নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আয়েশ করে, আলসেমিতে...

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!

মুনির হাসান

অলস লোক। নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার খায়েশ কিন্তু করতে পারি না!

মুনির হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রথম জগদীশ চন্দ্র বসু শিশু কিশোর বিজ্ঞান ক্যাম্প

০৬ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৩৯

রাত বাজে দুইটা। কিন্তু শ্রেণীকক্ষ আর সামনের বারান্দা গম গম করছে। নতুন কেও আসলেই ভাবতেন সকালের পরীক্ষা না জানি কতো ভয়ংকর! সেজন্য হয়তো সবাই এতো ব্যস্ত।

তবে, একটু পরেই তার সেই ভুল ধারণা অবসান হবে। কারণ তিনি জানবেন এই যে রাত জেগে যে প্রস্তুতি তার সঙ্গে জিপিএ ফাইভের কোন সম্পর্ক নাই, এমন কী পাস ফেলেরও কোন ব্যাপার নাই। ঠিকমতো না করলে কেও কিছু বলবেও না!

তারপরও কেন এই তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ৫১ জন শিশু-কিশোর রাত জেগে এই পরিশ্রম করছে?

কারণ তারা আনন্দ পেয়েছে। প্রকৃতি থেকে দলবেঁধে শিখ্ষার যে আনন্দ তারা সেটি উপলব্ধি করতে পেরেছে। আর সে কারণে তাদের এই ক্লান্তিহীন রাত জাগা!



গত ১ জুলাই রাতে এই দৃশ্যের আমি একজন দর্শক। স্থান ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস , বিরুলিয়া, আশুলিয়া। সেখানে জড়ো হয়েছে সারাদেশের ৫১ জন শিক্ষার্থী। সবচেয়ে বেশি যশোরের ৬ জন, এর পর ঢাকার ৫ জন। বাকীরা বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে। উদ্দেশ্য প্রথম জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ক্যাম্পে অংশগ্রহণ। শুরু হয়েছে ২৮ জুন থেকে।

এর আগে ৩১ মে আর ১ জুন তারিখে আমরা আয়োজন করেছিলাম শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেসের। আমরা মানে আমাদের বিজ্ঞান ক্লাব – বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি এবং বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন। আমাদের পৃষ্ঠপোষক ছিল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক আর সহযোগিতা দিয়েছে হাফিজা খাতুন মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, সফটকল, রকমারি ডট কম, জেএএন এসোসিয়েটস, ক্যানন, ইউআইইউ, ডিআইইউ, বিআইজেএফসহ অনেকে।

আমাদের খুব বড় কোন উদ্দেশ্য নেই। আমরা লক্ষ করেছি আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষা এবং বিজ্ঞান পদ্ধতির ওপর আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ফলে, বিজ্ঞান মেলাটা হয়ে যাচ্ছে কেবল মেলা। আবার গুগল বা ইন্টেলের বিজ্ঞান মেলায়ও আমরা যুৎ করতে পারছি না। আমরা ভাবছিলাম কেমন করে এখানে কিছুটা উন্নতি করা যায় এবং ২০১৭ সাল নাগাদ গুগল আর ইন্টেলের বিজ্ঞান মেলার চূড়ান্ত পর্বে যাওয়া যায়।

সেই ধারণা থেকে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। কংগ্রেসে আমরা পেপার উপস্থাপন, পোস্টার এবং প্রকল্প প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রেখেছিলাম। তবে, সেখানে আসার আগে অংশগ্রহণকারীদের আর একটি ধাপ পার হতে হয়েছে। আমাদের দেশে যে বিজ্ঞান মেলাটি হয় সেখানে কেবল প্রজেক্ট নিয়ে হাজির হলেই হয়। আমরা এর সঙ্গে যোগ করেছি ধারণা পত্রের ব্যাপার। অর্থাৎ ও কী করতে চায় তার একটি ছোট্ট বর্ণনা আমাদের কাছে লিখে পাঠাতে হবে। আমাদের বিচারকরা যদি মনে করে যে সেটি উপস্থাপনযোগ্য তাহলেই কেবল সে কংগ্রেসে আসতে পারবে।

