নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আয়েশ করে, আলসেমিতে...

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!

মুনির হাসান

অলস লোক। নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার খায়েশ কিন্তু করতে পারি না!

মুনির হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নেলসন ম্যান্ডেলার বাড়িতে

১২ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৪৮

"কাল কাল মানুষের দেশে

ঐ কাল মাটিতে

নেলসন ম্যান্ডেলা তুমি

অমর কবিতার অন্তমিল!"






আজ সকালে প্রথম আলোর অন্য আলোতে ম্যান্ডেলার ছবি দেখে তাঁর বাড়িতে যাওয়ার কথা মনে পড়লো। তাই শেয়ার করলাম।



যে দেশে অনেকগুলো অফিসিয়াল ভাষা সেখানে প্রয়োজনের তাগিদেই ইশারা ভাষার প্রচলন হয়ে যায় বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ শহরে ঘুরতে গেলে আপনি এরকম অনেক দৃশ্য দেখবেন ট্যাক্সি ভাড়া করার ক্ষেত্রে। কেও যদি তার ডানহাতের তর্জনি আকাশের দিকে তুলে ধরে তাহলে ট্যাক্সি ড্রাইভার বুঝতে পারে তিনি জোহানেসবার্গের মূল শহরে যেতে চান। কেও যদি আকাশে বৃত্ত আকে তাহলে তার গন্তব্য ‘ডাউন টাউন’। এসবই আমরা শুনছিলাম যখন আমরা যাচ্ছিলাম সোয়েটোতে। আমরা মানে ১৯টি দেশের চল্লিশজন এপিসি সদস্য। জলবায়ু পরিবর্তন এবং তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক একটি কর্মশালায় অংশ নিতে আমরা জড়ো হয়েছি দক্ষিণ আফ্রিকাতে। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে। আর একমাত্র ছুটির দিনটাতে দেখতে ছুটেছি নেলসন ম্যান্ডেলার বাড়ি!

জোহানেসবার্গের যেখানে আমরা ছিলাম সেখান থেকে সোয়েতো যেতে প্রায় ৪০ মিনিটি সময় লাগে। ভ্যানে বসে আমরা শুনছিলাম আমাদের গাইড রোজার বর্ণনা। রোজা বলছিল এখনো দক্ষিণ আফ্রিকায় কোন পরিবার পাওয়া যাবে না যারা বর্ণবাদের শিকার হয়নি! রোজার বাবা ১৩ বছর গৃহবন্ধী ছিলেন।

আমাদের প্রথম যাত্রা বিরতি হয় সোয়োতোর স্বাধীনতা চত্ত্বরে। বর্ণবাদ বিরোধী সংগ্রাম যখন ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে তখন, ১৯৫৫ সালের, ২৬ জুন, বিভিন্ন বর্ণগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ হাজার নরনারী, জোহাসেনবার্গ শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে ক্লিপটাউনে জড়ো হোন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বর্ণবাদ বিরোধী, স্বাধীনতা ও সাম্যের একটি সনদ তৈরি করা। দ্বিতীয় দিন পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার আগেই ১০টি মূল ধারা বিশিষ্ট সনদে স্বাক্ষর করেন সবাই। এই সনদই দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদোত্তর নতুন সংবিধানের ভিত্তি।

স্থাপত্যের বর্ণনা আমি খুব একটা দিতে পারি না। এখন সেখানে আছে একটি শিখা অনির্বাণ, ২০০৫ সালে এই শিখা প্রজ্জ্বলন করা হয়েছে। সৌধের ওপরটা খোলা, ফলে রোদ সবসময় এক ধরণের আলোছায়া তৈরি করে। আমাদেরকে দেখে এগিয়ে এলেন একজন আফ্রিকান। আফ্রিকাতে এতো বেশি জাতিসত্ত্বা যে তিনি কোন জাতিসত্ত্বার সদস্য সেটি বোঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তিনি নাক দিয়ে বাশি বাজালেন। দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় সংগীত এবং অন্য একটি সুর। উদ্দেশ্য সাহায্য। বর্ণবাদ বিলুপ্তির পর, দক্ষিণ আফ্রিকাতে কালোদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বটে তবে একটি সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠায় আরো অনেকদিন লাগবে। চত্বরে কিছু হস্তশিল্প সামগ্রী বিকিকিনির হাট।

