নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম
আম্মা বা’দ।
সমস্ত প্রশংসা পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম আমাদের নবী সায়্যাদুল মুরসালীন সাফিউল মুজ্নেবিন খাতামান নাবিয়্যীন প্রিয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
❖ ভূমিকা :
----------------➮
সালাত বা নামায নিয়ে এতো বেশী লেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা কারণ এটা প্রত্যেক মুসলমানের প্রাত্যহিক জীবনের নিয়মিত একটা অনুশীলন। সৃষ্টিকর্তার নিকট বান্দা নিজেকে আত্মসমর্পণের অনন্য মাধ্যম এই সালাত বা নামায।
সম্মানিত বন্ধুরা, আমি ক্ষুদ্র জ্ঞানে চেস্টা করেছি মাত্র,আমার এই চেষ্টায় কোনো ভাইয়ের যদি সামান্যতম উপকারও হয় এটাই আল্লাহ পাকের কাছে আমার প্রাপ্তি।
সৃষ্টিজগতের রব আল্লাহ তা’আলা মানব জাতীকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
অর্থাৎ:আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।
( সূরা আয-যারিয়াত আয়াত ৫৬)
ফলে তিনি মানুষের জন্য কিছু দৈহিক, আত্মিক ও আর্থিক ইবাদতের প্রচলন করেছেন।
দৈহিক ইবাদতের মাঝে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও মহান ইবাদত হল সালাত। সালাত এমন একটি ইবাদত যাকে আল্লাহ তার মাঝে এবং তার বান্দার মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম সাব্যস্ত করেছেন।
❖ সালাত বা নামায(নামাজ)❖
---------------------------------➮
ইবাদতের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে নামায। নামায একটি ফরজ ইবাদত।এটি ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয়। নামাযের জন্য নামাযীদের পোশাক ও দেহ পবিত্র থাকা প্রয়োজন। নামাযের জায়গাটিও পবিত্র হওয়া জরুরী।
''নামায'' শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে উদ্ভূত (ফার্সি: نماز) এবং বাংলা ভাষায় পরিগৃহীত একটি শব্দ যা আরবি ভাষার সালাত শব্দের (আরবি: صلاة, কুরআনিক আরবি: صلوة,) প্রতিশব্দ। বাংলা ভাষায় صلوة'সালাত'-এর পরিবর্তে সচরাচর 'নামাজ' শব্দটিই ব্যবহৃত হয়। ফার্সি, উর্দু, হিন্দি, তুর্কী এবং বাংলা ভাষায় একে নামায বলা হয়। কিন্তু এর মূল আরবি নাম صلوة সালাত।
"সালাত" -এর আভিধানিক অর্থ দোয়া, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি।
পারিভাষিক অর্থ:আল্লাহর নিকটে বান্দার ক্ষমা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদতকে ‘সালাত’ বলা হয়,যা তাকবীরে তাহরীমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম দ্বারা শেষ হয়’। পবিত্র কালেমার পর নামাযই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
◉এক কথায়: রাব্বুল আলামীন আল্লাহর উদ্দেশ্যে বান্দার পক্ষ থেকে নিবেদিত আনুষ্ঠানিক বিশেষ উপাস্যকে সালাত বা নামায বলে”।কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সালাতের সংঙ্গা বুঝতে হলে এবং এর মর্ম উপলব্ধি করতে হলে সালাত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের অনেকগুলো আয়াতের অবতারণা করা প্রয়োজন যেমন ◉মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فاغْسِلُواْ وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُواْ بِرُؤُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَينِ وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُواْ وَإِن كُنتُم مَّرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاء أَحَدٌ مَّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاء فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং পদযুগল গিটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর। (সুরা মায়েদাহ আয়াত ৬)
◉মহান আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন:
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي
আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার ইবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর।(সুরা ত্বোয়া-হা আয়াত ১৪)
◉আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর, সেজদা কর, তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর এবং সৎকাজ সম্পাদন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সুরা হাজ্জ্ব আয়াত ৭৭ )
