নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিশ্বাসী, কিন্তু মনের দরজা খুলে রাখাতে বিশ্বাস করি। জীবনে সবথেকে বড় অনুচিত কাজ হল মনের দরজা বন্ধ রাখা। আমি যা জানি সেটাই সত্য, বাকি সব মিথ্যা…এটাই অজ্ঞানতার জন্ম দেয়।

মুক্তমনা ব্লগার

“Ask yourself often, why do I have to think like other people think?”

মুক্তমনা ব্লগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

দাঁড়াবার পথ কোথা?

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০৯

রবি ঠাকুর বলতেন, ভয়ের তাড়া খেলেই ধর্মের মুঢ়তার পিছনে মানুষ লুকতে চেষ্টা করে।

বঙ্গভূমিতে আজ এই ধর্ম মুঢ়তা নতুন মোড়কে ধর্মানুভুতি হিসেবে গোয়েবলসীয় এক প্রচারণা পাচ্ছে।

মুক্তচিন্তার নামে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া বিকৃত রুচি ও নোংরা রুচির পরিচয় বলে মন্তব্য করে সম্প্রতি সে প্রচারনায় অংশগ্রহণ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, অনুভূতি বিষয়টি সম্পূর্ণ সামাজিক একটি মনোবৃত্তি, যা ব্যক্তির সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলের উপর নির্ভরশীল। আবেগ সম্বরণ করবার দক্ষতা যাদের নেই, তারাই অনুভুতিতে আঘাত পাওয়ার নাটক সাজায়; মূলত যুক্তি দুর্বল বলেই তারা অযাচিত ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করবার চেষ্টা করে।

পক্ষান্তরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মুক্তচিন্তা একটি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গী।

“ক্লিফোর্ডস্ ক্রেডো” এর একটি বাক্যকে বলা যায় মুক্তচিন্তার মুল ভিত্তি, যা অনেকটা এ রকম “যে কোন ব্যক্তির যে কোন জায়গায় উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে কোন কিছু বিশ্বাস করা উচিত নয়”।
অথবা তা হতে পারে কার্ল সেগানের ভাষায়, “পর্যাপ্ত প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ স্থগিত রাখব”।

সচেতনভাবে মুক্তচিন্তার প্রয়োগ হচ্ছে মুক্তচিন্তন এবং এর সচেতন অনুশীলনকারীরাই মুক্তমনা। বিজ্ঞানের পরীক্ষিত ও প্রামান্য তথ্য এবং যুক্তিবিদ্যার ভিত্তিতে গ্রহন যোগ্য উপাত্ত আর প্রমানযোগ্য যুক্তির আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়া ও সেই সিদ্ধান্তের নিস্পত্তি করতে পারার দক্ষতা হল মুক্তচিন্তা।

নিজ মতামত গঠণের ক্ষেত্রে মুক্তচিন্তার অনুশীলনকারীরা কোন প্রথা, বিশ্বাস, আচার, স্বার্থ বা কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে শুধুমাত্র নির্মোহতা ও নৈর্ব্যাক্তিকতাকে প্রাধান্য দেয় বলেই তারা মুক্তমনা বলে অভিহিত; পক্ষান্তরে ধর্মানুসারীদের পক্ষে ধর্মমোহ থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব হয়না বলেই তারা মুক্তমনা নয়।

বাংলাদেশের মত একটি ধর্মাশ্রয়ী পশ্চাৎপদ সমাজ, সাম্প্রদায়িকতা যেখানে গভীরে প্রবিষ্ট এক ব্যাধি, যেখানে ধর্মের বিধি-বিধান, প্রথা ও সংস্কারগুলো আমাদের বেঁধে রেখেছে আষ্টেপৃষ্ঠে, সে সমাজে ধর্মের অসঙ্গতিগুলোই প্রাথমিকভাবে মুক্তচিন্তকদের ধারালো প্রশ্নের আক্রমনে জর্জরিত হবে সেটা অনুমেয়।

