নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০১১ সালে জাভা ফোন দিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলাম। আমার ফোনে ফেসবুক অ্যাপ্লিকেশন দেখে কলেজের এক বড় ভাই বললেন, “আমারও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে, ৪০০ জন বন্ধুও আছে, জানো?” উনার কথা শুনে হিংসে হলো। উনার যদি ৪০০ জন ফেসবুক বন্ধু থাকে তাহলে আমার থাকা উচিত ৮০০ জন। কিন্তু আমার অ্যাকাউন্টে আছে মাত্র ২ কম ১০০ জন বন্ধু।
ওসব একাউন্ট নামের ছিলো এক বিশাল সৃজনশীলতা। সেসবের অধিকাংশের নাম এরকম ছিলো, ‘প্রিন্সেস’, ‘আঙ্গেল পরী’, ‘আবেগী ছেলে’, ‘অবুঝ বালক’, ‘বুঝ বালিকা’, ‘বাবার আদরের মেয়ে’, ‘ফড়িং’, ‘বেকার ছেলে’, ‘মি. পারফেক্ট’, ‘লাইকার ম্যান’, ‘ঘাস ফড়িং’, ‘কষ্টে ভরা জীবন’, ‘অদ্ভুত জীবন’, ‘হৃদয়হীন’, ‘হৃদয়হীনা’… কিছু তো এমন ছিলো যা উল্লেখ করার মতন নয়। না বানান ঠিক ছিলো, না তাদের কার্যকলাপ।
সকালবেলা ফেসবুক খুলে দেখতাম সৃজনশীল সব নোটিফিকেশন। “লাইকার ম্যান আপনার পোস্টে লাইক দিয়েছেন”, “বেকার ছেলে আপনার পোস্টে মন্তব্য করেছেন”, “আঙ্গেল পরী আপনি সহ আরো ১৪৫ জন কে একটি পোস্টে ট্যাগ করেছেন”, “অদ্ভুত জীবন আপনার টাইমলাইনে পোস্ট করেছেন”… তখন পোস্টে শুধু ‘লাইক (Like)’ নামক অপশন ছিলো। এত এত নিয়ন্ত্রণের শক্তি ফেসবুক ফিচারে ছিলো না। আবার আমার পোস্ট ওদের পছন্দ হয়েছে তাই লাইক দিয়েছে বিষয়টি এমন নয়, ফেসবুকে বন্ধুত্বের সংখ্যা বাড়ানো-ই ছিলো মূল উদ্দেশ্য।
আমিও কম সৃজনশীল ছিলাম না। আমার নাম ছিলো, ‘মি. বিকেল’। অবশ্য প্রথম প্রথম সবারই প্রাইভেসি সংক্রান্ত ভয় ছিলো। ফলে আমাকে কেউ চিনতে পারতো না, আমিও কাউকে চিনতে পারতাম না। শহর যদি হয় বগুড়া, তাহলে দেওয়া থাকতে পারে ঢাকা। পড়তাম ‘নশরতপুর ডিগ্রী কলেজ (NDC)’ তে আর লিখে রাখতাম ‘নটরডেম কলেজ, ঢাকা’, ওটারও শর্ট ফর্ম ‘NDC’ -ই তো!
আমার এক জুনিয়র এবং পরবর্তীতে বন্ধু। ওর আসল নাম ‘ইউনুস আলী’। ও আমার চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে ছিলো ফেসবুকের এই সৃজনশীল নাম তৈরির ক্ষেত্রে। ফলে আমার জন্য মনে করতে খুব মুশকিল হচ্ছে, প্রথম নাম সে কি রেখেছিলো? খুব সম্ভবত ‘অসংজ্ঞায়িত সমীকরণ’। ২০১২ সালে একদিন হঠাৎ অনেকগুলো ফেসবুক রিকুয়েস্টের মধ্যে খুঁজে পেলাম ‘অসংজ্ঞায়িত সমীকরণ’ কে। এত সৃজনশীল নাম দেখে রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করলাম।
তখন ডাটা কম লাগতো। মানে ১০ মেগাবাইট দিয়ে ৩ দিন খুব আরামে চলে যেত। ইন্টারনেটের এই গতি নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও সেসব দিনের তুলনায় আমরা অনেক এগিয়েছি। এক মেসেজ করতে ঘড়ি ধরে ২-৩ মিনিট লাগতো, মানে ম্যাসেজ সেন্ড এবং রিসিভ করতে। তখন আমাদের মাটির বাড়ি ছিলো। ফলে একটা অ্যান্টেনা দিয়ে রেডিওতে ভারতীয় এফ.এম. চ্যানেল ‘রেডিও মিরচি 98.3’ ধরাতাম, কারণ এদের শ্লোগান ছিলো, “রেডিও মিরচি 98.3, ঘন্টায় ১৩টি গান!”
