নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনেক অসাধারণের ভিড়ে আমি এক সাধারণ।

মনিরুজ্জামান স্বপন

যুক্তি বিশ্বাস করিনা আমি, তবুও যুক্তি খোঁজে ফিরি।

মনিরুজ্জামান স্বপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জয়ী আর নীল আলো

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৫২

হি হি হি হি হি
পাতলা রিনরি‌নে হা‌সির এ চির প‌রি‌চিত শব্দ‌টি সেই কখন থে‌কেই পিয়া‌সের মগজে ঘুরপাক খা‌চ্ছে। জয়ী হাসতো এরকম ভয়ানক সুরে। জয়ী মারা গেছে আট মাস হলো। এখন তবে কে হাসছে! এ হাসির উৎস বুঝতে পারছে না সে। হাসির শব্দটা ক্রমশ তার নিকটবর্তী হচ্ছে যেনো। অসহ্য আর বড় ভয়ংকর এ হাসির শব্দ। জয়ী-ই হাসছে কাছে কোথাও দাঁড়িয়ে। মনে হচ্ছে তাকে ডাকছে যেনো। পিয়াস হাসির শব্দে মোহাবিষ্ট হয়ে বিছানা ছেড়ে বারান্দায় চলে এলো। কেউ যেনো তাকে সম্মোহিত করে ফেলেছে যেনো। বাইরে প্রচন্ড রকমের বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির সাথে শো শো শব্দ তুলে তুমুল ঝড় বইছে। হাসির শব্দ বাতাসের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে কেমন যেনো একটা ভয়াবহ মোহ ছড়াচ্ছে। সিঁড়ির কাছ থেকেই হাসির শব্দটা আসছে। পিয়াস হাসির শব্দে মোহাবিষ্ট হয়ে ছোট ছোট পায়ে হেটে, সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হাসির শব্দটা তার থেকে সমান দূরত্ব বজায় রেখে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। সেও রেলিং ধরে জড়ানো পায়ে সিঁড়ি বেয়ে শব্দটাকে ধরার চেষ্টা করছে। সে যতই কাছে যাবার চেষ্টা করছে হাসির শব্দটাও তেমনি ঠিক দূরত্বে অবস্থান নিচ্ছে। হাসির শব্দটাকে ধরার চেষ্টা করতে করতে সে ছাদে চলে এলো।

বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছে পিয়াস। তার গায়ে রাতের পোশাক। একটা সেন্টু গেঞ্জি আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। পাঁচ তালার ছাদের চিলেকোঠার রুমটার সামনে চলে এসেছে পিয়াস। এ ঘরটা জয়ীর খুব পছন্দের ছিল। ছাদের এ ঘরটার চালা তৈরী হয়েছে টিন দিয়ে। বর্ষা মৌসুমের রাতগুলো জয়ী এ রুমেই কাটাতো। বিশেষ করে বৃষ্টি ঝড়া রাতগুলোতে সে তিন তালায় নিজের রুমটাতে থাকতেই পারতো না। টিনের চালে ঝুম বৃষ্টির শব্দ তাকে মাতাল করতো যেনো। আশ্চর্য! রুমটার তালা খুলা কেন? লাইটও জ্বালানো!

