নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিশ্বাসী, কিন্তু মনের দরজা খুলে রাখাতে বিশ্বাস করি। জীবনে সবথেকে বড় অনুচিত কাজ হল মনের দরজা বন্ধ রাখা। আমি যা জানি সেটাই সত্য, বাকি সব মিথ্যা…এটাই অজ্ঞানতার জন্ম দেয়।

মুক্তমনা ব্লগার

“Ask yourself often, why do I have to think like other people think?”

মুক্তমনা ব্লগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক সুধাংশু পালিয়ে বাঁচলো

১৭ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৭

[এইমাত্র খবর পেলাম আমার এক প্রিয়জন প্রাণটা হাতে নিয়ে পালিয়ে যেতে সফল হয়েছে। আমার বুকের উপর থেকে মস্ত একটা পাথর নেমে গেল। এই কথাটি লিখতে গিয়েই অভিজিৎ “সুধাংশু তুই পালা” লেখাটির কথা মনে পড়ছে। কবি শামসুর রাহমানের “সুধাংশু যাবেনা” কবিতাটি থেকেই সম্ভবত “সুধাংশু” নামটা অভিজিৎ বেছে নিয়েছিলেন। দুজনকেই শ্রদ্ধা জানিয়ে ঘটনাটি শুরু করছি এবং গোপনীয়তার খাতিরে “সুধাংশু” নামটিই ব্যবহার করছি।]

আমার এক ভাগ্নী। বয়স পঞ্চাশোর্ধ। এই লেখায় তার নাম বিলু। দুটো ইন্দ্রিয় হীনতা নিয়ে ওর জন্ম – মুক এবং বধির। ইন্দ্রিয় প্রতিবন্ধীদেরকে নাকি বাকী ইন্দ্রিয় গুলো খুবই প্রখর হয়। কিন্তু আমার ভাগ্নীর ক্ষেত্রে তা হয়নি। জন্ম থেকেই সে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কখনও হাসে। তবে মলিন হাসি। হয়ত বুঝে সবটা সে বুঝেনি। তাই পুরোটা হাসতে পারে না। দেশ-কাল-পাত্র, এই পৃথিবী, এবং মানুষ সমন্ধে তার কোন ধারণাই জন্মেনি। কিন্তু মাত্র গত একটি বছরে সে এই পৃথিবীর হিংস্র মানুষ সমন্ধে কিছু ধারণা লাভ করল।

প্রতিবন্ধী হলেও অসম্ভব ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিল বিলু। সুধাংশু নামে এক অসম্ভব রকম ভাল ছেলের সাথে বিয়ে হয় বিলুর। সুধাংশু এমএ পাশ করে বেকার। কিন্তু দাঁড়াল বিলুর পাশে। বলল – “সুখে-দুঃখে আমি ওর সাথী। পৃথিবীতে কোন ভাল কাজ করার মত বিদ্যা এবং বুদ্ধি আমার নেই। কিন্তু বিলুর সমস্ত দুঃখ-বেদনা আমি ঘুচিয়ে দেব।” সংসারে যোগ হল একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে। ছেলের বয়স বাইশ আর মেয়ের নয়। ছেলেটি প্রায় একবছর গা ঢাকা দিয়ে থাকল। তারপর জীবণ নিয়ে ভারতে পাড়ি দিল। সুধাংশু চেষ্টা করল দোকানটা চালু রাখতে। খেয়ে পড়ে বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।

