নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিশ্বাসী, কিন্তু মনের দরজা খুলে রাখাতে বিশ্বাস করি। জীবনে সবথেকে বড় অনুচিত কাজ হল মনের দরজা বন্ধ রাখা। আমি যা জানি সেটাই সত্য, বাকি সব মিথ্যা…এটাই অজ্ঞানতার জন্ম দেয়।

মুক্তমনা ব্লগার

“Ask yourself often, why do I have to think like other people think?”

মুক্তমনা ব্লগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোবিন্দগঞ্জ, সাঁওতাল, অন্ধকার,আলো

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৮

গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লী দেখে এলাম। তারিখটা ছিল ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬। ক্রিসমাস ছিল সেদিন। অথচ, সন্ধ্যা হতে না হতেই ওখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কারণ আজ পর্যন্ত ওখানে বিদ্যুৎ পৌঁছায় নাই। বিদ্যুৎ দেয়ার প্রতিশ্রুতি বারবার দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ দেয়ার কথা বলে প্রতি পরিবার থেকে ১০০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। ২৫০০*১০০০ = ২৫,০০,০০০ (২৫ লক্ষ) টাকা মেরে দেয়া হইসে। অবশ্য যাদের বাপদাদার জমিই মেরে দেয়া হচ্ছে তাদের কাছে ওটা খুব বেশি ক্ষতি না।

আমাদেরকে গাইবান্ধার পরিচিত মানুষজন ওখানে যেতে নিষেধ করেছিলেন। আমরা তবু গিয়েছিলাম। প্রথমে মুসলিম পাড়া, সেটা অতিক্রম করে যেতে হয় সাঁওতাল পাড়া। ঘুটঘুটে অন্ধকার। অজানা জায়গা। আতঙ্কে কাউকে ঠিকানাও জিজ্ঞাসা করা যায় না। টর্চ জ্বালাতেও ভয়। জোরে পা ফেলতে ভয়।

আমরা হাঁটছি। আমরা হাঁটছি। আমাদের শহুরে অনভ্যস্ত পা। আমরা অসমতল জমিতে হাঁটছি, আমরা আইল ধরে হাঁটছি। পিছলে পড়ে যাচ্ছি। পকেট থেকে পাওয়ার ব্যাংক, কেবল, মোবাইল বের করে পাওয়ার ব্যাংকের ফুঁটো খুঁজে বের করে কেবলের একপ্রান্ত ঠিকঠাক ঢুকিয়ে মোবাইলের ফুঁটো খুঁজে বের করে কেবলের চিকন প্রান্ত সেটায় ঢোকানো – এইটুকু কাজ তখন এক বিশাল যজ্ঞ। সেটা করতে গিয়ে হাত থেকে মোবাইল পড়ে গেলো। মোবাইল খুঁজতে খুঁজতে নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছিলো; একটুআগে গোবিন্দগঞ্জ থানামোড় থেকে এখান পর্যন্ত আসার সময়কার অন্ধকার একলা স্বাস্থ্যহীন রাস্তাটা, যার দুইপাশে শুধুমাত্র বিশাল বিশাল আখের খেত কুয়াশার নিচে শ্বাসরোধ হয়ে মরছিলো এবং আমরা শীতে কাঁপতে কাঁপতে এমন একটা টমটমে করে লম্বা পথটা পাড়ি দিচ্ছিলাম যার ব্যাটারি বিকেল থেকে ক্ষুধার্ত এবং যে বারবার রাস্তার মধ্যে থেমে পড়ছিলো – সেই অভিজ্ঞতাটাকে হঠাৎ যথেষ্ট সহজ মনে হচ্ছিলো।