দরজা ঠেলে রুমের ভিতরে ঢুকলো পিয়াস। একি! বুকের ভিতরে একটা মারাত্মক রকমের ধাক্কা খেলো সে। খাটের কাছে চেয়ারটাতে বসে আছে জয়ী। পেছন দিগ থেকে দেখেও পিয়াস নির্দিধায় বলতে পারে, এ জয়ী ছাড়া আর কেউ না। জয়ী বসে আছে। গায়ে হলুদ রঙের জামা। জামাটার পিঠের দিকটা জিপারের পরিবর্তে ফিতার সাহায্যে আটকানো। মসৃণ পিঠের কিছু অংশ প্রবলভাবে পিয়াসের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করছে যেনো। তার চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। মারাত্মক রকমের মোহ জড়ানো কন্ঠে জয়ী বলল,
-পিয়াস...., আলোটা নিভিয়ে দিয়ে আমার কাছে আয়। লাল আলো আমার এখন আর সহ্য হয়নারে..
-আসছি...।
পিয়াস মন্ত্রমুগ্ধের মতো লাইটের সুইচটা অফ করে দিলো। একি ঘটছে রুমটাতে! আলোটা নিভে যাওয়ার সাথে সাথেই হালকা নীল আলোতে রুমটা ছেয়ে গেলো যেনো। নীল আলো থেকেও মোহ ছড়াচ্ছে যেনো। ভাল লাগার আবেশে ভরে উঠছে পিয়াসের মন প্রাণ। মাতাল করা সুরে জয়ী আবার বলে উঠলো,
পিয়াস...., আমায় ভয় পাচ্ছিস?
-না, নাতো..। আমি কেনো তোকে ভয় পাবো?
-তাহলে দূরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? কাছে আয়...। আমার খুব কাছে আয়।
পিয়াস এক পা দু পা করে জয়ীর কাছে এসে দাঁড়ালো। জয়ীও চেয়ার ছেড়ে তার মুখোমুখি হয়ে দাড়ালো। একি! জয়ীর চোখ থেকেই তো নীল আলো ছড়াচ্ছে। সেই নীল আলো পিয়াসকে মোহাবিষ্ট করে রেখেছে যেনো। জয়ী বলল,
-পিয়াস...., আমার চোখে চোখ রাখ। আমাকে দেখ। সপ্ত মহাসাগরের তৃষ্ণা নিয়ে আজ আমি তোর সামনে দাঁড়িয়ে। আমি জানি তুই বড় পিপাসার্ত। আমার চোখে চোখ রেখে তোর এ জনমের পিপাসা মিটিয়ে নে।
জয়ীর কণ্ঠ থেকেও কেমন যেনো মায়া ছড়াচ্ছে। পিয়াস কেবলই মুগ্ধ হচ্ছে যেনো। কিছু বলতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু সে বলতে পারছে না। জয়ী বলে চলছে এখনো।
-কি হলো..., তুই কিছু বলবি নাহ..। আমি তোর বিবাহিত স্ত্রী, যে বাসর রাতে তোকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। সেই স্ত্রী, যাকে তুই অনেক ভালবাসতি। আমি তোর জয়ী, যার জন্য তুই একটা খুন করেছিস। কিরে... বোকার মতো দাড়িয়ে আছিস কেনো...। কাছে আয়...। আমার খুব কাছে আয়..। তোর কি বিশ্বাস হচ্ছে না.. আমি তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি!
-বিশ্বাস হবে না কেনো... খুব বিশ্বাস হচ্ছে আমার, তবে....।
-হি হি হি...। একবার আমাকে ছুঁইয়ে দেখ, তোর সব ভ্রম দূর হয়ে যাবে। কাছে আয়, আমি তোর জন্য একটা জিনিস এনেছি। ওটা নিজ হাতে তোকে পড়িয়ে দিই।

পিয়াস হাত বাড়িয়ে দিলো জয়ীর দিকে। জয়ী পিয়াসের হাতে একটা ব্রেসলেট পড়িয়ে দিলো। তারপর ছোট্ট শিশুদের মতোই আছড়ে পড়লো পিয়াসের বুকে। জয়ীর নীল চোখে পানি অনুভব করলো পিয়াস। পিয়াসকে জড়িয়ে ধরে সে তার বুকে নাক ঘষতে লাগলো বাচ্চাদের মতো।

