নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনেক বছর হলো ; তবুও নিঃসঙ্গ বৃক্ষের মতো নির্জন নিস্তব্ধ মৌন পাহাড়ের মতোই একা পড়ে আছি আজও। একাই আছি এই দীর্ঘশ্বাসের মতো! তোমারও কি শুধু দীর্ঘশ্বাস,গ্রীলে বিষন্ন গোধূলী?

অবনি মণি

যদিও আমি কখনো দুঃস্বপ্নে বিভোর ছিলামনা এবং আজও না ।তবে একটা জাগ্রত স্বপ্ন দেখতাম ; একদিন ভালোবাসব ,ঐ আকাশের বিশালতার মতো নয় কেবল আমার মনের গভীরতা থেকে ।

অবনি মণি › বিস্তারিত পোস্টঃ

SISTER 22 CARAT

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৯



শিরোনামটা কপি করা ! এই কথাটা আমার মাথা থেকেও আসতে পারতো কিন্তু এসেছে অনেক বড় মাপের একজন থেকে । যাইহোক ; Sister 22 carat বলে যাকে আখ্যায়িত করলাম সে আমার বোন । ইমিডিইয়েট বড় বোন । পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সে চার নাম্বার আর আমি শেষ !

আজ প্রথমবার ভাইবোনদের একজনকে নিয়ে লিখতে বসলাম । এ লেখা শেষ হবার নয় তাই সাহস করে কখনো শুরু করতে পারিনি কিন্তু আজ বড্ড মিস করছি সবাইকে তাই শুরু করলাম ।

তবে লিখব আজ শুধু Sister 22 carat অর্থাৎ ছোট আপুকে নিয়ে । আপুকে Sister 22 carat বলে আখ্যায়িত করার কারণ হল সে আমার কাছে খাঁটি সোনা ,২২ ক্যারট থেকেও খাঁটি । এর থেকে খাঁটি সোনা আছে কিনা জানিনা থাকলে আমি তাঁর সান্যিধ্যে যেতে আগ্রহী ।

ছোট আপু আমার কথা কম বলে অর্থাৎ খুব কম সংখ্যক মানুষের সাথে কথা বলে । ছেলে মানুষ থেকে একশত হাত দূরে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা তাঁর । ছেলে আত্মীয় বলতে সমবয়সীদের সাথে কথা বলা আর মামা সম্পর্কে যারা তাদের সাথে কথা বলা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ । আব্বু আম্মুর সবচেয়ে বাধ্য মেয়ে । তবে ভাইবোনদের আড্ডায় সব থেকে বেশী হাসানোর কাজটা ছিল ওর । অনেক নিচু স্বরে কথা বলে কিন্তু আমাদের উচ্চস্বরে হাসানোটা ওর কাজ ছিল । যদিও ও কোন দিন আম্মু আব্বুর বকা খায়নি তবু যদি হঠাৎ বিনা অপরাধে কথা শুনতে হত তবে নিশ্চুপ থাকাটা ছিল ওর অভ্যাস । কখনোই বলবেনা যে ‘আম্মি ,আমি এটা করিনি’ ; কোনোদিন দেখিনি আম্মু-আব্বুর মুখের উপর কথা বলতে ; বরং বিনা অপরাধে বকুনি খাওয়ার হলেও খেত,তাও সত্যটা বলবেনা । এমনটা দেখলে আমি রাগে গজ গজ করতাম কিন্তু ওর মুখে বোমা মারলেও সত্যটা বলতনা ।