(সেজদাহ্)
➮ নামায আদায় প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন:
إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللّهِ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلاَةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلاَّ اللّهَ فَعَسَى أُوْلَـئِكَ أَن يَكُونُواْ مِنَ الْمُهْتَدِينَ
নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামায ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
(সূরা আত তাওবাহ আয়াত ১৮)
◉মহান আল্লাহ তায়া’লা আরো ইরশাদ করেন :
الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
أُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَّهُمْ دَرَجَاتٌ عِندَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
‘‘যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারা হল সত্যিকার ঈমানদার। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক। (সূরা আনফাল আয়াত ৩-৪)
◉আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন:
وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَأَمْناً وَاتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ
যখন আমি কা’বা গৃহকে মানুষের জন্যে সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাযের জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ। (সুরা বাক্বারাহ আয়াত ১২৫)
◉আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন:
وَلِلّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ فَأَيْنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجْهُ اللّهِ إِنَّ اللّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
পূর্ব ও পশ্চিম আল্লারই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ। (সুরা বাক্বারাহ আয়াত ১১৫)
◉আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন:
وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ
أُوْلَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ
الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
‘‘আর যারা তাদের নামায সমূহের হিফাযত করে তারাই হবে অধিকারী। অধিকারী হবে জান্নাতুল ফেরদাউসের তাতে চিরকাল থাকবে। (সূরা মুমিনুন আয়াত ৯ -১১)
◉মহান আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেনঃ--
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ أُوْلَـئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللّهُ إِنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী। (সূরা তওবাঃআয়াত ৭১)
❖উপরে বর্ণিত পবিত্র আয়াতে কারিমা গুলির আলোকে মোটামুটিভাবে সালাতের একটি সংগায় বলতে পারি যে,সালাত হচ্ছে দিবা-রাত্রীর বিভিন্ন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওজু করে,পবিত্র পরিস্কার-পরিচ্ছন্নহয়ে,পবিত্র স্থানে, সুস্থ জ্ঞানে,কাবার দিকে মুখ করে, গভীর মনোযোগ সহকারে, সুনির্দিষ্ট অঙ্গভঙ্গিমার মাধ্যমে যথা-দাড়ানো-রুকু ও সেজদারত অবস্থায়,আনুষ্ঠানিকভাবে,তাউজ ও তাসমিয়া পাঠ করে পবিত্র কুরআনের সূরা কেরাত আবৃতির মাধ্যমে আল্লাহর উপাসনা করাকে সালাত বা নামায বুঝায়।
◉হাদীস শরীফে হজরত উবায়দুল্লাহ্ ইবনু মূসা (রাঃ) ইবনু উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি।
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি।
১। لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ
আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ আল্লাহ্র রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দান।
২। সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা
৩। যাকাত দেওয়া
৪। হাজ্জ (হজ্জ) করা এবং
৫। রামাদান এর সিয়াম পালন করা।
(সহীহ বুখারি ও মুসলিম)
◉সালাত আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও সর্বোত্তম আমল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :--
استقيموا ولن تحصوا، واعلموا أن خير أعمالكم الصلاة، ولن يحافظ على الوضوء إلا مؤمن.