তো, আমাদের অবাক করে দিয়ে প্রায় ৩০০ ধারণা পত্র জমা পড়ে এবং এর মধ্য থেকে ৩০ জেলার ২৭০ জন কংগ্রেসের জন্য নির্বাচিত হয়। আমরা প্রকল্পের মোলিক বিষয়কে ততোটা গুরুত্ব দেইনি যতটা দিয়েছি তার বিজ্ঞানের পদ্ধতি অনুসরণযোগ্যতা আছে কী না তার ওপর। আমাদের অংশগ্রহণকারীরা ছিল তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর।

আমরা অবশ্য আমাদের সীমিত সামর্থ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা কিছু কর্মশালা করি যেখানে বিজ্ঞানের প্রশ্ন, হাইপোথিসিস, পর্যবেক্ষন, পরীক্ষণ, উপাত্ত, ফলাফল বিশ্লেশন এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করি। আমরা যে নিজেরাই অনেক পণ্ডিত তাতো না। তাই আমরা অবলীলায় ইন্টারনেট, বই ইত্যাদি থেকে দুইহাতে এসব তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের জন্য।

কংগ্রেসে পেপার আর পোস্টার উপস্থাপনের পাশাপাশি প্রকল্প প্রদর্শনের সুযোগ থাকে। বিচারকরা সবাই কমবেশি তরুন। ফলে, বিচারটি হয়েছে অন্য রকম। যেমন এক প্রতিযোগী বলেছে সে একটি তথ্য গুগল তেকে জেনেছে। সঙ্গে সঙ্গে বিচারক তার স্মার্টফোন বের করে জানতে চেয়েছে তার সার্চ কীওয়ার্ড কী ছিল? তখন আমতা আমতা করে আমাদের শিক্ষার্থী জানিয়েছে – ইয়ে, না, মানে , আমি...। তবে, কোয়ালিটি অব দি প্রজেক্ট যে অনেক ভার ছিল তা বলা যায না। একবারে যে সেটা অনেক উন্নত হবে তা আমরা আশাও করি নাই। তবে, আমরা শিক্ষার্থীদের চেষ্টা দেখেছি। তারা নানান প্রশ্ন নিয়ে কাজ করেছে।

কংগ্রেসের দুইদিন পেপার/পোস্টার/প্রজেক্ট ছাড়াও নানান আয়োজন ছিল এবং শেষ পর্যন্ত ৪৯ জন পুরস্কৃতও হয়।

এরপর আমরা ক্যাম্পের জন্য প্রস্তুতি নেই। যেহেতু ক্যাম্পটি একটি বিরান, গ্রামে হবে তাই আমরা প্রকৃতি ভিত্তিক পড়াশোনাকে মূল উপজীব্য রাখি। মোট ৫৪ জন সম্মতি দিয়েছিল আসার জন্য। এর মধ্যে ৫১ জন এসেছে। যার মধ্যে ১৫জন মেয়ে আর বাকীরা ছেলে। সবচেয়ে ছোট ছেলেটি, পল্লব মন্ডল পড়ে ক্লাশ থ্রিতে।

ড্যাফোডিলের স্থায়ী ক্যাম্পাসে তিনটি কক্ষে তাদের থাকর ব্যবস্থা করা হয় মেঝেতে পাটি পেতে। খাওয়ার জন্য একটি ডাইনিং রুম ছিল তবে বেশিরভাগ দিন মাটিতে বসেই খাওয়া দাওয়া সেরেছে ওরা।

প্রতিদিন সকাল ৬.৩০ মিনিটে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে দিনের শুরু হয়। সকাল ৮ থেকে প্রথম ক্লাশ আর রাত শেষ হতো মুভি দেখে। বিকেলে মাঠে খেলা। আর ফাকে ফাকে কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছে আমাদের রিসোর্স পার্সনরা। এছাড়া সেখানে এসে খুদে বিজ্ঞানিদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন আলী আসগর স্যার, জাফর ইকবাল স্যার। জিরো গ্রাভিটির অভিজ্ঞতা আর নীল আর্মস্ট্রং-এর সঙ্গে মোলাকাতের অভিজ্ঞতা শুনিয়েছেন এফ আর সরকার।

