নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবিন.হুড

রবিন.হুড › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাবীর আলেকজান্ডারকে প্রতিহতকারী গঙ্গারিডাই জাতির আদি ভূমি ও প্রাচীনতম জনপদ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর।

১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১:১৬

মুকসুদপুরের ইতিহাসঃ গ্রিকবীর আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বে কোটালীপাড়া অঞ্চলে গঙ্গারিডাই জাতি স্বাধীনভাবে রাজত্ব করত। জৈমস ওয়াইজ এর মতে কোটালিপাড়া ছিল গ্রিক বিবরণীর গঙ্গারিডাই রাষ্ট্রের রাজধানী।খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে কোটালীপাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। সমুদ্রগুপ্ত চন্দ্রবর্মণকে পরাজিত করে তার রাজ্যকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন, এরপর এ অঞ্চল (৩২০-৪৯৬ খ্রিঃ) গুপ্ত সম্রাটদের অধীনে ছিল। মহাবীর আলেকজান্ডারের ভারতবর্ষ অভিযানে বাধাদানকারী জাতি গঙ্গারিডাই এর উত্তরসূরী হচ্ছেন আমাদের পূর্বসূরী এবং গঙ্গারিডাই রাষ্ট্রর অংশছিল আমাদের মুকসুদপুরের জনপদ যা প্রাচীনকালে বঙ্গ অঞ্চলের অন্তর্গত ছিল। সুলতানী ও মোঘল যুগের আগে ও এর কিছু সময় এ অঞ্চল হিন্দু রাজারা শাসন করতেন। মুঘল আমলে বঙ্গে বার ভুঁইয়াদের জমিদারীর সূচনা হলে শেষহয় এই অঞ্চলে হিন্দু রাজাদের শাসনামল। বার ভুঁইয়াদের শাসনামলে বঙ্গ অঞ্চল ১২টি পরগণায় বিভক্ত ছিল, যার একটি পরগণার নাম ছিল “ভূষণা”।মুঘল শাসনামের মানচিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এই “ভূষণা” পরগণাতেই আজকের গোপালগঞ্জ তথা মুকসুদপুরের অবস্থান ।
বৃটিশ শাসনামলের বিভিন্ন দলিল পত্র থেকে জানা যায় মুকসুদপুর পর্যায়ক্রমে তৎকালীন মহববতপুর, তেলিহাটী, নলদী, আমিরাবাদ, ফতেজংপুর ও হাবড়ী পরগণার অন্তর্ভুক্ত ছিল । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের (১৭৯৩) সময় মুকসুদপুর ছিল যশোর জেলার অন্তর্গত। মুকসুদপুর থানাটি ১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দের পরবর্তী পর্যায়ে এপাড় বঙ্গ তে প্রতিষ্ঠিত সীমিত কিছু থানা গুলোর একটি । (তথ্যসুত্র : ক্যালকাটা গেজেট পৃষ্ঠা নং-১৪৪৩ তারিখ- ১৫/৯/১৮৯৪) । ১৮০৭ সালে মুকসুদপুর থানা যশোর থেকে ফরিদপুর জেলার সাথে যুক্ত হয়।
সেসময় বর্তমান গোপালগঞ্জ-মাদারীপুর এলাকা ছিল বিশাল জলাভূমি এখানে নৌ-ডাকাতির প্রকোপ ছিল বেশী। এ অঞ্চলে আইন শৃংখলা ছিল খুবই দূর্বল। এ জন্য বাকেরগঞ্জ থেকে বিভাজিত হয়ে ১৮৫৪ সালে মাদারীপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৭২ সালে মাদারীপুর মহকুমায় গোপালগঞ্জ নামক নতুন একটি থানা গঠিত হয়। ১৮৭৩ সালে মাদারীপুর মহকুমাকে বাকেরগঞ্জ জেলা থেকে ফরিদপুর জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
জনশ্রুতি আছে যে, বর্তমান মুকসুদপুর উপজেলা সদর থেকে ৩ কি মিঃ পশ্চিমে গোবিন্দপুর ইউনিয়নের কদমপুর মৌজায় তৎকালীন নড়াইলের জমিদার বাবু রতন কুমার একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করেন তার কাচারী বাড়ীতে । বৃটিশ রাজত্বে ১৯০৫ সালে বঙ্গ ভঙ্গ ও ১৯০৯ সালে বঙ্গ ভঙ্গ রদ হলে এপাড় বাংলার মানচিত্র ও প্রশাসনিক কাঠামোতে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। মুকসুদপুর থেকে আলাদা করা হয় কাশিয়ানী যেটি ছিল এককালের একটি বিখ্যাত গ্রাম (বর্তমানে উপজেলা)। জমিদার রতন বাবু তার এই কাচারী বাড়ীর পুলিশ ক্যাম্পটিকে পূর্ণাংগ থানায় পরিণত করার জন্য কলকাতার লাট ভবন বা রাইটার্স বিল্ডিং এর উচ্চ পদস্থ রাজ কর্মচারী জনাব মোকসেদ আলী সাহেবের সার্বিক সহযোগিতা পান । এর স্বীকৃতি স্বরুপ জমিদার রতন কুমার কদমপুর পুলিশ ক্যাম্পকে মোকসেদপুর থানা নামকরণ করেন । যার বিবর্তিত রুপ মুকসুদপুর থানা। ১৯০৯ সালে মাদারীপুর মহকুমাকে ভেঙ্গে গোপালগঞ্জ মহকুমা গঠন করা হয়। গোপালগঞ্জ এবং কোটালীপাড়া থানার সঙ্গে ফরিদপুর মহকুমার মুকসুদপুর থানাকে গোপালগঞ্জ মহকুমার সাথে যুক্ত করা হয়। গোপালগঞ্জ মহকুমার মুকসুদপুর থানা ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে ১৯১৭ সালের ১৫ জুলাই প্রতিষ্ঠা হয়। ঐ সালের ২১ সেপ্টেম্বর গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পর ১৯১৮ সালের ১ জানুয়ারী থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুকসুদপুর থানার কার্যক্রম শুরু হয়। মুকসুদপুর থানা সদরে (পুরাতন মুকসুদপুর) অবস্থিত ভূমি অফিসের জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনটি আজও তার ঐতিহ্য ধারন করে স্বগৌরবে দাড়িয়ে আছে যাকে বর্তমান সরকারের প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর জাতীয় হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। কালক্রমে মুকসুদপুর থানার প্রশাসনিক ভবন ও উপজেলা প্রশাসন এর কার্যক্রম নদীর পাড়ে টেংরাখোলা বাজারে স্থানন্তরিত হলে নদী কেন্দ্রীক উপজেলা শহর গড়ে ওঠে যা পরবর্তীতে মুকসুদপুর পৌরসভার মর্যাদা পায়। বর্তমানে ঢাকা খুলনা হাইওয়ের মুকসুদপুর কলেজ মোড় যায়গাটি মুকসুদপুর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্পট হয়ে দাড়িয়েছে।