ছোট এক মফস্বল শহরে সুধাংশু একটা গিফট শপ চালায়। দারূণ চলছিল ব্যাবসাটি। ফলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের নজরে বিলম্ব হয়নি। ব্যাটা ১০০% মালাউন, কাফের, বিধর্মী। বিশ্ব শান্তির দেশ, মদিনা সনদের দেশে বাস করবে এবং ব্যাবসা করবে অথচ জিজিয়া কর দিবে না, তা কি চলে? লুন্ঠন, চাপাতি, ধর্মান্তরকরণ ইত্যাদি ঈমানী দায়িত্ব পালন না করলে হবে কী করে? শুরু হলো চাঁদাবাজি, নানাবিধ উপদ্রব আর হাঙ্গামা এবং দেশ ছাড়ার হুমকি। ছেলের জীবন নাশের আশংকা সৃষ্টি হল। সুধাংশু দেখলো – সন্ত্রাসীদের মন যুগিয়ে থাকলেও প্রাণটা থাকে ওদের হাতে। ছেলেকে ভারতে পাঠিয়ে দিল। ছেলে বাড়ী আসে না। কেন আসে না, বিলু তা বুঝতে পারে না। বাংলাদেশ আকাশ-পাতাল পালটে গেছে। বিলু এসব খবর জানে না, বুঝে না। সুধাংশু বুঝাতে চেষ্টা করে। বিলু মন খারাপ করে বসে থাকে। মানুষ তার ছেলেকে কেন মারবে এটা বিলুর মাথায় কিছুতেই ঢুকে না। সুধাংশু হাতের ঈশারায় কথা বলে। রান্নাঘরের ছুড়িটা সুধাংশু নিজের গলায় ধরে দেখায় সন্ত্রাসীরা কী ভাবে তার ছেলেকে গলা কেটে মেরে ফেলবে। বিলু জানে পৃথিবীতে সুধাংশুর চেয়ে বড় ভরসা তার আর কেউ নেই। বিলু ফ্যাল ফ্যাল নয়নে তাকিয়ে থাকে। সুধাংশু ছাড়া বিলুর জীবনে আর কোন সত্য নেই। বিলু দেবতার পায়ে ফুল জল দেয়। প্রার্থনা করে। ছেলে যেন ভাল থাকে।

সুধাংশু একটা জমি কিনেছিল। স্বপ্ন ছিল তিন তলা বাড়ী বানাবে। দুটো ফ্লোর ভাড়া দেবে। একটাতে নিজেরা থাকবে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে হল – জমিটা চুপি চুপি আগে বিক্রী করবে। তারপর দোকানটা বিক্রী করে বিলু এবং মেয়েকে নিয়ে এক অন্ধকার রাতে পালাবে। কিন্তু সুধাংশু তা করতে পারলনা।

চুপি চুপি জমিটা ৩২ লক্ষ টাকা বিক্রী মূল্য ধার্য হল। কিন্ত এ খবর আওয়ামী লীগের কমিশনারের কানে যেতে সময় লাগল না। ডেকে পাঠিয়ে বলল – কীরে মালাউনের পুত, জমি বিক্রি করবি, তো কমিশনার জানে না কেন? মাথায় বুদ্ধি বেশী অইচে? অক্টোপাশের নাম শুনছস? সমুদ্রে থাকে। আটখানা পা। চাইরপাশের সমস্ত জিনিষ থাকে তার দখলে। আমার কয়টা জানস? পঞ্চাশটা। ঢাকা থাইক্যা খবর রাখি, নারায়নগঞ্জের খবর, মানিকগঞ্জের খবর, টাংগাইলের খবর। যা পরশুদিন রেজিষ্ট্রি দিবি এবং নগদ দুই লক্ষ টাকা নিয়ে যাবি।

আওয়ামী লীগের টিকিটে এই কমিশনার জিতে। একই পার্টির অন্য নেতা “দন্ত–ন” নমিনেশন না পেয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ আছে। সুধাংশু তার তার শরনাপন্ন হলো। দন্ত-ন মূল খরিদ্দারকে ৩২ লাখ টাকা নিয়ে তার কাছে খবর পাঠিয়ে দিল। দন্ত-ন ১৫ লাখ আলাদা করে সুধাংশুর হাতে দিয়ে বললেন – এই নে ১৫ লাখ। বাকীটা থাক আমার কাছে। পরে নিস। ঐ হালার পুত তোকে ২ লাখ দিব কইছে। এক পয়সাও দিত না। আমার জন্য তুই ১৫ লাখ টাকা পেলি। এখনই রেজিস্ট্রি অফিসে যেয়ে ওকে জমিটা রেজিস্ট্রি করে দে।

সুধাংশু বলল – আমার দোকানটাও আপনে ন্যান।

নেতা – কত দাম?