আমরা হাঁটছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে আমরা সেই কাটাতারে ঘেরা জমির সামনে থমকে দাঁড়ালাম। এক সহস্র আটশত বেয়াল্লিশ দশমিক তিন শূণ্য একর যার ক্ষেত্রফল। এখন এখানে বসতির চিহ্ন নাই। যন্ত্রদানব এসে মাটি সমান করে দিয়েছে। দ্রুত বুনে দেয়া হয়েছে ধানবীজ। আমরা কাঁটাতার ছুঁয়ে ছুঁয়ে আস্তে আস্তে হাঁটতে থাকি। এবং একসময় আমরা সাঁওতালদের ঘরবাড়ি দেখতে পাই। আমাদের হাঁটার গতি বেড়ে যায়। কাছে গিয়ে টর্চ মেরে আবিষ্কার করি, ঘর নয়, ওগুলো সারি সারি তাঁবু। অনেকগুলো তাঁবু পেড়িয়ে হয়তো একটা অক্ষত মাটির ঘর পাওয়া যাবে। সেই ঘরের প্রতি কক্ষে একাধিক পরিবার, বারান্দায় একটা/দুটো পরিবার, উঠোনে একটা খাট পেতে তার ওপর একটা পরিবার – হয়তো মাথার উপর কাঁথা ঝুলোনোর ব্যবস্থা করে কুয়াশা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে অর্ধবর্ষী শিশুটিকে।

আমরা স্থানীয় প্রতিনিধি গোছের দুজন মানুষ পেলাম। এখানে তাঁদের নাম না লেখাই ভালো। তাঁরা আমাদের সাথে কথা বললেন। কথাগুলোর বেশিরভাগ হয়তো আমরা আগে থেকেই জানি, কিন্তু তাঁদের মুখ থেকে শুনতে অন্যরকম লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো, তাঁদের জমাট বাঁধা কষ্ট তাঁরা কেটে কেটে ছোট ছোট পিস করে আমাদেরকেও একটু করে দিচ্ছেন। বড়দিনের দিনে এইটুকু রসদ-ই তো তাঁদের আছে এখন।

সাঁওতালদের থেকে জমি লিজ নেয়া হয়েছিলো ১৯৬২ সালে – পাকিস্তান আমলে; চিনিকল করবে বলে। স্থানীয় বাঙ্গালীদেরও কিছু অংশ ছিল সেই জমিতে। সেখানেও জোর জবরদস্তি ছিল। সেসময় ওদেরকে জমির দামও দেয়া হয় নি, কেবল জমিতে যে ধান ছিল সে ধানের দাম দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ওখানে চিনিকল দাঁড়িয়েছে। চুক্তিপত্রে একটা কথা ছিল এমন, যদি কখনো এই জমিতে চিনিচাষ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে জমির প্রকৃত মালিকের কাছে জমি ফেরত দিতে হবে।

২০০৩ সাল থেকে সেখানে চিনিকল বন্ধ। সাঁওতালদের জমিতে তাদের চোখের সামনে স্থানীয় এমপি, ইউপি চেয়ারম্যানরা বর্গাচাষ করায়, লিজ দেয়, ব্যবসা করে – সাঁওতালরা তাই বাধ্য হয় তাদের সব সহজ-সরলতাকে একপাশে ফেলে রেখে কঠোর আন্দোলনে নেমে পড়তে। “সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ইক্ষু খামার জমি উদ্ধার সংহতি কমিটি”র নেতৃত্বে তারা এমপির ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলো। এবং তারা পাশে পেয়েছিলো প্রতিবেশী বাঙ্গালীদেরও।

তবে সমস্যা অন্য জায়গায়। এমপি সাহেব যখন জমি লিজ দিচ্ছেন, তখন তো পাশের মুসলিম পাড়ার প্রতাপশালীরা বেশ সস্তায় ভালো জমি পাচ্ছেন। সুতরাং, তারা আন্দোলনের বিরুদ্ধে। তাদের ভয়ে কিংবা প্রভাবে মুসলিম পাড়ার সাধারণ লোকজন তাদের এতোদিনের প্রতিবেশীদের জন্য খুব বেশি কিছু করতে পারছেন না!

মজার ব্যাপার হচ্ছে, সাঁওতালরা এক্কেবারে শুরু থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক। প্রত্যেকটা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এখান থেকে ‘পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ এর বার্তা পেয়েছে। এবং, এখনো সাঁওতালরা কেবল গাইবান্ধা – ৪ আসনের ‘দুষ্ট এমপি’ অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদকেই দুষছেন, সরকারকে নয়। হায় সরলতা!