উপজেলার খান্দারপাড়া ইউনিয়নের খান্দারপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন পাক ভারত উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত ঐতিহাসিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রমেশ চন্দ্র মজুমদার। শিক্ষাবিদ ও বাঙালি ঐতিহাসিক। তিনি ১৮৮৮ সালের ৪ ডিসেম্বর খন্দরপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৬ সালে রমেশচন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিযুক্ত হন এবং ১৯৪২ সাল পর্যন্ত এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ভারতীয় বিদ্যাভবন সিরিজের ১১টি খন্ডে রচিত history and culture of the indian people ছিল মজুমদারের এক গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি। ৯২ বৎসর কর্মময় জীবন শেষে রমেশচন্দ্র মজুমদারের ১৯৮০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয়।
এছাড়া উপজেলার নগর সুন্দরদী গ্রামে ১৮৮৭ জন্ম গ্রহণ করেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, সমাজসেবক ও সাংবাদিক মৌলভী আবদুল হাকিম। বাংলার অশিক্ষিত মুসলমান সমাজকে শিক্ষিত ও সচেতন করে তোলার জন্য তিনি নিরলস ভাবে কাজ করেছেন। কলকাতার হানাফী, মুসলেম, হিতৈশী, ইসলাম দর্শন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৩০ সালে অভিভক্ত বাংলার মুসলিম সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রচিত প্রন্থ পল্লী সংস্কার, বিষাদ লহরী, মিলন, এসকে গোলজার, আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ, প্রতিশোধন, প্রতিদান প্রভৃতি। ১৯৫৫ সালে তিনি নিজ গ্রামে ইন্তেকাল করেন।
গোবিন্দপুর ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট খয়রাত আলী মুন্সী তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি কোলকাতায় ব্যবসা করে উপার্জিত সকল অর্থ এলাকার জনস্বার্থে ব্যয় করতেন। নিজের গোলার ধান অকাতরে বিলিয়েছেন গরীব দূঃখীর মুখে অন্য যোগাতে। নিজস্ব অর্থ ব্যয় করে অসংখ্য রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং জনগনের পানীয় জলের অভাব দূর করতে নলকূপ স্থাপন করেন। ১৯৪০ সালে প্রেসিডেন্ট খয়রাত আলী মুন্সীর অকাল মৃত্যু হলে এলাকার জনগন তাঁর সেবা থেকে বঞ্চিত হন।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ভাষা আন্দোলনের মিছিলে ছাত্র জনতার উপর পুলিশের গুলির প্রতিবাদে ২৪ ফেব্রুয়ারি এ উপজেলায় শোক মিছিল ও জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৬ সালে এ উপজেলায় আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে স্কুল ছাত্র মহানন্দ শহীদ হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২২ এপ্রিল পাকিস্তানি বিমান থেকে গুলিবর্ষণ করলে বানিয়ারচরে ৫ জন লোক আহত হয় এবং একটি লঞ্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৯ আগস্ট মুকসুদপুর থানায় মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত আক্রমণে পুলিশ ও রাজাকারসহ ৮৪ জন নিহত হয়। ১২ অক্টোবর বামনডাঙ্গা বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের লড়াইয়ে ২২ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। এছাড়াও ১২ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিগনগর ব্রিজের নিকট মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের লড়াইয়ে ৩০ জন পাকসেনা ও ১০ জন রাজাকার নিহত হয় এবং ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ২ (দিগনগর ও বাগাতি গ্রাম)।


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৩

নতুন বলেছেন: আমার বাড়ী ফরিদপুরে, তাহলে আমাদের এলাকার মানুষই এক সময় মহাবীরকে থামিয়ে দিয়েছিলো? B-)

১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৬

রবিন.হুড বলেছেন: ঠিক তাই হবে। তবে সঠিক ইতিহাস গবেষণার মাধ্যমে বের করতে হয় ।

২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: তথ্য গুলো কি সঠিক? আপনি নিশ্চিত?

১৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:১২

রবিন.হুড বলেছেন: কোন ইতিহাসই সঠিক নয়। ইতিহাস লেখে বিজয়ীরা সেখানে পরাজীতদের কোন তথ্যই স্থান পায় না। তবে উপরের তথ্য ইতিহাসবীদই সমর্থন করে। আপনি কোন তথ্য নিশ্চিত হতে চাচ্ছেন তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করলে সঠিকতা যাচাই করে নিশ্চিত করা যাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.