নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্যক্তিত্ব উন্নয়নমূলক বই সমূহ পড়ে আমাদের মধ্যে বিশেষ কোন পরিবর্তন আসে না। সাময়িক পরিবর্তন আসলেও তা টেকসই খুব বেশিদিন হয় না। কিন্তু বইয়ের দুনিয়ায় এই সমস্ত বই দিয়ে ভরপুর। শুধু তাই নয়, আপনি বেস্ট সেলার হিসেবে আত্ম-উন্নয়নমূলক বইগুলো বেশি দেখতে পাবেন। এই সমস্ত বই মাত্র একটি ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত দর্শনের উপর নির্ভর করে লিখা হয়েছে। আর এই দর্শনের নাম হচ্ছে ‘Stoicism (বৈরাগ্যদর্শন)’।
Stoicism (বৈরাগ্যদর্শন) কি?
এই দর্শন যদি আপনি না জানেন তাহলে এরকম হাজারো বই পড়েও নিজের মধ্যে যে পরিবর্তন চাচ্ছেন তা কখনোই হয়তো ঘটবে না। প্রকৃতির সাথে খাপ খেয়ে বা মানিয়ে চলাই হচ্ছে Stoicism (বৈরাগ্যদর্শন)। সংজ্ঞায় পাবেন, “Virtue is the only good (Highest Good)”।
Stoicism এর মূল উদ্দেশ্য
এই দর্শনের প্রধান কাজ কি? এই দর্শনের প্রধান কাজ হচ্ছে ‘Existentialist (অস্তিত্ববাদী)’ কে লাল চোখ দেখানো। একই সাথে সার্বক্ষণিকভাবে বয়ে চলা অনর্থক সমস্যা কে এক ধরণের কাঠামোতে নিয়ে আসা। এছাড়াও যাদের কাছে জীবন অনর্থক বলে মনে হয় তাদের জীবনে বৃহত্তর ও ব্যাপক ‘অর্থ (Meaning)’ দেওয়া।
Stoicism এর ইতিহাস
খৃষ্টপূর্ব ৩০০ শতাব্দীরও আগে প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার শেষের দিকে ও প্রাচীন রোম সভ্যতার শুরুর দিকে এই দর্শন নিয়ে জেনো (Zeno of Citium), সেনেকা (Seneca), এপিকটেটাস (Epictetus), মার্কাস অরেলিয়াস (Marcus Aurelius) দার্শনিকেরা ব্যাপক কাজ করেন।
Stoicism এর মূলনীতি
১. নিয়ন্ত্রণ
রহিম একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। একদিন এক ফুড ভ্লগার এসে খাবারে স্ব-ইচ্ছায় চুল ছড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করতে শুরু করলো। রহিম জানেন এই ফুড ভ্লগার নিজে থেকেই খাবারে চুল মিশিয়েছে। বিষয়টি দেখে রহিম কাস্টমারের নিকট গিয়ে বললেন, “স্যার, আপনি খাবারে চুল পেয়েছেন এজন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত! আমি আপনাকে আরো দুটি ফ্রেশ ডিশ দিচ্ছি একদম বিনামূল্যে। আমাকে মাফ করবেন।”
রেস্টুরেন্টের মালিক করিম রহিমকে জিজ্ঞাসা করলো, “রহিম, লোকটা তো মিথ্যা কথা বললো! তারপরেও তুমি অতিরিক্ত দুটো খাবারের ডিশ কেন দিতে চাও?” রহিম প্রত্যুত্তরে বললো, “এই অবস্থায় আমি সর্বোচ্চ কি করতে পারতাম? আমি যদি উনার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিতাম তাহলে আপনি আরো দশটা কাস্টমার হারাতেন। একইসাথে অনলাইন দুনিয়ায় দুর্নাম কামাতেন। এতে করে এখানে আমার চাকুরীও হয়তো থাকতো না!”