(رواه ابن ماجة)
তোমরা অটুট ও অবিচল থাক, গণনা করো না, আর মনে রাখবে তোমাদের সর্বোত্তম আমল হল সালাত, একজন মোমিন অবশ্যই সর্বদা ওজুর সংরক্ষণ করতে থাকে। (ইবনে মাজাহ :২৭৩)
◉হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়া’লা বলেন :আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি এবং আমি আমার নিজের সাথে অঙ্গীকার করেছি যে, যে ব্যক্তি যথা সময়ে নামায সমূহের পূর্ণ হিফাযত করবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে নামায সমূহের হিফাযত করবে না, তার জন্য আমার কাছে কোন অঙ্গীকার নেই। ---আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ
❖সালাতের ওয়াক্ত ও রাকাতের সংখ্যা :
---------------------------------------------➮
৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে রজব তারিখে মি‘রাজের রাত্রিতে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়। উক্ত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত হ’ল- ফজর, যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা।
এছাড়া রয়েছে জুম‘আর ফরয সালাত,যা সপ্তাহে একদিন শুক্রবার দুপুরে পড়তে হয়।
সালাত/নামায সকালে, মধ্যাহ্নে, দ্বিপ্রহরের পর, বিকেলে, সন্ধ্যায় ও রাতে পাঁচবার আদায় করতে হয়। এ প্রসঙ্গে নিন্মোক্ত আয়াতে কারিমা গুলিতে মহান রাব্বুল আলামীন নামাযের ওয়াক্তের ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন যেমন পবিত্র কোরানে করিমে
◉ইরশাদ হচ্ছে--
وَأَقِمِ الصَّلاَةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّـيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِينَ
অর্থাৎ:আর দিনের দুই প্রান্তেই নামায ঠিক রাখবে, এবং রাতের প্রান্তভাগে পূর্ণ কাজ অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহা স্মারক।
(সূরা হুদ আয়াত; ১১৪)
◉মহান আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন:
فَاصْبِرْ عَلَى مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا وَمِنْ آنَاء اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَأَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضَى
অর্থাৎ:সুতরাং এরা যা বলে সে বিষয়ে ধৈর্য্য ধারণ করুন এবং আপনার পালনকর্তার প্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করুন সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করুন রাত্রির কিছু অংশ ও দিবাভাগে, সম্ভবতঃ তাতে আপনি সন্তুষ্ট হবেন।(সূরা ত্বোয়া-হা আয়াত;১৩০)
◉আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন:
فَسُبْحَانَ اللَّهِ حِينَ تُمْسُونَ وَحِينَ تُصْبِحُونَ
অর্থাৎ অতএব, তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা স্মরণ কর সন্ধ্যায় ও সকালে,
وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَحِينَ تُظْهِرُونَ
অর্থাৎ এবং অপরাহ্নে ও মধ্যাহ্নে। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে, তাঁরই প্রসংসা।
(সূরা আর-রূম আয়াত;:১৭-১৮)
নামাযের ভিন্নতা অনুযায়ী বাধ্যতামূলক (ফরজ) রাকাতের সংখ্যাও ভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
(১) ফজরের দুই রকাত। (২) জোহরের চার রাকাত। আর জুমার দিন জোহরের পরিবর্তে জুমার দুই রাত। (৩) আছরের চার রাকাত। (৪) মাগরিবের তিন রাকাত। (৫) এশার চার রাকাত ।
◉সুন্নত নামাজ:
(১)ফজরের ফরযের পূর্বে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
(২) জোহরের ফরযের আগে চার রাকাত ও ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
(৩) জুমার ফরযের আগে চার রাকাত ও ফরযের পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
(৪) মাগরিবের ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
(৫) এশার ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
