![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“Ask yourself often, why do I have to think like other people think?”
বেশ কিছুদিন ধরেই ধর্ষণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টা একদিক থেকে ইতিবাচক। কেউ বলছেন পুরুষ মাত্রই ধর্ষক আবার কেউ একটু সংশোধন করে বলছেন সকল পুরুষ মস্তিষ্কে ধর্ষক। অনেকেই আবার বলছেন সকল পুরুষ ধর্ষক নয়। ধর্ষণ করতে এলে ধর্ষকের লিঙ্গ কাটা হবে নাকি হবেনা সে নিয়েও আলোচনা কম হয়নি। কাউন্টারে অনেকে বলছেন লিঙ্গ কেটে ফেলা অমানবিক, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন অনেকেই। নারীবাদীদের একরকম ধুয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু পুরুষমাত্রই ধর্ষক অথবা সম্ভাব্য ধর্ষক কে হতে পারে বা ধর্ষণ করতে এলে তাকে কি করা উচিৎ সেটা নিয়ে আলোচনা যতটা জরুরী তার থেকে বেশী জরুরী ধর্ষণ কি করে প্রতিরোধ করা যায়। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য এই বিষয়ে তেমন কোনো লেখা বা কার্যক্রম আজ অবধি পরিলক্ষিত হয় নাই।
আরেকটু বিস্তারিত বলি। যখন বলা হয় পুরুষ মাত্রই ধর্ষক তখন ধর্ষণের দায়ভার অবশ্যই পুরুষের ওপর বর্তায়। এবং ‘পুরুষ মাত্রই ধর্ষক’ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা মানে পুরুষের ধর্ষণ করাটাকে প্রকারান্তরে জায়েজ করে নেয়া। যেমন ধরা যাক, চিল সাপ খায়, সাপ ব্যাঙ খায়, ব্যাঙ পোকামাকড় খায় এটা তাদের জন্য স্বাভাবিক। এখন যদি বলা হয় পুরুষ মাত্রই ধর্ষণ করা স্বাভাবিক তবে ধর্ষণ বাড়বে বৈ কমবে না। সকল পুরুষদের ধর্ষক বলে যদি ধর্ষণের মাত্রা কমানো যেতো বা ধর্ষণ প্রতিরোধ করা যেত তবে লক্ষ কোটি বার সকল পুরুষকে ধর্ষক বলার পক্ষপাতী। পুরুষকে ধর্ষক বলায় পুরুষেরা লজ্জিত হতে পারে কিন্তু ধর্ষণ কি থেমে যাবে??
ধর্ষনের এই চলমান ধারাকে ইংরেজিতে বলে রেপ কালচার। রেপ কালচারের বাংলা করলে অর্থের ভিন্নতা প্রকাশ পায় বলে ইংরেজি শব্দটাই ব্যবহার করলাম। মেয়েরা কোথাও নিরাপদ নয়। কি ঘরে কি বাইরে। বাড়ির উঠোনে খেলতে থাকা বাচ্চা মেয়েকে তুলে নিয়ে যেমন ধর্ষণ করা হচ্ছে তেমনি চলমান বাসেও মেয়েদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। পিপার স্প্রে কিংবা ব্লেড কোনোটাই কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে না যতদিন মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। বাড়ির উঠোনে খেলতে থাকা বাচ্চাটা না রাখবে ব্লেড না রাখবে পিপার স্প্রে। চলন্ত বাসে ৩/৪ জন পুরুষের কাছে একজন নারীর শক্তি হার মেনে যেতেই পারে। তবে ধর্ষণ বা রেপ কালচার প্রতিরোধের উপায় কি??