স্বাধীনতা চত্বর থেকে আমরা হেক্টর (দক্ষিণ আফ্রিকার মতিয়র) মিউজিয়াম হয়ে চলে আসলাম একটি আবাসিক পল্লীতে, পশ্চিম অর্লেন্দো। যেখানে আমরা নামলাম সেখানেই বিশপ ডেসমন্ড টুটুর বাড়ি। বাইরে থেকে দেখে খুব একটা সুবিধা করা গেল না কারণ দেয়াল যথেষ্ঠ উঁচু। এরপর আমরা হাটতে হাটতে চলে গেলাম ৮১১৫ নং নাকানে স্ট্রীটে। ঐটি মান্ডেলার বাড়ি। ১৯৪৬ সালে প্রথম স্থ্রী ইভলিন টকোকে নিয়ে ঐ বাড়িতে ওঠেন আফ্রিকার কালমানুষের নেতা। ১৯৫৭ সালে টকো তাকে ছেড়ে যায়। ১৯৫৮ সালে বিয়ের পর উইনি সে বাড়িতে উঠে আসে।

কর্নার প্লট। এখন এটি একটি মিউজিয়াম। আশেপাশের বাড়িগুলোর মতো একতলা, ছোট বাড়ি। চারপাশে লোহাড় বেড়া। মূল ভবনে ঢোকার আগে একটি টিকেট ঘর আর রেস্ট রুম। তবে, এগুলো পরে করা হয়েছে। মূল ভবনটি খুবই ছোট। আমার আন্দাজে ৭০০-৮০০ বর্গফুট হবে। কিচেন ছাড়া ৩টা রুম। রুমগুলো খুবই ছোট। খাট বসানোর পর সামান্য জায়গা । মাখানে খাবার ঘর হয়ে সব রুমে যাওয়া যায়।

সবগুলো ঘরের দেওয়ালে এখন বিভিন্ন ছবি আছে। ম্যান্ডেলার পারিবারিক ছবি। বেশ কিছু দুর্লভ ছবিও আছে। আছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সম্মানসূচক ডিগ্রীর সার্টিফিকেট।



দেওয়ালের কয়েকটি স্থান ফাঁকা। ভালমতো দেখলে বোঝা যায়, সেগুলো গুলির দাগ। কয়েকটি দাগ দেখে আমার গুলির দাগ মনে হলেও গাইড বললেন সেগুলো ককটেল মলোটোভের দাগ। মাঝখানের রুমে (যেটিকে আমি খাবার ঘর বলছি) একটি দেয়াল তুলেছিলেন ম্যানডেলা। পুলিশের আর সাদাদের ঘুলি বর্ষনের সময় দেয়ালের পেছনে আশ্রয় নিতো সবাই। তবে, এটি তার ঘর হলেও ম্যানডেলাকে প্রায় পালিয়ে বেড়াতে হতো, পুলিশের ভয়ে। ১৯৬২ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তাই খুব বেশিদিন তার থাকা হয়নি।



ম্যান্ডেলা জেলে থাকার সময় দুই মেয়ে জেনি আর জিনদিকে নিয়ে সেখানে থাকতেন উইনি। সে সময় শাদা এবং পুলিশ একাধিক বাড়িটি জ্বালিয়ে দেয়। পরে, আর একটু দূরে উইনি আর একটি ঘর তৈরি করেন।

ম্যান্ডেলার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি উভয় ক্ষেত্রে এই বাড়িটিই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানুষদের আশাভরসার স্থল। ১৯৯৬ সালের ছাত্র বিক্ষোভ (যে বিক্ষোভের প্রথম শহিদ হেক্টর), আর তরুন আফ্রিকানদের আলাপ আলোচনার স্থান।

১৯৯০ সালে জেল থেকে মুক্তি পাবার পর ম্যান্ডেলা এই বাড়িতেই আসেন এবং ১১ দিন অবস্থান করেন। ১৯৯৭ সালে জাদুঘর করার জন্য তিনি বাড়িটি সোয়েতো হেরিটেজ ট্রাস্টকে দিয়ে দেন।

১৯৯০ সালের দিনটির কথা তিনি তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন – “সেদিন রাতে আমি উইনিকে নিয়ে ৮১১৫ পশ্চিম অর্লেন্ডোতে পৌছাই। এরপর আমি বিশ্বাস করি যে আমি কারাগার থেকে বের হয়েছি। আমার জন্য ৮১১৫ হলো আমার পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু, আমার মানসিক ভুগোলের এক্স চিহ্নিত বিন্দু। ”



ফেরার সময় এক চমৎকার অনুভুতি নিয়ে ফিরেছি। দেশকে কতো গভীরভাবে ভালবাসলে মাত্র ৮০০ বর্গফুটের একটি বাড়িতে থেকে দেশকে বদলে দেওয়া যায়!!!