এসকল সুন্নত নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলা হয়। কোন ধরনের ওযর ছাড়া এসুন্নতগুলো তরক কারী গুনাহগার হবে।
❖সালাতের শর্ত:
--------------------➮
সুস্থ মস্তিস্কের মুসলমান বয়স কমপক্ষে ৭ বছরের ওপর হলে সালাত ফরয হয়।
সালাতের শর্তাবলী যেমন- দেহ, কাপড় ও স্থান পাক হওয়া,ওজু করা,সতর ঢাকা।,সালাতের ওয়াক্ত হওয়া,পবিত্রতা অর্জন করা,ক্বিবলামুখী হওয়া, সংকল্প করা।
◉ আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
يَا بَنِي آدَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ
হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও,
(সূরা আল আ‘রাফ ৩১)।
সালাতের সময় উত্তম পোষাক সহ টুপী, পাগড়ী প্রভৃতি মস্তকাবরণ ব্যবহার করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ছাহাবায়ে কেরামের সুন্নাত ছিল।
❖সালাতের অপরিহার্য বিষয় গুলি:
--------------------------------------➮
(যা ইচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে পরিত্যাগ করলে সালাত বাতিল হয়ে যায়) যেমন-
*সমর্থ হলে সালাতে দণ্ডায়মান হওয়া।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, وَقُوْمُوْا ِللهِ قَانِتِيْن َ ‘আর তোমরা আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠচিত্তে দাঁড়িয়ে যাও’
(বাক্বারাহ ২৩৮)
*তাকবীরে তাহরীমা।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, وَلِرَبَّكَ فَكَبِّرْ ‘তোমার প্রভুর জন্য তাকবীর দাও’
(মুদ্দাছছির ৩)।
*সূরা ফাতিহা পাঠ করা।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ ‘ঐ ব্যক্তির ছালাত সিদ্ধ নয়,
যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করে না’।
*রুকূ ও সিজদা করা।
আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا ارْكَعُوْا وَاسْجُدُوْا… ‘
হে মুমিনগণ! তোমরা রুকূ কর ও সিজদা কর…’(হজ্জ ৭৭)।
*শেষ বৈঠক করা।
❖সালাতের ওয়াজিব সমূহ:
-----------------------------➮
*তাকবীরে তাহরীমা’ ব্যতীত অন্য সকল তাকবীর।
*রুকূতে তাসবীহ পড়া।
*ক্বাওমার সময় ‘সামি‘আল্লা-হু লেমান হামেদাহ’ বলা।
*ক্বওমার দো‘আ কমপক্ষে ‘রববানা লাকাল হাম্দ’ বলা।
*সিজদায় গিয়ে তাসবীহ পড়া।
*দুই সিজদার মাঝখানে স্থির হয়ে বসা।
*প্রথম বৈঠকে বসা ও ‘তাশাহহুদ’ পাঠ করা।
*শেষ বৈঠকে দুরুদ শরীফ পড়া।
*সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করা।
-------------
*তা’দীলে আরকান অর্থাৎ কিরাআত, রুকু, সিজদা ধীরে সুস্থে আদায় করা ।
*বিতরের নামাযে দোয়া কুনুত পড়া।
*ঈদের নামাযে তাকবীর পড়া ।
❖সালাতের সুন্নাত সমূহ :
-----------------------------➮
*তাকবীরে তাহরীমার সময় দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠানো।
*জুম‘আর ফরয সালাত ব্যতীত দিবসের ফরয সালাত সমূহ সরবে পড়া।
*সালাতে পঠিতব্য সকল দো‘আ।
*সানা পড়া।
*সুরা ফাতেহার পর কুরআনের যে কোন স্থান হতে তিলাওয়াত করা।
*বুকে হাত বাঁধা।
*সরবে ‘আমীন’ বলা।
*সিজদার স্থানে নযর রাখা।
*তাশাহহুদের সময় ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা।
❖সালাতের বিনষ্টের কারণ সমূহ
------------------------------------➮
*সালাতের অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া বা পান করা।
*সালাতের অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বলা।
*ইচ্ছাকৃত বা বিনা কারণে সালাতের কোন রুকন বা শর্ত পরিত্যাগ করা।
*ইচ্ছা করে ইমামের আগে-আগে যাওয়া।
*ওজু ভেঙ্গে যাওয়া।
* ক্বিবলার দিক হতে ফিরে যাওয়া।
❖সালাতের নিয়ম:
----------------------➮
◉রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِىْ أُصَلِّىْ
তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত পড়তে দেখ ঠিক সেভাবে সালাত আদায় কর। (বুখারী )
একজন মুসলমান যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন তার অন্তরে এমন একটি অনুভূতি থাকা উচিত যে, সে এখন মহান আল্ল¬হর সম্মুখে দণ্ডায়মান।আর যখন সালাত আরম্ভ করে তখন বিশ্বাস করবে যে, এখন সে আল্লাহর সাথেই কথোপকথন করছে।