কঠিন সত্যটা হচ্ছে ধর্ষণ প্রতিরোধের কার্যকরী ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত আমাদের দেশ তো দুরের কথা উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই নেয়া হয় নাই। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এই বিষয়টা বরাবরই উপেক্ষিত। তবে কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা ধর্ষণ প্রতিরোধে সক্ষম হতে পারি। যেমনঃ
১. ধর্ষণ বিষয়ে সন্তানদের অবহিত করা। বিশেষত ছোট ছেলেদের এই বিষয়ে সম্যক ধারণা দিতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে এটা ঘৃণ্যতম অপরাধ। বিদ্যালয়ে নৈতিক শিক্ষা হিসেবে এটি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
২. ধর্ষণ বিরোধী প্রচারণা। ধর্ষণের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। এতে করে মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে পরিবর্তন সম্ভব। “Don’t be that guy” – নামক প্রচারণার ফলে ভ্যানকুভারে যৌন সহিংসতা প্রায় ১০ ভাগ কমে গিয়েছে। যুক্তরাজ্যে আরো অনেক প্রচারণা আছে যা ধর্ষণ প্রতিরোধে সহায়তা করছে। নারীবাদী সংগঠন TBTN বা Take Back The Night এবং V-Day এই বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে।
৩. পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের পরিবর্তন আনা এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কারণে অনেক পুরুষেরাই মনে করে থাকেন তাদের অবস্থান নারীদের উপরে। সে কারণে যৌনাকাঙ্ক্ষা হলে নারীদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার গুরুত্ব অনেকেই দেন না। কিন্তু মনে রাখা বাঞ্ছনীয় যৌনাচারের ক্ষেত্রে উভয়ের ইচ্ছাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষতন্ত্রের ধারণা এবং প্রয়োগের কারণে নিজেদের সেরা ভাবার মানসিকতা থেকে পুরুষদের বের হতে হবে। প্রাকৃতিকভাবে কোনো পুরুষই ধর্ষক নয়। মনে রাখতে হবে, অনেক পুরুষ এবং ছেলে শিশুও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। সংখ্যায় বেশি না হলেও হচ্ছে।
৪. নারীদের আত্মোন্নতিবিধান নিশ্চিত করতে হবে। ছোটোবেলা থেকেই মেয়েদের শেখানো হয় তার সৌন্দর্যই আসল। এবং ছেলেদের শেখানো হয় নারীদের সৌন্দর্যই তাকে পরিমাপের মানদন্ড। সে কারণে দিনদিন বাহ্যিক সৌন্দর্য সচেতন নারীরা নিজেদের বস্তু বানিয়ে ফেলছে। সৌন্দর্যের তুলনায় ব্যক্তিত্ব অধিক গুরুত্ব বহন করে।নারীদেহ কোন বস্তু নয়। যখন নারীদেহকে বস্তু মনে করা হয় তখন সেখানে বিভিন্ন ধরণের সহিংসতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে।
৫. মিডিয়া এবং যোগাযোগ মাধ্যম কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টেলিভিশন, রেডিও এবং সংবাদপত্রে ধর্ষণবিরোধী প্রচারণা প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু এর ভূমিকা অপরিসীম। নাটক, সিনেমাসহ বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠানে ধর্ষণদৃশ্য বর্জনীয়। বিভিন্ন বিজ্ঞাপণে নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহারের যে রেওয়াজ চালু রয়েছে সেগুলো শুধু নারী অবমাননাই নয় নারীদেরকে বস্তু ভাবতে সহায়ক। প্রযোজক এবং পরিচালকেরা এখানে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেন। বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইলফোনে ম্যাসেজের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো যেতে পারে।
৬. ভাষাগত দিক থেকে সাবধানতা অবলম্বন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মনে রাখতে হবে ধর্ষণ ‘যৌন মিলন নয়’, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন সম্পর্ক নয়’ কিংবা ‘যৌনতার অপব্যবহার নয়’। বৈধ ধর্ষণ বলে কিছু নাই। প্রেমিকের দ্বারা ধর্ষণ, স্বামী কর্তৃক ধর্ষণ অথবা সংগী কর্তৃক ধর্ষণ এগুলী সবই ধর্ষণ। ধর্ষণ, ধর্ষণই। এটা গুরুতর অপরাধ।