নেলসন ম্যান্ডেলা, তোমাকে সালাম।





[আমার ক্যামেরার ব্যাটারি ফুরিয়ে যাওয়ায় নিজে কোন ছবি তুলতে পারি নাই। ছবিগুলো তুলেছেন উন্নয়ন কর্মী ফারজানা আখতার]



মন্তব্য ২৫ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (২৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:২৪

সুমন ঘোষ বলেছেন: খুব ভালো লাগলো - ম্যান্ডেলার প্রতি আমি কিছুটা দূর্বল আছি । ++++্

১২ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:০৭

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।
নেলসন ম্যান্ডেলার সবচেয়ে বড় গুন তিনি জানতেন কখন থামতে হয়। আর এটাও জানতেন নতুন প্রজন্মের হাতে ছেড়ে দিলে তারা সেটি টেনে নিতে পারে।

ইচ্ছে করলে দুই টার্ম অ্ন্তত প্রেসিডেন্ট থাকতে পারতেন। কিন্তু করেননি।

২| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:২৮

অভি৯১৭৫ বলেছেন: স্যার বেশ ভালো লাগলো ব্লগটি পড়ে।

১২ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:০৮

মুনির হাসান বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৩৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: দেশকে কতো গভীরভাবে ভালবাসলে মাত্র ৮০০ বর্গফুটের একটি বাড়িতে থেকে দেশকে বদলে দেওয়া যায়!!!
নেলসন ম্যান্ডেলা, তোমাকে সালাম।

চমৎকার একটা পোস্ট।
++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
একগুচ্ছ প্লাস।

১২ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮

মুনির হাসান বলেছেন: ঐ বাড়িতে গিয়ে নিজেকে খুবই ক্ষু্র মনে হয়েছে যখন ভেবেছি আমার বাসাটা এর দ্বিগুন!

ধন্যবাদ।

৪| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:০৭

স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:
ভাললাগা রইলো।

১২ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০০

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: ধন্যবাদ স্যার আপনার এই চমৎকার ভ্রমন বর্ণনা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ! নেলসন ম্যান্ডেলা, তোমাকে সালাম।

১২ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৯

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৪৭

রেজোওয়ানা বলেছেন: অনেক চমৎকার একটা ব্লগ!

শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ.....

১২ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৯

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪

টুম্পা মনি বলেছেন: ভালো। সংগ্রহে রাখার মত ব্লগ।

১২ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৯

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৮| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:২২

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। ভালো লাগা রইল :)

৯| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:১৩

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: দারুন!!!!!!!!! চমৎকার একটা ছবি ব্লগ!!!!

১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:০০

মুনির হাসান বলেছেন: ইদানিং ভাবছি সব ব্লগেই ছবি দিয়ে দেব। সেটাই করছি কয়েকটা ব্লগে।

ভাল লেগেছে জেনে খুশী!

১০| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩২

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: ভাল লাগল।

১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:০১

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।

১১| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:১৮

তন্দ্রা বিলাস বলেছেন: স্যার আপনি যে এই ব্লগে আছেন সেটা জানতামই না। যাক আপনাকে এখানে পেয়ে অনেক অনেক ভাল লাগল। অনুসরণে নিলাম আপনার ব্লগকে। রাজশাহীতে ফ্রীল্যান্সিং এর উপর দেয়া আপনার বক্তৃতা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনে ছিলাম।
ছবি ব্লগে +++

১৩ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:২০

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ

১২| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৪৫

মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: নাইস পোস্ট - তয় আরও কয়েকটা ছবি থাকলে আরও ভাল হত

১৩ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:১৯

মুনির হাসান বলেছেন: ব্যাটারি ফুরায় যাওয়ায় আমি তো ছবি তুলতেই পারি নি। ফারজানা ছিল বলে রক্ষা।

১৩| ১৩ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:২৩

সায়েম মুন বলেছেন: পোস্টে অনেক ভাললাগা রইলো।

১৩ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:২০

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.