◉রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:
إذا قام أحدكم يصلي فإنه يناجي ربه
যখন কেউ সালাতে দাড়ায় সে আল্লাহর সাথেই নিভৃতে আলাপ করে। (বুখারী)
◉রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:
أقرب ما يكون العبد من ربه وهو ساجد فأكثروا الدعاء
বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্য লাভ করে যখন সে সেজদারত থাকে। সুতরাং, তোমরা সেজদারত অবস্থায় বেশী বেশী প্রার্থনা কর।(মুসলিম:৫৭৯)
নামাজ দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। নামাজের ধাপ বা অংশকে রাকাত বলা হয়। ক্বিবলামুখি হয়ে দাড়া,
তারপর তাকবীরে তাহ্রীমা الله اڪبر(আল্লাহু আকবার) বলা।
তারপর ছানা পড়তে হয়-
سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، تَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ
(উচ্চারণঃ সুবহানাকাল্লাহুম্মা অবিহামদিকা অতাবারকাসমুকা অতাআলা জাদ্দুকা
অলাইলাহা গইরুকা)
তারপর اعوذ بالله من الشيطن الرجيم
(উচ্চারণঃ আয়ুজু বিল্লাহি মিনাশ্শাই ত্বর্নিরজীম।)পড়তে হয় এবং
بسم الله الرحمن الرحيم
(উচ্চারণঃ বিসমিল্লার্হির রহমার্নি রহীম)পড়তে হয়।
তারপর সূরা ফাতিহা
ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٣ مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥ ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧ ﴾ الفاتحة: ١، ٧
পড়তে হয়।
(উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন আররহমানির রহীম মালিকি ইয়াওমিদ্দিন, ইয়্যাকানা’বুদু অইয়্যাকানাসতাইন। ইহদিনাছছিরতল মুসতাকীম। ছিরতল্লাযিনা আনআ’মতা আলাইহিম গইরিল মাগধুবি আলাইহিম,ওলাদ্দল্লিন।)
তারপর অপর একটি সুরা পাঠ করতে হয় যেমন সুরা ফীল।
الم تر ڪيف فعل ربڪ باصحب الفيل الم يجعل ڪيد هم في تضليل و ارسل عليهم طيرا ابابيل ترميهم بحجارة من سجيل فجعلهم ڪعصف مآ ڪول
(উচ্চারণঃ আলামতার কাইফা ফায়ালা রাব্বুকা বিআছহাবিল ফীল । আলাম ইয়াজ আল কাইদাহুম ফী তাদলীল। অআরসালা আলাইহিম তাইরান আবাবিীল। তারমীহিম বিহিজারতিম মিনসিজ্জীল। ফাজাআলাহুম কাআসফিম মাকূল।)
তারপর তাকবীর বলে রুকু করতে হয় রুকুতে তাসবীহ পাঠ করতে হয়
سبحان ربي العظيم
(উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম।)
রুকু থেকে
سمع الله لمن حمده
(উচ্চারণঃ সামিয়াল্লাহুলিমান হামিদাহ )
বলে দাঁড়িয়ে তারপর الله اڪبر বলে সিজদা দিতে হয়।
সিজদার মধ্যে سبحان ربي الاعلى
(উচ্চারণঃ সুবহানা রব্বিয়াল আলা)পাঠ করতে হয়।
দ্বিতীয় সিজদা শেষ করে আবার الله اڪبر বলে সিজদা থেকে সুজা দাড়িয়ে দ্বিতীয় রাকাতেও ঠিক প্রথম রাকাতের মতই ।
তিন বা চার রাকাতের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে সিজদার পর বসে (আত্তাহিয়াতু)তাশাহ্হুদ পাঠ করতে হয় যেমন
''আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি অছ্ছলাওয়াতু অত্তয়্যিাবাতু আস্সালা মু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু অরহমাতুল্লাহি অবারকাতুহু আস্সালামু আলানা অআলা ইবাদিল্লাহিছ্ছলিহীন আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাহু অ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু অরসূলুহু ''।
নামাজের শেষ রাকাতে বসে "আত্তাহিয়াতু" দোয়ার পর "দরূদ শরীফ" পড়তে হয়
যেমন:দরুদে ইব্রাহীম -
اللهم صل علي محمد و علي ال محمد ڪما صليت علي ابراهيم و علي ال ابراهيم انڪ حميد مجيج اللهم بارڪ محمد و علي ال محمد ڪما بارڪت علي ابراهيم ر علي ال ابراهيم انڪ حميد مجيد
(উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা অ আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারকতা আলা ইব্রাহীমা অ আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।)
তারপর দোয়ায়ে মাছুরা পড়তে হয় যেমন :