কী ঘটেছিলো ৬ নভেম্বর? নিতান্ত কূপমণ্ডুক ছাড়া সবার জানা থাকার কথা। তবু আমরা ভূক্তভোগীদের কাছে জানতে চাইলাম। দাদা, একবার বলুন!

সেদিন একসাথে প্রবেশ করেছিল পুলিশ-র‍্যাব-বিজিবি এবং স্থানীয় মাস্তান বাহিনীর বিশাল বহর। সেদিন এতো পরিমাণ গুলি ছোড়া হয়েছিলো যতোটা একাত্তরেও সাঁওতালদের দেখতে হয় নি। সবচে’ দু:খের কথা হচ্ছে, মানুষগুলোকে একটাবারের জন্য নোটিশও দেয়া হয় নি। অকষ্মাৎ তারা দেখলেন, যারা রাস্তায় ছিল তারা গুলি খেয়ে কাতড়াচ্ছে। মঙ্গল মার্ডি লাশ। শ্যামল হেমব্রমের লাশের পা ওল্টানো। অকষ্মাৎ তারা দেখলেন, ঘরবাড়ি-হাঁস-মুরগি-গরু-বাছুর-সহায়-সম্পত্তি সব দাউদাউ করে স্বর্গে চলে যাচ্ছে!

আমরা চরণ সরেনের বাড়ি গিয়েছিলাম, যিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি আমাদেরকে দেখিয়েছেন তাঁর পায়ের গুলির ক্ষত। তাঁরা দু:খ করছিলেন, বড়দিনের দিন আমাদের কোনোরকম আপ্যায়ন করতে পারছেন না! আর, আমরা মনে মনে নিজেদের গালি দিচ্ছিলাম – কেন খালি হাতে এখানে চলে এলাম? আসলে আমরা খুব আত্মতৃপ্তিতে ছিলাম – চুয়েট ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আমরা প্রচুর শীতবস্ত্র সংগ্রহ করে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, এজন্য। কিন্তু ওদের সাথে সরাসরি কথা বলার পর বুঝতে পারলাম, ওদের আসলে এখন শীতবস্ত্র প্রচুর হয়ে গেছে, ওদের এখন চালডাল দরকার। এবং, বেশ ভালোভাবেই দরকার।

ওদের ফসল ধ্বংস করা হয়েছে, জমি দখল করে কাঁটাতার দেয়া হয়েছে, আক্রমণের পরদিনই ওদের বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে হাঁস-মুরগি-গবাদি পশু-সহায় সম্বল লুটে নেয়া হয়েছে, পিলার নিয়ে গেছে ৯ টা, শ্যালা মেশিন নিয়ে গেছে ১৬ টা, পুকুরের মাছ নষ্ট করা হয়েছে যেখান থেকে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা আসবার কথা, ৪৫ একর জমিতে পাট কর্পোরেশনের পাট নষ্ট করা হয়েছে যেখান থেকে সাঁওতালদের ৮-৯ লক্ষ টাকা আসবার কথা। এবং এখনো, প্রতিনিয়ত তাদের হুমকিধামকি দেয়া হচ্ছে। কিছুদিন পর পর মাইকিং করে জায়গা ছাড়ার হুকুম দেয়া হচ্ছে।

তবে ওদের সাথে কথা বলে আমরা বিমুগ্ধ হয়েছি। এতকিছুর মধ্যেও ওরা সংকল্প থেকে সরে আসে নি। ডিসি এসেছিলো তাদের কাছে। তিনি বলেছেন, ১৪ একর জমির ওপর পুনর্বাসন কেন্দ্র করে দেবেন। সাঁওতালরা বলেছে, তারা নিজেদের বাপদাদার জমির জন্য লড়াই করেছে, তাদের তিনজন প্রাণ দিয়েছে; তারা পুনর্বাসন কেন্দ্রের জন্য লড়াই করে নি। ডিসি বলেছেন, তোমরাও জমি লিজ নিয়ে থাকতে পারবে। সাঁওতালরা বলেছে, নিজের জমিতে তারা নিজের অধিকারেই থাকবে, লিজ নিয়ে নয়। সরকার থেকে ত্রাণ এসেছিলো; সাঁওতালরা সেটা ঘৃণাভরে ফিরিয়ে দিয়েছে। স্যালুট! স্যালুট!