এছাড়া শিক্ষার্থীরা মোট ৯ গ্রুপে ভাগ হয়ে ৯টি প্রজেক্ট করেছে। আমরা নিয়ম করেছিলাম এই কয়দিন কেও কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবে না। বই আর আলোচনাই ভরসা। কাজে বেশিরভাগ প্রজেক্ট ছিল আশেপাশের এলাকা ভিত্তিক। যেমন – আশুলিযার ভূ-প্রকৃতি, এলাকার (এক কিলোমিটার) জীব-বৈচিত্র, কাঠাল গাছ (আশুলিয়াতে কাঠাল গাছের ছড়াছড়ি) সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা সমূহের বৈজ্ঞানিক কারণ অনুসন্ধান, লজ্জাবতীর লজ্জা কেন, ক্যাম্পারদের স্বাস্থ্য সচেতনতা কিংবা তাদের আইসিটি সচেতনতা ইত্যাদি। কোন কোন গ্রুপ এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ২০ প্রজাতির উদ্ভিদের সংখ্যা গুনেছে, কেও কেও কথা বলেছে এলাকার কৃষকদের সঙ্গে আবার কেও চিনির শরবত গুলে সেখানে রেখে দিয়েছে লজ্জাবতী গাছের পাতা!

রাতজাগা কাজের যে বর্ণনা শুরুতে দিয়েছি সেটি ছিল গ্রুপগুলোর প্রজেক্টের ফলাফল উপস্থাপনার পোস্টার তৈরির ক্ষণ । যা তারা পরের দিন সবার সামনে উপস্থাপন করেছে। উপস্থাপনার একটি পর্ব ছিল পিয়ার রিভিউ যেখানে অন্যরা তাদের কাজের মূল্যায়ন করেছে। বুয়েট, এআইইউবি আর সিআরপির কয়েকজন শিক্ষার্থী কাজ করেছে দলগুলোর মেন্টর হিসাবে।

ক্যাম্পের ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেছে আমাদের ন্যানো বিজ্ঞানী, বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্ম্মদী। তাঁকে সহায়তা করেছে বিএএফ শাহীন কলেজের তানিয়া কামরুন নাহার, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিকুল হক, পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতার জ্যোতির্বিদ এরিনা হক আর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী। আর ক্যাম্পের লজিস্টিকের দায়িত্বে ছিল কাব্য আহমেদের নেতৃত্বে একদল ভলান্টিয়ার।

এই চমৎকার আয়োজনটি আবার কয়েকটি জিনিস প্রমাণ করেছে- আনন্দের সঙ্গে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। আমি খুব প্রত্যয় নিয়ে বলতে পারি অংশগ্রহণকারী অনেক শিক্ষার্থীরই শিক্ষার আনন্দের ব্যাপারটা নিয়ে আর কোন সংশয় থাকবে না। অনেকে তাদের ক্যাম্পের আনন্দটাকে নিজের পড়ালেখায় অব্যাহত রাখতে পারবে।

মাঝখানের কয়েকঘন্টা বাদে আমি সবসময় এই ক্যাম্পে ছিলাম। প্রায়শ আমার চোখ ছলছল করে উঠেছে যখন আমি ভেবেছি নানান চড়াউ-উৎরাই আর নানান জনের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে মাত্র ৫দিনের যে আয়োজন আমরা মাত্র ৫১ জন শিক্ষার্থীর জন্য করতে পেরেছি, উন্নত বিশ্বে সেটি একটি নিযমিত ঘটনা। তাদের শিক্ষার্খীরা নানান আনন্দ-উপকরণের সহায় নিয়ে বিশ্ব গ্রামের নাগরিক হয়ে উঠছে কিন্তু আমাদের তিনকোটি শিক্ষার্থীর কেও এই আনন্দ পাচ্ছে না। বরং মুখস্ত নামক এই ভয়াবহ ব্যধিতে তাদের সৃজনশীলতাকে কতোভাবে নস্ট করা যায তার প্রতিযোগিতা চলছে নানান নামে!

যদি পারতাম তাহলে চাকরি-বাকরি ফেলে খালি সারাদেশে এসব করে বেড়াতাম। অনন্ত কয়েকজনের জন্য হলেও শিক্ষাটাকে আনন্দময় করে যেতাম।

কিন্ত, মানুষের সাধ আর সাধ্যের মধ্যে অনেক দূরত্ব।



সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৩৮

এইযেদুনিয়া বলেছেন: Ye, munir vai. Ami to kau ke kono sohozogita kori ni. Ami to khali ailam r gelam, khailam r ghumailam. Nijer nam dekhe lojjai lagche. :/

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.