![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অফিসের টেবিলে বসে কাজ করতে করতে হঠাৎ বিরক্তি এসে ভর করল। একই ফাইল, একই হিসাব, একই মুখ সবকিছু যেন চক্রাকারে ঘুরছে। কলমটা টেবিলে রেখে আমি জানালার দিকে তাকালাম।
আমাদের অফিসে সামনেই সারি সারি গাছ। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া , পাইন, ক্রিস্টমাস ট্টি কিছু গাছে ফুল ঝরে গেছে, কিন্তু পাতাগুলো এখনও সতেজ, বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে একেবারে চকচক করছে। মনে হলো প্রকৃতি যেন নীরবে ফিসফিস করে বলছে, “তুমি ক্লান্ত, কিন্তু আমি এখনো নতুন।”
গাছের ফাঁক দিয়ে চোখ চলে গেল দূরে। দেখা গেল স্টেডিয়ামের চূড়া, আর আরও একটু ওপারে বাইতুল মুকাররমের গম্ভুজ। সাদা সেই গম্বুজ বৃষ্টিভেজা আকাশে অদ্ভুতভাবে উজ্জ্বল লাগছিল। তার ওপরে ভাসছিল মেঘের ভেলা। মেঘের ফাঁক দিয়ে দু-একটা চিল উড়ে যাচ্ছিল ধীর ভঙ্গিতে। দৃশ্যটা খুব সাধারণ, অথচ হঠাৎ করেই মনে হলো এটা কোনো সাধারণ দুপুর নয়।
আমি হেলান দিয়ে বসে থাকলাম, কাজ ভুলে। জানালার কাঁচে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির জল লেপ্টে আছে, তার ভেতর দিয়ে বাইরের দৃশ্যটা আরও ঝাপসা হয়ে উঠছে। সেই ঝাপসা দৃশ্যের মধ্যে হঠাৎ মনে হলো বাইতুল মুকাররমের সাদা গম্ভুজটা যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই তাকানোয় এক ধরনের শান্তি আছে, আবার এক ধরনের রহস্যও।
ঠিক তখনই টেবিলের ওপর রাখা ফোনটা কেঁপে উঠল। পর্দায় ভেসে উঠল অচেনা একটি নাম্বার। কৌতূহলবশত রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে নরম, শীতল এক কণ্ঠ ভেসে এল
“আপনি তো এখন জানালার বাইরে তাকিয়ে আছেন… তাই তো?”
আমি চমকে উঠলাম। কণ্ঠস্বরটা অচেনা, অথচ অদ্ভুতভাবে কাছের মনে হলো। ঘরটা হঠাৎ অস্বস্তিকরভাবে নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মনে হচ্ছিল ডেস্ক, কাগজ, ফাইল সবকিছুই থেমে গেছে। আমি কিছু বলতে পারলাম না। শুধু জানালার দিকে তাকিয়ে রইলাম। বাইরে তখনও মেঘ ভাসছে, আর সেই চিলগুলো দূরে কোথাও মিলিয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্নটা থেকেই গেল—
আমরা কি সত্যিই শুধু প্রকৃতিকে দেখি, নাকি প্রকৃতিও কোনো এক রহস্যময় মুহূর্তে আমাদের দিকে তাকায়?
©somewhere in net ltd.