নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিশ্বাসী, কিন্তু মনের দরজা খুলে রাখাতে বিশ্বাস করি। জীবনে সবথেকে বড় অনুচিত কাজ হল মনের দরজা বন্ধ রাখা। আমি যা জানি সেটাই সত্য, বাকি সব মিথ্যা…এটাই অজ্ঞানতার জন্ম দেয়।

মুক্তমনা ব্লগার

“Ask yourself often, why do I have to think like other people think?”

মুক্তমনা ব্লগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

২৫ মার্চ\'৭১- অপারেশন সার্চলাইট, পাকবাহিনীর গণহত্যা, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৬:১৪

২৫ মার্চ সন্ধ্যায় শেখ মুজিবের ধানমণ্ডিস্থ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করা হয় যে, আগামী ২৭ মার্চ সমগ্র দেশব্যাপী সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের প্রতিবাদে হরতাল পালন করা হবে। শেখ মুজিবের পক্ষ থেকে যখন এই হরতালের ঘোষণা করা হচ্ছিল ঠিক তখনই সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বিমান প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করে। রাত ১১টা ৩০ মিনিটে ট্যাঙ্ক এবং সৈন্যভর্তি ট্রাকগুলো ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরুর উদ্দেশ্যে। জিরো আওয়ার বা আঘাত হানার সময় ছিল রাত ১টা।



অপারেশন সার্চলাইট মনিটর করার জন্য ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসকের হেড কোয়ার্টার্স লনে জেনারেল আবদুল হামিদসহ সব উচ্চপদস্থ অফিসার সোফা এবং আরামকেদারা ফেলে প্রস্তুত হন সারারাত জেগে কাটানোর উদ্দেশ্যে। ‘আকাশে তারার মেলা। শহর গভীর ঘুমে নিমগ্ন। ঢাকার বসন্তের রাত যেমন চমৎকার হয়, তেমনি ছিল রাতটি। একমাত্র হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ সাধন ছাড়া অন্য সবকিছুর জন্যই পরিবেশটি ছিল চমৎকার’ (দ্র. সিদ্দিক সালিক, নিয়াজীর আত্মসমর্পণের দলিল, পৃ. ৮৪)



কিন্তু হানাদার বাহিনী ফার্মগেটের সামনে এলেই পিকেটারদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং পিকেটারদের হটানোর জন্য জিরো আওয়ারের অপেক্ষা না করেই গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শুরু হয় ‘অপারেশন সার্চলাইট’। অপারেশন শুরুর দেড় ঘণ্টার মধ্যেই কর্নেল জেড এ খান ও মেজর বিল্লাল স্বাধীনতার স্থপতি, অবিসংবাদিত নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার বাসা থেকে তুলে ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে আসে এবং ৩ দিন পর তাকে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতারের আগ মূহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। গোপন ওয়ারলেস বার্তায় তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। ছাত্র-জনতা-পুলিশ-ইপিআর শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি ঘোষণা করছি আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সর্বস্তরের নাগরিকদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন, যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সম্মিলিতভাবে শত্রুর মোকাবিলা করুন। এই হয়তো আপনাদের প্রতি আমার শেষ বাণী হতে পারে। আপনারা শেষ শত্রুটি দেশ থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান।’ নিচে দেখুন সাইন করা ঘোষণার কপি

এদিকে পিলখানায় ইপিআর ব্যারাক ও অন্যান্য স্থান থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার লিখিত বাণী ওয়ারলেসের মাধ্যমে সারাদেশে মেসেজ আকারে পাঠানো হয়। এই বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দফতরে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙর করা একটি বিদেশী জাহাজও এই বার্তা গ্রহণ করে। ঐ সময় চট্টগ্রাম অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী সাইক্লোস্টাইল করে রাতেই শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন।