Stoicism ব্যক্তিকে তার অকাদ কতদূর সেটা আগে ভেবে দেখতে বাধ্য করাবে। ‘Individualism’ কে শক্তপোক্ত করবে। ব্যক্তিকে আগে নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে, তারপর পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। রহিম শুধুমাত্র ঐ পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেননি বরং একধরনের 'স্থিতিস্থাপকতা (Resilience)’ নির্ণয় করেছেন।
২. ভয়ানক ক্ষতির মধ্যেও নিজের অস্তিত্বের অবস্থান শক্ত রাখা
ধরুন, এক বড় বন্যায় আপনার পুরো বাড়ি এবং গবাদিপশু সহ আপনার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এক অর্থে আপনার এখন জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। কারণ পুনরায় আপনাকে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে হবে। কিন্তু ‘Stoicism’ বলবে তকদির/ভাগ্য/নিয়তির কথা। আরো স্পষ্ট করে বলা যায়, আপনার যে বাড়ি ডুবে গেছে বা যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেসব মেনে নেওয়া। নিজেকে মানানো যে, এসবই আপনার ভাগ্যে ছিলো, এসবই প্রকৃতির খেলা। এতে আপনার কোনো দায় নাই, হাত নাই। যা গেছে, তা যাবারই ছিলো। এতে দুঃখ প্রকাশ করবার কিচ্ছু নাই।
৩. আবেগে স্থিতিস্থাপকতা (Emotional Resilience) ধরে রাখা
আপনি যত ক্রোধান্বিত হবেন, দুঃখ পাবেন, কষ্ট পাবেন অথবা অধিক সুখ পাবেন তখন কোনরুপ সিদ্ধান্ত না নিয়ে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করুন। কারণ স্বভাবতই আমরা যখন খুব দুঃখে থাকি/খুব সুখে থাকি তখন আমরা যে সিদ্ধান্ত নিই তা সাধারণত ভুল নিয়তির দিকে আমাদের নিয়ে যায়। সুতরাং নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী এবং গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরী।
৪. ফোকাস হারানো যাবে না
ধরুন, সংসার চালানোর জন্য আপনার পকেটে ১ কেজি চাল কেনার টাকা নাই। কিন্তু রাষ্ট্রে বিপ্লব প্রয়োজন। কিন্তু বিপ্লব কীভাবে করবেন? না খেয়ে সারাদিন আন্দোলন করবেন কীভাবে? তারচেয়েও বড়কথা হলো, আপনি না-হয় না খেয়েই থাকলেন কিন্তু আপনার পুরো পরিবার কি না খেয়ে থাকবে? সেটা কি ন্যায্য হবে?
ঠিক একইভাবে আমরা কোনো না কোনো কাজ করছি। কিন্তু প্রায়োরিটির তালিকায় নিজের কাজটাই নাই, তাহলে চলবে ক্যামনে? আমাদের আগে নিজের কাজ নিশ্চিত করতে হবে, নিজের পেটে ভাত না থাকলে রফিক আজাদ হয়ে আবার বলবেন, “ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো”।
৫. কর্মের প্রতি সতর্ক থাকা
ধরুন, একজন দেশের বিচারপতি কে হঠাৎ দেখা গেলো পালিয়ে বেড়াতে। তার ভয়টা আসলে কীসের ছিলো? তার পালানো এত জরুরী কেন ছিলো? মানুষ কেন তার প্রতি এত ক্রোধান্বিত হলো যে, তারা বিচারপতির উপর এক ধরণের বিচার পর্যন্ত নিজের হাতে তুলে নিলো? রাষ্ট্র একজন বিচারপতির বিচার চায়! এমন হাজারো পরিস্থিতি আমাদের চোখের সামনে।
তাই আমরা যে যেখানেই যে পদেই থাকি না কেন সেটাকে দায়িত্ব মনে করা এবং নিজের কর্মের প্রতি সতর্ক থাকা। কারণ আমরা যদি ভুলভাল করি তাহলে প্রকৃতি আমাদের ছেড়ে দেবে না।
Stoicism এর সারমর্ম
Stoicism বলবে, আগামীকাল যদি কিয়ামতও হয় তাহলে আজকে খাবারের জন্য কিছু কি আপনার কাছে আছে? আজকে চলবেন কীভাবে?
Also Read It On: আত্মউন্নয়নের নামে বৈরাগ্যদর্শনের (Stoicism) মায়াজাল: বইয়ের ভুয়া প্রতিশ্রুতি ও বাস্তব জীবনের সীমাবদ্ধতা
ছবি: Zeno of Citium (Copilot Ai)
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৩৯
মি. বিকেল বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। Stoicism বা বৈরাগ্যদর্শন একটি প্রাচীন এবং সম্মানিত দর্শন, যা অনেকের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে, আমি এটিকে “ভুয়া” বলার কারণ হলো, বর্তমান সময়ে অনেক আত্মউন্নয়নমূলক বই Stoicism এর মূলনীতিগুলোকে অতিরিক্ত সরলীকৃত এবং প্রায়শই বাস্তব জীবনের জটিলতা থেকে বিচ্ছিন্নভাবে উপস্থাপন করে।
এই বইগুলো প্রায়শই এমন প্রতিশ্রুতি দেয় যা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা কঠিন। উদাহরণস্বরূপ, Stoicism এর মূলনীতি যেমন আবেগ নিয়ন্ত্রণ বা স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখা, বাস্তব জীবনে সবসময় কার্যকর নাও হতে পারে। বিশেষ করে যখন আমরা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হই, তখন এই নীতিগুলো প্রয়োগ করা অনেক কঠিন হয়ে যায়।
আশা করি, আপনি আমার দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পেরেছেন। আপনার আরও কোনো প্রশ্ন থাকলে জানাতে পারেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৪২
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: ভালোই তো, কিন্তু আপনি এটাকে ভুয়া বলছেন কেন?