আমরা বিজয় দেখতে পেয়েছি। সাঁওতালরা বিজয় ছিনিয়ে আনবেই। তবে ওদের সাহায্য প্রয়োজন। অনেক সাহায্য। সবরকমের সাহায্য। কেননা ওদের প্রতিপক্ষ অনেক শক্তিশালী। ওদের প্রতিপক্ষ কতটা শক্তিশালী সেটা টের পেয়েছিলাম ফেরার পথে। টমটমের ড্রাইভারকে বললাম, দাদা, এখানে তো কিছুদিন আগে সাঁওতাল পাড়ায় একটা ঘটনা….। ড্রাইভার সাহেব হড়বড় করে বলে উঠলেন, “না বাপু, আমি কিচ্ছু জানি না। কিচ্ছু শুনি নাই। গাড়ি চালাই। ঘরসংসার করি। বাচ্চাকাচ্চা আছে। কোনো ঝঞ্ঝার মধ্যে নাই!”

আমি চুপ মেরে গেলাম। কিছুক্ষণ পর ড্রাইভার সাহেব নিজেই আবার কথা বলতে শুরু করলেন, “আসলে দুনিয়াটা আর ভালোর নাই। ধর্মকর্ম কিছু নাই। গরিবের কথা বলার কেউ নাই। গরিবের সামান্য যা আছে সেইটাও কাইড়া নেয়ার দিকে সবার খেয়াল।…”


মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৭

প্রািন্ত বলেছেন: সোজা কথায় বলি- একদম ভন্ডামী পোষ্ট। ভাই, আপনি যেই হোন আপনি এদেশের কতিপয় মিডিয়ার কতিপয় তথ্যা সন্ত্রাসী ছাড়া আর কিছুই নন। আমি আপনার সাথে চ্যালেঞ্জ করছি আপনার ভন্ডামীপূর্ণ এই পোস্টকে আমি যদি ১০০% মিথ্যা প্রমাণ না করতে পারি তাহলে আমি আপনার এই ব্লগেই আপনার নিকট থেকে ক্ষমা চেয়ে নেব। আপনার লেখা প্রতিটি কথা ভন্ডামীতে পরিপূর্ণ। আপনি স্থানীয় বাঙ্গালীদের মতামত নিয়েছিলেন? কত জনের কাছে শুনেছেন? প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে আপনাদের মত কথিত কিছু সুশীল সমাজের ধ্বজাধারীরা অহেতুক সন্ত্রাসী সাঁওতালদের পক্ষ নিয়েছেন। ওরা যখন সরকারী জমি দখল করে তখন আমরা তাদের দাবীর স্বপক্ষে অনেক প্রমাণ খোজার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন প্রমাণ নেই। গত ডিসেম্বরে সাঁওতালদের নিয়ে যে ঘটনা ঘটে গেল তা নিয়ে দেশবাসিকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশনে মিডিয়াগুলো নিলর্জ তথ্য সন্ত্রাস গোবিন্দগঞ্জ এলাকার লাখ লাখ বাঙ্গালী জনগণকে করে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। সেই সাথে আবার গোদের উপর বিষফোরার মত যুক্ত হয়েছে নামসর্বস্ব কিছু সংগঠন ও সংস্থা। না বুঝেই যে যার মত করে মন্তব্য করে যাচ্ছে। ঘটনাটি প্রায় দুই মাস অতিক্রান্ত হলেও এখনও এই ধারা অব্যহত করেছে কিছু দালাল মিডিয়া। আজ প্রথম আলো অন লাইনে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে ফারুক ওয়াসিফ প্রসঙ্গক্রমে লিখেছেন- গত ডিসেম্বরের ঘটনা। পূর্বপুরুষের জমি দখলের প্রতিবাদ করায় সাঁওতালপল্লি পুড়িয়ে দেওয়া হয় গোবিন্দগঞ্জে। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি জাতীয় পত্রিকার এমন লেখায় আমরা মর্মাহত। আমরা প্রথম আলোর এমন মন্তব্যে তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই।
প্রসঙ্গক্রমে এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৫৩-৫৪ সালে রংপুর চিনিকলের খামারের জন্য ১৮৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করেন তৎকালীন সরকার। সেসময় উপযুক্ত বাজার মূল্যে সকলের জমির মূল্য পরিশোধ করা হয়। প্রায় ৯৫% শতাংশ জমি বাঙ্গালী হিন্দু-মুসলমানদের এবং বাকী ৫% জমি ছিল সাঁওতালদের। কিন্তু ৬২ বছর পর সাঁওতালরা তাদের নেতা ফিলিমন বাস্কে ও স্থানীয় বাটপার এবং কথিত ‍ভূমি উদ্ধার কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলীর প্ররোচনায় জমি নিজেদের দাবী করে জোরপূর্বক চিনিকলের সরকারী জমি দখল করে ঝুপড়ি ঘর তুলে জায়গা দখল করতে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরীব সাঁওতালদের লোভ দেখিয়ে গোবিন্দগঞ্জ নিয়ে আসে। তাদের নিকট থেকে ৪০/৫০ হাজার নেয়া হয় জমি দেওয়ার কথা বলে। এনিয়ে চিনিকলের সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারীরা বহুবার রাজপথ অবরোধ- রেলপথ অবরোধ সহ নানা আন্দোলন সংগ্রম করেছে। প্রশাসনের দরজায় দরজায় তারা ধর্ণা দিয়েছে।
একদিকে চিনিকলের সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রশাসনের দরজায় ধর্ণা দিচ্ছে অন্য দিকে সাঁওতালরা একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে চলেছে। তারা খামারের অফিসে হামলা চালিয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের মারপিট, অফিস ভাংচুর, পুলিশের অস্ত্র ছিনতাই, এমনকি সেখানকার বাঙ্গালীদের উপরও তারা চড়াও হয়ে হামলা করেছে। এ অবস্থায় চিনিকলের খামারের জমিতে বীজ আখ কাটার সময় সাঁওতালরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চিনিকলের শ্রমিকদের উপর হামলা করে। খবর পেযে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তারা তীর ধনুক নিয়ে পুলিশের উপর হামলা করে ৯ পুলিশ সদস্যকে গুরুতর ভাবে আহত করে। পুলিশ বাধ্য হয়ে তাদের অন্যায় ভাবে দখল করা সরকারী জমি দখল মুক্ত করে। এসময় সরকারী জমিতে তোলা ঝুপড়িতে আগুন দেয়া হয়। স্থানীয় মানুষ, চিনিকল শ্রমিক ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ২ সাঁওতালের মৃত্যু হয় পর দিন। তারা দুই জনই দেশের অন্য এলাকা থেকে জমি দখল করতে এসেছিল।
সরকারী জমি দখল মুক্ত করতে সদ্য তোলা ঘড়ের ঝুপড়িতে আগুন দিলে প্রথম আলোর মত দালাল মিডিয়ার কল্যাণে সেটা সারা দেশের মানুষের কাছে সাঁওতালপল্লি হিসেবে পরিচিতি পায়। ফলে দেশের আদালত, মিডিয়া, সুশীল সমাজ, এনজিও ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো তীব্র ভাবে প্রশাসনের কর্মকান্ডের সমালোচনা করতে থাকে এবং সাঁওতালদের জন্য সাহায্যের হাত নিয়ে ছুটে আসেন গোবিন্দগঞ্জে।
ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক বারাকত হোসেন ছুটে এলেন গোবিন্দগঞ্জে। তিনি সাঁওতালদের কাছে ঘটনা শুনে ঢাকায় ছুটে গিয়ে সাংবাদিকদের জানালেন, আমি সব কিছু দেখে এসেছি, জমি যে সাঁওতালদের এতে কোন সন্দেহ নেই। অথচ তিনি কোন বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাথে কথাই বলেননি সেখানে। কেন? সেখানকার বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির কি কোন আবেগ অনুভূতি নেই? রাতে বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে টকশোর বাচালরা শোরগোল তুললেন। তারা এমন ভাবে কথা বললেন যেন- তাদের বাপ-দাদার পৈত্রিক বাড়ী সাঁওতালদের বাড়ীর পাশে এবং তারা সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৩

