নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার \'কলম\'।

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)

পৃথিবীতে ঘুরতে আসা কিছু দিনের পর্যটক

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের পরার্থপরতার মহত্ত্ব অর্জনের জন্য প্রয়োজন নেই বিশেষ পেশা ও সম্পদ।

০২ রা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫২

সেবার মধ্যেই মানব জীবনের মহত্ত্ব।এ কথা আমরা সবাই জানি।আমরা ভেবে থাকি মানুষের পাশে থেকে সেবা করার জন্য রাজনীতি করা দরকার,বিশেষ পেশার মানুষ হওয়া দরকার অথবা প্রচুর অর্থ সম্পদ থাকা দরকার যা সমস্যাগ্রস্ত মানুষের বিপদে দান করে সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দেয়া যায়।কিন্তু,সেবা শব্দটির তাৎপর্য এতো ব্যাপক এবং বিস্তৃত যে সমাজ ও জীবনের প্রতি স্তরে অবস্থান করেই মানব সেবা করে জীবনকে ধন্য করা যায়। আবার সমাজের সেবক পরিচয়ের অনেকেই রয়েছে যারা সমাজের সেবকের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন মানুষের ক্ষতি সাধন করে। আমি খুব সাধারণ দৃষ্টিতে সেবা বলতে বুঝি,সেবা সেটাই, যে দায়িত্ব নিজের উপর অর্পিত বা যে কাজ আমি করি তা সুচারু ,সঠিক এবং সততার সহিত সম্পাদন করাই হচ্ছে সেবা।যাহা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধন ঘটায়।

রাজনীতি হচ্ছে বৃহৎ পরিসরে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সেবা করার মাধ্যম। তবে এই মাধ্যমে আমি কি উদ্দেশ্যে নিজেকে নিয়োজিত করছি সেটাই হচ্ছে মুখ্য বিষয়।সত্যিই যদি সমাজে শান্তি ও সমতা প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে নিজেকে রাজনীতিতে নিবেদন ও আত্মত্যাগ করি তবেই আমার দ্বারা রাজনীতির সুফল সেবা হয়ে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে। আবার কারো রাজনীতি করার উদ্দেশ্য যদি হয় নিজের স্বার্থ অন্বেষণ করা, তবে সেই স্বার্থ হাসিল করার জন্য তার কর্মকাণ্ডগুলোর নেতিবাচক প্রভাবে ভেঙে পড়বে সমাজের শৃঙ্খলা।

আমরা অনেকেই অর্থ বিত্তের অধিকারী হলে অনেক সময় জনকল্যাণ মূলক কাজে কিছু ব্যয় করে থাকি।এই ব্যয়ের সুবিধাভোগী মানুষের কাছে মহান মানুষ হয়ে উঠি।নামের সাথে ওঠে সমাজ সেবকের তকমা। আমরা খুঁজে দেখতে যাই না দানকারীর অর্থশালী হয়ে ওঠার উৎস। যদি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কেউ সম্পদ উপার্জন করে, তবে শুধু সেই ব্যক্তিই নয় তার সম্পদ আহরণের প্রতিটি স্তরে তার আশেপাশের মানুষসহ রাষ্ট্র ও সমাজ সমান্তরালে উপকৃত হয়। এমন মানুষ প্রকৃতই সমাজের সম্পদ ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য এক আশ্রয় স্থল। অপরদিকে, কারো সম্পদের আহরণের পথ যদি হয় বাঁকা।অর্থাৎ,মানুষের অধিকার বঞ্চিত করে,ধোঁকা দিয়ে,সমাজের ক্ষতি সাধন করে সম্পদের পাহাড়ে দাঁড়ানোর পর যদি কেউ কল্যাণকর কাজে ব্যয় করেন, সেই ব্যয়কে সেবা না বলে বলতে হবে চাতুর্যতা।কারণ এই সম্পদ আহরণ করতে গিয়ে ঐ অসৎ মানুষটি প্রতিটি স্তরে অন্য মানুষকে কষ্টে নিপতিত করেছে এবং সমাজকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিতে ভূমিকা রেখেছে। এই ব্যয় মূলত মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে নয়, বরং তার অপকর্মের নেতিবাচক ইমেজকে ইতিবাচক করার জন্য। কিছু মানুষ তার দানে সামান্য উপকৃত হলেও অপকর্মের কারণে পেছনের শত শত মানুষের যে ক্ষতিসাধন হয়েছে সেই ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয় বলে সামগ্রীক সমাজের কল্যাণের স্বার্থে ও অসৎ কার্যকলাপ নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে এমন মানুষদের দানকে প্রত্যাখ্যান করাই শ্রেয়।

আমাদের অনেকই রাজনীতি করি না এবং বিত্ত বৈভবও নেই। নিজের আয় দিয়ে সমাজের দুস্থ মানুষের আর্থিক সাহায্য করা হয়ে ওঠেনি কোনোদিন। মনে হতে পারে, এই জীবনে পরার্থপর হয়ে ওঠা হলো না আর।অথচ নিজের সারা জীবনের উপার্জন পরিবারের ভাইবোন,পিতামাতা ও স্ত্রী সন্তানের ভরণপোষণে ব্যয় করে কখনো উদ্বৃত্ত সম্পদ জমেনি। জীবনের এমন ত্যাগ সমাজে দৃশ্যমান হয়না,কেউ বাহবা দেয় না,যাদের জন্য করছেন তারাও আপনার উপর খুশী নাও হতে পারে। কিন্তু, আপনার জীবনের এমন ত্যাগ যে কত বড় পরার্থপরতা সেটার তাৎপর্য অপরিসীম।

