![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদিও আমি কখনো দুঃস্বপ্নে বিভোর ছিলামনা এবং আজও না ।তবে একটা জাগ্রত স্বপ্ন দেখতাম ; একদিন ভালোবাসব ,ঐ আকাশের বিশালতার মতো নয় কেবল আমার মনের গভীরতা থেকে ।
শিরোনামটা কপি করা ! এই কথাটা আমার মাথা থেকেও আসতে পারতো কিন্তু এসেছে অনেক বড় মাপের একজন থেকে । যাইহোক ; Sister 22 carat বলে যাকে আখ্যায়িত করলাম সে আমার বোন । ইমিডিইয়েট বড় বোন । পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সে চার নাম্বার আর আমি শেষ !
আজ প্রথমবার ভাইবোনদের একজনকে নিয়ে লিখতে বসলাম । এ লেখা শেষ হবার নয় তাই সাহস করে কখনো শুরু করতে পারিনি কিন্তু আজ বড্ড মিস করছি সবাইকে তাই শুরু করলাম ।
তবে লিখব আজ শুধু Sister 22 carat অর্থাৎ ছোট আপুকে নিয়ে । আপুকে Sister 22 carat বলে আখ্যায়িত করার কারণ হল সে আমার কাছে খাঁটি সোনা ,২২ ক্যারট থেকেও খাঁটি । এর থেকে খাঁটি সোনা আছে কিনা জানিনা থাকলে আমি তাঁর সান্যিধ্যে যেতে আগ্রহী ।
ছোট আপু আমার কথা কম বলে অর্থাৎ খুব কম সংখ্যক মানুষের সাথে কথা বলে । ছেলে মানুষ থেকে একশত হাত দূরে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা তাঁর । ছেলে আত্মীয় বলতে সমবয়সীদের সাথে কথা বলা আর মামা সম্পর্কে যারা তাদের সাথে কথা বলা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ । আব্বু আম্মুর সবচেয়ে বাধ্য মেয়ে । তবে ভাইবোনদের আড্ডায় সব থেকে বেশী হাসানোর কাজটা ছিল ওর । অনেক নিচু স্বরে কথা বলে কিন্তু আমাদের উচ্চস্বরে হাসানোটা ওর কাজ ছিল । যদিও ও কোন দিন আম্মু আব্বুর বকা খায়নি তবু যদি হঠাৎ বিনা অপরাধে কথা শুনতে হত তবে নিশ্চুপ থাকাটা ছিল ওর অভ্যাস । কখনোই বলবেনা যে ‘আম্মি ,আমি এটা করিনি’ ; কোনোদিন দেখিনি আম্মু-আব্বুর মুখের উপর কথা বলতে ; বরং বিনা অপরাধে বকুনি খাওয়ার হলেও খেত,তাও সত্যটা বলবেনা । এমনটা দেখলে আমি রাগে গজ গজ করতাম কিন্তু ওর মুখে বোমা মারলেও সত্যটা বলতনা ।
পাচভাইবোনদের সাথে টানা একসাথে কাটিয়েছি মাত্র সাত বছর এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী আমি আর ছোট আপু একসাথে কাটিয়েছি । । সত্যি বলতে কি আমার আপুর স্বভাব খাঁটি সোনার থেকেও খাঁটি ! ছোটবেলা থেকেই আপুকে অনুসরণ করার চেষ্টা করতাম কিন্তু কখনো আপুর মতো হতে পারিনি । আপুর সাথে আমার কখনো খুনসুটিও লাগতনা । ইচ্ছে করেও আপুর সাথে ঝগড়া লাগতে পারতাম না। আমার পড়াশুনা শুরুর দিকে আমি ওর টেবিলেই পড়তে বসতাম তখনো আমার ব্যক্তিগত টেবিল হয়নি অর্থাৎ দুজনে এক টেবিলেই বসতাম । অতএব ও যে পাশে বসত আমি সে পাশে বসতে চাইতাম ; ও নির্বিঘ্নে সেই পাশটা ছেড়ে দিয়ে আমি সেখানে বসেছি সেখানেই বসত । আমি আবার শুরু করলাম ; না,আমি ওই পাশে বসব ; এবার ও বলল ঠিক আছে তুমি পুরো টেবিলে একাই পড় ; আমি বিছানায় বসে পড়ি । যদিও ও বিছানায় বসে পড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতো তবু আম্মুর ভয়ে টেবিলেই বসত । আমার ঠেলাঠেলিতে যেহেতু বিছানায় যেতে হল আম্মমু হয়তো আর কিছু বলবেনা । কিন্তু আমি আবার বায়না ধরলাম- না ,আমি তোমার পাশেই বসে পড়বো । আবার আমিও বিছানায় চলে গেলাম ; এসব করতে করতে একটা সময় আম্মুর ধমক খেয়ে আবার দুজনে ভদ্র মেয়ের মতো টেবিলেই বসতাম । প্রতিদিন এই খুনসুটি গুলো করতাম তবু ও কোনোদিন আম্মুকে বলতনা আমি যে এসব করি তাতে তাঁর পড়ার ব্যঘাত ঘটে ।
