নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিশ্বাসী, কিন্তু মনের দরজা খুলে রাখাতে বিশ্বাস করি। জীবনে সবথেকে বড় অনুচিত কাজ হল মনের দরজা বন্ধ রাখা। আমি যা জানি সেটাই সত্য, বাকি সব মিথ্যা…এটাই অজ্ঞানতার জন্ম দেয়।

মুক্তমনা ব্লগার

“Ask yourself often, why do I have to think like other people think?”

মুক্তমনা ব্লগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রধান মন্ত্রীর বৈশাখী ওয়াজ ও কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন

০৩ রা মে, ২০১৬ ভোর ৬:২৫

নিহত বা মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকা মুক্তমনা লেখক ও ব্লগারদের ব্যাপারে অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। এতদিন এ ব্যাপারে একটি ধুঁয়াশা ছিল এখন প্রায় দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল কেন রাষ্ট্রের পুলিশ বা গোয়েন্দারা ভিন্নমতাবলম্বী লেখক হত্যাকান্ডের কোন সূত্র খুঁজে পায়না অথবা ক্ষেত্র বিশেষে জনতার হাতে ধরা পড়লেও কেন হত্যাকারীদের বিচার হয়না।দেশের যে সকল অভিভাবক ভিন্নপথ ধরা সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্নে আছেন তারাও নিশ্চিত হয়ে গেলেন তাদের সন্তানের দায়িত্ব সরকার বা রাষ্ট্র আর নিচ্ছেনা। অধ্যাপক অজয় রায়কে তাঁর সন্তান হত্যাকারীর বিচারের দাবীটি এখন আপন বুকের ভেতরেই সমাহিত করে রাখতে হবে। দুদোল্যমানতায় দোলার চেয়ে বরং নিশ্চিত হয়ে যাওয়া অনেক বেশী ইতিবাচক যদিও তা অনেকেরই প্রত্যাশার কফিনে শেষ পেরেক মারার মতো বেদনাদায়ক হবে। তবে সবাই যে আশাবাদী্র দলে ছিলেন বা আছেন তা কিন্তু নয়।অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক জানতেন এই সত্যটি তাই দীপনের লাশ কাধে নিয়েও তিনি বিচার নামের মিথ্যা আশা কুহকিনীকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করার মতো সাহস দেখিয়েছিলেন।আবুল কাশেম ফজলুল হক প্রথিতযশা লেখক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তিনি এই ভেতরের সত্যটি ধরতে পারবেন এটাইতো স্বাভাবিক।কিন্তু দূর মফস্বলের মানুষও যে প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্টানিক ঘোষণার আগেই তার অবস্থান ধরে ফেলেছেন তার বড় প্রমাণ মৃত্যু মিছিলের সর্বশেষ যাত্রী নাজিমুদ্দিন সামাদের পরিবার।তারাও তাদের সন্তানের প্রাণহীন নিথর দেহটি নিয়ে গেছেন রাষ্ট্রের কাছে কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না করেই।সরকার আর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এরচেয়ে বড় অনাস্থা বড় দ্রোহ আর কী হতে পারে ?
জানি আমার এ লেখাটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চোখে পড়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই তবু কিছু প্রশ্ন মনের গহীনে তোলপাড় তোলে তাই নাহয় মহাকালের কাছেই প্রশ্নগুলি রাখলাম। একাত্তরের ঘাতক কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবীতে যখন শাহবাগ উত্থাল জনসমুদ্র তখন বিরুধীদলীয়নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একে নাস্তিকদের সমাবেশ বলে মন্তব্য করেছিলেন আর আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণ জাগরন মঞ্চের অন্যতম সদস্য অনলাইন এক্টিভিষ্ট স্থপতি রাজীব হায়দার শোভনের হত্যাকান্ডের পর পরই তাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ আখ্যা দিয়ে তার বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন। কেন ? এ প্রশ্নেরও সুন্দর একটি ব্যাখ্যা আছে আপনার আমিই সেই ব্যাখ্যাটি দিই। কারণ এর আগ পর্যন্ত আপনি রাজীবের অনলাইন এক্টিভিটি সম্বন্ধে কিছুই জানতেননা। রাজীব হয়তো অনেকদিন আপনার কাছে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ হিসেবেই বেঁচে থাকতেন যদিনা মাহমুদুর রহমানের মতো ভুঁইফুর এক সম্পাদক রাজীবের ব্যক্তিগত ব্লগের লেখাগুলি তার সম্পাদিত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতো।যদিও ব্যক্তিগত ব্লগের লেখাগুলির মৌলিকত্ব নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল কিন্তু আপনি হলুদ সাংবাদিকতার এই আবর্জনাগুলিকেই বিশ্বাস করে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ফেনায়িত উচ্ছাসে শীতল জল ঢেলে দিলেন। অবশ্য গণ-জাগরনমঞ্চ নিয়ে আপনার প্রথম দিকের উচ্ছাসকে বিভিন্ন জন বিভিন্ন দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করে থাকেন।ইংরেজিতে একটি কথা আছে ‘জাম্প অন দ্যা ব্যান্ডওয়াগন’ বাংলায় হুবহু নাহলেও সমার্থক একটি প্রবচন আছে ‘জিতের নৌকায় পা দেয়া’ ঘটনাদৃষ্টে মনে হয় সেরকম একটা ব্যাপারই আসলে কাজ করেছিল।এক্ষেত্রেও আরেক বেয়ারা প্রশ্ন মনে উঁকি দিয়ে যায়, মাহমুদুরতো আপনার জ্ঞানচক্ষুকে(?) খুলে দিল তাকে তো আপনার পুরষ্কৃত করার কথা তাহলে সে জেলে কেন ?নাহ এরও ব্যাখ্যা আছে, কারণ ‘দৈনিক আমার দেশ’ এর বর্জগুলিই আবার হাটহাজারীর ধর্মপাইকারদের এমনই তাঁথিয়ে তুলেছিল যে শাপলা চত্তরে বিএনপির বিরিয়ানী আর এরশাদের পানীয় (পাগলা পানি নয়)গুণে উজ্জ্বিবিত হাজার কয়েক ধর্মোন্মাদ আপনার গদী উল্টে ফেলার অবস্থা সৃষ্টি করেছিল।গদি রক্ষার খাতিরেই সেদিন আপনি একটি সাহসী ভূমিকা নিয়ে এই উন্মাদদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই কাক তাড়ানো অভিজানকেই এক রক্তক্ষয়ী আখ্যান বানানোর কৌশল হিসেবে বিএনপি ‘লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতার’ জাতীয় ফ্রেশ প্রপাগান্ডা প্রজননে ব্যস্থ থাকা অবস্থাতেই অবাক বিষ্ময়ে শুনতে পেল তেঁতুল তত্ত্বের সেই বুড়া আল্লামা এক অনাকাংখিত অনভিপ্রেত শান্তির বাণী দিয়ে বেড়াচ্ছে ‘ আওয়ামীলীগ আর ছাত্রলীগ আমাদের বন্ধু। কি বিষ্ময়, কি বিষ্ময়! সবাই জানে এ হলো আপনার রাজনৈতিক কৌশল।নীতিহীন লুলোপ প্রাণীদের বশ করার কোন যাদুমন্ত্র আপনার হাতে নাই তবে আছে তাদের মুখ বন্ধ করার মতো গৌরীসেনীয় বিপুল সম্পদ।শুনা যায় মধ্যযুগীয় রাজা বাদশাহদের কায়দায় চাটগাঁয়ের সেই খলিফাকে রেলওয়ের অনেক মূল্যবান ভূমি জায়গীর দিয়ে ভ্রাতৃত্তের এই সেতুবন্ধনটি তৈরি করা হয়েছে এবং শুরু থেকে আজ অবধি আওয়ামীলীগ অত্যন্ত বিশ্বস্থতার সাথে সেই অলিখিত চুক্তির প্রতি প্রয়োজনের থেকেও বেশী সম্মান দেখিয়ে যাচ্ছে। অভিজিৎ রায়কে প্রকাশ্যে পুলিশ জনতার সামনে কুপিয়ে হত্যা করার পরে প্রধানমন্ত্রী নিতান্ত মানবিক কারণে এককালের শিক্ষক অজয় রায়কে ফোন করেছিলেন তাও লোকিয়ে যাতে রাখীসখাদের নজরে না আসে এমনকি চারজন প্রাক্তন বাম ঘরানার মন্ত্রী সন্তানহারা পিতাকে শান্তনা দিতে তাঁর বাসায় গিয়েছিলেন মিডিয়ার চোখকে ফাঁকি দিয়ে। আহা কি প্রগাঢ় ও বিশ্বস্থ সে মৈত্রী বন্ধন!তা হোক, বাংলার এই মসনদটি যখন যার অধীনে যায় তখনই তা লুন্ঠনের এক হীরক খনিতে পরিনত হয় এই খনি থেকে আপনারা যথেচ্ছ লুণ্ঠন দান খয়রাত করতেই পারেন সে অধিকার আপনাদের আছে এসবে দেশের আমজনতার কোনো উদ্বেগ নাই তাদের উদ্বেগ শুধু তাদের মূল্যবান(?) জানটি নিয়ে। বিরুধী রাজনীতি বিরুধী মতের কারো জীবনই এখন আসলে নিরাপদ নয় কিন্তু সবার ক্ষেত্রেই মৌখিকভাবে অন্ততঃ বলা হয় সরকার তাদের নিরাপত্তা দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কেবল সমাজের অতি সংখ্যালগু একটি অংশ যারা ধর্ম মানেনা তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে তথাকথিত সেই মৌখিক রক্ষাকবচ থেকেও ছুঁড়ে ফেলা হলো। তাদের প্রতি একটিই ম্যাসেজ, হয় ধর্ম মানো নাহয় দেশ ছাড়ো। অনেকে অবশ্য ইতোপূর্বে দেশ ছেড়ে চলেও গেছেন বাকীদেরও এবার লাগেজ বেঁধে ফেলতে হবে।