اللهم اني ظلمت نفسي ظلما ڪثيرا و لا يغفر الذنوب الا انت فاغفرلي مغفرة من عندڪ انڪ انت الغفور الرحيم
(উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফছি জুলমান কাসিরান অলা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলী মাগফিরতাম মিন ইন্দিকা ইন্নাকা আন্তাল গফুরুররহীম।)
তাপর السلام عليڪم ورحمة الله ( আস্সালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহ)
বলে নামাজের শেষভাগে দুই দিকে সালাম ফেরাতে হয়।
(সালাতের শুরূ হল তাকবীর আর শেষ হল সালাম। (তিরমিযি:৩০৬)
◉বিতরের নামাজে তৃতীয় রাকাতে ক্বেরাতের পর الله اڪبر বলে কান বরাবর হাত উঠিয়ে আবার নাভীর নিচে হাত বেধে দোয়ায়ে কুনুত পড়তে হয়।
اللهم انا نستعينڪ و نستغفڪ ونؤمن بڪ و نتوڪل عليڪ ونثني عليڪ الخير و نشڪرڪ ولا نڪفرڪ و نخلع ونترڪ من يفجرڪ اللهم اياڪ نعبد ولڪ نصلي و نسجد واليڪ نسعي و نحفد ونرجو رحمتڪ و نخشي عذابڪ ان عذابڪ بالڪفار ملحق
(উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাইনুকা ,অনাসতাগফিরুকা,অনু-মিনুবিকা, অনাতাঅক্কালু আলাইকা, অনুসনী আলাইকাল খইরা , অনাশকুরুকা , অলানাকফুরুকা, অনাখলা’ ণাতরুকু, মাই ইয়াফ জুরুকা, আল্লাহুম্মা ইয়্যাকানা’বুদু , অলাকানুছল্লি, অনাসজুদু, অইলাইকা নাসআ, অনাহফিদু, অনারজু রহমাতাকা, অনাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিলকুফ্ফারি মুলহিক।)
❖সালাতের ফযীলত সমূহ
-----------------------------➮
◉নিশ্চয় সালাত মানুষকে অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে: আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, إِنَّ الصَّلاَةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ
নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।(সুরা আনকাবুত ৪৫)।
◉সকল কাজে সাহায্য লাভের মাধ্যম সালাত : আল্লাহ্ বলেন, وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ
তোমরা ছবর (ধৈর্য) এবং ছালাতের মাধ্যমে (আল্লাহ্র কাছে) সাহায্য প্রার্থনা কর।
(সূরা বাক্বারা- ৪৫)
◉আছর ও ফজরের সালাত আদায়কারীর জন্য জান্নাতের সুসংবাদ: রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
যে ব্যক্তি দুঠান্ডার সময়ের (আছর ও ফজর) ছালাত আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
◉সালাত সর্বোত্তম আমল: রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রশ্ন করা হল কোন আমলটি সর্বোত্তম ? তিনি বললেন, সময়মত ছালাত আদায় করা। (মুসলিম)
◉সালাত জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি: রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কখনই জাহান্নামে প্রবেশ করবে না এমন ব্যক্তি, যে সূর্যোদয়ের পূর্বে ছালাত আদায় করেছে এবং সূর্যাস্তের-র পূর্বে ছালাত আদায় করেছে। অর্থাৎ- ফজর ও আছর ছালাত। (মুসলিম)
◉সালাতর মাধ্যমে আল্লাহ্র নিরাপত্তা লাভ করা যায়: রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সকালের (ফজর) ছালাত আদায় করে সে আল্লাহ্র জিম্মাদারিতে হয়ে যায়। ভেবে দেখ হে আদম সন্তান! আল্লাহ্ যেন তার জিম্মাদারিতে তোমার কাছে কোন কিছু চেয়ে না বসেন। (মুসলিম)
◉সালাতর আমীন বলার দ্বারা পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা হয়ে যায়: রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন (সূরা ফাতিহা শেষে) ‘আমীন’ বলে। আর ফেরেশতারা আসমানে বলে ‘আমীন’। তাদের একজনের আমীন বলা অন্য জনের সাথে মিলে গেলে তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা হয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)
◉সর্ব প্রথম বান্দার সালাতের হিসাব নেয়া হবে। তাতে হয় সে মুক্তি পাবে অথবা ধ্বংস হবে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :--
أول ما يحاسب به العبد يوم القيامة الصلاة، فإن صلحت صلح سائرعمله، وإن فسدت فسد سائر عمله.