সব ভাইবোন থেকে ছোট আপুর প্রতিই আমার টান একটু বেশী । তখন দাদাবাড়িতে থাকতাম ; অনেক নিয়ম কানুন ছিল আমাদের উপর ; সব কিছু কি আর সবসময় মানা যায় , কিছুটা ব্যাঘাত তো ঘটতেই পারে । বিকেলের খেলাধুলা করে সন্ধ্যার আজানের সাথে সাথে ঘরে ঢুকতে হবে ; কখনো হয়তো আজান শেষ হয়েছে আমরা এখনো খেলছি ,বাকি খেলাটা শেষ করার জন্যেই দেরিটা হত । আপু না চাইলেও আমি বলতাম শেষ করেই যাই না ; শেষ করে গিয়েই তো দেখি আম্মু গরম হয়ে বসে আছে । আমি নিশ্চিত আজ পীঠে পড়বে । প্রথম পর্ব আপুর উপর দিয়ে যেতে চাইলেও আমি সেটা করতে দিতাম না ,আমার অপরাধ আমি স্বীকার করেই নিতাম যাতে আপুকে আম্মু না মারে । তারপর দুজনেরটা একা আমিই হজম করতাম তবু শান্তি পেতাম আপু মার খায়নি তাই ।
আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি আপু তখন টেনে । আপু তখন কোচিং করতো । প্রতিদিন আমি সঙ্গে যেতাম ; কখনো একা ছাড়িনি । ভয় লাগত আপু যদি একা একা আসতে না পারে । যতক্ষণ কোচিং চলত আমি বসে থাকতাম আবার সঙ্গে করে নিয়ে আসতাম ।
আমার জীবনে অনেক মেয়ে মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে ,এক সাথে থাকা হয়েছে ,ঘুরা হয়েছে কিন্তু আমার ছোট আপুর মতো মেয়ে আমার চোখে পড়েনি কখনো । না ,নিজের বোন বলে নয় একজন মেয়ে মানুষ যে একই সাথে এতটা নম্র,ভদ্র, শালীন , ধার্মিক , রক্ষণশীল হতে পারে তা আমার বোন ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে দেখিনি জীবনে । অনেক ইসলামিক সংঘটনের মেয়েকে দেখেছি সবকিছু ঠিক থাকলেও ছেলে মানুষের সাথে অকারণে মেলা মেশা থেকে বাদ পড়েননি , কিংবা অনেক রক্ষণশীল মেয়ে দেখেছি কিন্তু ফরজ কাজ আদায়ের নাম নাই । এমন ও দেখেছি হালাল হারাম বেছে চলছেন কিন্তু সারাদিন টিভি সিরিয়েল আর সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত । কিংবা সবই ঠিক আছে কিন্তু মানুষের সমালোচনা ঠিকই করে যাচ্ছেন ; এমন মানুষকেও দেখেছি । একজন মুসলমান হিসেবে যাদের সাথে কথা বলা জায়েজ এততুকুতেই সীমাবদ্ধ আছে আপু ।
কখনো আমার আপুর মুখে শুনিনি এই মানুষটা খারাপ । বরং আমরা যদি কখনো কারো গিবত করতে চেষ্টা করি তবে ঠাস করে থামিয়ে দিত । কখনোই অন্য মানুষ নিয়ে কথা বলেনা এবং কাউকে বলতেও দেয়না বরং সবসময় মানুষের ভালো দিকটা তোলে ধরার চেষ্টা করতো । অন্যের সমালোচনা করতে আমি একদিনও শুনিনি । আমি আপুর থেকে সম্পূর্ণ উল্টা ; আমার অনেক ছেলে বন্ধু আছে দেখে বলে ‘মণটি,তুমি কি কখনো মরবানা ভেবেছ’? ফোনে কথা বলতে দেখে বলবে এ পর্যন্ত কতটুকু লাভবান হয়েছ ফোনে কথা বলে !