সুধাংশু দামটা কমিয়েই বলল – ২০ লাখ টাকার বেশীই হবে। তবে আপনার বিবেচনায় যা হয়, তাইই দেন। দন্ত-ন রেগে গেলেন – তোর কাছে বিশ লাখ টাকাই বড়, নাকি তোর আর বৌ-পুলাপানের জীবন বড়? শালার মালাউনরা জীবন দিব, কিন্তু ট্যাকা ছাড়ব না।

পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে বললেন – এই নে। এই ট্যাকা দিয়ে বর্ডার পার হবি। এইটাই তোর দোকানের দাম। পকেট থেকে আরও এক হাজার টাকা ছুড়ে দিয়ে বললেন – জমি রেজিস্ট্রির পরে একটা সিএনজি নিবি। বাসা থেকে বৌ-পুলাপান তুলে সোজা বর্ডারের উদ্দেশ্যে রওনা দিবি। ওই হারামজাদা কমিশনার যদি টের পায় যে, তোর জমির এখন আমার হাতে, ও শালা আমারে নিয়া ঝামেলা করব না। কিন্তু তোরে সতর টুকরা কইর‍্যা বুড়িগংগায় ‍ফালাইয়্যা দিব। যা, এক মিনিটও দেরী করবি না কোথাও।

সুধাংশু ঘরে ঢুকেই নিজের ঠোটে আংগুল রেখে মেয়েকে ফিস্‌ফিসিয়ে বলল – চুপ। তারপর এক হাতে বিলুর মুখ চেপে ধরল। অন্য হাত দিয়ে নিজের গলা কাটার দৃশ্যটা বুঝিয়ে দিল। দরজার দিকটা দেখায়ে বলল – ওরা আসছে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলতে। বিলু জানে না কী করতে হবে। আতংকে বিলুর মুখটা ধূসর হয়ে গেল। সুধাংশু মেয়ে এবং বিলুকে টিনে হিছড়ে ঘর থেকে বাইরে দাঁড়ানো সিএনজিতে ঢুকিয়ে দিল। বিলু আলনা থেকে কয়েকটা শাড়ি নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সুধাংশু বিলুর হাত থেকে সব কটা এক ঝামটায় মেঝেতে ফেল দিল।

তখন প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে গেছে। রাস্তায় বিজলী বাতি জ্বলে উঠেছে। কাছে না এলে মুখ বুঝা যায় না। সেটাই সৌভাগ্য। ওদের দেখলে যে কেউ জিজ্ঞেস করত – কী ব্যাপার? কাউকে মেরে টেরে পালাচ্ছ নাকি? সুধাংশু সচকিতে দেখে নিল – কেউ দেখেনি। সিড়ি বেয়ে সবাই এক কাপড়ে এক বন্ধুর বাসায় উঠল। ওখানে আট দিন থাকল। একদিনও একটা জানালা পর্যন্ত খুললো না।

ঘটনা প্রবাহ শুনে আমার অন্তরাত্মা শুকিয়ে গিয়েছিল – এই বুঝি কমিশনারের লোকেরা সুধাংশুদেরকে ধরে ফেলেছে। বা পত্রিকাতে সুধাংশুদের লাশের খবর বেরিয়েছে। আমি প্রতিদিন সকাল-বিকাল সংবাদ নিই। প্রথমেই প্রশ্ন করতাম – সব ঠিক আছে কি? ওপাশ থেকে যখন ‘হ্যা’ সুচক শব্দটা শুনতাম, উতকন্ঠা কমত। কিন্তু দেশ না ছাড়া পর্যন্ত শান্তি ছিল না।

ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার দিয়ে প্রতিনিয়ত লোক যাতায়াত করে। দু-দেশের মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা নাই। কিন্ত দুপাশের পুলিশের মধ্যে টাকা পয়সা ভাগাভাগি নিয়ে সুসম্পর্ক আছে। এরা টাকা পায় থার্ড পার্সনের কাছ থেকে। থার্ড পার্সনরা দালাল নামে পরিচিত। সাধারণ লোকেরা এসব দালালকে টাকা দেয়। দালাল কিছু নিজে রেখে বাকিটা দুপাশের পুলিশকে দেয়। দুপাশের পুলিশেরা সেলফোনে কথা বলে সুবিধা জনক সময় দালালকে জানিয়ে দেয়। লোকজন তখন এপাশ-এপাশ যাতায়াত করে। ভারতীয় গরু এভাবেই বাংলাদেশে ঢুকে। সুধাংশু এরকম একজন দালাল খুজছে। আমি বলে দিলাম – নিশ্চিত হওয়া চাই দুপাশের পুলিশের হাতে যেন টাকা পৌছে। টাকা না পেলে সুযোগ পেলেই পুলিশ – যে পাশেরই হউক – ফেলানী করে ছাড়বে। এক একটা ফেলানী বানাবে আর দেখিয়ে দিবে পুলিশরা কত সৎ চরিত্রবান, নিষ্ঠাবান আর দায়িত্ববান। এসব পুলিশদের নাকের ডগা দিয়ে সুধাংশুদের বর্ডার ক্রস করতে হবে। এটা সমস্যা না। সমস্যা হল – কমিশনারের চরেরা যদি পিছু ধাওয়া করে বর্ডার পর্যন্ত চলে আসে। ধরা পড়লে কমিশনারের লোকেরা ওদেরকে একেবারে ফেলানী করে ফেলবে।

আজ আমার এখানে এখন সকাল। ঘড়ির কাটায় হিসেব করে আমি ভাতিজাকে ফোন করলাম। ভাতিজা সুসংবাদ দিল। আমার বুকের উপর থেকে মস্ত একটা পাথর সরে গেল।

– আপনাকে ফোন করতে যাচ্ছি তখনই আপনি ফোন করলেন। এখনই সুধাংশুরা নিরাপদ জায়গায় পৌছে গেছে।

ভাতিজার আতংকের অবসান হয়েছে। এখন আনন্দের সীমা নাই। দন্ত-ন ১৭ লাখ টাকা মেরে দিল। ওটা কোন ব্যাপার না। ভাতিজা আনন্দ প্রকাশ করে শেষ করতে পারছে না। কথার পর কথা বলে যাচ্ছে। সুধাংশুকে নিয়ে ইতিমধ্যে হাস্যরস শুরু হয়েছে, সেকথাটাও ভাতিজা বলল। সুধাংশু খুবই তৃষ্ণার্ত ছিল। ভারতে পা দিয়েই প্রচুর জল খেয়েছে। পাশ থেকে একজন বলল – ও দাদা, পশ্চিম বঙ্গে ঢুকেই সব জল তো আপনি একাই খেয়ে ফেললেন। ফারাক্কায় একফোটা জল নেই, আছে শুধু বালির স্তুপ। আপনার মত জলখাদক আর দুটো এলে পশ্চিম বংগ মরুভূমি হতে আর সময় লাগবে না, দাদা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:০৩

সোজোন বাদিয়া বলেছেন:
অসাধারণ!!!

আমি আপনাকে আর একবার জিজ্ঞেস করতে যাব না এই গল্প কতখানি সত্যি। এটি যদি নিছক গল্পই হয়ে থাকে তাহলেও যার সামান্যতম বিচার-বিবেচনা আছে তার অনুভব করতে কোনো অসুবিধা হবে না যে এর চেয়ে সত্যি কথা আজকের 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনার' বাংলাদেশে আর কিছু হতে পারে না। ভাল থাকুন।

১৯ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৮

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: সোজন ভাই,
সাম্প্রতিক কালে এইগুলোই ঘটছে বাংলাদশে,আপনি সুইডেন প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধের লেখক মিশু ভাইকে চেনেন ?
উনার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা তা সত্বেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি তাদের এক খানা জমি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ইভেন তার বোনকে মারাত্বক আহত করা হয়েছে।
চিন্তা করে দেখুন কই বাস করি আমরা,যারা দেশের জন্য নিজেদের বিলিয়ে দিল এই দেশে তারাই আজ ভিকটিম ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.