নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আল্লাহ্\'র বান্দা(আবদুল্লাহ)

৩১ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:০৩



আবদুল্লাহ্ নামটি অনেক পরিচিত একটি নাম। আজ আমি এমন একজন আবদুল্লাহ্ এর গল্প বলতে চাই।

আবদুল্লাহ্ নামের মানুষ সাধারণত খুব সাধারণ ও সহজ-সরল প্রকৃতির হয়। এলাকায় কোন সমস্যা দেখা দিলে দুই-একটি আবদুল্লাহ্ এর সাহায্য প্রায় নিশ্চিত অর্থে পাওয়া যায়। সহজ-সরল বলে আবার এমন নয় যে, এরা ঝোপে কোপ দিতেও জানে না। কিন্তু বুদ্ধিতে এই আবদুল্লাহ্'রা একটু খাটো থাকে। যাইহোক, এই আবদুল্লাহ্ এর সাথে ঘটা কিছু ঘটনার কথা যথাক্রমে উল্লেখ করছি।

একদিন হয়েছে কি, এই আবদুল্লাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস না পেয়ে একটি লোকাল বাসে উঠলেন। বাসে প্রচন্ডরকম ভীড় এবং গাদাগদি অবস্থা। সিট নেই তাই দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ বাসের চালকের আচমকা কষে ব্রেক চাপাতে নিজেকে সামলাতে না পেরে সামনের এক মেয়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেন। ব্যবহারটা এমন দেখে বাসের সব যাত্রী 'থ' হয়ে যায়। তাদের মতে, "মেয়ে বলেই ওমন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে"। এর মধ্যে এক ভদ্রলোক চটে উঠেন এবং তিনি আবদুল্লাহ্ কে টেনে তুলে তার গালে কষে চড় মারেন। ভদ্রলোকটির দেখাদেখি বাকিদেরও সাহস যুক্ত হয়ে আবদুল্লাহ্ সেদিন গণধোলাই এর শিকার হোন। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন মেয়ে গণধোলাই দেবার দৃশ্যটি লাইভ করে। এদিকে ঐ মেয়ে পক্ষ বাদী হয়ে নিজের এহেন মানহানি হয়েছে বলে মনে করে ফেসবুক লাইভকারীকে কিচ্ছুটি না বলে আবদুল্লাহ্ এর নামে মামলা করেন, বিচার চেয়ে বসেন। তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯২ধারা অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা দেন।

এটি গেলো প্রথম ঘটনা। এখন দ্বিতীয় ঘটনায় আসি। আমি যে আবদুল্লাহ্ এর কথা বলছি তিনি কিন্তু তেমন কোন নেশা করেন না। সিগারেট-চা বা পান কিছুই পান করেন না। কিন্তু রুমমেট তাকে বোকা পেয়ে একদিন দুপুর রাতে হাতে কিছু টাকা এবং একটি ঠিকানা লিখে দিয়ে বলে, "দোস্ত, আমি প্রচন্ডরকম অসুস্থ। এখানে বন্ধু বলতে শুধু তুই আছিস, এছাড়া আমার আপন কাছের বলতে কেউ নেই। আমার কিছু ঔষধ লাগবে, তুই এই ঠিকানায় গেলে আমার এক বন্ধু তোকে কিছু পিল দিবে। তুই একটু কষ্ট করে নিয়ে আয় দোস্ত, প্লিজ!"

সেদিন কনকনে শীতের ঐ রাতে আবদুল্লাহ্ তার বাবার দেয়া এক পুরনো স্কুটি নিয়ে বেড়িয়ে যান বন্ধুর উপকার সাধনে। বাসে যাতায়াত করার জন্য তার আজ অনেক ক্ষতি হয়েছে এবং সেই বিবেচনায় আবদুল্লাহ্ এর বাবা তাকে এই স্কুটি কিনে দিয়েছেন। যাতে করে আর মামলা খেতে না হয় এবং আদালতে গিয়ে নির্দিষ্ট তারিখে তারিখে হাজিরা দিতে না হয়। কিন্তু সেদিন ঠিক রাত একটায় ফেরার পথে আবদুল্লাহ্ কে ধরে ফেলে পুলিশ। পরপরই পুলিশ তাকে হেফাযতে নিয়ে ইয়াবার মামলা ঠুকে দেন। মাদকদ্রব নিয়ন্ত্রণ ৬৩নং আইনের ধারা যথাক্রমে ৯ ও ১০ লঙ্ঘন করেছেনে আবদুল্লাহ্ এমন দাবি উঠে। তবে ২০০গ্রাম ইয়াবা না পাওয়ায় আবদুল্লাহ্ প্রাণে বেঁচে গেছিলেন। কিন্তু এই মামলার ঘানিও এখন আবদুল্লাহ্ টানা আরম্ভ করলেন। জামিনে মুক্তি নিয়ে আবার যথারীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে উপস্থিত হওয়া শুরু করলেন এবং পাশাপাশি দুই মামলার জন্য নির্দিষ্ট তারিখে তারিখে আদালতে হাজিরাও দেওয়া আরম্ভ করলেন।

পুরনো সেই রুমমেটকে ছেড়ে এখন অবশ্য আবদুল্লাহ্ একা থাকে একটি মেসে তার পুরনো স্কুটি নিয়ে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ক্লাসের ঝাক্কি সামলাতে এবং উপর্যুপরি আদালতে হাজিরা দিতে দিতে আবদুল্লাহ্ এর জীবন এখন তেলে ছটফট করা তেজপাতা হয়ে গেছে। তবে আবদুল্লাহ্ এর হাতে এখন একটি স্মার্টফোন চলে এসেছে। দাম কম তাছাড়া ফেসবুক ছাড়া বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা এখন ভারি কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু ফেসবুকে আবদুল্লাহ্ নতুন। একদিন ফেসবুকের এক গ্রুপে তিনি দেখতে পান, "এক মন্ত্রীর ছেলে প্রকাশ্যে ইয়াবা নিচ্ছে"।

"And literally, no one is taking any action against it."

