছি না। লোকটি বলল: তাহলে কার জন্য হে আল্লাহর রাসুল? নবিজি (সা) বললেন: জুলাইবিবের জন্য। জুলাইবিবের কথা শুনে লোকটি বলল: হে আল্লাহর রাসুল! আমি মেয়ের মায়ের সাথে পরামর্শ করে জানাচ্ছি। লোকটি মেয়ের মায়ের কাছে অর্থাত্ স্ত্রীর কাছে গিয়ে বলল: রাসুলুল্লাহ (সা) তোমার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। মেয়ের মা বলল: হাঁ। তা আমাদের জন্য সুস্পষ্ট নেয়ামত। তখন সে আনসার লোকটি বলল: রাসুলুল্লাহ নিজের জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসেন নি। বরং তিনি জুলাইবিবের জন্য প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। মেয়ের মা বলল: জুলাইবিব কী তার ছেলে, জুলাইবিব কী তার ছেলে? না না আমরা তার সঙ্গে আমাদের মেয়ের বিয়ে দিতে পারি না। মেয়ের মা কী বলেছে তা রাসুলুল্লাহ (সা)-কে জানানোর জন্য মেয়ের পিতা বের হওয়ার ইচ্ছা করলে মেয়ে বলে উঠল: আপনাদের কাছে প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন কে? তখন তার মা বলল,(যে, রাসুলুল্লাহ নিয়ে এসেছেন প্রস্তাবনা)। মেয়ে বলল: আপনারা কী রাসুলুল্লাহর প্রস্তাবনাকে ফিরিয়ে দিতে চান? আমাকে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন। তিনি কখনো আমাদের ধ্বংস চাইবেন না। তারপর মেয়ের পিতা রাসুলের কাছে গিয়ে বলল: আপনার মন মত হয়েছে। নবিজি (সা) জুলাইবিবকে তার সাথে বিয়ে করিয়ে দেন। বর্ণনাকারী বলেন: তারপর রাসুলুল্লাহ (সা) যুদ্ধে চলে যান। যখন আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের বিজয় দিলেন তখন নবিজি (সা) স্বীয় সাহাবাদের বললেন: দেখো! তোমরা কাউকে হারিয়েছ কিনা? সাহাবারা বলল: আমরা অমুক অমুককে হারিয়েছি (অর্থাত্ শাহাদাত বরণ করেছে)। নবিজি বললেন: দেখো! আরো কাউকে হারিয়েছ কিনা? তারা বলল: হে আল্লাহর রাসুল! আর কাউকে না। নবিজি (সা) বললেন: কিন্তু আমি তো জুলাইবিবকে হারিয়েছি। নবিজি (সা) বললেন: ময়দানে গিয়ে তার খোঁজ করো। সাহাবায়ে কেরাম যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে খুঁজাখুজি করল। এক পর্যায়ে জুলাইবিবকে সাতজন কাফেরের লাশের পাশে দেখতে পেল শহিদ হয়ে পড়ে আছে। সেই সাতজন কাফেরকে জুলাইবিব হত্যা করেছে এবং তাদের আঘাতে জুলাইবিবও শাহাদাতবরণ করেছে। তখন তারা নবিজির কাছে জুলাইবিবকে নিয়ে এসে বলল: হে আল্লাহর রাসুল! সে কাফেরদের হত্যা করেছে এবং কাফেররাও তাকে শহিদ করে দিয়েছে। নবিজি (সা) তার কাছে এসে দাঁড়ালেন এবং বললেন: সে সাতজনকে হত্যা করেছে, ঐ কাফেররাও তাকে শহিদ করে দিয়েছে। সে আমার থেকে, আমিও তার থেকে। একথা নবিজি দু‘বার অথবা তিনবার বললেন। তারপর নবিজি নিজ বাহুতে উঠিয়ে নিয়ে আসলেন এবং তার জন্য কবর খনন করলেন। তাকে রাখার জন্য কোনো খাট ছিল না কেবল নবিজির কাধ ছাড়া। তারপন নবি নিজ হাতে জুলাইবিবের লাশ কবরে রাখলেন।
দেখুন হে ভাই! এই সাহাবি (জুলাইবিব রাদি) কীভাবে তার দুনিয়াকে বিক্রি করে দিয়ে আখেরাতকে ক্রয় করে নিয়েছে এবং নিজেকে আল্লাহর কাছে সপে দিয়েছে কীভাবে নিজেকে কুরবান করে দিয়েছে? এর কারণ তো একটাই, আর তা হলো সে জানে প্রকৃত সফলতা কেবল আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যেই।
আল্লাহর রাসুলের উক্তিটির প্রতি খেয়াল করুন, তিনি বলেছেন: “সে আমার থেকে, আমিও তার থেকে।” অর্থাত্ সে রয়েছে আমার আদর্শের উপর, আমাদের সুন্নত ও পথ-পদ্ধতির উপর। আর তা ইঙ্গিত দেয় যে, জুলাইবিব শাহাদাতবরণ করেছেন। আল্লাহর অনুগ্রহে সে জান্নাতের অধিবাসী হবে। এটাই হচ্ছে প্রকৃত সফলতা ও সৌভাগ্য।

(মিন কাসাসিস সুআদা ওয়াল আশকিয়া)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.