![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যুক্তি বিশ্বাস করিনা আমি, তবুও যুক্তি খোঁজে ফিরি।
আমরা কবে বিয়ে করছি?
অষ্টমবারের মত প্রশ্ন করল সৃষ্টি। উত্তরের জন্য আমার মুখের দিকে তাকাল সে। ওর মুখে পড়ন্ত বিকেলের তেজহীন সূর্যের আলো। দেখতে কেমন যেন মায়াময় লাগছে। এবার তার কন্ঠে সামান্য রাগ প্রকাশ হল। শুধু কন্ঠে নয় চোখেও সামান্য রাগ দেখলাম আমি। ও যেভাবে তাকিয়ে আছে সেটাকেই খুব সম্ভব অগ্নিদৃষ্টি বলে। রাগের কারনে কি-না জানিনা, ওর দুইটি চোখ সামান্য বড় দেখাতে লাগল। চোখের পাপড়ি তিরতির করে দুই তিনবার কাপল। তবু ওর প্রশ্নের জবাব দিতে ইচ্ছা হলনা আমার। বোকার মত ওর মুখের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকলাম। সে আরো বেশি রেগে গেল। রেগে গেলে সে ভিষন রকম তোতলায়। এজন্যই বোধহয় আর কিছু না বলে আমার সামনে থেকে চলে গেল। আমি ওর চলে যাওয়া দেখছিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে রাস্তার শতশত গাড়ী তাকে আমার থেকে আড়াল করে ফেলল।
সূর্য ঘুমুতে গেছে অনেকক্ষন । অন্ধকার হতে শুরু করেছে। রাস্তায় গাড়ির সংখাও কমে আসছে ধীরে ধীরে। আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর নোংরা কালো পানি দেখছি। কতক্ষন দেখেছি জানিনা। পেছন থেকে কেউ একজন আমার কাঁধে হাত রাখল। আমি পেছন ফিরে তাকালাম। একটা রোগা পাতলা চেহারার ছেলে। তার চোখ দুটি ছোট ছোট কিন্তু বেশ লাল। শোনেছি গাঁজা খেলে মানুষের চোখ লাল হয়। সেও বোধহয় কিছুক্ষন আগে গাঁজা খেয়েছে। আমি ছেলেটির চোখের দিকে তরল দৃষ্টিতে তাকালাম। ছেলেটি আমাকে বললঃ
-বস আপনাকে স্মরন করছেন, চলেন আমার সাথে।
-কে তোমার বস?
-গেলেই দেখতে পারবেন, চলুন।
-আমাকে কেন ছালাম জানিয়েছেন? আমি তো রাজনৈতিক নেতা নই।
-একদম প্যাচাল কম, বেশি প্যাচাল আমি সইবার পারিনা। (এবার সে তার ছোট চোখ দুটো সামান্য বড় করার চেষ্টা করল)।
-ঠিক আছে তাহলে সংক্ষেপে বলি?
-হুম। (সে মাথা নাড়ল)।
-আপনার বসকে আমার কাছে আসতে বলেন। ততক্ষন আমি এখানেই থাকব। (আমি অসম্ভব ঠান্ডা গলায় বললাম)।
ছেলেটি খুবসম্ভব কিছুটা আশ্চর্য হল। এরকম উদ্ভট কথা তাকে হয়ত কেউ কোনদিন বলেনি। সে আমার দিকে তাকাল। আমি তার দৃষ্টি বোঝার চেষ্টা করলাম, এটাকে হয়ত সন্দেহ দৃষ্টি বলে। আমি এমন কিছু বলব সেটা হয়ত সে ভাবেনি। সে দ্রুত আতঙ্ক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করল। জিন্স পেন্টের পকেটে হাত দিল সে। পকেটে বোধ হয় ছুরি চাকু জাতীয় কিছু একটা আছে। আমার চোখে চোখ রাখল সে। তার চোখ দুটি অসম্ভব রকমের লাল।
-তোই তাহলে যাবিনা?
আপনি থেকে সোজা তুই তে নেমে গেল ছেলেটি। আমি কিঞ্চিৎ ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নিলাম। ছুরি বা চাকু দেখলে আমাকে কী করতে হবে ভেবে নিলাম । তারপর অধীক শীতল ও ধীর গলায় বললামঃ-
-তুই কি বয়রা, শোনতে পাসনি?
