নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দশটা বাজার দশ মিনিট পূবেই দীপাবলী অফিসে পৌছে গেল। আয়কর অফিসে দীপাবলী যে দীপ জ্বালিয়েছে তার আলোতে আলোকিত হয়েছে অফিসের সবাই। সবার মনে এখন ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। নির্ধারিত সময়ে অফিসে আগমন এবং নিজ বেতনে নিজ দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করতে শিখেছে অফিসের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারী। কর্মচারীরা কাজ করে বকশিশ দাবী করে না এবং কর্মকর্তারা ফাইল আটকিয়ে ঘুষ দাবী করে না। এতে করে সকলের কিছুটা আর্থিক কষ্ট হলেও মনের প্রশান্তি অফুরন্ত।
দীপাবলীর কর্মদক্ষতায় প্রমিলা ডিপার্টমেন্ট হয়ে উঠেছে সবচেয়ে দক্ষ ডিপার্টমেন্ট। অফিসের বড় কর্তারা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
দীপাবলী ভাবতে থাকে কর্মক্ষেত্রের এই সফলতাই কি জীবনের চূড়ান্ত সফলতা ? এরই মধ্যে মনে পড়ে যে, ঠাকুরমার কথা রাখার জন্য হলেও অনন্ত এর খোঁজ নেওয়া উচিৎ।
অফিসের ফোন থেকে অনন্ত এর গেস্ট হাউসের রিসিপশনে ফোন করে জানতে পারলো আজ ১২ টার গাড়িতে চলে গেছে চট্টগ্রামের বাড়িতে।
টেলিফোনের রিভিভার রেখে টেবিলের উপর রাখা আব্দুর রহমানের আয়কর ফাইলের দিকে নজর দিলেন। রহমান সাহেব গাড়ির ট্যাক্স পরিশোধকে আয়কর পরিশোধের অংশ দেখালেও গাড়ির বর্ণনা এবং গাড়ী ক্রয়ে টাকার উৎস ফাইলে উল্লেখ করেন নি। দীপাবলী কলিং বেল টিপতেই পিওন দরজায় এসে হাজির।
উর্মিলাকে ডাকো
২ মিনিট পরে উর্মিলা দরজায় দাড়িয়ে দীপাবলীর রুমে প্রবেশের অপেক্ষায়।
আসব ম্যাডাম
আসুন বসুন। রহমান সাহেবের ফাইলটা দেখেছেন?
জী ম্যাডাম
রহমান সাহেবের গাড়ির কাগজপত্র কোথায়?
উনার তো গাড়ী নেই
উনি যে গাড়ির ট্যাক্স পরিশোধ দেখিয়েছেন? রহমান সাহেবের সাথে যোগাযোগ করুন। যদি গাড়ী থাকে হালহাগাদ কাগজপত্রসহ গাড়ী ক্রয়ে অর্থের উৎস নিশ্চিত করতে বলুন । আর যদি গাড়ি না থাকে তবে রিটার্ন সংশোধন করে নিন।
ঠিক আছে ম্যাডাম আমি রহমান সাহেবের সাথে যোগাযোগ করে ফাইল ঠিক করে নিচ্ছি।
উর্মিলার ছোট বোন পড়ালেখা শেষ করে কয়েকটা চাকরির পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের প্রতিক্ষায় ছিলো। এরই মধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে ভালো ছেলে পেয়ে বিয়ে দিয়েছে।
আচ্ছা উর্মিলা, আপনার ছোট বোনের চাকরীর ফলাফল কি?
চাকরিটা এবার পেয়ে গেছে কিন্তু করবে না বলে দিয়েছে।
কেন? এতো ভালো চাকরি করবে না কেন?
পোস্টিং হয়েছে সিলেট। তাই বলে কিনা স্বামী সংসার ছেড়ে এতো দূরে গিয়ে চাকরি করার দরকার কি?
চাকরীজীবি মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে ভাবতে হয় না।
এ বিষয়ে বোনের জোড়ালো যুক্তি যে, একজন আদর্শ স্বামীর চেয়ে কেউ বেশি সামাজিক নিরাপত্তা দিতে পারে না। আর মানিয়ে নিতে পারলে স্বামীর অর্থেই সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করা যায়।
হুম! বুঝতে পেরেছি। ঠিক আছে এবার তাহলে রহমান সাহেবের ফাইলটা দ্রুত আপডেট করে ছেড়ে দিন।
উর্মিলা চলে যাওয়ার পর পিওন রুমে ঢুকে বলে ফেলল
ম্যাডাম সিনহা সাহেবের খবর শুনেছেন কিছু?
কি হয়েছে সিনহা সাহেবের?
ডিবি পুলিশের হাতে ঘুসের টাকাসহ হাতে নাতে ধরা পড়ার পর এখনও কোন মামলা হয়নি?
এটা ভালো খবর না, অপরাধী শাস্তি না পেলে সংশোধন হবে কি করে?
সংশোধন পরের কথা। টাকা পয়সা দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করে নতুন উদ্যোমে ঘুস খাবে।
পিওনের কথাশুনে দীপাবলীর মন খারাপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পিওন কে যেতে বলে চেয়ারে বসে ভাবতে লাগলো। নীতি-নৈতিকতা বোধ আজ ঘুস-দূর্ণীতির নিকট পরাস্থ। বঙ্গালীর শিরার শিরায় দূর্ণীতি ঢুকে গেছে। কিছু লোক দূর্ণীতি করে আর বাকী সবাই দূর্নীতিবাজদের সমর্থন করে। কালো টাকাওয়ালার সমাজে দাম বেশি। আর সততার সাথে যারা জীবন যাপন করে তারা আজ কোন ঠাসা, অর্থকষ্টে কায়ক্লেশে জীবন যাপন করছে। কিন্তু মিথ্যার আষ্ফালন সাময়িক সত্য চিরন্তন।
©somewhere in net ltd.