সমাজে কিছু মানুষের দেখা মেলে,যারা পরিবারের সেবা যত্নে বড় হয়ে ওঠেন, রাষ্ট্রের অর্থে শিক্ষাদীক্ষা লাভ করেন, কিন্তু সারা জীবনে না পরিবার,না সমাজ ও রাষ্ট্রের বিন্দু পরিমান উপকারে আসেন। বরং, অন্যের পরিশ্রমের উপর ভর করে ভোগের জীবন পার করে। নিজে আয় করলেও সে আয়ের ছিটে ফোটাও কখনো অন্যরা পায় না। এমন মানুষদের বাহ্যিক চলাফেরায় জৌলুশ ফুটে উঠলেও ,এদের মানব জনম সার্থকতাহীন।অনেকটা পশুপাখীর জীবনের মত ।কারণ, পশুপাখির জীবনে শুধু নিজের উদর ভর্তি করা ছাড়া অন্য আর কোন লক্ষ্য থাকেনা। অন্যভাবে দেখলে,সমাজের এমন মানুষদের তুলনায় একদিকে পশুপাখির জীবন সার্থকতায় ভরা,কারণ পশুপাখীরাও জীবনের একটা সময় ত্যাগ স্বীকার করে নিজের বাচ্চাদের খাইয়ে, যত্ন করে,নিরাপত্তা দিয়ে বড় করে তোলে।

অনেকে আর্তের সেবায় জীবন উৎসর্গ করার জন্য সংসার ত্যাগী হয়ে কাজ করেন কোন আশ্রমে, আবার কেউ গড়ে তোলে জনহিতৈষী কোন প্রতিষ্ঠান।এমন সেবার সামাজিক মূল্যায়ন হলেও আমাদের সংসারে অনেক গৃহিণী রয়েছেন, যাদের কর্ম কখনো অর্থমূল্যে বিচার হয়না, অথচ সারাটা জীবন উৎসর্গিত হয় পরিবারের অন্যান্য সদ্যসদ্যের সেবা শুশ্রূষা প্রদান করে। এই সব অমূল্যায়িত গৃহিণীদের জীবনের অবদান কি ঐ সব সমাজকর্মী পরিচয়ের মানুষদের চেয়ে কোন অংশে কম? নাইবা হল সামাজিক মূল্যায়ন,এমন মানুষেরা কিন্তু মানব জনমের সার্থকতা অর্জন করেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।

আমরা সাধারণ ভাবে বুঝি, ব্যবসার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র মুনাফা অর্জন করা।কিন্তু,ব্যবসার অপর নাম সেবা,সেটা কজনইবা ভেবে দেখি বা করে দেখাই। অর্থাৎ,পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করে সঠিক মূল্যে ভোক্তা বা ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেয়াই হচ্ছে সেবা। অন্যদিকে, নিজেকে এর মধ্যদিয়ে আত্মনির্ভরশীল করার পাশাপাশি অন্যকেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে এবং দেশের অর্থনীতির গতিশীলতা ধরে রাখতে ব্যবসার গুরুত্ব অপরিসীম। সেই অর্থে ব্যবসা একটি মহান পেশার পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার মহান দায়িত্বও বটে।
অপরদিকে,যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে ওজনে কম দেই,পণ্যে ভেজাল মেশাই,মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্যে নতুন তারিখ বসিয়ে বিক্রি করি,শ্রমিকের প্রাপ্য মজুরী না দেই,সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দেই, তাহলে এমন ব্যবসাকে সেবা বলতে পারি কি? বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।

সমাজে সেবামূলক অনেক পেশাজীবী রয়েছে,যাদের কাজ তাদের পেশাগত সেবা দিয়ে মানুষকে পরিত্রাণ করা। অথচ, এমন মানুষদের নিকট থেকে অনেক সময় সেবার পরিবর্তে নিগৃহীত হতে হয়।
অর্থাৎ, সেবার মাধ্যমে মানব জীবনের সার্থকরা খুঁজতে প্রয়োজন নেই বিশেষ কোন পেশা বা অর্থ বিত্ত বৈভব।দরকার প্রত্যেকের অবস্থান থেকে নিয়মানুবর্তি জীবন যাপনের মানুসিকতা। এমন জীবনাচারই জীবনের পরার্থপরতার মহত্ত্ব ও প্রশান্তি এনে দিতে পারে।জীবনের বেলা শেষে উপহার দিতে পারে পৃথিবীতে মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণের পরিতৃপ্তি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
কিন্তু এই সমাজ বদলে গেছে। এই সমাজের মানুষ গুলো খুব নিষ্ঠুর। এদের মধ্যে মায়ামমতা নেই। মানবতা নেই।

২| ০২ রা মে, ২০২০ রাত ৮:৩৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো লোকের দাম নাই রাষ্ট্রে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.