প্রসঙ্গক্রমে এখানেও আরেকটি প্রশ্ন এসে যায়।চলুন ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে ফিরে যাই দু’হাজার চার সালে।ভাষার মাস। জম জমাট বইমেলা আর তার অনতি দুরত্বেই চলছে অসুরের মারণনৃত্য। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম মৌলবাদের ঘাতক চাপাতি ঝলসে ওঠে প্রকাশ্য দিবালোকে।ক্ষত বিক্ষত হন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ভিন্ন মাত্রিক লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ।জীবন মৃত্যুর সন্ধীক্ষণে দাঁড়ানো হুমায়ুন আজাদ তখন সি এম এইচে।আপনি ছুটে গেলেন সেখানে।আপনার গাড়ি আটকে দেয়া হলো কিন্তু আপনি দমলেননা পায়ে হেঁটেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিলেন।একজন লেখকের প্রতি আপনার এই অনন্য মমত্ববোধ শান্তিকামী প্রতিটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। হুমায়ুন আজাদ রাজীবের মতো অখ্যাত ছিলেননা বা তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য কোন মাহমুদুরেরও প্রয়োজন ছিলনা। কেননা ইতোপূর্বে তাঁর বিভিন্ন লেখা নিয়ে সমাজে তীব্র ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হয়েছে বিশেষতঃ তাঁর ‘নারী’ গ্রন্থটি প্রকাশের পর ধর্মীয় ব্যাপারে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট হয়ে গেছে। যথারিতি মৌলবাদী শক্তি তাঁর নামের সাথে কাফের মুর্তাদ শব্দগুলি জুড়ে দিয়েছে। এমতাবস্থায় একজন ধর্মবিরুধী লেখকের পাশে দাঁড়িয়ে আপনি প্রকৃত একজন সেকুলার নেত্রীরই পরিচয় দিয়েছিলেন। সেদিন কিন্তু হুমায়ুন আজাদের হত্যা প্রচেষ্টার দায় আপনি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের উপরই চাপিয়েছিলেন। কিন্তু আজ আপনি যখন ক্ষমতায় তখন ধর্মবিরুধী লেখকদের হত্যার দায় নিতে বা মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা লেখকদের নিরাপত্তা দানে আপনার অস্বীকৃতি কি ২০০৪ সালের সেই ভূমিকার সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়না ? নাকি সেদিনের ভূমিকা কেবলই রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য নিছকই একটি অভিনয় ছিল ? না কি বাংলা নববর্ষ নির্বিঘ্নে পালন করতে দিয়ে এক ধরণের মানসিক গ্লানি থেকেই এ ধরণের অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য ? পহেলা বৈশাখের বেলেল্লাপনা দেখে ক্ষুব্দ আল্লামা কি আপনার সুবচনে আশ্বস্থ হলেন ?
পুনশ্চ ; ক্ষমতার পালা বদলে আপনিও একদিন বিগত হবেন। নতুন যারা আসবে তারাও ইসলাম-পছন্দ দল আর তাদের মিত্রদের অনেকেই আই এস আল কায়দার মতোই আপোষহীন ইসলামী ঝান্ডাধারী। সেদিন তারা আপনার এই বিপুল ধর্মানুরাগের যথাযথ মূল্যায়ন করবে আশা করি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০১৬ সকাল ৯:০১

***উড়নচণ্ডী*** বলেছেন: খুব সাবলীল ও যত্নসহকারে বিষয়টি তুলে ধরেছেন, বেশির ভাগ বিষয় গুলিতেই পূর্ন সহমত জানাচ্ছি। সময়ের নিজস্ব ধারায় একদিন এসবের উত্তর পেয়ে যাবেন আশা করি......

০৩ রা মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৮

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: আশা রাখি আবার আশাহত হই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.