এবার সে ভ্রু কুঁচকাল। তার চোখ দুটো কপালে ওঠার উপক্রম হল। দেখে মনে হচ্ছে সে সপ্তম আশ্চর্যের একটি দেখছে। নিজেকে সামলে নিতে ক্ষানিকটা সময় নিল সে। প্যান্টের পকেট থেকে ডান হাতটি বের করল। হাতে একটি দাড়ি কাটার ক্ষুর। ক্ষুরটিকে সে বিশেষ কায়দায় নাড়াচাড়া করছে।
আমি শার্টের নিচ দিয়ে আমার প্যান্টের দিকে হাত দিলাম। ভাবটা এরকম যে আমার কোমড়ে একটা বিদেশী রিভালভার আছে। আমি ইচ্ছা করলেই ছেলেটিকে গুলি করে দিতে পারি। ছেলেটির সম্পূর্ণ মনোযোগ আমার ডান হাতের দিকে। আমি সেই সুযোগটিই নিলাম। আচমকা আমার বা হাতে ওর কব্জির উপরিভাগে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে আঘাত করলাম। ওর হাত থেকে ক্ষুরটি মাটিতে পড়ে গেল। তা ওঠানোর জন্য সে কিছুটা মাটির দিকে জোকে এল। মূহুর্তের মধ্যে চপ্পস চপ্পাস শব্দে ছন্দ তোলে দিলাম দুই গালে দুই থাপ্পর। বাহ! থাপ্পর দুটো কান বরাবর লাগার জন্যই বোধ করি জাদুর মত কাজ করল। পাতলা খান এবার হয়ত চোখে সরষে ফুল দেখছে। সে মুখ থোবরে মাটিতে পড়ে যাচ্ছিল, আমি সাহায্যের হাত প্রসারিত করলাম।
মানুষকে চমকে দিতে আমার দারুন লাগে। পাতলা থান সাহেবের বসকে চমকে দিতে ইচ্ছা হল আমার। কিন্তু কিভাবে কি করব বুঝতে পারছিনা। ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার বস কোথায় আছেন? ও কোন জবাব দিচ্ছেনা। শুধু চোখ দুটো যথাসম্ভব বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কানে থাপ্পর লাগায় খুব সম্ভব তবদা লাগছে। ওকে ফেলে চলে যেতেও ইচ্ছা করছেনা। রাস্তার পাশে দাড়িয়ে ওর ঘোর কাটার অপেক্ষা করতে লাগলাম।
আমি এখন একটি ভাঙ্গা বাড়ির আঙ্গিনায়, একপায়া ভাঙ্গা একটি চেয়ারে বসে আছি। আমার সামনে বসে আছেন পাতলা খানের বস সাহেব। তার দুপাশে বডি বিল্ডার টাইপ দুইজন, চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে। যেন অচেনা কোন বন্যপ্রানী দেখছেন। বসের মাথায় একটাও চুল নেই, তবে বাম কানের সামান্য উপড় থেকে মাথার তালু পর্যন্ত একটা কাটা দাগ আছে। ঠোঁট দুটো অসম্ভব রকমের মোটা। মাছওয়ালা টাইপ চেহারা। তিনি কুঁজো হয়ে খুব সম্ভব গাঁজা টানছেন। একটা বিশ্রি গন্ধ নাকে লাগছে। বসের চোখ দুটোও অদ্ভুদ ধরনের লাল। বস মেরুদন্ড সোজা করে বসলেন। পাশে থাকা একজনকে বাম হাত দিয়ে কিছু একটা ইশারা করলেন।
ভয়ঙ্কর রকমের নিরবতা আমার ভাল লাগেনা। মানুষ কেন এমন ভয়ানক নিরব থাকবে? দুদিনের দুনিয়ায় এসেছ-কি নিরব থাকতে? মন খুলে চিল্লাবে,লাফাবে, হাসবে, কাঁদবে, মারবে, মার খাবে, তবেই না জীবনের মজা বুঝতে পারবে। নিরবতা ভাঙ্গলাম আমি।
আপনি গাঁজা খাচ্ছেন আর ওটার গন্ধে আমার নেশা ধরে গেছে। আমি গাঁজা সেবন করিনা। আমাকে একটা সিগারেট দেন। ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলাম বসের দিকে। বডি বিল্ডার টাইপ দুইজন চোখ কপালে তোললেন। ঘরের ভিতর থেকে একজন বাইরে এলেন। তার হাতে ছিল দুধবর্তি এলোমুনিয়ামের মগ। মগটি মাটিতে পড়ে গেল। পাশে কোথাও ঘাপটি মেরে বসে ছিল একটি বিড়াল। সে এসে চুক চুক করে পড়ে যাওয়া দুধ পরম তৃপ্তিতে পান করতে লাগল। একেই বুঝি বলে- বিড়ালের ভাগ্যে সিকে ছেঁড়া।