( رواه الترمذي)
কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসাব হবে। যদি সালাত ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। (তিরমিযি:২৭৮)
✪বন্ধুরা--➲
নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক বা ফরয্।আমরা যাতে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সুন্নত তরিকায় সুন্দরভাবে কায়েম/আদায় করতে পারি,পরম করুণাময় আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তাওফীক দান করুন। মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ থেকে আমাদের উপকৃত হওয়ার তওফীক দান করুন। আমীন।
(সবাইকে অনুরোধ করছি আমার এই লেখাটিতে ভুল হলে আমাকে জানাতে ভুলবেন না প্লীজ)
নামাজের অর্থ
আমরা প্রায়ই নামাজে গভীর মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হই। কিন্তু নামাজের পূর্ণতার জন্য গভীর মনোযোগ একান্ত জরুরি। নামাজে আমরা যা বলি, তার অর্থ যদি জানা থাকে, তাহলে নামাজে অন্য চিন্তা মাথায় আসবে না। নামাজে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাকবিরে তাহরিমার সময় দৃষ্টি সেজদার জায়গায় রাখতে হবে। দাঁড়ানো অবস্থায়ও দৃষ্টি সেজদার জায়গায় রাখতে হবে।
এরপর রুকু অবস্থায় দৃষ্টি পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির দিকে; পুনরায় দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার জায়গায়; সিজদা অবস্থায় দৃষ্টি নাকের আগায়; বসা অবস্থায় দৃষ্টি নাভিতে রাখতে হবে। সালাম দেওয়ার সময় দৃষ্টি কাঁধে নিবদ্ধ থাকবে। এভাবে নামাজ আদায় করলে মনোনিয়ন্ত্রণ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। নামাজের প্রকৃত উদ্দেশ্যও সফল হবে।
আল্লাহু আকবার অর্থ
নামাজে দাঁড়িয়েই প্রথমে আমরা বলি ‘আল্লাহু আকবার’—অর্থ আল্লাহ মহান!
তারপর সানা পড়ি: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি পাক-পবিত্র, তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা, তোমার নাম বরকতময়, তোমার গৌরব অতি উচ্চ, তুমি ছাড়া অন্য কেহ উপাস্য নাই।’
তারপর আমরা শয়তানের প্রতারণা থেকে আশ্রয় চাই এবং বলি, ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম।’
অর্থ: বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহর পবিত্র নাম দিয়ে তাঁর দয়া–করুণার গুণ দিয়ে নামাজ এগিয়ে নিয়ে যাই। বলি, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।’ অর্থ: ‘পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।’ এরপর আমরা সুরা ফাতিহা দিয়ে নামাজ শুরু করি।
সুরা ফাতিহায় আমরা যখন বলি, ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন (সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের মালিক আল্লাহর জন্যই)।’ তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হামিদা নি, আবদি (আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল)।’ অতঃপর আমরা যখন বলি—‘আর রাহমানির রাহিম (তিনি পরম করুণাময় অতি দয়ালু)’ তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আছনা আলাইয়া আবদি (আমার বান্দা আমার বিশেষ প্রশংসা করল)।’
এরপর যখন আমরা বলি, ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দিন (তিনি বিচারদিনের মালিক)।’ তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মাজ্জাদানি আবদি (আমার বান্দা আমাকে সম্মানিত করল)।’ এরপর আমরা যখন বলি, ‘ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তায়িন (শুধু আপনারই ইবাদত করি আর শুধু আপনার কাছেই সাহায্য চাই)।’ তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হাজা বাইনি ওয়া বাইনা আবদি (এই ফয়সালাই হলো আমার ও আমার বান্দার মধ্যে—বান্দা আমার ইবাদত ও আনুগত্য করবে, আমি তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করব)।’