কূটকৌশল ও চতুরতার সাথে এই সব প্রশ্নকে লঘুচিত্তের বলে অনেকে এড়িয়ে চলবার চেষ্টা করলেও একবিংশ শতকের এই জ্ঞানভিত্তিক সমাজে সে চেষ্টা বালখিল্যতারই শামিল। রাষ্ট্র ও সরকার তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে প্রগতির প্রতিবন্ধক এই ধ্যানধারণাগুলোকে যতই টিকিয়ে রাখবার চেষ্টা করুক না কেন, ইতিহাস স্বাক্ষী যে সে চেষ্টা চিরকাল বিফলেই গেছে; এমনকি হয়েছে রক্তে রঞ্জিত।

তা রক্ত তো ঝরছেই; একে একে মুছে গেছে অমিত সম্ভাবনাময় সব তরুনেরা; অদম্য, অসাধারন মস্তিষ্কগুলোকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলেছে নিদারুন বর্বরতায়। স্বাধীনতার পর হতেই রাষ্ট্রীয় মদতে ধর্মান্ধদের নানামুখী আক্রমনের সরাসরি শিকার হন দাউদ হায়দার, হুমায়ূন আজাদ, শামসুর রাহমান, তসলিমা নাসরিন; এবং সাম্প্রতিক কালে ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থানের কারনেই সরাসরি খুন হন লেখক রাজিব হায়দার, অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয়, ওয়াশিকুর বাবু, নিলয় নীল, প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, নাজিমুদ্দিন সামাদরা; গুরুতরভাবে আক্রান্ত হন প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল সহ লেখক রণদীপম বসু ও তারেক রহিম।
এবং সরকার আজও, যথারীতি তার মৌলবাদ তোষণের প্রক্রিয়ায়, নানান ছলে সে দায় অস্বীকার করে চলেছে।

ভয়ঙ্কর এই খুনের ঘটনাগুলোর পরও, এটা অত্যন্ত আগ্রহব্যাঞ্জক যে তরুন বাংলাদেশীরা তাঁদের শৈশবে শেখা দূষিত মতদিক্ষার বিপরীতে যৌক্তিক চিন্তা, তথা মুক্তচিন্তার প্রতি প্রতিনিয়ত আকর্ষিত হচ্ছেন; জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রশ্ন করতে শিখছেন। আর তাঁরা প্রশ্ন করতে শিখছেন বলেই মুক্তচিন্তায় যাদের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয় সেইসব শেয়ালদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা ক্রমশই বাড়ছে; এবং তা এমন এক পর্যায়ে গেছে যে, সরকার প্রধানকেও তা নগ্ন করে তুলেছে; তাকে বাধ্য করেছে মুখোশ খুলে ধর্মান্ধদের পক্ষে নিজ অবস্থান ঘোষণা করতে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশের অন্যান্য সকল ক্ষেত্রের মতই মুক্তচিন্তার ক্ষেত্রটিও প্রশস্ত নয়, এবং তা স্বতঃস্ফূর্ত। একইসাথে তা পরিবার, পরিবেশ, ও প্রতিষ্ঠান, সকল ধরনের বিরোধিতা মোকাবেলা করেই বিকশিত। সে কারনেই এই চর্চা আজও খুব পরিশীলিত নয়; অনেক ক্ষেত্রেই তা কিছুটা অপরিণত ও আবেগী। তরুন ‘মুক্তমনা’দের অনেকের আচরণে দৃষ্টিকটুভাবে বিচক্ষণতার অভাব দেখা যায়, যা সুবিবেচিত দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। গা জোয়ারি ভাব যে যুক্তি নয়, সেটাও অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা বুঝতে অসমর্থ! যুক্তির পথ ছেড়ে অস্বীকার, অগ্রাহ্যতা, বর্জন, বিদ্বেষ আর অননুমোদনকেও অনেক সময় এঁরা তর্কের ভিত্তি বলে মেনে চলেন এবং কখনো কখনো ভুলে যান যে, অশিক্ষা থেকে উদ্ভুত সিদ্ধান্ত, কেবল মাত্র কুশিক্ষাকেই লালন করে।