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: তবে ওদের সাহায্য প্রয়োজন। অনেক সাহায্য। সবরকমের সাহায্য। কেননা ওদের প্রতিপক্ষ অনেক শক্তিশালী। ওদের প্রতিপক্ষ কতটা শক্তিশালী সেটা টের পেয়েছিলাম ফেরার পথে।

এই প্রতিপক্ষের শক্তির মূল আধার কোথায় সেটা পাব্লিক জানে। আপনি খোলাসা না করলেও আপনার কথায় তা ধরা পড়েছে। আপনি বলতে চেয়েছেন 'মজার ব্যাপার হচ্ছে, সাঁওতালরা এক্কেবারে শুরু থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক। প্রত্যেকটা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এখান থেকে ‘পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ এর বার্তা পেয়েছে। এবং, এখনো সাঁওতালরা কেবল গাইবান্ধা – ৪ আসনের ‘দুষ্ট এমপি’ অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদকেই দুষছেন, সরকারকে নয়। হায় সরলতা!'

তাহলে সাঁওতালিরা সরকারের সাহাযা ফিরিয়ে দিল কেন? সাহায্য আজাদ পাঠায়নি পাঠিয়েছে সরকার।
এই সমস্ত লেজুড়বৃত্তি কথা ছেড়ে যা বলতে চান স্পষ্ট করে বলুন, তাতে সাঁওতালদের উপকার হবে।

৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৭

প্রািন্ত বলেছেন: আপনি লিখেছেন- ২০০৩ সাল থেকে সেখানে চিনিকল বন্ধ। সাঁওতালদের জমিতে তাদের চোখের সামনে স্থানীয় এমপি, ইউপি চেয়ারম্যানরা বর্গাচাষ করায়, লিজ দেয়, ব্যবসা করে – সাঁওতালরা তাই বাধ্য হয় তাদের সব সহজ-সরলতাকে একপাশে ফেলে রেখে কঠোর আন্দোলনে নেমে পড়তে। “সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ইক্ষু খামার জমি উদ্ধার সংহতি কমিটি”র নেতৃত্বে তারা এমপির ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলো। এবং তারা পাশে পেয়েছিলো প্রতিবেশী বাঙ্গালীদেরও।

একদম ভূয়া তথ্য দিয়েছেন এই ব্লগের পাঠকদেরকে। লেখার মত যদি কোন বিষয় না পান, লিখবেন না। পাঠকদের ভূয়া তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করবেন না। জোট সরকারের আমলে চিনিকল লে-অফ করা হয়েছিল। কিন্তু বিগত জোট সরকারের সময়েই আবার চিনিকল চালু হয়েছে এবং এখনও চলছে। এমপি কোন দিন জমি লিজ দেয়ার দায়িত্ব পালন করেননি। এটা আপনার মন গড় কথা। আর স্থানীয় বাটপার শাহজান আলী ছাড়া আর কোন বাঙ্গালী সাঁওতালদের অন্যায় কাজের সঙ্গে যু্ক্ত ছিলেন না। এমনকি সাঁওতালদের পক্ষে না থাকার কারণে স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাঙ্গালী যুবককে তারা মারধোর করেছে। এমনকি তারা চিনিকলে খামারের অফিসে হামলা করেছে্। শুধু তাই নয়, তাদেরকে সরকারী জমি থেকে উচ্ছেদ করার আগে একবার তারা পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছিল। সর্বশেষ ঘটনার দিনও তারা ৯ পুলিশকে নির্মম ভাবে তীর বিদ্ধ করেছে।

মিথ্যা ও ভন্ডামী বন্ধ করুন।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৪০

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: সরকারের দালালি আর কয়দিন করবেন?

৪| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:২৮

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
জেলাপরিষদের সমর্থিত একদল ভুমিদসস্যু।
এইসব তষ্করদের প্রতি এত সমর্থন?
আজকাল দেখি ছাগুরাও সরকারের কাজে সমর্থন করে!

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৪০

মুক্তমনা ব্লগার বলেছেন: আমি তো সমর্থন করতে পারলাম না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.