পাচভাইবোনদের সাথে টানা একসাথে কাটিয়েছি মাত্র সাত বছর এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী আমি আর ছোট আপু একসাথে কাটিয়েছি । । সত্যি বলতে কি আমার আপুর স্বভাব খাঁটি সোনার থেকেও খাঁটি ! ছোটবেলা থেকেই আপুকে অনুসরণ করার চেষ্টা করতাম কিন্তু কখনো আপুর মতো হতে পারিনি । আপুর সাথে আমার কখনো খুনসুটিও লাগতনা । ইচ্ছে করেও আপুর সাথে ঝগড়া লাগতে পারতাম না। আমার পড়াশুনা শুরুর দিকে আমি ওর টেবিলেই পড়তে বসতাম তখনো আমার ব্যক্তিগত টেবিল হয়নি অর্থাৎ দুজনে এক টেবিলেই বসতাম । অতএব ও যে পাশে বসত আমি সে পাশে বসতে চাইতাম ; ও নির্বিঘ্নে সেই পাশটা ছেড়ে দিয়ে আমি সেখানে বসেছি সেখানেই বসত । আমি আবার শুরু করলাম ; না,আমি ওই পাশে বসব ; এবার ও বলল ঠিক আছে তুমি পুরো টেবিলে একাই পড় ; আমি বিছানায় বসে পড়ি । যদিও ও বিছানায় বসে পড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতো তবু আম্মুর ভয়ে টেবিলেই বসত । আমার ঠেলাঠেলিতে যেহেতু বিছানায় যেতে হল আম্মমু হয়তো আর কিছু বলবেনা । কিন্তু আমি আবার বায়না ধরলাম- না ,আমি তোমার পাশেই বসে পড়বো । আবার আমিও বিছানায় চলে গেলাম ; এসব করতে করতে একটা সময় আম্মুর ধমক খেয়ে আবার দুজনে ভদ্র মেয়ের মতো টেবিলেই বসতাম । প্রতিদিন এই খুনসুটি গুলো করতাম তবু ও কোনোদিন আম্মুকে বলতনা আমি যে এসব করি তাতে তাঁর পড়ার ব্যঘাত ঘটে ।

সব ভাইবোন থেকে ছোট আপুর প্রতিই আমার টান একটু বেশী । তখন দাদাবাড়িতে থাকতাম ; অনেক নিয়ম কানুন ছিল আমাদের উপর ; সব কিছু কি আর সবসময় মানা যায় , কিছুটা ব্যাঘাত তো ঘটতেই পারে । বিকেলের খেলাধুলা করে সন্ধ্যার আজানের সাথে সাথে ঘরে ঢুকতে হবে ; কখনো হয়তো আজান শেষ হয়েছে আমরা এখনো খেলছি ,বাকি খেলাটা শেষ করার জন্যেই দেরিটা হত । আপু না চাইলেও আমি বলতাম শেষ করেই যাই না ; শেষ করে গিয়েই তো দেখি আম্মু গরম হয়ে বসে আছে । আমি নিশ্চিত আজ পীঠে পড়বে । প্রথম পর্ব আপুর উপর দিয়ে যেতে চাইলেও আমি সেটা করতে দিতাম না ,আমার অপরাধ আমি স্বীকার করেই নিতাম যাতে আপুকে আম্মু না মারে । তারপর দুজনেরটা একা আমিই হজম করতাম তবু শান্তি পেতাম আপু মার খায়নি তাই ।

আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি আপু তখন টেনে । আপু তখন কোচিং করতো । প্রতিদিন আমি সঙ্গে যেতাম ; কখনো একা ছাড়িনি । ভয় লাগত আপু যদি একা একা আসতে না পারে । যতক্ষণ কোচিং চলত আমি বসে থাকতাম আবার সঙ্গে করে নিয়ে আসতাম ।

আমার জীবনে অনেক মেয়ে মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে ,এক সাথে থাকা হয়েছে ,ঘুরা হয়েছে কিন্তু আমার ছোট আপুর মতো মেয়ে আমার চোখে পড়েনি কখনো । না ,নিজের বোন বলে নয় একজন মেয়ে মানুষ যে একই সাথে এতটা নম্র,ভদ্র, শালীন , ধার্মিক , রক্ষণশীল হতে পারে তা আমার বোন ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে দেখিনি জীবনে । অনেক ইসলামিক সংঘটনের মেয়েকে দেখেছি সবকিছু ঠিক থাকলেও ছেলে মানুষের সাথে অকারণে মেলা মেশা থেকে বাদ পড়েননি , কিংবা অনেক রক্ষণশীল মেয়ে দেখেছি কিন্তু ফরজ কাজ আদায়ের নাম নাই । এমন ও দেখেছি হালাল হারাম বেছে চলছেন কিন্তু সারাদিন টিভি সিরিয়েল আর সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত । কিংবা সবই ঠিক আছে কিন্তু মানুষের সমালোচনা ঠিকই করে যাচ্ছেন ; এমন মানুষকেও দেখেছি । একজন মুসলমান হিসেবে যাদের সাথে কথা বলা জায়েজ এততুকুতেই সীমাবদ্ধ আছে আপু ।