কিন্তু তা বলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মুক্তচিন্তার গোটা চেষ্টাটাকেই নিরুৎসাহিত করবার প্রবণতাটি আরও ক্ষতিকর, আরও ভয়ঙ্কর। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাদের অস্বীকার করবার মধ্য দিয়ে সম্প্রতি আরও অরক্ষিত করে তুলবার একটি প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে, যাতে সরকারসহ সকল উচ্ছিষ্টভোগী বুদ্ধিজীবীরা শামিল হয়েছেন। দুর্বিনীত অহংবোধের প্রভাব শিক্ষাচ্যুত এই দলটি অশিক্ষিত না হলেও নিঃসন্দেহে কুশিক্ষিত। মুক্তচিন্তার পথকে উৎসাহিত না করে তাঁরা অবস্থান নিচ্ছেন প্রতিক্রিয়ার পক্ষে।

এঁদের অনেকেই ক্ষুদ্র স্বার্থের কারনে রাজনৈতিক ইসলামের সাথে নৈমিত্তিক ইসলামের ধারনাকে গুলিয়ে ফেলে মৌলবাদীদের মত একই ভাষায় মুক্তচিন্তকদের প্রদর্শিত করছেন ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবে। রাষ্ট্রও সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে ধর্মানুভুতি নামের অলীক এক ধারণাকে প্রশ্রয় দিয়ে, নিত্য নতুন কালো আইন তৈরি করে।

বুদ্ধিজীবীদের এই প্রবণতাটি শঙ্কার, প্রবল শঙ্কার; কারন সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ বিরোধিতা ছাড়া কোনো গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন অসম্ভব। প্রচলিত রাজনীতি সে পথে হাঁটছে না কারন কর্পোরেট ও আমলাতন্ত্র তা চায়না।

প্রথাকে প্রশ্ন করবার পাশাপাশি আজ মুক্তচিন্তকদের তাই প্রশ্ন তুলতে হচ্ছে বিদ্যমান রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থাটিকে নিয়েও, কারন খোলনোলচে পাল্টে ফেলে সম্পূর্ণ নতুন রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করা ছাড়া দাঁড়াবার আর কোন পথই আজ খোলা নেই।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:২৩

ওসেল মাহমুদ বলেছেন: এক চোখের আধেক দেখা পন্ডিতের কাছে কি ই বা আশা করতে পারি !? দুচোখ খুলুন ! পুরো টা দেখতে শিখুন ! তারপর শেখাতে আসবেন !

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৪২

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: ধর্মান্ধতা থেকে বেরিয়ে আসুন।

২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৩২

বিজন রয় বলেছেন: মুক্তচিন্তার নামে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া বিকৃত রুচি ও নোংরা রুচির পরিচয...... একভাবে খারাপ বলেননি, কিন্তু আমার হাসি পায় এই কথাই একসময় এই প্রধানমন্ত্রীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে, সেদিন আর বেশি দুরে নয়, আই এস আসিতেছে..................

লেখায় +++

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৩

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: খুব ভালো বলেছেন দাদা ।

৩| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৪

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: আধিপত্য যেকোনো ভাবে, যেকোনো প্রচারণার মাধ্যমে ওরা ক্ষমতা এবং আধিপত্য বজায় রেখে যাবে, এটিই ওদের পরিচয়। কিন্তু, মুক্তমানা ভাইবোনেরা, আমার মনে হয় আপনারা শুধুই নিজের মুক্তি এবং স্বাধীনতার কথাই বলছেন, সবার জন্যই এটি চাইতে হবে। আপনাদের কাছ থেকে সে পরিচয় বোধ হয় এখনও পাওয়া যায় নি।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৪:৪৪

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: সোজোন দেশের সকল অসঙ্গতিতে মুক্তমনাদের উপস্থিতি কি আপনি টের পান না?
আমরা তো নিজেদের জন্য কিছু লিখছি না,শুধু চাই কুসংস্কার মুক্ত একটা দেশ গড়তে ।

৪| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৩

ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেছেন: আইন প্রয়োগে কারও প্রবাহমান জ্ঞানকে দমিয়ে রাখা যায় না ।।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৪:৪৫

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: সহমত একদম মনের কথা টা বলেছেন ।

৫| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:২৫

বার্ণিক বলেছেন: দাঁড়াবার জন্য আমেরিকা রাজপথ তৈরি করছে তথাকথিত মুক্তমনাদের জন্য।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৪:৪৭

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: কেউ ইচ্ছে করে দেশ ছাড়তে চায় না,দেশ যদি নিরপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় এই লজ্জা কার ??
অবশ্যই এর দায় সরকারকে নিতে হবে ..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.