ঐ ভিডিওটি ফেসবুকে দেখে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়তেই আবদুল্লাহ্ এবার তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। সামনা-সামনি না হোক এবার অন্তত ফেসবুকে তিনি এটার প্রতিবাদ জানাবেন। কিন্তু স্ট্যাটাস লেখার সময় ক্রোধে সেই মন্ত্রী ও সেই মন্ত্রীর ছেলের নাম উল্লেখপূর্বক "f..." শব্দটি ব্যবহার করলেন। ব্যস! আবদুল্লাহ্ এর এমন সাহসিকতা দেখে তার কয়েকশত ক্লাসমেট, বন্ধু এবং বড় ভাই স্ট্যাটাসটি নিজ নিজ টাইমলাইনে শেয়ার করলেন। এক সময় ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেলেন আবদুল্লাহ্। আবদুল্লাহ্ও যে এখন ফাইট ব্যাক করতে পারে ভেবে ক'টা দিন ভালোই গেল তার। একসময় নিজেকে হিরো মনে হতে লাগলো। এরপর থেকে আবদুল্লাহ্ ক্রমাগত "f..." শব্দটি ব্যবহার করে ফেসবুকে মন্ত্রীগোষ্ঠী ও দেশের ভঙ্গুর সিস্টেম নিয়ে কিছু লেখালেখি করলেন। সেসব লেখা সত্যি না মিথ্যে তা আপনি বা আমার কাছে আপেক্ষিক কিন্তু আবদুল্লাহ্ এর কাছে সত্যি মনে হচ্ছিলো এবং রাতারাতি আবদুল্লাহ্ ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেলেন। কিন্তু এবার মন্ত্রীগোষ্ঠীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছিলো তাই এক মন্ত্রী সাইবার ক্রাইম আইনে তার নামে মামলা ঠুকে দিলো। তিনি Penal Code (Act XLV of 1860) এর section 499 এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেছেন বলে দাবি করেন। নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা ৪৬নং আইনের ২৯ধারা লঙ্ঘন অনুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে অবশ্য বড় এক আইনজীবী দিয়ে মামলাটি খারিজ করা না গেলেও জামিন মঞ্জুর হয় এবং পর্যবেক্ষণে থাকবেন বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

আমি একদিন আবদুল্লাহ্ এর খোঁজ-খবর নেবার জন্য তাকে ফোন দেই। তার পরিবার কর্তৃক শেষ খবর পাওয়া অবধি, আবদুল্লাহ্ এখন কারাগারে আছেন। সেখানে তার দুইজন বাল্যবন্ধু বাবলু ও পাপ্পু এর সাথে দেখা হয়ে গেল।

বন্ধুগন এখন আবদুল্লাহ্কে পেয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, "আরেহ্, আবদুল্লাহ্! তুই এখানে কি করছিস? কোন খুন-খারাবি করেছিস না কি রে!"

নির্বিকার আবদুল্লাহ্ শুধু বললোঃ কারাগার সরকারের জন্য দিনদিন ব্যহবহুল হয়ে উঠছে তবুও তিনবেলা ঠিকমত খেতে তো পাচ্ছি। তাই না?

আবদুল্লাহ্ এর বন্ধুগণ এবার বেশ সোচ্চার ও উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু তুই করেছিস টা কি?

আবদুল্লাহ্ হয়তো তখন শব্দ সংকটে ভুগছিলেন নতুবা আপন মনকে বলছিলেন, "নির্দিষ্ট তারিখে তারিখে তিন-তিনটে বড় বড় মামলার জন্য আমাকে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়। দেখতে গেলে আদালত হচ্ছে আমার সেকেন্ড হোম যেখানে জীবনের অনেক সময় ব্যয় করছি। হাজিরা এবং বড় বড় তিনটি মামলা লড়তে লড়তে আমার পরিবারের জমানো টাকা সব শেষ, বাবার পেনশনের টাকাও প্রায় শেষের দিকে, পুরনো যে একটি স্কুটি আর স্মার্টফোন ছিলো সেসবও বিক্রি করে দিয়েছি। বন্ধুগণ, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর জীবনটাও শেষ। তবুও লড়ে যাচ্ছিলাম। শেষমেশ এক অনুসন্ধানে আমার কাছে থেকে পুলিশ কিছু ইসলামিক বই খুঁজে পেল। তাদের মতে আমি উগ্রবাদী। পাঞ্জাবী পরি, লম্বা দাঁড়ি রাখি, মাথায় সবসময় টুপি দিয়ে থাকি এসব না কি উগ্রবাদী হবার লক্ষণ। এরপর আরো একটি মামলা পুলিশ বা কেউ ঠুকে যেন না দেয় এজন্য স্ব-ইচ্ছায় তোদের মত ধর্ষকদের আর খুনীদের সাথে আড্ডা দিতে চলে এলাম কারাগারে। খুশি হয়েছিস তো!"



(বিঃ দ্রঃ গল্পটি কাল্পনিক, এবং চরিত্রগুলোও কাল্পনিক। তাই কাকতালীয় ভাবে কোনকিছু কারো সাথে মিলে গেলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:০৪

শেরজা তপন বলেছেন: কাল্পনিক হলেও সত্যের কাছাকাছি।

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব।

আবদুল্লাহ নামে একটা উপন্যাস ছিলো। আমাদের পাঠ্য।

৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৩৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সাবলীল ও সুন্দর উপস্থাপন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.