রুমের দরজা খুলা। বাইরে এখনো প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই বাইরের প্রচন্ড বাতাসের ঝাপটা রুমে ঢুকে ঠান্ডা রুমটাকে অধিকতর ঠান্ডা করে দিয়ে যাচ্ছে। টিনের চালে বৃষ্টির ছন্দময় পতন চার দিকে মায়াময় আবেশ ছড়াচ্ছে যেনো। জয়ী শুয়ে আছে পিয়াসের বুকে মাথা রেখে। পিয়াসের হাতের মুঠোয় জয়ীর মাথার বায়স কালো কুঁকড়ানো চুল। সে মাঝে মধেই সেই চুলে নাক গুঁজে দিয়ে মন মাতাল করা গন্ধ নিচ্ছে। জয়ী নিজের আঙ্গুল দিয়ে পিয়াসের বুকে অনবরত কি জানি লিখে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে পিয়াসের বুকের লোমগুলোতে নাক ঘষছে। বাচ্চারা নিজের খুব পছন্দের খেলনা পেলে ওটা নিয়ে যেমনটি করে, ওরা দুজনও একে অন্যকে নিয়ে সেরকমই করছে যেনো। বৃষ্টির মাত্রা হঠাৎই দ্বিগুন হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। জয়ী পিয়াসের আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে, দরজা বন্ধ করে দিয়ে পুনরায় স্ব-স্থানে ফিরে এলো। হঠাৎই বৃষ্টির শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে হেসে উঠলো জয়ী।
-হি হি হি, তোর আমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে না?
-করছেই তো...
-তবে লজ্জা পাচ্ছিস কেনো? লজ্জাতো আমার পাবার কথারে...। বউয়ের কাছে কেউ লজ্জা পায়!
জয়ীর মুখে বউ শব্দটি শুনে পিয়াসের ভিতরে যেনো একটা ছোট খাটো সাইক্লোন বয়ে গেলো। দুহাতে জড়িয়ে ধরলো জয়ীকে।
-আয় বউ..। আমার কাছে আয়, খু..উ..ব কাছে।
-আবার বল, আবার আমায় ওরকম করে বল.., শুনতে কত যে ভাল লাগছে তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।
-বউউউ...। পিয়াস টেনে টেনে লম্বা করে বলল।
-হি হি হি,
-আমার সোনা বউউউ.., কাছে আয়, আরো কাছে...।
-এলাম তো। তুই আমাকে শক্ত করে ধরে রাখ। আর শোন...., আজ আমি পূর্ণ আদর চাই। আমি পূর্ণতা চাই।

ওরা একজন অন্যজনের খুউব কাছে চলে এলো। জয়ীর কপালে পিয়াস এঁকে দিলো ভালোবাসার ছোঁয়া। জয়ীও অকৃপনভাবে প্রতিদানে ভরিয়ে তুলল পিয়াসের পিপাসার্ত মন। এক সময় পিয়াস ঘুমিয়ে গেলো জয়ীর বুকে মাথা রেখে।

ভোর বেলাতেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো পিয়াসের। কম্বলের ভিতর একটু নড়েচড়ে উঠতেই বুঝতে পারলো তার শরীরে আবরন নেই। সে সম্পূর্ণ নিরাবরন হয়ে আছে। সে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। রাতে সে তিনতালার জয়ীর রুমটাতে ঘুমিয়ে ছিল। জয়ী মারা যাবার পরে কোনদিনও সে অন্য কোথাও রাত্রি যাপন করে না। অন্য কোথাও ঘুম আসেনা তার। ছাদের চিলেকোঠার রুমটাতে নিজেকে একাকী দেখে ভয়ানক রকমের চমকে ওঠলো সে। নিজের ডান হাতে দৃষ্টি পরতেই দেখলো কব্জিতে শোভা পাচ্ছে জয়ীর পড়িয়ে দেয়া বিশেষ ধরনের একটি ব্রেসলেট। ধীরে ধীরে রাতের সমস্ত কিছু মনে পড়তে থাকলো তার। জয়ী তাকে বলেছিল- “আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়নি, যেতে পারে না। আমি বার বার ফিরে আসবো তোর কাছে। যেদিনই টিনের চালে ঝুম বৃষ্টি হবে, সেদিনই তোকে জ্বালাতে আসবো আমি। তুই অপেক্ষা করবি আমার জন্য।” জয়ীর কথাগুলো পিয়াসের মগজে স্থায়ীভাবে গেঁথে গেলো যেনো।

-সমাপ্ত-

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:১৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ওয়াও...

নাইস রোমান্টিক মিস্ট্রি :)

গল্পে ভাললাগা
++++

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:২৯

মনিরুজ্জামান স্বপন বলেছেন: ভাল লেগেছে জেনে অনুপ্রেরণা পেলাম।

২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৪১

অবনি মণি বলেছেন: ভালো লাগলো!!

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৪৫

মনিরুজ্জামান স্বপন বলেছেন: শুকরিয়া..।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.