আর আরেক অ্যান্টেনা দিয়ে চলতো বিটিভি। এই এক্সট্রা অ্যান্টেনা ছিলো গ্রামীনফোনের নেটওয়ার্ক নিয়ে এলাকায় কিছু কাজ করার কল্যাণে। দাদুর বিশাল বড় মুঠোফোনের অ্যান্টেনা পর্যন্ত চুরি করেছিলাম। তখন প্রথমবারের মত অবাক করে কেউ বাংলায় মেসেজ করলো, “হ্যালো!” কৌতুহলী মন ‘অসংজ্ঞায়িত সমীকরণ’ কে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করতে শুরু করলো।
কারণ একমাত্র আমি তখন ফেসবুক দুনিয়ায় (আমার টাইমলাইন এবং মেসেজে) বোধহয় বাংলায় মেসেজ করতাম। কিন্তু আমার মত হুবহু বা তারচেয়েও যত্ন করে এত ভালো বাংলা কে লিখছে আমায়? আমি যথারীতি দীর্ঘ সময় নিয়ে বাংলায় লিখে লিখে উত্তর দিতে লাগলাম। কিন্তু আমি কোনো ভাবেই এই ‘অসংজ্ঞায়িত সমীকরণ’ এর মত দ্রুত বাংলায় টাইপ করতে পারছিলাম না। আমার কৌতুহল আরো বাড়তে শুরু করলো।
এবার আমি তার পরিচয় চাইলাম, “ভাই, তুমি কে?”, “এত ভালো বাংলা লেখো কীভাবে?”, “তোমার বাসা কোথায়?”, “কোথায় পড়াশোনা করো?” ওপাশ থেকে মেসেজ আসলো, “আমি আপনাকে চিনি, আপনি নশরৎপুর ডিগ্রী কলেজে পড়েন, তাই না?” আমি ভাবলাম ধরা তো খেয়েই গেছি তাই স্বীকার না করে তো আর উপায় নাই। একদিন কলেজে গিয়ে দেখা হলো, ‘অসংজ্ঞায়িত সমীকরণ’ এর সাথে। ফার্স্ট ইয়ার।
ওর সাথে হ্যান্ডশেক করতেই বুঝলাম, বেশ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে চলে এই ছেলেটি (ইউনুস আলী)। নতুন নতুন বিষয়ে তার জানার খুব আগ্রহ। আর যদি বাংলায় লেখার হাত বলি তাহলে তো এক শব্দে ‘মাশাল্লাহ’। তাহলে কি এই ‘অসংজ্ঞায়িত সমীকরণ’ ইয়ে মানে ইউনুস আলী আমার মতই বাংলা কে একটু বেশি ভালোবাসে? বাংলা ভাষা কে মনেপ্রাণে ধারণ করে?
সত্যি বলতে এত প্রানবন্ত, জীবন্ত এবং উদ্যমী মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। ওর কাছে আছে অনেক তথ্য, আমি শুধু নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ পেতে পারে ভেবে ওর দেওয়া তথ্যে ‘হ্যাঁ’ জপে যাচ্ছিলাম। এছাড়া আর বলারই বা কি ছিলো!
২০২৪ সালে এসেও আমি ঐ ফেলে আসা ‘অসংজ্ঞায়িত সমীকরণ’ কে খুঁজে বেড়াই। ফেসবুক বন্ধু তালিকা আরো সংকীর্ণ করলেও ওর নাম এখনো দেখি। যেটা দেখিনা সেটা হলো, ঐ ফেলে আসা সাহসী, প্রাণবন্ত, জীবন্ত এবং উদ্যমী ছেলেটিকে!
আর হাতে অত সময়ও হয় না ওর খোঁজখবর নেবার। যেমন সময় হয় না আর রেডিও শোনবার। আর এভাবেই আমরা আমাদের কে দুনিয়ার ঝুঁট ঝামেলায় নিজেকেই হারিয়ে ফেলিনি তো! ভালো থাকুক এই ‘অসংজ্ঞায়িত সমীকরণ’রা…
ছবি: Bing Enterprise (Copilot Ai)
Also Read It On: হারিয়ে যাওয়া বন্ধু: ফেসবুকের স্মৃতিবিজড়িত অ্যালবামে ‘অসংজ্ঞায়িত সমীকরণ’
১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:২৫
মি. বিকেল বলেছেন: জি, আমার সাথেও একই রকম ঘটেছে। আসলে ফেসবুক কিছু দিলো নাকি নিলো? জানিনা ঠিক...