মুঠোফোন ব্যবহার শুরু করেছে অনেক দেরিতে । তাও জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে । ওর কাছে মুঠোফোন একটা ঝামেলার জিনিস মনে হত ।
আপুকে রাগানোর শত চেষ্টা করেও কখনো রাগাতে পারিনি । আমি ইচ্ছে করে দুষ্টুমি করে ওরে চেতানোর চেষ্টা করি ; ও নীরবে শুনে যায় । আমি সারাদিন ওর পিছনে লেগে থাকলেও বিনিময়ে সে একটা শব্দ ও ছাড়বেনা । তার সাথে ঝগড়া করতে গেলে একাই আমি করি সে শুধু শুনে যায় । কখনো আম্মুর কাছেও বলবেনা যে আমি ওর সাথে লাগতে চেষ্টা করছি । কারো বিরদ্ধে কোন অভিযোগ নেই ,অনুযোগ নেই । কোন অসুখ বিসুখ হলেও কখনো মুখ ফুটে বলবেনা যে আমার সমস্যা করছে ; এটা দেখে আমি চেতে যাই । অসুখের কথা বলবেনা কেন ! কেউ সারাদিন ওকে গালিগালজ করলেও কোন উত্তর দিবেনা । এগুলি দেখলে আমার মেজাজ খারাপ হলেও সে নিরব ।
অনেক ভালোবাসি আপুকে । তিন মাস হল বাড়িতে যাই না তাই আপুকে ভীষণ মিস করছি । খুনসুটি গুলিও মিস করছি যদিও এক তরফা খুনসুটি । আপুর উপদেশ, উত্তম পরামর্শ গুলি মিস করি ,যখনই কোন নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আসে তখনি মনে হয় আপু থাকলে আমাকে নেতিবাচক চিন্তাটা করতে দিতনা ।
আমার ২২ ক্যারট খাঁটি সোনা আপু যেন সারাজীবন সবার কাছে খাঁটি সোনা থাকে সেই দোয়া করি ।
২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৬
তানভীরএফওয়ান বলেছেন: Surely She will be princess of Jannat ,Inshallah . We should follow ur apu.
৩| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৮
সৌদি প্রবাসী আশরাফ বলেছেন: আপনার বোনের সাথে আপনার মধুর সম্পর্ক আমৃত্যূ থাকুক...দোয়া রইলো...
৪| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২১
অবনি মণি বলেছেন: ধন্যবাদ সবাইকে । দুয়া করবেন ।
৫| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২৫
নিলু বলেছেন: ভালো
৬| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
নস্টালজিক স্মৃতিচারণ ভাল লাগল।
আপনার আপুন জন্য শুভকামনা রইল। প্রত্যেক ঘরে এমন একজন করে আপু থাকত।
৭| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫০
অবনি মণি বলেছেন: ধন্যবাদ বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় এবং নিলু ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫২
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: ভালো স্মৃতিচারণ ।
শুভেচ্ছা ।