৭. নীরব দর্শক হয়ে থাকা চলবে না। আমাদের আশেপাশে প্রতিনিয়ত মেয়েদের সাথে নানা ধরণের অনৈতিক কার্যকলাপ চলছে। যারা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত করেন তারা এগুলোর সম্মুখীন বেশি হন। এমন কিছু দেখলে সাথে সাথে প্রতিবাদ করতে হবে। একা ভয় পেলে পাশের জনকে বলতে হবে। প্রতিবাদের ভাষা কঠিন হতে হবে। যারা অপরাধী তারা ভীতু প্রকৃতির হয়।
৮. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থলে ধর্ষিতদের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। কেননা, বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে ধর্ষিতার স্কুল বন্ধ করে দেয়া হতে পারে এই ভয়ে দিনের পর দিন ধর্ষিত হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রেও চাকুরী হারানোর ভয়ে বহু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েও মুখ বুজে থাকে। সবচেয়ে বড় বিষয় লোকলজ্জার ভয়। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে তারা প্রকাশ্যে ধর্ষকের নাম বলতে পারবে। এতে ধর্ষণ কমার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
৯. যে সমস্ত সংস্থা ধর্ষিতাদের সহায়তা এবং ধর্ষকদের আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করে তাদের সহযোগিতা এবং সমর্থন দিতে হবে। সরকারী এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এগুলো করা যেতে পারে। তাতে করে ধর্ষিতা যেমন সহযোগীতা পাবে ধর্ষক উতপাদনের হারও কমে যাবে।
১০. রাষ্ট্র কর্তৃক দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে আইন থাকলেও প্রয়োগ নাই। যথাযথ সেল গঠনের মাধ্যমে খুব দ্রুত বিচার কার্য সম্পন্ন করা হলে এই ঘৃণ্যতম অপরাধ দমনে সফলতা আসবেই।
এরকম আরো উপায় থাকতে পারে যার মাধ্যমে ধর্ষণ প্রতিরোধ সম্ভব। আলোচিত উপায়গুলো বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে প্রাপ্ত এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে তুলে ধরা হয়েছে। পুরুষ মাত্রই ধর্ষক অথবা সকল পুরুষকে সম্ভাব্য ধর্ষকের কাতারে ফেলে দিয়ে ধর্ষণকে পুরুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না ভার্জিনিয়া স্টেট সিনেটর রিচার্ড ব্ল্যাকের করা এমনই উক্তিতে সারা বিশ্বে সমালোচনার ঝড় বয়েছিল। এধরণের ধারণা শুধু ক্ষতিকর নয়, বিপদজনক ও বটে। আমাদের সাবধানতা এবং সচেতনতাই পারে ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে।
২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৮:৫০
তৃতীয় চক্ষু বলেছেন: এগুলি বাস্তবায়িত করতে পারলে সত্যিই যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।
শুভেচ্ছা রইল।
৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩১
এ আর ১৫ বলেছেন: শুধু ধর্ষণের ক্ষেত্রেই একবার কোরআনের আইন চালু করুন
শুধু ধর্ষণের ক্ষেত্রেই একবার কোরআনের আইন চালু করুন দেখবেন এই দেশের মানুষ ধর্ষণ কথাটিই ভুলে যাবে।
কিন্তু তা হবে না এই দেশে জানি, কারন আমাদের দেশের হাই প্রফাইল নারীনেত্রী যারা আছেন তেদের কাজ হচ্ছে শুধু ইসলামের বিরোধিতা করা আর সম আধিকার সম অধিকার বলে ঘ্যানর ঘ্যানর করে যাওয়া।
গতকাল থেকেই কোন কাজে মনস্থির করতে পারছি না কোন কাজে এই শিশু পূজার উপর এই পাশবিক নির্যাতনের কবরটি দেখে। তাই মনের ভেতর জমে থাকা কথা গুলা কি বোর্ডে আঙ্গুল চালিয়ে দিলাম।
। কাইন্ডিং নিচের লিংকে ক্লিক করুন ---
শুধু ধর্ষণের ক্ষেত্রেই একবার কোরআনের আইন চালু করুন
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:৪২
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
বেশ গুরুত্বপুর্ন লেখা এটি । কথামালায় যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে ।
উপযুক্ত শিক্ষা ও সকলের সচেতনতা ধর্ষণ প্রতিরোধে ভাল
ভুমিকা রাখতে পারবে বলে মনে হয় । তবে এ বিষয়ে কঠোর
আইনের শাসনেরো প্রয়োজন আছে , যা এ লেখাটিতেও উঠে
এসেছে পরিস্কারভাবে ।
শুভেচ্ছা রইল ।