২| ০১ লা এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৭:২৫
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
১. ০১ লা এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৫৪০
শায়মা বলেছেন: ফেসবুকে আমি খুঁজে পেয়েছি অনেক অনেক হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে। আবার ফেসবুকে পাওয়া অনেক মানুষকে হারিয়েও ফেলেছি।
এখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সার্থকতা।
আমার ক্ষেত্রেও এটা ঘটেছে।
১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬
মি. বিকেল বলেছেন: হ্যাঁ, সেটুকু না মেনে তো কথা বলা যায় না। তখন তো এলগরিদম দিয়ে আমাদের মাথা খাচ্ছিলো না।
৩| ০১ লা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:২৪
নাহল তরকারি বলেছেন: ২০১১ সালে, আমি nokia 5130 মোবাইল চালাতাম। opera mini ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে ফেসবুক চালাতাম। তখন আমি সদ্যে এসএসসি পাশ করে ইন্টারে ভর্তি হই। তখন সব কিছু রঙ্গীন লাগতো। ২০১১ সালে, আমি nokia 5130 মোবাইল চালাতাম। opera mini ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে ফেসবুক চালাতাম। তখন আমি সদ্যে এসএসসি পাশ করে ইন্টারে ভর্তি হই। তখন সব কিছু রঙ্গীন লাগতো। ২০১১ সালে, আমি nokia 5130 মোবাইল চালাতাম। opera mini ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে ফেসবুক চালাতাম। তখন আমি সদ্যে এসএসসি পাশ করে ইন্টারে ভর্তি হই। তখন সব কিছু রঙ্গীন লাগতো। ২০১১ সালে, আমি nokia 5130 মোবাইল চালাতাম। opera mini ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে ফেসবুক চালাতাম। তখন আমি সদ্যে এসএসসি পাশ করে ইন্টারে ভর্তি হই। তখন সব কিছু রঙ্গীন লাগতো। ২০১১ সালে, আমি nokia 5130 মোবাইল চালাতাম। opera mini ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে ফেসবুক চালাতাম। তখন আমি সদ্যে এসএসসি পাশ করে ইন্টারে ভর্তি হই। তখন সব কিছু রঙ্গীন লাগতো। ২০১১ সালে, আমি nokia 5130 মোবাইল চালাতাম। opera mini ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে ফেসবুক চালাতাম। তখন আমি সদ্যে এসএসসি পাশ করে ইন্টারে ভর্তি হই। তখন সব কিছু রঙ্গীন লাগতো। ২০১১ সালে, আমি nokia 5130 মোবাইল চালাতাম। opera mini ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে ফেসবুক চালাতাম। তখন আমি সদ্যে এসএসসি পাশ করে ইন্টারে ভর্তি হই। তখন সব কিছু রঙ্গীন লাগতো। ২০১১ সালে, আমি nokia 5130 মোবাইল চালাতাম। opera mini ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে ফেসবুক চালাতাম। তখন আমি সদ্যে এসএসসি পাশ করে ইন্টারে ভর্তি হই। তখন সব কিছু রঙ্গীন লাগতো।
১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:২৮
মি. বিকেল বলেছেন: কিছু মুহুর্তের জন্য নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলাম...
৪| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯
ইএম সেলিম আহমেদ বলেছেন: << ঐ সময় ২০১০-১১ সালের দিকে ট্রিক বিডির "রানা" নামে একটি ছেলে জিপি সিমে ফ্রীতে প্রক্সি সার্ভার দিয়ে আনলিমিটেট নেট চালানোর ট্রিক্স শেয়ার করতো। আহারে ধুমছে ডাউনলোড করেছি। ছেলেটা কে অনলাইনে অনেক খুজেছি পাইনি।
<< রেডিও মুন্না ছিল সেই সময়কার সব চেয়ে জনপ্রিয় ফেসবুক পেজ। পেজ টি হঠাৎ করে গায়েব হয়ে গেল।
মায়াবী কি-বোর্ড এর কথা মনে আছে? প্লে স্টোরে এপস টা এখনো আছে। কিন্তু কোনো আপডেট নেই। এগুলো সব এখন স্মৃতি।
১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:২৯
মি. বিকেল বলেছেন: শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না, খুব মিল আছে এসব স্মৃতির সাথে।
৫| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: যে হারিয়ে গেছে, তাকে আমি খুজে বের করতে চাই না।
১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:২৯
মি. বিকেল বলেছেন: আপনাকে ওরকম মানুষ বলেই মনে হয়।
৬| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৪
অপু তানভীর বলেছেন: ফেসবুক আমি প্রথম খুলেছিলাম ২০০৯ সালে সাইবার ক্যাফেতে বসে । আমার মনে আছে প্রথম ফেসবুকের নাম ছিল ''অপু খান'' দিয়ে। সেটা অবশ্য কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল কেন জানে ! পরে ২০১১ সালে আরেক আইডি খুলেছিলাম । সেটা অনেক দিন টিকে ছিল । সেই সময়ে আমি নোকিয়া ২৭০০ ক্লাসিক ব্যবহার করতাম । সেটা দিয়েই আমি এই ফেসবুক চালিয়েছি । জাভা দিয়ে আসলেই অতি অল্প এমবি দিয়ে অনেক সময় নেট চালানো যেত ।
সর্ব শেষ ২০১৮ আরেকটা আইডি খুলেছি । আমি বরাবতই পরিচিত মানুষ ছাড়া ফেসবুকে একেবারে এড করতাম না । আমার এখনও ফেসবুকের বেশির ভাগ মানুষ হয় ব্লগের নয়তো পরিচিট মানুষ । বাইরের অচেনা মানুষ খুব কম !
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৫৪
শায়মা বলেছেন: ফেসবুকে আমি খুঁজে পেয়েছি অনেক অনেক হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে। আবার ফেসবুকে পাওয়া অনেক মানুষকে হারিয়েও ফেলেছি।