আমরা যখন বলি, ‘ইহদিনাছ ছিরাতল মুস্তাকিম, ছিরাতল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম, গয়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দল্লিন! (আমাদের সঠিক পথ দেখান, তাদের পথ যাদের আপনি নিয়ামত দিয়েছেন; তাদের পথ নয় যারা পথভ্রষ্ট; আর না যারা অভিশপ্ত)।’ তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘লিআবদি মা ছাআল (আমার বান্দা যা চায়, তার জন্য তা-ই)।’ (সহিহ মুসলিম, ৩৯৫)
সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম অর্থ
এরপর আমরা অন্য একটি সুরা মেলাই। আমরা রুকুতে আল্লাহর প্রশংসা করি এবং ক্ষমা চাই। বলি: সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম। অর্থ: ‘আমার মহান রবের পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি।’
সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদা অর্থ
রুকু থেকে উঠে বলি, ‘সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদা।’
অর্থ: আল্লাহ সেই ব্যক্তির কথা শোনেন, যে তাঁর প্রশংসা করে।
আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ অর্থ
তারপরই আমরা আবার আল্লাহর প্রশংসা করে বলি, ‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’,
অর্থ: হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা কেবল তোমারই।
সুবহানা রাব্বিয়াল আলা অর্থ
তারপর আমরা সিজদায় গিয়ে বলি: সুবহানা রাব্বিয়াল আলা,
অর্থ: ‘আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। এভাবে নামাজ শেষে, মধ্য (দুই রাকাত, চার রাকাত ভিত্তিতে) বৈঠক আর শেষ বৈঠকে তাশাহুদে, আল্লাহর প্রশংসা করি।’
তাশাহুদে যা পড়ি তার অর্থ
‘সকল তাজিম ও সম্মান আল্লাহর জন্য, সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভালো কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের ওপরে এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপরে শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসুল।’
দরুদে যা পড়ি তার অর্থ:
‘হে আল্লাহ! আপনি নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত সম্মানিত।’
দোয়া মাসুরায় যা পড়ি তার অর্থ
‘হে আল্লাহ! আমি আমার ওপর অত্যধিক জুলুম করেছি, গুনাহ করেছি এবং তুমি ব্যতীত পাপ ক্ষমা করার কেউ নেই। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। ক্ষমা একমাত্র তোমার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আমার প্রতি রহম কর। নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল দয়ালু।’
দুই কাঁধে সালাম দিয়ে আমরা নামাজ শেষ করি।
সূত্রঃ
❖ সালাত বা নামায❖
✏ ইমরান বিন বদরী ≪
নামাজের অর্থঃ প্রথম আলো
২| ১৩ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৪৮
পুরানমানব বলেছেন: অফিস আদালতে কাজ না করে নামাজ পড়তে দৌড় মারেন।
আপনি কি করেন জনাব ?
অনেকে তো নামাজ না পড়িয়া ছাইপাশ ফুকাইতে যায়। তাদেরকে বড়ই নির্লজ্য আর বেকুব বলিয়া মনে হয়।
৮২ বার নামাজ কায়েম করার কথা
কিভাবে কায়েম করে তাহা যদি বলিয়া দিতেন ? বড়ই উপকার হইতো।
৩| ১৩ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৫২
পুরানমানব বলেছেন: লেখনী খানা বড়ই তথ্যবহুল। ঈমান্দারগণের উপকার হইবে।
৪| ১৩ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:২৩
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: অনেক তথ্যবহুল পোস্ট। আন্তরিক ধন্যবাদ পোস্টটি শেয়ার করার জন্য ---
৫| ১৩ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:২৪
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট
৬| ১৩ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: এরকম পোষ্ট পড়ে আমি আমার সময় নষ্ট করতে চাই না।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০২
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
মহাপবিত্র গ্রন্থ পাক কোরআন মজিদে ৮২ বার নামাজ কায়েম করার কথা বলা থাকলেও একবারও নামাজ পড়ার কথা বলা নেই।
অথট আমাদের মমিন মুসলমানগণ পারে তো সারা দিনই নামাজ পড়েন। অফিস আদালতে কাজ না করে নামাজ পড়তে দৌড় মারেন।
আরেকটি বিষয়- কোরআনে কোথাও বলা নাই কি ভাবে নামাজ পড়তে হবে। নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন কোরআন থেকে মানুষ জানতে পারবে না।