কখনো আমার আপুর মুখে শুনিনি এই মানুষটা খারাপ । বরং আমরা যদি কখনো কারো গিবত করতে চেষ্টা করি তবে ঠাস করে থামিয়ে দিত । কখনোই অন্য মানুষ নিয়ে কথা বলেনা এবং কাউকে বলতেও দেয়না বরং সবসময় মানুষের ভালো দিকটা তোলে ধরার চেষ্টা করতো । অন্যের সমালোচনা করতে আমি একদিনও শুনিনি । আমি আপুর থেকে সম্পূর্ণ উল্টা ; আমার অনেক ছেলে বন্ধু আছে দেখে বলে ‘মণটি,তুমি কি কখনো মরবানা ভেবেছ’? ফোনে কথা বলতে দেখে বলবে এ পর্যন্ত কতটুকু লাভবান হয়েছ ফোনে কথা বলে !

মুঠোফোন ব্যবহার শুরু করেছে অনেক দেরিতে । তাও জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে । ওর কাছে মুঠোফোন একটা ঝামেলার জিনিস মনে হত ।

আপুকে রাগানোর শত চেষ্টা করেও কখনো রাগাতে পারিনি । আমি ইচ্ছে করে দুষ্টুমি করে ওরে চেতানোর চেষ্টা করি ; ও নীরবে শুনে যায় । আমি সারাদিন ওর পিছনে লেগে থাকলেও বিনিময়ে সে একটা শব্দ ও ছাড়বেনা । তার সাথে ঝগড়া করতে গেলে একাই আমি করি সে শুধু শুনে যায় । কখনো আম্মুর কাছেও বলবেনা যে আমি ওর সাথে লাগতে চেষ্টা করছি । কারো বিরদ্ধে কোন অভিযোগ নেই ,অনুযোগ নেই । কোন অসুখ বিসুখ হলেও কখনো মুখ ফুটে বলবেনা যে আমার সমস্যা করছে ; এটা দেখে আমি চেতে যাই । অসুখের কথা বলবেনা কেন ! কেউ সারাদিন ওকে গালিগালজ করলেও কোন উত্তর দিবেনা । এগুলি দেখলে আমার মেজাজ খারাপ হলেও সে নিরব ।

অনেক ভালোবাসি আপুকে । তিন মাস হল বাড়িতে যাই না তাই আপুকে ভীষণ মিস করছি । খুনসুটি গুলিও মিস করছি যদিও এক তরফা খুনসুটি । আপুর উপদেশ, উত্তম পরামর্শ গুলি মিস করি ,যখনই কোন নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আসে তখনি মনে হয় আপু থাকলে আমাকে নেতিবাচক চিন্তাটা করতে দিতনা ।

আমার ২২ ক্যারট খাঁটি সোনা আপু যেন সারাজীবন সবার কাছে খাঁটি সোনা থাকে সেই দোয়া করি ।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫২

নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: ভালো স্মৃতিচারণ ।

শুভেচ্ছা ।

২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৬

তানভীরএফওয়ান বলেছেন: Surely She will be princess of Jannat ,Inshallah . We should follow ur apu.

৩| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৮

সৌদি প্রবাসী আশরাফ বলেছেন: আপনার বোনের সাথে আপনার মধুর সম্পর্ক আমৃত্যূ থাকুক...দোয়া রইলো...

৪| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২১

অবনি মণি বলেছেন: ধন্যবাদ সবাইকে । দুয়া করবেন ।

৫| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২৫

নিলু বলেছেন: ভালো

৬| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:

নস্টালজিক স্মৃতিচারণ ভাল লাগল।

আপনার আপুন জন্য শুভকামনা রইল। প্রত্যেক ঘরে এমন একজন করে আপু থাকত।

৭| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫০

অবনি মণি বলেছেন: ধন্যবাদ বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় এবং নিলু ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.