রাত ১টা বাজার সাথে সাথে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা পিলখানা ইপিআর হেড কোয়ার্টারে আক্রমণ চালায়। কেন্দ্রীয় কোয়ার্টারে গার্ডে ১৮ জন বাঙালি জওয়ান থাকলেও তারা পাল্টা আক্রমণের সুযোগ পায়নি। পিলখানার সাথে সাথে রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারী বাজারসহ সমগ্র ঢাকাতেই শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ। রাজারবাগে পুলিশের বাঙালি সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তাদের সামান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই। তবে ট্যাংক আর ভারী মেশিনগানের মুখে এ প্রতিরোধ বেশিক্ষণ টেকেনি। গ্যাসোলিন ছিটিয়ে জ¦ালিয়ে দেয়া হয় পুরো সদর দফতর। বিভিন্ন এলাকাতে যথেচ্ছ হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ করে চলে বর্বর পাক হানাদার বাহিনী । পাকিস্তানি বর্বর সেনারা বাংলাদেশকে সশস্ত্র উপায়ে স্বাধীন করার উদ্যোক্তা কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ইকবাল হল (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) এবং জগন্নাথ হলে হত্যা করা হয় কয়েকশ নিরীহ ছাত্রকে এবং বড় বড় গর্ত করে পুঁতে ফেলা হয় ওইসব লাশ। ওই কালো রাতেই হত্যা করা হয় ক্ষণজন্মা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দার্শনিক অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরদা, ড. ফজলুর রহমান খান, অধ্যাপক এম মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক এম এ মুক্তাদির, অধ্যাপক এম আর খাদেম, ড. মোহাম্মদ সাদেক প্রমুখ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে। রোকেয়া হলের মেয়েদের ধরে নিয়ে যাওয়া হলো ক্যান্টনমেন্টে। সারা শহরে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করে পাষণ্ড বাহিনী। রিকশাওয়ালা, ভিখারি, শিশু, ফুটপাতবাসী কেউই তাদের ভয়াল থাবা থেকে রেহাই পায়নি। বস্তির পর বস্তি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং প্রাণভয়ে পলায়নপর আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাকে ব্রাশফায়ারে পাখির মতো হত্যা করা হয়। ভস্মীভূত করা হলো দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, সাপ্তাহিক গণবাংলা এবং দৈনিক পিপলের দফতর। মিরপুর, মোহাম্মদপুরের বিহারিরা নিজেদের বাঙালি প্রতিবেশীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো হিংস্র উল্লাসে। রাতারাতি ঢাকা পরিণত হল মৃত মানুষের শহরে। ২৬ মার্চের সূর্য উঠলে দেখা গেল ঢাকা শহরজুড়ে নিরীহ মানুষের লাশ ও ভস্মীভূত ঘরবাড়ি।



১৯৬৮ সালে ভিয়েতনামের মাইলাই গ্রামের এক হত্যাকাণ্ড স্তম্ভিত করে দিয়েছিল গোটা পৃথিবীকে। ২৫ মার্চ ’৭১ এর রাতে বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত হয় তার চেয়েও শতগুণ নৃশংসতা। ৯ মাস ধরে চলে বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদে মাইলাইয়ের বিভীষিকা। ওইদিনই শুরু হয় বিশ্ব ইতিহাসে এক অনন্য মুক্তির লড়াইমুক্তিযুদ্ধ।



সূ্ত্রঃ স্বাধীনতা যুদ্ধের অপর নায়কেরা , নুরুজ্জামান মানিক, শুদ্ধস্বর ২০০৯ ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৭:২২

আহলান বলেছেন: কি পাশবিক নির্যাতনই না তারা করেছিলো ..!! অমানুষ ...

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৫৪

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: এমন নির্যাতনের শিকার আমরা হলে সইতে না পেরে হয়ত দেশ ছেড়ে পালাতাম।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:০৮

সাগর মাঝি বলেছেন: জানোয়ারের বাচ্ছাদের যদি একবার হাতের কাছে পেতাম। তাহলে বোতা দা দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মারতাম।

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৫৬

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: ধর্ষকদের খুঁজে খুঁজে মারুন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.