এতকিছুর পরেও বসের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখলাম না। এখনো নিরব আছেন। এরকম নিরব মানুষ ভয়ঙ্কর হয় বলেই আমার বিশ্বাস। বস আমার দিকে তাকালেন। এতক্ষনে চোখ দুটো আরো লাল হয়েছে। সে বাম হাতে আমার দিকে একটা বেনসন সিগারেট বাড়িয়ে দিল। আমি বাম হাতে সেটি গ্রহন করলাম। আমার কাছে লাইটার নেই। ধুমপান ছেরে দেবার পর সাথে লাইটার রাখার প্রয়োজন হয়না। আগুন ছাড়াই আয়েসি ভঙ্গিতে সিগারেট টানতে লাগলাম।
মাইয়াডার সাথে ডলাডলি কর? বসের মোটা ঠোঁটের কোনায় সামান্য হাসি টেউ খেলল।
না। ডলাডলি আমার পছন্দ না। আমার ঠোঁটেও হাসি ফোটানো চেষ্টা করলাম।
তাইলে সন্ধার অান্ধারে মাইয়াডার সাথে কি কামে আঠার মত লাইগা ছিলা?
আমার প্রতি মেয়েটির একটা ঘোর আছে। তাই সে আমার কাছে বার বার ছোটে আসে।
কী আছে?
ঘোর।
কিসের ঘোর?
ঘোরের নাম ভালবাসা।
এটা আবার ক্যামন জিনিস?
আমার বয়স উনচল্লিশ, মেয়েটির বিশ। সে আমাকে ভালবেসে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু আমি জানি এটা ভালবাসা নয়, এটা ঘোর।
বসের কপালে ভাঁজ পড়েছে। সে আবার নিরব হয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে সে ভাবনার অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। কোন কিনারা খোঁজে পাচ্ছেনা।একটার পর একটা ঢেউ এসে তাকে বাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মধ্য সাগরে।
বসের জন্য আবার দুধ নিয়ে এসেছে একজন। নিরবতা ভেঙ্গে সে দুধের মগ খালি করল। দুধ পান শেষ করেই আমার দিকে তাকাল।
তোমার কাছে-কি কোন যন্ত্র আছে? মানে মানুষরে আঘাত করা যায়, এমন কিছু-কি আছে তোমার কাছে?
না। চরম অবহেলা আমার কন্ঠে।
তাইলে ধামড়াডারে এমন কাহিল বানাইলা ক্যামনে? (বসের কন্ঠ শীতল)।
কান বরাবর মাত্র দুইটা থাপ্পর মারছি। (আমার কন্ঠ আরো বেশি শীতল)।
মাত্র দুইটা থাপ্পরেই ঐ অবস্থা করছ?
হু, দুটাই মাত্র থাপ্পর।
তাইলে ঐরকম দুইটা থাপ্পর আমারেও মার! দেখি আমার কেমন লাগে! বস মাথাটা সামান্য সামনের দিকে জোকিয়ে দিলেন। চারদিক পিনপতন নিরব। ব্যাপারটা কি ঘটতে যাচ্ছে অনুমান করার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা। শুধু বুঝতে পারছি যা ঘটতে যাচ্ছে তা আমার জন্য খুব একটা সুখকর হবেনা। তবুও আমি চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাড়ালাম। বসের পাশে থাকা বডি বিল্ডার দুজন আমার দিকে তীর দৃষ্টিতে তাকাল। বস আমার দিকে একটি লাইটার বাড়িয়ে দিল। আমি সিগারেট জ্বালিয়ে বাড়ির বাইরের দিকে পা বাড়ালাম।
২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩২
মনিরুজ্জামান স্বপন বলেছেন: thank you.
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৪
এহসান সাবির বলেছেন: বেশতো..
বানান গুলি দেখবেন দয়া করে...
যেমন...
কোমড়ে
উপড়িভাগে
শুভ কামনা।